পিঁপড়ের ডিমের চাটনি খাওয়ার নেমন্তন্ন করেছিল বন্ধু সন্দীপন। জঙ্গলমহলের আমলাশোলে। এক আকাশ নীল, স্নিগ্ধ সবুজ, বিশুদ্ধ বাতাস, সরল কিছু মুখ… এসব নিয়েই শান্ত এক গ্রাম। সেখানে তৈরি হচ্ছে ‘কোজাগর’ হোম-স্টে। পিঁপড়ে খাওয়ার লোভ সামলানোটা বেশ কঠিন ছিল। তর সইল না। হোমস্টের কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই আমি, লিপিকা আর চান্দ্রেয়ী রওনা দিলাম আমলাশোলের পথে।
গাড়ির স্পিডটা বেশ ভালোই বাড়িয়েছে সন্দীপন। মাঝে খড়গপুরের কাছে এসে গতি একটু কমলেও এখন আবার স্পিডোমিটারের কাঁটা একশ পেরিয়েছে। রোদ্দুর ঝিমিয়ে আছে। হেমন্তের হাওয়ায় হালকা শীতল পরশ। তবে এই হাইস্পিডের সুখটা লোধাশুলি পর্যন্ত। তারপর জাতীয় মহাসড়কের পিচপালিশ মসৃণতা উধাও। গাড়ি ডানদিকের রাজ্যসড়ক ধরে ঝাড়গ্রামমুখী। বেশ কিছুক্ষণ রুক্ষতার ঝাঁকুনি। শালবনি পেরিয়ে বেলা প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ ঝাড়গ্রাম শহরে পৌঁছলাম। কলকাতা থেকে দূরত্ব প্রায় ১৭০ কিলোমিটার। আমলাশোল আরও ৬৩ কিলোমিটার পথ।
“ঘাটশিলার রাস্তাটা কিলোমিটারের হিসাবে বেশি হলেও সময় কম লাগে। আসলে রাস্তাটা তো ভালো”, চল্টা-ওঠা রাস্তায় শ্লথ গতিতে গাড়ি চালাতে চালাতে বিরক্তি প্রকাশ সন্দীপনের। খানিক যানজট। বিনপুরগামী রাস্তা ধরে চলেছি। দহিজুড়ি বাজারের ঘিঞ্জি পরিবেশ ছেড়ে বেরোতেই বড় রাস্তা। বিনপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ডানদিকে রাস্তা গেছে লালগড়, জঙ্গলমহলের পরিচিত নাম। আমরা সোজা এগোলাম কাঁপে মেইন রোড ধরে।

লালমাটি আর শালবনের যুগলবন্দি। ১৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে শিলদা মোড়। বড় বাজার, দোকানপাট নিয়ে ব্যস্ত এলাকা। মোড় থেকে পথবিভাজন। ডানহাতি রাস্তা গেছে বাঁকুড়া। আমরা বামদিকে বেলপাহাড়ির পথে। দূরে পেনসিল স্কেচের মতো আবছা টিলা। হালকা হাওয়া ঢেউ তুলছে সোনালি ধানখেতে।
বেলপাহাড়ি বাজারের জমজমাট এলাকাকে পিছনে ফেলে প্রবেশ করলাম জঙ্গলমহলের গভীরে। ছবিটা ক্রমেই বদলাতে থাকল। মাঝেমাঝে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘরবাড়ি। শাল মহুয়ার বন থেকে শুকনো ডালপালা, কাঠকুটো মাথায় করে বয়ে আনছে আদিবাসী রমণীরা। জঙ্গল থেকে বয়ে আসা কোনও জলধারা জঙ্গলেরই গভীরে ঢুকে লুকিয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা সেই জংলি ঝোরায় স্নান করছে, জামাকাপড় ধোওয়া-কাচা সারছে।
কাঁকড়াঝোড় পেরিয়ে আরও খানিক এগিয়ে আমলাশোল গ্রামে ঢোকার মুখে বোর্ডে লেখা আছে ‘এলিফ্যান্ট করিডর’। রাস্তার ধারে গাছের মাথায় ছোট ছোট মাচাঘরগুলো দেখিয়ে সন্দীপন বলল, “ধান পাকার সময় হাতির উৎপাত থেকে ফসল বাঁচানোর জন্য গ্রামবাসীরা রাতে মাচায় বসে পাহারা দেয়। হাতি গ্রামে ঢুকলে পটকা ফাটিয়ে, কাঁসরঘণ্টা বাজিয়ে তাদের তাড়ায়”।

বাঁদিকের রাস্তাটা সোজা ঝাড়খণ্ড গেছে। বেলা সোয়া একটা। দূর থেকেই নজরে এল লাল দেওয়ালের গায়ে সাদা অক্ষরে লেখা ‘কোজাগর’। তবে এখানে আমাদের রাত্রিবাস নয়। কোজাগর উদ্বোধন হতে মাসখানেক দেরি। উল্টোদিকে, রাস্তার ওপারে পুকুরধারে এক চিলতে জমিতে দুকামরার ছোট্ট বাসা। সেখানেই থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। পিছনেই জঙ্গলে ঢাকা উঁচু টিলা।
পাশের বাড়িটা কেয়ারটেকার মথুর মাহাতোর বাড়ি। ওর স্ত্রী সাবিত্রী আমাদের দেখভালে ব্যস্ত। আগেভাগে ঘরদোর সাফসুতরো করে, রেঁধেবেড়ে রেখেছে। স্নান সেরে ওদের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
পাশাপাশি কয়েকঘর বাস। মথুরের বাড়ির পাশেই একটা বাঁশের মাচা। গ্রামের লোকজন সেখানে জড়ো হয়ে বসে মুঠোফোনে মশগুল। গোটা গ্রামে একমাত্র এই মাচা থেকেই নাকি বিশেষ দু একটা কানেকশনের অল্পস্বল্প নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। আমাদের মোবাইল ফোনগুলো আপাতত যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আছে।

সাবিত্রীর মুখে সারাক্ষণ লাজুক হাসি। লম্বা মাটির ঘর। পরিচ্ছন্ন, নিকোনো মাটির মেঝেতে পিঁড়ি পেতে বসালো সবাইকে। এক কোণে মাটির উনানে কাঠের জ্বালে রান্না হচ্ছে। কড়াইয়ে দেশি মুরগির ঝোল ফুটছে। রান্না থেকে কাঁচালঙ্কার সুবাস ভেসে আসছে। ছড়ানো থালায় মোটা চালের ভাত, রসুন ফোড়ন দিয়ে সজনেশাক ভাজা, পাঁচমিশেলি সবজি দিয়ে পুঁইশাকের তরকারি, আলুভাজা সাজিয়ে দিয়েছে। ছোট বালতিতে হাতা চুবিয়ে ডাল ঢেলে দিল পাতে। একটু পরে এল এক বাটি গরম মুরগির ঝোল। বাড়ির পিছনদিকের গাছটা থেকে সাবিত্রীর ছেলে মন্সা লেবু ছিঁড়ে এনেছে। ভাতের পাতে এক ফালি দিতেই অবাক হলাম। আসার সময়ে এই ফল আর গাছ দেখে কমলালেবু মনে হয়েছিল। আশ্চর্য ব্যাপার হল ভিতরের রং সাদা, স্বাদে-গন্ধে কমলালেবুর সঙ্গে কোনও মিল নেই।
আধঘণ্টার পাওয়ার ন্যাপ নিয়ে কোজাগরের উঠোনে এলাম। এখানে পাশাপাশি দুটো বড় ঘর। লাগোয়া বারান্দা থেকে হলুদ ধানখেত আর সবুজ টিলার প্যানোরামিক ছবি। উঠোনের একধারে দুটো তাঁবু, কিচেন, খাওয়ার জায়গা। অবস্থানগত সৌন্দর্য বেশ আকর্ষণীয়। সন্দীপন মিস্ত্রীদের কাজ বোঝাতে ব্যস্ত। আমাদের দেখে বলল,“আমঝরনা গ্রাম ঘুরে এস, মিনিট পাঁচেক লাগবে।” নামটা টানল। আমঝরনার মায়াঘেরা পথ ধরে হাঁটতে লাগলাম। টুকরোটাকরা গ্রাম্য কিছু ছবি… স্থানীয়রা পুকুরে ছিপ ফেলে বসে আছে, মাটির দাওয়ায় বসে অলস দুপুরে গল্পগুজব চলছে, উঁচু উঁচু তালগাছে বাবুই পাখির বাসা, বাড়ির উঠোনে শুকোচ্ছে বাবুই ঘাস—দড়ি তৈরি হবে।

বিকেলে গাড়ি নিয়ে বেলপাহাড়ির দিকে চললাম। দুবেলার মতো অল্প রেশন নিতে হবে। তবে বেলপাহাড়ি পর্যন্ত আর যেতে হল না। কাঁকড়াঝোড় পেরিয়ে পাঁচ কিলোমিটার এগোতেই পথের ধারে হাট দেখে থামলাম। শনিবারের ওদলচুঁয়ার হাট। ধানখেতের আলপথ ধরে হেঁটে আসছে স্থানীয় গ্রামবাসীরা। শাক-সব্জি, মাছ-মাংস, বাসনকোসন, জামাকাপড়, পুঁতির মালা, কাচের চুড়ি, ফুচকা-তেলেভাজা-ঘুগনি, রোল-চাউমিন, জিলিপি-মালপোয়া…সব কিছু নিয়ে হাট একেবারে জমজমাট।
লাল গোল থালার মতো সূর্যটা ধীরে ধীরে পাহাড়ের আড়ালে চলে গেছে। গাছতলায় এক ফুচকাওয়ালাকে ঘিরে বেশ ভিড়। সাইকেলের ক্যারিয়ারে ফুচকার সরঞ্জাম বেঁধে বিক্রি করছে। পেঁয়াজ দেওয়া অন্যরকম ফুচকা, কলকাতার পরিচিত স্বাদের বাইরে। ততক্ষণে দিনের শেষ আলোটুকু নিবে গেছে। দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষজন ফেরার পথে। হাটের আলো-ঝলমলে পরিবেশটুকু ছাড়া আশপাশে জমাটবাঁধা নিকষ অন্ধকার। জঙ্গলের দিকে তাকালে কেমন যেন গা ছমছম করে ওঠে। প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে তাড়াতাড়ি ফিরে চললাম।
আরও পড়ুন- ভ্রমণ: চর্মনগরীর গন্ধবিচার
দুদিন পরেই পূর্ণিমা। জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। সারাদিন রোদের তেজ। সূর্য ডুবতেই বেশ শীত। মথুরের দৌলতে এক বোতল খাঁটি মহুয়া জোগাড় হয়েছে। রাতের মেনু ভাত, মুরগির ঝোল আর স্যালাড। সকলে মিলে পিকনিক মুডে কোমরবেঁধে কাজে নেমে পড়েছি… গ্রামের টিউবওয়েল থেকে খাওয়ার-জল ভরে আনা, বারান্দায় মাদুর পেতে বসে কুটনোকোটা, বাসন ধোওয়া। নিস্তব্ধতার কালো চাদরে ঢাকা গ্রামটা শীতঘুম দিচ্ছে। ঝিঁঝিঁ পোকারা গলা খুলে ডাকছে। ফুরফুরে হিমেল হাওয়া। খাওয়াদাওয়া সেরে ক্লান্ত শরীরে নিশ্চিন্ত ঘুম।

ঘড়িতে অ্যালার্ম বাজার আগেই মোরগের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল। বাইরে তখনও অন্ধকার। আকাশে মৃদু লালচে রং ধরেছে। ওই আবছা আলোয় বুঝতে পারলাম, রাস্তার ওধারে খেজুর গাছটায় কেউ একটা উঠেছে। এত ভোরে রসের হাঁড়ি নামাতে এসেছে।
একটু একটু করে আলো ফুটছে। গ্রামটাও আড়মোড়া ভাঙতে শুরু করেছে। গাড়ি নিয়ে বেরোলাম ঝাড়খণ্ডের দিকে। দু কিলোমিটার চলার পর ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ। এই রাস্তা ধরে ২৪ কিলোমিটার গেলেই ঘাটশিলা। কাঁচাপাকা ধানখেত, মেঠো আলপথ বেয়ে কাঁখে কলসি নিয়ে চলেছে গ্রাম্য গৃহবধূ, দিঘির পাড়ে তালগাছের সারি, জলে ভেসে আছে লাল-গোলাপি শালুক, মাছরাঙার শিকারী ভঙ্গিমা, রঙচঙে মাটির ঘর, আঁকাবাঁকা লাল মাটির পথ, একচিলতে উঠোনে বেগুন-লাউ-কুমড়ো-পালঙের চাষ।

