স্নোবলের নকশা তৈরির কাজ সত্যি সত্যিই একদিন শেষ হল। আগামী রবিবারের সভায় সকলে মিলে ভোটাভুটি করে সিদ্ধান্ত নেবে যে হাওয়াকলের কাজ আদৌ শুরু করা হবে কি না। সেইমতো নির্দিষ্ট দিনে জন্তুরা সবাই গোলাঘরে জমায়েত হতেই স্নোবল নিজের বক্তৃতা শুরু করল। ভেড়ার দল মাঝে মধ্যেই হইহল্লা করে বাগড়া দিচ্ছে, তবে স্নোবল সে-সব গায়ে মাখল না। সে যে কেন হাওয়াকল বানাবার পক্ষে তা সকলকে বুঝিয়ে বলতে লাগল। স্নোবলের বক্তৃতা হয়ে গেলে বলতে উঠল নেপোলিয়ন। জবাবী ভাষণে সে শান্তভাবে জানাল যে, এইসব হাওয়াকলটল হল যত রাজ্যের ভুলভাল ব্যাপার। সে সকলকে পরামর্শই দিচ্ছে যেন কেউ হাওয়াকলের পক্ষে ভোট না দেয়। এটুকু বলেই সে দ্রুত বসে পড়ল। বড়জোর আধ মিনিট কথা বলেছে নেপোলিয়ন। কিন্তু দেখা গেল এর মধ্যেই সে অনেককে বেশ প্রভাবিত করে ফেলেছে। তবে তা নিয়ে নেপোলিয়নকে খুব একটা ভাবিত বলে মনে হল না। স্নোবল আবার বলতে উঠতেই ভেড়াগুলো হইচই জুড়ে দিল। ওদের এক দাবড়ানিতে থামিয়ে দিয়ে স্নোবল হাওয়াকলের স্বপক্ষে এক আবেগপূর্ণ আবেদন জানাল সকলের কাছে।
এতক্ষণ অবধি জানোয়াররা দু’পক্ষের প্রতিই সমানভাবে সহানুভূতিশীল ছিল। কিন্তু স্নোবলের বাগ্মিতা নেপোলিয়নের পালের হওয়া কেড়ে নিল।
ঝকঝকে কথার মায়াজালে অ্যানিম্যাল ফার্মের এক আশ্চর্য ছবি আঁকল স্নোবল— সেখানে জন্তুদের সারাদিন গাধার খাটুনি খাটতে হবে না। এবার আর শুধু খড় কাটাই আর শালগম টুকরো করার যন্ত্র নয়, স্নোবলের কল্পনা ডানা মেলে উড়ান দিল তার চেয়েও অনেক অনেক দূরে। সে বলল, “বিদ্যুৎ বড় সামান্য জিনিস নয় হে! এ-দিয়ে আমরা মাড়াই কল চালাতে পারি, জমিতে লাঙল দিতে পারি, জমিতে মই দিতে পারি, ফসল কাটতে পারি, আবার বাঁধতেও পারি। পাশাপাশি আমাদের থাকার জায়গাগুলোতেও বিজলি বাতি জ্বালাতে পারি, ঠান্ডাগরম জল পেতে পারি, বিজলি উনুনও চালাতে পারি।”
স্নোবল যখন নিজের বক্তৃতা শেষ করল তখন আর বিন্দুমাত্রও সন্দেহ রইল না যে ভোটগুলো কোন দিকে যেতে চলেছে। ঠিক সেই মুহূর্তেই নেপোলিয়ন উঠে দাঁড়াল। অদ্ভুত ভঙ্গিতে একবার আড়চোখে স্নোবলকে দেখে নিয়েই সে আশ্চর্য সুরে উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করে উঠল। এর আগে কেউ কখনও তাকে এমন আওয়াজ করতে শোনেনি।
আচমকা বাইরে কিছু কুকুরের হাড় হিম করা গর্জন শোনা গেল। দেখতে দেখতে পেতল বসানো কলার গলায় ন’টা বিশাল চেহারার ভীষণদর্শন কুকুর এসে ঢুকল গোলাঘরে। আর ঢুকেই প্রচণ্ড বেগে তেড়ে গেল স্নোবলের দিকে। স্নোবল নির্ঘাত কামড় খেত, কিন্তু সে এক লাফে নিজের জায়গা থেকে সরে গিয়ে খোলা দরজা দিয়ে মারল ছুট। কুকুরগুলোও তৎক্ষণাৎ তার পিছু নিল। খামারের জন্তুরা বিস্ময়ে আতঙ্কে এমন বিহ্বল হয়ে গেল যে কারও মুখে কোনও কথা ফুটল না। তারা গোলাঘরের দরজায় জড়ো হয়ে অবাক চোখে সেই ঘটনা দেখতে লাগল। ওদিকে তখন কী হয় কী হয় অবস্থা! বিস্তীর্ণ মাঠ বেয়ে স্নোবল প্রাণপণে ছুটে চলেছে বড় রাস্তার দিকে— যত জোরে একটা শুয়োরের পক্ষে দৌড়নো সম্ভব আর কী! কুকুরগুলো তাকে ধরে ফেলল বলে! আচমকা স্নোবলের পা গেল পিছলে। এক মুহূর্তের জন্য সবার মনে হল এই বুঝি কুকুরগুলো তাকে ধরে ফেলল। কিন্তু না। স্নোবল দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে আবার দৌড় শুরু করল। এবার আগের চেয়েও জোরে। কিন্তু কুকুরগুলো ক্রমশ দূরত্ব কমিয়ে আনছে। হঠাৎ একটা কুকুর স্নোবলকে কিছুটা নাগালে পেয়ে যেতেই খ্যাঁক করে কামড় বসাল তার লেজ লক্ষ্য করে। ঠিক সময়ে এক ঝটকায় লেজটা সরিয়ে নিয়ে স্নোবল সব শক্তি এক করে ছুটতে লাগাল। কুকুরদের সঙ্গে যখন তার ইঞ্চিখানেকের তফাৎ ঠিক তখনই সে বেড়াঝোপের ফাঁকে সেঁধিয়ে গিয়ে কোথায় যে হাওয়া হয়ে গেল তার আর খোঁজ পাওয়া গেল না।
ব্যাপার স্যাপার দেখে পশুরা তো সবাই ভয়ে কাঠ। কারও মুখে কথা সরছে না। তারা চুপচাপ ফিরে এল গোলাঘরে। কুকুরগুলোও ফিরে এল একইসঙ্গে। প্রথমে কেউ বুঝে উঠতে পারছিল না যে এই ভয়ঙ্কর প্রাণীগুলো এল কোত্থেকে। তবে শিগগিরই সে অন্ধকার কাটল। জানা গেল এগুলো হচ্ছে সেই ন’টা কুকুরছানা যেগুলোকে তাদের মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে নেপোলিয়ান লোকচক্ষুর আড়ালে বড় করে তুলেছে। কুকুরগুলো এখনও পূর্ণবয়স্ক হয়নি। কিন্তু তাদের বিশাল আকার দেখে তা বোঝার উপায় নেই। এক একটাকে এমন ভয়ানক দেখতে যেন নেকড়ে বাঘ! এরা সব সময় নেপোলিয়নের পাশে পাশেই থাকছে। সবাই অবাক হয়ে দেখল, একসময় এ ফার্মের কুকুরগুলো জোন্স সাহেবকে দেখে যেমন লেজ নাড়ত এরাও তেমনই নেপোলিয়নকে দেখে লেজ নাড়ছে।
গোলাঘরে মঞ্চের মতো যে জায়গাটায় বসে বুড়ো মেজর বক্তৃতা দিয়েছিলেন, ঠিক সেই জায়গাটায় গিয়ে চড়ল নেপোলিয়ন। কুকুরগুলো গেল তার পিছু-পিছু। নেপোলিয়ান ঘোষণা করল এখন থেকে প্রতি রবিবার আর কোনও সভা হবে না, কারণ এই সভা ব্যাপারটাই একেবারে অপ্রয়োজনীয়। খামোখা সময় নষ্ট হয়। এরপর থেকে খামারের পরিচালন বিষয়ক সমস্ত কিছু দেখাশুনো করবে শুয়োরদের এক বিশেষ কমিটি। যার সভাপতি নেপোলিয়ন নিজেই। এই সভাগুলো সকলের সামনে হবে না ঠিকই, তবে সভার সিদ্ধান্তগুলো পরে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে। রবিবার সকালে সবাই একজোট হয়ে যেমন পতাকা উত্তোলন হত তেমনই হবে। ‘ইংল্যান্ডের পশুরা’ গাওয়া হবে। তারপর প্রত্যেককে সে হপ্তার কাজ বুঝিয়ে দেয়া হবে। তবে কোনও রকম বিতর্ক আর হবে না।
আচমকা বাইরে কিছু কুকুরের হাড় হিম করা গর্জন শোনা গেল। দেখতে দেখতে পেতল বসানো কলার গলায় ন’টা বিশাল চেহারার ভীষণদর্শন কুকুর এসে ঢুকল গোলাঘরে। আর ঢুকেই প্রচণ্ড বেগে তেড়ে গেল স্নোবলের দিকে। স্নোবল নির্ঘাত কামড় খেত, কিন্তু সে এক লাফে নিজের জায়গা থেকে সরে গিয়ে খোলা দরজা দিয়ে মারল ছুট। কুকুরগুলোও তৎক্ষণাৎ তার পিছু নিল। খামারের জন্তুরা বিস্ময়ে আতঙ্কে এমন বিহ্বল হয়ে গেল যে কারও মুখে কোনও কথা ফুটল না। তারা গোলাঘরের দরজায় জড়ো হয়ে অবাক চোখে সেই ঘটনা দেখতে লাগল।
