ভ্যান এসে একটা একতলা পাকা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছে। মাল নামিয়ে ভ্যানওলা ডাকল, ’বিকু দাদা, জিনিসগুলো বুঝে নাও।’ ঘর থেকে বেরিয়ে এল চোদ্দো পনেরো বছরের একটি ছেলে। বয়সের তুলনায় বেশ লম্বা, চোখ দুটো ভারী সুন্দর, যেন স্বপ্ন মাখানো। হাতে বই, পড়তে পড়তে উঠে এসেছে মনে হয়। বলল, ‘অত জোরে ডেকো না, সারা সকাল ওষুধ বিলি করেছেন দাদু। একটু শুয়েছেন।’
‘ঠিক আছে বিকুদাদা। কতক ওষুধ পরে আসবে বলে কলকাতার দোকান থেকে আমাকে ফোন করে জানাল। তোমাদের পাচ্ছিল না।’    

একটা বড় হিসেবের কাগজ ছেলেটির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, বুড়োবাবুকে পরে দিও। আর মাকে বোলো টাকা ওরা পেয়ে গিয়েছে। রশিদটা ওই হিসেবের কাগজের মধ্যে আছে।’ সুচারু দেখছে সবটাই। ছেলেটি ওকে একবার দেখে ভেতরে চলে গেল। ভ্যানওলা বলল, ‘বাবু আপনি কোথায় যাবেন কিছু বললেন না তো?’  সুচারু তাড়াতাড়ি ওর ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমি একটু বীরেনবাবুর সঙ্গে দেখা করে আসি। আমি ওঁর ছেলের বন্ধু ছিলাম। অনেক উপকার করেছেন ভাই আমার, আর আটকাব না আপনাকে।’

 ভ্যান চলে যাবার পরেও সুচারু বাইরেই দাঁড়িয়ে রইল। ছেলেটি বোধহয় ভেতর থেকে ওকে দেখতে পেয়ে আবার বাইরে এল। ‘আপনি কি দাদুর সঙ্গে দেখা করতে চান?’
‘হ্যাঁ, না হয় পরেই করি। এখন তো উনি বিশ্রাম করছেন।’
‘আপনি ভেতরে এসে বসবেন?’
‘না, একটু দেখি চারপাশ। ডিসপেনসারি নতুন হয়েছে,তাই না?’
‘পুরনো বাড়ি ছিল দাদুর। সেটা ভেঙে করা হয়েছে।’
‘এ বাড়িতে তুমি আর দাদু থাক?’
‘হ্যাঁ।’
বেশি কথা বিকু এই অপরিচিত ভদ্রলোকের সঙ্গে বলতে চাইছিল না। বরুণা থাকে না? বা অন্য কেউ? ছেলেটিকে এত কথা জিজ্ঞেস করা যায় না।
‘তোমার সঙ্গে একটু গল্প করি। বাইরে বসেই বেশ লাগছে। স্কুলে যাও না? তোমার নাম তো বিকু।’ ‘আমার নাম বিক্রম।’
‘খুব সুন্দর নাম।’
‘আপনি স্কুলের কথা জিজ্ঞেস করলেন। আমি এখানে ইস্কুলে পড়ি। পরীক্ষা হচ্ছে বলে আমাদের ছুটি।’ 

ঘর থেকে বৃদ্ধের গলা শোনা গেল। ‘কার সঙ্গে কথা বলছ দাদুভাই? মা কি তাড়াতাড়ি ফিরে এল কলেজ থেকে?’ ভট ভট আওয়াজ তুলে একটা বাইক এসে থামল। একজন ভদ্রলোক নেমে এলেন। বয়স সুচারুর চাইতে একটু কম হয়তো। বিকু ছুটে গেল, ‘কাকু তুমি আজকে এলে? কাল আসবে বলেছিলে না?’
‘আজ যে বেশ কিছু ওষুধ আসবার দিন। মেসোমশাইয়ের উপর বড্ড চাপ পড়ছে। তাই এলাম।’  সুচারুর দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালেন। বিকু বলল ‘দাদুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।’ সুচারু বুঝতে পারল অপরিচিত একজনকে দেখে ভদ্রলোক অবাক হয়েছেন। ও এগিয়ে এসে বলল, ‘অনেকদিন আগে থাকতাম এখানে। পুরনো জায়গা দেখতে ইচ্ছে হল তাই…’  