মাঝে মাঝে গভীর জঙ্গল, আবার কয়েক ঘর বসতি। একটা বাড়ির উঠানে বসে দিদা-নাতনি মিলে পা ছড়িয়ে বসে শালপাতার থালা বানাচ্ছে। ওদের দাওয়ায় গিয়ে বসলাম। একপাশে চিরু ঘাস রোদে শুকোচ্ছে, ঝাড়ু তৈরি হবে। আলাপ-পরিচয়, খানিক গল্প-গুজব।
এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে কাঁকড়াঝোড় ওয়াচটাওয়ারের কাছে এলাম। সামনে বাঁধাকপির খেত। ওয়াচটাওয়ারের ওপর থেকে অরণ্যের সবুজ শোভা। ফেরার পথে জঙ্গলের ধারে একটা চায়ের দোকানের ছাউনি দেখে থামলাম। আরণ্যক পরিবেশে মাচায় বসে পা দুলিয়ে চায়ের ভাঁড়ে চুমুক, শালপাতার বাটিতে মুড়ি-ঘুগনি…এক কথায় জমাটি সকাল।

সাবিত্রী জঙ্গলে যাবে পিঁপড়ে সংগ্রহ করতে। ওর বারো বছরের ছেলে মন্সা, আর মন্সার পাড়ার বন্ধু অরবিন্দ সঙ্গে যাবে। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার এমন সুযোগ ছাড়া যায়! পিঁপড়ে শিকারীর দলে ভিড়ে গেলাম। সাবিত্রীদের বাড়ির পিছন দিকে কয়েক পা এগোতেই জঙ্গল শুরু। সাবিত্রী, মন্সা আর অরবিন্দ আগে আগে যাচ্ছে। আমরা ওদের অনুসরণ করতে লাগলাম। প্রথম দিকে পায়েচলা সরু বনপথ, পরে আর পথ বলতে কিছু নেই। লতা-পাতা সরিয়ে, ঝোপঝাড়ের খোঁচা খেয়ে, কখনও গাছের সরু ডাল ভেঙে এগোতে হচ্ছে। ঢালু পথ। মাঝে মাঝে পা হড়কে যাচ্ছে। হাত-পা ঢাকা জামা-প্যান্ট পরা সত্ত্বেও বিছুটি পাতার ঘসা লেগে চুলকোচ্ছে। সরু, লম্বাটে, হলদে শেডের এক বুনো ফল দেখে আকৃষ্ট হয়ে তুলতে গেলাম। “এটা কী?” আমার গলার আওয়াজ শুনেই সাবিত্রী পিছনে ফিরে চোখ গোল করে চেঁচিয়ে উঠল, “হাত দিও না! ওটা আলকুশি! গায়ে লাগলেই চুলকোবে।” রোঁয়া-ওঠা, চকচকে ভেলভেটের মতো গা, ছুঁলেই সাড়ে সব্বোনাশ।
মন্সা আর অরবিন্দ সম্ভাব্য দু-একটা জায়গায় পিঁপড়ের বাসার সন্ধান করেও কিছু পেল না। আরও গভীরে যেতে হবে। অরবিন্দ একটা গাছে পিঁপড়ের বাসা দেখতে পেয়েছে। তবে একটু উঁচুতে। ডাল ধরে সে ঝুলে পড়ল। মন্সা ব্যাগের মুখ খুলে ধরে আছে। অরবিন্দ শালপাতা দিয়ে পিঁপড়েগুলো চেপে ধরে হাত মুঠো করে ফেলল। তারপরেই ব্যাগের ভিতর চালান করে দিল। মন্সা ব্যাগের মুখটা দড়ি দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বেঁধে ফেলেছে। অরবিন্দের হাত পিঁপড়েতে ভরে গেছে। বাসা নাড়া খেয়েছে, পিঁপড়ে ছড়িয়ে গেছে এদিক ওদিক। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমরাও কামড় খাচ্ছি। গাছ থেকে ঝরে পড়ে ঘাড়, মাথা দিয়ে বাইছে। সেদিকে কারোর হুঁশ নেই, পিঁপড়ে সংগ্রহের উত্তেজনা তখন তুঙ্গে।

চারটে বাসা ভাঙার পর আমরা ফেরার জন্যে তাড়া দিতে লাগলাম। কিন্তু ওদের মন ভরেনি, ভাবছে পিঁপড়ের চাটনিতে কম পড়বে বোধহয়। “আমরা শুধু একটু টেস্ট করব”, এই বলে ওদের আশ্বস্ত করে ফিরিয়ে নিয়ে চললাম। সাবিত্রী উঠোনে বসে ব্যাগ থেকে ডিমসহ লাল পিঁপড়েগুলো ঝেড়ে একটা কুলোর মধ্যে রাখল। নুন মাখালো, তাতে বেশিরভাগটাই মরল। দু একটা তখনও সাবিত্রীর হাতে হুল ফোটাচ্ছে। বড় একটা চ্যাপ্টা পাথরে পিঁপড়ে ঢেলে নিল, সাবানের সাইজের ছোট একটা পাথর নিয়ে শিলনোড়ার মতো বাটতে লাগল। নুন আর কাঁচালঙ্কা মিশিয়ে মিহি করে বাটার পর পিঁপড়ের চাটনি তৈরি। কাঁচা শালপাতায় এক চামচ তুলে স্বাদ নিলাম…টক, ঝাল, নোনতার জিভে জল আনা মিশেল। গোটা বিষয়টাই এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
দুপুরে স্থানীয় জলাশয় বড়াবাঁধের জলে ডুব দিয়ে, লাঞ্চ সেরে সাড়ে তিনটে নাগাদ বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এবার আর ঝাড়গ্রামের পথে নয়। ঘাটশিলার বুরুডি লেক দেখে ফিরে যাব। ঝাড়খণ্ডগামী রাস্তা ধরে হুল্লুং হয়ে ১৯ কিলোমিটার চলার পর চ্যাংজোড়া। সেখান থেকে ৫ কিলোমিটার ডানদিকে গেলেই বুরুডি লেক। সূর্য তখন অস্তাচলে। জঙ্গল আর টিলায় ঘেরা বুরুডি লেকের অপূর্ব ল্যান্ডস্কেপ।
বুরুডি লেকের বুকে অন্ধকার নেমেছে। প্রাপ্তির ঝোলা পূর্ণ করে ফিরে চললাম। বুরুডি থেকে সৃষ্ট সরু ক্যানেলের পাশে কালচিতির হাটে মানুষের ভিড়। প্রায় গোলাকার চাঁদের প্রতিচ্ছবি ক্যানেলের জলে। আর দেরি করা ঠিক হবে না। গাড়ি এবার ছুটে চলল কলকাতার পথে।

প্রয়োজনীয় তথ্য
কীভাবে যাবেন
আমলাশোল (Amlasol) যাওয়ার নিকটতম রেলস্টেশন ঘাটশিলা। হাওড়া থেকে ট্রেনে ঘাটশিলা পৌঁছে অটো ধরে আমলাশোল যেতে পারেন। দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। ৪৫ মিনিটের রাস্তা। চাইলে ঝাড়গ্রাম থেকেও গাড়িভাড়া করে আসতে পারেন। সময় লাগবে দেড় ঘণ্টা। ঝাড়গ্রাম থেকে কাঁকড়াঝোড় রুটে দিনে বেশ কয়েকটি বাসও চলে। সরাসরি কলকাতা থেকে গাড়িতে গেলে সময় লাগে কমবেশি পাঁচ ঘণ্টা।
কোথায় থাকবেন
কোজাগর ইকো হোমস্টে এখন পর্যটকদের জন্য চালু হয়েছে– থাকার জন্য ২টি ঘর (প্রতিটি ৪/৫ জনের উপযোগী) এবং দুটো টেন্ট (প্রতিটি ৩/৪ জনের উপযোগী)
বিশদ তথ্য ও বুকিং-এর জন্য যোগাযোগ: ৯০৮৮৭২৪৫৪১
ছবি সৌজন্য: লেখক
দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। ভ্রমণ, আনন্দবাজার ই-পেপার, ভ্রমী পত্রিকার নিয়মিত লেখক। এছাড়া যারা-যাযাবর, তথ্যকেন্দ্র, লেটস্-গো, আজকাল, প্রতিদিন, গণশক্তি প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত। ট্র্যাভেল রাইটার্স ফোরাম ইন্ডিয়ার সদস্য। প্রধান শখ ও নেশা বেড়ানো আর ট্র্যাভেল ফটোগ্রাফি।
দারুণ লেখা। প্রায় বেড়িয়ে এলাম।
ভালো লাগল
Aha! besh Amlasol ghure elam eto sundor sabolil lekhonir maddhyome, sudhu piprer dimer chatni ta test kora baki !
Durdanto, kono katha hobe na, khub valo laglo
Osadharon kahini.