স্নোবলকে এ-ভাবে তাড়িয়ে দেওয়ায় সবাই অত্যন্ত আঘাত পেয়েছিল মনে। তার ওপর আবার এই ঘোষণায় জন্তুরা একেবারে আতঙ্কিত হয়ে উঠল। ঠিকঠাক যুক্তি টুক্তি খুঁজে পেলে হয়তো ওদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতিবাদ করলেও করতে পারত। এমনকি বক্সারকে পর্যন্ত কিছুটা উদ্ভ্রান্ত দেখাল। সে নিজের কান দুটোকে পিছন দিকে টানটান করে মাথার সামনের চুলগুলোকে ঝাঁকিয়ে নিজের এলোমেলো ভাবনাগুলোকে একজোট করার খুব চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু কী বলবে না বলবে তা সে কিছুতেই ভেবে উঠতে পারল না। তবে সবাই চুপচাপ ব্যাপারটা মেনে নিল না। সামনের সারি থেকে চারটি অল্পবয়সী শুয়োর তিড়িং করে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল এবং সমস্বরে তীক্ষ্ণ চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করল। কুকুরগুলো এতক্ষণ নেপোলিয়নকে ঘিরে শুয়েছিল, এবার শুয়োরগুলোর দিকে তাকিয়ে ভারী গলায় রক্ত জল করা গর্জন করে উঠল। শুয়োরগুলো অমনি সুড়সুড় করে নিজেদের জায়গায় গিয়ে বসে পড়ল। সঙ্গেসঙ্গে ভেড়ার দল জুড়ল তুমুল হল্লা, “চারপেয়েরা ভাল, দু’পেয়েরা খারাপ।” ব্যাস! সেই শোরগোল চলল প্রায় পনেরো মিনিট ধরে। আর কোনও আলোচনার সুযোগই পাওয়া গেল না।
কিছুক্ষণ পরে স্কুইলারকে পাঠানো হল জন্তুদের কাছে খামারের নতুন রীতিনীতি সব বিশদে ব্যাখ্যা করার জন্য। স্কুইলার বলল, “কমরেডস, আমার বিশ্বাস তোমরা নিশ্চয়ই খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারছ যে কমরেড নেপোলিয়ান এই বাড়তি কাজের বোঝা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে কত বড় ত্যাগস্বীকার করলেন। কমরেডস, এ-কথা যেন কখনও ভেবে বোসো না যে নেতৃত্ব দেওয়াটা খুব মজার ব্যাপার। না। তা মোটেই নয়, বরং উল্টো। নেতৃত্ব দেওয়া যাকে বলে এক ভয়ঙ্কর গুরুদায়িত্ব। বন্ধুগণ, জেনে রেখো, সব পশুরাই যে সমান— এ কথায় কমরেড নেপোলিয়নই সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস রাখেন। তোমরা যদি নিজেদের সব বিষয়ে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারতে তা হলে তিনিই সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। কিন্তু কমরেডস ভাবো একবার, যদি কখনও তোমরা কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসো তখন কী অবস্থা হবে আমাদের! ধরো যদি তোমরা স্নোবলের ওইসব হাওয়াকলের আষাঢ়ে গপ্পে গলে গিয়ে ওকে অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিতে! স্নোবলের সঙ্গে একটা পাক্কা দুষ্কৃতীর যে কোনও তফাৎ নেই তা আমরা সবাই জানি।
কেউ একজন বলল, “স্নোবল কিন্তু গোয়ালঘরের যুদ্ধে বীরের মতো লড়াই করেছিল।”
“শুধু বীর হলেই চলে না।” স্কুইলার বলল, “বাধ্য আর অনুগত হওয়াটা আরও বেশি জরুরি। আর রইল গোয়ালঘরের যুদ্ধের কথা, আমার মনে হয় একটা সময় আসবে যখন আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারব যে সেই যুদ্ধে স্নোবলের ভূমিকা কতখানি ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে রং চড়িয়ে দেখানো হয়েছে। শৃঙ্খলা, কমরেডস, কঠোর শৃঙ্খলা। এটাই আজকের মূলমন্ত্র। একটা ভুল পদক্ষেপ নিলেই শত্রুরা আমাদের ওপর লাফিয়ে পড়বে। কমরেডস, তোমরা নিশ্চয়ই চাও না জোন্স আবার ফিরে আসুক?”
