ওজন কমাতে কত কিছুই না করেন। সকালে ঘুম চোখে ট্রেডমিলে দৌড়ন। সন্ধেবেলা অফিস থেকে ফিরে গলদঘর্ম হয়ে আবার জগিং করতে যান। কষ্ট করে খাওয়াদাওয়ার উপরেও রাশ টেনেছেন। বিরিয়ানি, রোল, বার্গার জীবন থেকে বাতিল। স্বাদবিহীন জীবন, তা-ও ওজন কমার নাম নেই। প্রতি বার ওজনযন্ত্রে দাঁড়ালেই মন খারাপ। মনে হয় সব চেষ্টাই বৃথা। আর যত রাগ গিয়ে পড়ে ওই কঠোর-হৃদয়হীন ডায়েট চার্টের উপরে। কিন্তু সত্য়ি বলতে দোষটা কিন্তু আপনার ডায়েট চার্টের নয়, আপনার। কথাটা শুনে আহত হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভিলেন শুধু খাবার নয়, আপনার খাওয়ার অভ্য়েসও। আসলে ডায়েট করার একটা নিয়ম থাকে। সারা দিন শাকসবজি খেয়ে থাকা মানেই আপনি খুব রোগা হয়ে যাবেন, তা কিন্তু নয়। বা এক-আধদিন ফুচকা খেলেই ফুলে ফেঁপে ঢোল হয়ে যাবেন, তা-ও নয়। রোগা হওয়ার জন্য় ঠিকঠাক যোগ-বিয়োগটা জানা দরকার। আর এমন অনেক খাবার আছে যা আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও, আদতে ওজন বাড়ার পিছনে বড় ভূমিকা পালন করে। এই যেমন ধরুন কর্নফ্লেকস। আপনি রোজ সকালে লুচি- পরোটার বদলে একবাটি দুধ-কর্নফ্লেকস খান আর ভাবেন যে এ বার রোগা হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। অথচ আপনি জানতেই পারেন না যে এই কর্নফ্লেকসের সঙ্গে কতটা চিনি আপনার শরীরে প্রবেশ করে যাচ্ছে। ফল, ওজন বাড়া। তাই সচেতন থাকুন। কী খাচ্ছেন আর কতটা খাচ্ছেন, তার উপর নজর দিন। আসুন দেখে নিই কোন কোন খাবার এ রকম ভাবেই আপনার অজান্তে ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

শর্করাযুক্ত বা সুগারি সিরিয়াল– ভাবতেই পারছেন না নিশ্চয় যে আপনার অতি প্রিয় কর্নফ্লেকস এই
তালিকায় থাকতে পারে ? কিন্তু আদতে বেশির ভাগ বাজার-চলতি সিরিয়ালে প্রচুর পরিমাণে চিনি মেশানো থাকে। লেবেল পড়ে যে সব সময় তা বুঝতে পারবেন তা কিন্তু নয়। অর্থাৎ স্বাস্থ্য়কর ভেবে হয়তো খেলেন, কিন্তু লাভের লাভ কিছুই পেলেন না। আর শুধু তাই নয়, চিনি মেশানো সিরিয়ালে কিন্তু ফাইবারের পরিমাণ বড়ই কম। ফলে হাতের কাছে যা থাকে তাই খেতে ইচ্ছে করে। পাল্লা দিয়ে ওজন বাড়তেই থাকে।

ফলের স্মুদি—স্বাস্থ্যকর পানীয় বলে যতই প্রচার করা হোক না কেন, স্মুদির আদৌ কোনও উপকার
আছে কি না তাই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ চিনি থাকে এবং কোনও ফাইবার থাকে না। তার থেকে গোটা ফল খাওয়া অনেক ভাল। আর যদি স্মুদি খেতেই হয়, তা হলে দেখে নেবেন তাতে যেন ১২ গ্রামের বেশি চিনি কখনওই না থাকে। ভাল করে লেবেল পড়েই তবে কিনুন।

প্রোটিন শেক– ব্যায়াম করার পর প্রোটিন শেক খান, এ রকম মানুষ প্রচুর খুঁজে পাবেন। কিন্তু এমনও অনেকে আছে যাঁরা এক্সারসাইজ মোটে করেন না, অথচ প্রোটিন শেক নিয়মিত খান। অথচ জানেন কি, বেশির ভাগ  প্রোটিন শেকের ১৬ আউন্সে প্রায় ২৫০-৬০০ ক্য়ালরি থাকে। তাই প্রোটিন শেক বাছার সময় ক্য়ালরি দেখে নিন। এক্সারসাইজের পরেও কিন্তু প্রোটিন শেক খাওয়ার প্রয়োজন নেই। একটা ফল বা এক স্লাইস চিজ খেলেই যথেষ্ট পরিমাণে কাজ করার শক্তি পাওয়া যায়।

স্য়ালাড ড্রেসি্ং– স্য়ালাড খাচ্ছেন, ভাল কথা, কিন্তু ড্রেসিং বাদ দিতে পেরেছেন কি? যতই শশা, টোম্যাটো,লেটুস খান না কেন, ড্রেসিং বাদ না দিলে কোনও লাভ হবে না। বেশির ভাগ ড্রেসিংয়েই মেয়নেজ এবং অন্য়ান্য় সস ব্য়বহার করা হয়, যাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে। সুতরাং স্য়ালাড খেলে ড্রেসিং ছাড়া খাওয়াই বাঞ্ছনীয়।

নারকেল তেল– আগে মনে করা হত নারকেলে তেলে রান্না করা ভাল। দক্ষিণ ভারতে তো এই তেলই সর্বাধিক ব্য়বহৃত। মানছি নারকেল তেলের অনেক গুণ আছে, তবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে মোটেও কার্যকর নয়। এক টেবলচামচ নারকেল তেলে আছে প্রায় ১১৭ ক্য়ালরি, ১৪ গ্রাম টোটাল ফ্য়াট আর ১২ গ্রাম স্য়াচুরেটেড ফ্য়াট। এ বার এক চামচ তেলে ক্ষতি না হলেও, পরিমাণের দিকে যদি নজর দেওয়া না হয়, তা হলে ওজন বাড়তে বাধ্য়।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন শুধু ডায়েট করাই যথেষ্ট নয়, ঠিক খাবার ঠিক পরিমাণে খাওয়াই ওজন কমানোর মূলমন্ত্র।

banglalive logo

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *