বারো বছরের ছেলেটি হঠাৎই কেমন পাল্টে গেছে? যত দিন পাড়ার স্কুলে পড়ছিল, খুব সজীব, সতেজ একটা অস্তিত্ব ছিল তার, পাড়াপড়শি সবাই বলত, ও মা, আজকাল এ রকম হাসিখুশি ছেলে দেখিই না, কী ভাল! কিন্তু এ বছর বড় স্কুলে চান্স পেয়েছে সে, রোজ প্রায় এক ঘণ্টা যাওয়া, এক ঘণ্টা আসা, পুলকারে। স্ট্রেন তো হয়ই, কিন্তু কী আর করা যাবে, আশেপাশে ভাল স্কুল তো নেই তেমন। তো, সেই তার পর থেকেই কেমন যেন হয়ে গেছে ছেলেটা! মুখে হাসি কমে গেছে তার, আগে সারাক্ষণ ছটফট করে ঘুরত, নাচত, খেলত, এমনি এমনিই হইচই করত, এখন অনেক সময়েই চুপ করে বসে থাকে, শুয়েও থাকে বিছানায়, কথায় কথায় তার মুখ গোমড়া হয়ে যায়, চোখে জল আসে, জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলে না, মাঝে মাঝে রাতে ঘুম ভেঙে উঠে বসে, হাঁ করে তাকিয়ে থাকে, বলে স্বপ্ন দেখেছে। চিন্তার ব্যাপার বইকি.এ রকম চিন্তা এখন অনেকেরই। ডাক্তারের কাছেও ভিড় বাড়ছে, ভিড় বাড়ছে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে। উদ্বেগ, অবসাদ ইত্যাদি নানান সমস্যার কোপে পড়েছে শৈশব, বাল্য, কৈশোর, যৌবন। দুই দশক আগেও এত কম বয়সে এ সবের কথা কেউ ভাবত না। এখন আর আমরা এতে অবাক হই না। আমরা সবাই এখন মোটামুটি জেনে গেছি, চার পাশের এই অস্থিরতা, লেখাপড়ার চাপ, বাইরে খেলাধুলোর সুযোগ নেই, সঙ্গীসাথি নেই, এত বেশি মোবাইল আর ট্যাবে মগ্ন শৈশব, এই সব মিলিয়েই অল্পবয়েসিদের মনের স্বাস্থ্যহানি ঘটছে। মানে এর জন্যে যুগের হাওয়া।কথাটা খুব সত্যি, একেবারে আক্ষরিক অর্থেই। বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে এই সত্যের প্রমাণ পেয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনসিনাটিতে, পাশাপাশি অন্য কিছু কিছু জায়গাতেও বিশদ গবেষণা চালিয়ে তাঁরা দেখেছেন, বায়ু দূষণের ফলে কেবল বড়রা নয়, ছোটরাও মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দূষিত বায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবের ব্যাপারটা আগেই প্রমাণিত, কিন্তু ছোটদের মনেও যে সেই প্রভাব ভাল রকম কাজ করে, সেটা এত দিন নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। এখন আর তা নিয়ে কোনও সংশয় থাকল না। এনভায়রনমেন্টাল হেল্থ পার্সপেক্টিভস নামক জার্নালে এ বিষয়ে মূল্যবান গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।পশ্চিম দুনিয়ায় এখন বায়ু দূষণ কমানোর ব্যাপারে অনেক উদ্যোগ হয়েছে, বিশেষ করে গাড়ির ধোঁয়া সেখানে অনেক কম। সেখানেই যদি এই অবস্থা হয়, তবে ভারতের মতো দেশে, কলকাতা বা বেঙ্গালুরুর মতো শহরে ছোটদের মনের ওপর দিয়ে কী কুবাতাস প্রত্যেক দিন বয়ে যাচ্ছে, সেটা ভাবতেও ভয় করে।
স্বতন্ত্র‚ চমকপ্রদ ও মন ভালো করা খবর পেশ করার চেষ্টা করি আমরা | প্রতিবেদন বিষয়ে আপনাদের মতামত জানান 'কমেন্ট' বক্সে | আপডেট পেতে ফলো করুন https://www.facebook.com/banglaliveofficial/