অকাট্য যুক্তি। কেউ কোনও উত্তর দিতে পারল না। কেই বা চাইবে যে জোন্স ফিরে আসুক! ফি রবিবার সভা হলে যদি জোন্সের ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সেই সভা অবিলম্বে বন্ধ হয়ে যাওয়াই উচিত।
বক্সার ইতোমধ্যে কিছুটা ভাবনাচিন্তা করার সময় পেয়েছে। সকলের হয়ে সে বলল, “কমরেড নেপোলিয়ন যদি বলে থাকেন তা হলে একথা সত্যি না হয়ে যায় না ।” এবং এখন থেকে বক্সার নিজের মূলমন্ত্র ‘আমাকে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে’-এর সঙ্গে আর একটা মন্ত্র যোগ করে নিল— ‘নেপোলিয়ন সর্বদাই সঠিক’।
ধীরে ধীরে আবহাওয়া বদলাল। বসন্তকালীন চাষ আবাদ শুরু হল। যে ছাউনির মেঝেতে স্নোবল হাওয়াকলের নকশা এঁকেছিল সেটা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে যে সেই সব নকশা টকশা হয়তো এতদিনে মেঝে থেকে ঘষে ঘষে মুছে ফেলা হয়েছে। প্রতি রবিবার ঠিক সকাল দশটায় জন্তুরা সব গোলাঘরে জড়ো হয়ে সাপ্তাহিক কাজের নির্দেশাবলী বুঝে নেয়। বুড়ো মেজরের দেহটা ফলবাগানের সমাধি থেকে তুলে এনে তার খুলির মাংস টাংস সব পরিষ্কার করে পতাকাদণ্ডের নীচে বন্দুকটার পাশে একটা লাঠির মাথায় আটকে রাখা হয়েছে। পতাকা উত্তোলনের পর সবাই শ্রদ্ধাশীল ভঙ্গিতে সার-বেঁধে সেই খুলির সামনে দিয়ে গোলাঘরে যায়। আগে যেমন সবাই মিলে একসঙ্গে বসা হত এখন আর তা হয় না। নেপোলিয়ন বসে উঁচু মঞ্চের সামনের দিকে। ওর সঙ্গে থাকে স্কুইলার আর মিনিমাস নামের একটা শুয়োর। এই মিনিমাস শুয়োরটি ভীষণ প্রতিভাবান। সে ভাল গান বাঁধে, আবার খুব সুন্দর কবিতাও লেখে। তাদেরকে অর্ধবৃত্তাকারে ঘিরে থাকে সেই ন’টি কুকুর। এবং বাকি শুয়োরেরা থাকে মঞ্চের পেছন দিকে। অন্যসব জন্তুরা বসে গোলাবাড়ির উঠোনে, মঞ্চের দিকে মুখ করে। কাঠখোট্টা সামরিক ধাঁচে নেপোলিয়ন সারা সপ্তাহের কাজের নির্দেশাবলী পড়ে। তারপর মাত্র একবার ‘ইংল্যান্ডের পশুরা’ গেয়ে সব জন্তুরা ফিরে যায়।
স্নোবল বিতাড়নের পর তৃতীয় রবিবার জন্তুদের অবাক করে দিয়ে নেপোলিয়ন ঘোষণা করল যে, অবশেষে সেই হাওয়াকল তৈরি করা হবে। কেন সে হঠাৎ মত বদল করল তার কোনও কারণ অবশ্য সে দেখাল না। স্রেফ এটুকু বলে সবাইকে সতর্ক করে দিল যে, এর ফলে সবার ওপরেই কঠোর পরিশ্রমের বাড়তি বোঝা চাপতে চলেছে। প্রয়োজনে হয়তো তাদের খাবারের বরাদ্দও কমানো হতে পারে।
ইতোমধ্যেই হাওয়াকলের সমস্ত রকমের পরিকল্পনা, নকশা ও সব রকমের খুঁটিনাটি কাজ শেষ। গত তিন সপ্তাহ ধরে শুয়োরদের একটা বিশেষ দল লাগাতার এই বিষয়টা নিয়েই কাজ করে চলেছে। ধরে নেওয়া হচ্ছে হাওয়াকল তৈরি করতে আর অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ করতে মোটামুটি বছর দুয়েক লেগে যাবে। সেদিন সন্ধেবেলা স্কুইলার একান্তে সকলকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলল যে, নেপোলিয়ান কখনওই হওয়াকল তৈরির বিরুদ্ধে ছিল না। বরং সেই প্রথম থেকে হাওয়াকলের কথা বলে এসেছে। ডিম ফোটানোর ছাউনির মেঝেতে স্নোবল যে নকশাটা এঁকেছিল সেটা তো আসলে নেপোলিয়নের কাগজপত্র থেকে চুরি করা। বলা যেতে পারে, হাওয়াকলের পরিকল্পনাটা একেবারেই নেপোলিয়নের নিজস্ব।
কেউ একজন জিজ্ঞেস করে বসল, “তা হলে নেপোলিয়ন এমন ভয়ঙ্করভাবে হাওয়াকলের বিরোধিতা করত কেন?”
এবার স্কুইলারের মুখেচোখে কেমন এক ধূর্ত ভাব ফুটে উঠল। সে বলল, “এটাই তো কমরেড নেপোলিয়নের দুরন্ত চাল, বন্ধুরা। তিনি এমন একটা ভাব দেখাতেন যাতে মনে হয় যে তিনি হাওয়াকলের বিরুদ্ধে। সেটা ছিল ভান মাত্র। আসলে তিনি কায়দা করে স্নোবলকে সরাতে চেয়েছিলেন। স্নোবল অত্যন্ত বিপজ্জনক। সবার ওপরে খারাপ প্রভাব ফেলত। এখন স্নোবলের হাত থেকে থেকে নিস্তার পাওয়া গেছে। আমাদের কোনও পরিকল্পনাতেই সে আর নাক গলাতে পারবে না। একেই বলে কৌশল।” স্কুইলার আরও কয়েকবার আউড়ে গেল, “বুঝলে কমরেডস, কৌশল। কৌশল।” উল্লসিত ভঙ্গিতে লাফিয়ে-লাফিয়ে লেজ নাড়তে লাগল সে।
এই কৌশলের ব্যাপারটা জন্তুদের ঠিক মাথায় ঢুকল না। কিন্তু স্কুইলার এমন ভাবে বুঝিয়ে বলল আর তার সঙ্গে আসা তিনটে কুকুর এমন ভয়াল ভয়ঙ্কর গর্জন করতে শুরু করল যে তারা আর কোনও প্রশ্ন না করে সেই ব্যাখ্যা বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিল।
অর্ক পৈতণ্ডীর জন্ম ১৯৮৫-তে বীরভূমের সিউড়িতে। পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা বোলপুর, শান্তিনিকেতনে। বিজ্ঞানের স্নাতক। পেশাদার শিল্পী। 'মায়াকানন' পত্রিকা ও প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার। অবসরে লেখালিখি করেন। অলঙ্করণ শুরু ষোলো বছর বয়সে শুকতারা পত্রিকায়। পরবর্তীকালে আনন্দমেলা, সন্দেশ, এবেলা, এই সময়, উনিশ-কুড়ির মতো একাধিক পত্রপত্রিকার জন্য ছবি এঁকেছেন। কমিক্স আঁকার জন্য ২০১৪ সালে নারায়ণ দেবনাথ পুরস্কার পেয়েছেন।