একদিন বিকেলে টোনি স্টার্ক তার আটতলার বারান্দায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিল। এমন সময় দেখে কী… পাড়ার মোড়ে পল্টুদার চায়ের দোকানে দশ বারোজন মিলে জটলা করছে! দেখেই টোনি রেগে কাঁই। এর তো একটা প্রতিকার করা দরকার! তার ডাকে ঘরের কোণে রাখা মুখোশটার চোখে আলো জ্বলে উঠল। তারপরেই উড়ে এল লাল আর সোনালি আর্মার!! টোনির সারা গায়ে নিজে থেকেই আটকে গেল সেই চকচকে বর্ম। আর মুহূর্তে টোনি হয়ে উঠল আয়রন ম্যান! ছ’ ছ’খানা জেটপ্যাক চালিয়ে, চায়ের কাপ টেবিলে ফেলে শোঁওওওওওও করে আটতলা থেকে পল্টুদার দোকানে নেমে এল।
হঠাৎ করে চায়ের দোকানে আয়রন ম্যানকে দেখে সবাই চমকে চোদ্দো! ট্যাঁপা তো চায়ের ভাঁড় উল্টে ফেলে নিজের বারমুডাটাই ভিজিয়ে ফেলল! দত্তবাড়ির বুড়োদাদু আস্তে করে আয়রন ম্যানকে জিজ্ঞেস করলেন, “ও বাবা টোনি, এই অসময়ে তুই আবার কশটিউম পরে চায়ের দোকানে উড়ে এলি কেন? কিচু হইয়েচে নাকি?” আয়রন ম্যান রেগে মেগে বলল, “বলি আক্কেলবুদ্ধি কি সব আলমারিতে তালা দিয়ে রেখে বেরিয়েছ? সবাইকে বার বার টিভিতে-রেডিয়োতে-কাগজে-ফেসবুকে বারণ করা হচ্ছে অকারণে ঘর থেকে বেরতে! আমাদের পুলিশ, ডাক্তার, সাফাইদাদা থেকে শুরু করে সব্বাই এত খাটছে করোনাভাইরাসকে তাড়ানোর জন্য… আর তোমরা এখানে জমায়েত করে তাকে সাধ করে ডেকে আনছ?”
সেই শুনে ও পাড়ার মন্টা মিন মিন করে বলল, “ও টোনিদা, আমরা একটু চা খাব না? একটু আড্ডা দেব না? সারাক্ষণ ঘরে থাকতে ভালো লাগে?” আয়রন ম্য়ান চোখ পাকিয়ে বলল, “অসুখ করলে হাসপাতালে থাকতে কি কারও ভালো লাগে? তাও তো থাকতে হয়! একবার করোনায় ধরলে আড্ডা দেওয়া সারা জীবনের মতো ঘুচে যাবে! তাই পল্টুদা, তুমি এক্ষুণি দোকান বন্ধ করো। আর সব্বাই বাড়ি যাও। দত্তদাদু, চলুন আমি আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসছি।”
বকুনি শুনে মন্টা, ট্যাঁপা, কাল্টু, সেন্টু, ঘোঁতনা সবাই গুটি গুটি চায়ের ভাঁড় বালতিতে ফেলে বাড়ির দিকে পা বাড়াল। সবারই মুখ ব্যাজার। টোনিদা দিল ভেস্তে বিকেলের গোলগাল আড্ডাটা। তাই দেখে আয়রন ম্যান হেসে ফেলল। দত্ত দাদুকে পিঠে বসিয়ে বলল, “ওরে কাল্টু সেন্টু মন্টা, খারাপ করিস না মনটা! যেই করোনা হবে সাবাড়, ব্যাস, আড্ডা হবে আবার!” তারপর জেটপ্যাকের স্যুইচ অন করে বলল, “আমার দিকে দ্যাখ! আমার এই আর্মার গুলিতেও ফুটো হয় না। থরের হাতুড়ির ঘায়েও চিড় খায় না! কিন্তু করোনা সেঁধোতে পারে আর্মার ভেদ করেও। তাই তো এখন ক’দিন বীরত্ব না-দেখিয়ে আর্মার আলমারিতে বন্ধ করে বাড়ি বসে রয়েছি। উড়তে না-পেরে কষ্ট হচ্ছে ঠিকই, তবু গান গেয়ে, ছবি এঁকে, বই পড়ে, ঘরের কাজ করে নিজেকে ঠান্ডা করে রাখছি। দুষ্টু লোকগুলোও ভাগ্যিস ভয়ে বাড়ির বাইরে বেরুচ্ছে না! নইলে তো ওদের শায়েস্তা করতে আমাকে আবার যেতে হত!”
টোনিদার কথা শুনে এতক্ষণে হাসি ফুটল সকলের মুখে। মন্টা বলে উঠল, “টোনিদা, তুমি আমাদের পাড়ার গর্ব! সব মিলকে বোলো আয়রন ম্যান জিন্দাবাদ, করোনা ভাইরাস মুর্দাবাদ!”
পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। তিতিবিরক্ত হতে হতেও আইটি শিল্পতালুকে মজদুরি করতে বাধ্য হন। কিন্তু সবচেয়ে পছন্দের কাজ হাতে মোবাইলটি নিয়ে আলসেমি করে শুয়ে থাকা। চেহারাছবি নিরীহ হলেও হেব্বি ভালোবাসেন অ্যাকশন ফিলিম, সুপারহিরো আর সাই ফাই। সঙ্গে চাই সুরেশের রাবড়ি, চিত্তরঞ্জনের রসগোল্লা-পান্তুয়া, কেষ্টনগরের সরভাজা ইত্যাদি নানাবিধ মিষ্টান্ন।
BaisakhBabu, aapni tow khub i sundor aanken…apnaar ki eta nesha naa ki pesha…bhalo thakben aar notun bochhore apnaake etto aador.
Aar shunun aapni aaro aankbenaar khushi rakhben.