‘বেশ করেছেন। মেসোমশাইয়ের কাছে শুনবেন সব পুরনো কথা।’ বিকুর মাথায় হাত বুলিয়ে ওর চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললেন, ‘আমার এই জুনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট খুব সোশ্যাল হয়ে উঠতে পারেনি এখনও। আপনাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসাবে, সে বুদ্ধি হয়নি ওর।’
‘না না ও বলেছিল। আমিই বাইরে বসেছিলাম। ওর দাদু বিশ্রাম করছেন শুনলাম।’
‘মেসোমশাই! আশ্চর্য এনার্জি। চোখে প্রায় দেখতেই পান না। কিন্তু এই বয়েসে ডিস্পেন্সারির কাজ যে ভাবে সামলান!’ বাবা প্রায় অন্ধ হয়ে গিয়েছেন? সুচারুর মুখে একটা কষ্ট আর বিস্ময় মেশান ভাব। ভদ্রলোক লক্ষ্য করে বললেন, ‘অদ্ভুতভাবে মনে রাখেন কোন রুগি কী ওষুধ পাচ্ছে। একজন লোক থাকে, তাকে দিয়ে ওষুধ খুঁজিয়ে নেন।’
‘ডিস্পেন্সারিতে একজন ডাক্তারবাবু বসেন শুনলাম। তিনি কি বাইরে থেকে আসেন?’
‘সে তো এই অধম। শহরে হোমিওপ্যাথিক হাসপাতালে চাকরি, রুগি খুব কম হয় না। তার মধ্যে সময় করে এখানে তিন দিন বসি। বাহনটি আছে বলে যাতায়াতের সুবিধে।’
‘আপনি থাকেন কোথায়?’
‘কেন, এই ছোট্ট বাড়িতে। আমি, বরুণা, বিকু, মেসোমশাই আর আমাদের ওষুধপত্র। দিব্যি কুলিয়ে যায়।’

ঘর থেকে বৃদ্ধের গলা শোনা গেল। ‘কার সঙ্গে কথা বলছ দাদুভাই? মা কি তাড়াতাড়ি ফিরে এল কলেজ থেকে?’ ভট ভট আওয়াজ তুলে একটা বাইক এসে থামল। একজন ভদ্রলোক নেমে এলেন। বয়স সুচারুর চাইতে একটু কম হয়তো। বিকু ছুটে গেল, ‘কাকু তুমি আজকে এলে? কাল আসবে বলেছিলে না?’ 

বরুণার নাম ডাক্তারের মুখে অমন অন্তরঙ্গ সুরে উচ্চারিত হল বলে সুচারু একটু ধাক্কা খেল ভেতরে। বিকু বোধহয় দাদুর ডাকে একবার বাড়ির মধ্যে গিয়েছিল। এসে বলল ‘দাদু ডাকছেন, চা হয়েছে।’ তারপর ডাক্তারকে বলল, ‘তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ় জমিয়ে রেখেছি। ভেতরে চল, বলব।’ সুচারু লক্ষ করছিল, এই মানুষটির সঙ্গে বিকুর সম্পর্কটা আবদারের। ওর অনুপস্থিত বাবার জায়গাটা ভদ্রলোক নিয়ে নিয়েছেন? 

বিকুর চাপাচাপিতে ভেতরে এসে বসল সুচারু। সুচারুর বাবা জামা বদলে এসে বসলেন। আবহাওয়া একটু আতিথ্যগন্ধী। সুচারু ভাবল তাই তো, ও তো এখন অতিথি এখানে। বয়স বলিরেখা ফেলেছে বাবার শরীরে, মুখে। বাবাকে প্রণাম করে উঠে দাঁড়াল যখন, দেখল চশমার মোটা কাচের আড়ালে ঘোলাটে চোখ দুটোতে পরিচয়ের কোনও আলো জ্বলে উঠল না।
‘তোমার নাম কী বাবা? আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছ শুনলাম।’ 

সুচারু মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করে নিল। পরিচয় দেওয়া যাবে না সব কিছু না বুঝে। বাবা চোখে  দেখলে যদিও বা চিনতেন…। মুখে বলল, ‘আমার নাম প্রসাদ। আমি সুচারুর সঙ্গে স্কুলে পড়েছি, কলেজেও দু’বছর এক সেকশনে ছিলাম।’
‘প্রসাদ? মনে পড়ছে না তো ও নামে কাউকে। তবে তোমার গলাটা যেন ভারী চেনা লাগছে।’
‘আমি এসেছি তো আপনাদের বাড়িতে, আগে ছিলেন যেখানে।’
‘এখানকার ঠিকানা পেলে কীভাবে?’
‘ওই জায়গাতে যেতে হয়েছিল একটা কাজে। খোঁজ করছিলাম আপনারা কেউ আছেন কিনা। তখনই জানলাম আপনারা চলে গেছেন।’
‘সুচারু ছিল আরও কিছুদিন। চাকরিও তো ওখান থেকেই করত। ট্রেনে যাওয়া আসা।’
‘হ্যাঁ জানি। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল। ওর বউ ছেলের খোঁজ নিয়েছিলাম, কেউ কিছু বলতে পারেনি।’
‘আমার সঙ্গে আছে ওরা। সুচারুর কোন খবর জান?’
‘না।’ একটু ভেবে সুচারু এই মিথ্যেটাও বলল।
‘এটাই তো মুশকিল। একেবারে বেপাত্তা হয়ে গেল। রাঘব না থাকলে—’
‘রাঘব কে?’ সুচারুর প্রশ্ন। 

অন্য মানুযটি ওষুধের হিসেব লেখা কাগজগুলোর উপর চোখ বোলাচ্ছিলেন, এদিকে ফিরে বললেন, ‘সরি, আমার নামটাই আপনাকে জানানো হয়নি। আমি রাঘব।’

একটা বড় হিসেবের কাগজ ছেলেটির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, বুড়োবাবুকে পরে দিও। আর মাকে বোলো টাকা ওরা পেয়ে গিয়েছে। রশিদটা ওই হিসেবের কাগজের মধ্যে আছে।’ সুচারু দেখছে সবটাই। ছেলেটি ওকে একবার দেখে ভেতরে চলে গেল। ভ্যানওলা বলল, ‘বাবু আপনি কোথায় যাবেন কিছু বললেন না তো?’  সুচারু তাড়াতাড়ি ওর ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমি একটু বীরেনবাবুর সঙ্গে দেখা করে আসি।

এর মধ্যে চা আর চিঁড়েভাজা এসে গিয়েছে। একটি মাঝবয়সী লোক এনে টেবিলে গুছিয়ে রাখল, জিজ্ঞেস করে চিনি মেশাল কাপে কাপে। সুচারু ভাবল, এ-ই বোধহয় রান্নাঘরের দিক সামলায় এ বাড়িতে। বরুণা নেই মানে কোনও চাকরি করছে নিশ্চয়। 

কিন্তু এই ডাক্তার? রাঘব? এর সম্বন্ধে জানতে ইচ্ছে করছে সুচারুর। 

বিকু এসে বসেছে রাঘবের পাশে। সারপ্রাইজ়টা ফিশফিশ করে রাঘবের কানে বলেছে। রাঘব হো হো করে হেসে সবাইকে জানিয়েছেন। ইন্টারস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টে ওদের স্কুল কাপ জিতেছে আর বিকু সবচাইতে বেশি গোল করেছে। এই আনন্দটা ভাগ করবার জন্য ও রাঘবকে বেছে নিয়েছে সবার আগে। খুশির খবরটা দিয়ে বিকু বাইরে খেলতে যাবার অনুমতি আদায় করে নিল দাদুর কাছ থেকে। সুচারুকে শুধু বলল, ‘যাচ্ছি।’ ভদ্রতা! 

‘সুচারুর বউ ছেলে আপনার কাছেই চলে এল।’ 

বৃদ্ধ মানুষটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ’চলে আসা ছাড়া ওদের আর কী উপায় ছিল? বরুণা অল্পবয়সী মেয়ে, ছেলে ছোট– চাকরি তো আর চাইলেই পাওয়া যায় না। তাই আমার কাছেই এল। বরুণা বলল আপনার ছেলের জায়গায় আমি আপনার দেখাশোনা করব। সুচারুর মা তখন চলে গেছেন। আমি একা। সব সমস্যা যায়নি তখনও। সংসারে উপার্জনের প্রয়োজন ছিল, সামান্যই পেনশন আমার।  বরুণা ভেবেছিল একটা স্কুল টিচারি ও পেয়ে যাবে। কিন্তু সুচারুকে খুঁজতে পুলিশ যে ওদের পিছু পিছু এখানেও আসবে, আমরা ভাবিনি। পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছিল। আর জানই তো গ্রামের লোক পুলিশ দেখলে ভয় পায়। ওরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ভয় পেত। বরুণা স্কুলগুলোতে ঘুরে ঘুরেও চাকরি পেল না, বিকুকে কোথাও ভর্তি করা যাচ্ছিল না, তখন রাঘবই এগিয়ে এল রক্ষাকর্তা হয়ে।’

রাঘব বললেন, ’মেসোমশাই, কেন আমাকে লজ্জায় ফেলেন? আমি তো সেই কবে থেকেই আসি আপনার কাছে। হোমিওপ্যাথি পড়তে পড়তে ওষুধ দেওয়ায় হাত পাকিয়েছি আপনার আর মাসিমার উপর পরীক্ষা করে। হ্যাঁ সুচারুদাকে দেখিনি। উনি তো গ্রামে খুব একটা আসতেন না। দেখলাম পুলিশি হুজ্জুতে আপনারা অনর্থক নাজেহাল হচ্ছেন। আমি ততদিনে হোমিওপ্যাথিক হাসপাতালের চাকরিটা পেয়ে গিয়েছি। মেসোমশাইয়ের বাড়িটা সারিয়ে সুরিয়ে একটা ডিসপেনসারি গোছের খুলবার কথা বরুণাই বলল।’ 

সুচারুর অস্বস্তি আবার। কী সহজে বরুণার নাম ধরে কিছু বলতে পারছে রাঘব। 

‘ও নিজেও হোমিওপ্যাথির একটা কোর্স নিয়ে পড়তে চাইল।’ রাঘব জানিয়ে চলেছে।
‘ও-ও?’ সুচারু নিজেকে সংশোধন করে নিল, ‘মানে উনিও ডাক্তার হতে চাইছেন?’ 

‘আমার মতো হাসপাতালে চাকরি করতে ঠিক চায় না। ইচ্ছে এখানেই বসবে। গ্রামে মেয়েদের চিকিৎসা কীরকম নেগলেকটেড হয় আন্দাজ করতেই পারেন। তবে এখনও কলেজ কোর্সের শেষ পরীক্ষা বাকি। তারপর তো প্র্যাকটিস।’ 

রাঘব এমনভাবে কথা বলছে, যেন ওর নিজের পরিবারের কথা জানাচ্ছে একজন অনাত্মীয় মানুষকে। সেই পরিবার রাঘব, বরুণা, বিকু আর সুচারুর বাবাকে নিয়ে সম্পূর্ণ। একটা প্রশ্ন সুচারুর মনে জাগছে। বিকু রাঘবকে কাকু বলছে কেন? রাঘব বরুণাকে বিয়ে করেনি এখনও? কেন? একটু ঘুরিয়ে প্রশ্নটা করেই ফেলল।
‘আচ্ছা, সুচারুর তো কোনও খবর নেই, হয়তো বেঁচেই নেই। বিকুর দাদুর অবর্তমানে এদের কী হবে কিছু ভেবেছেন? আপনিই এদের অভিভাবক এখন। আপনি যদি এখানে না থাকেন মানে আপনার চাকরি বা পরিবারগত কোন প্রয়োজনে –’ 

বৃদ্ধ মানুষটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ’চলে আসা ছাড়া ওদের আর কী উপায় ছিল? বরুণা অল্পবয়সী মেয়ে, ছেলে ছোট– চাকরি তো আর চাইলেই পাওয়া যায় না। তাই আমার কাছেই এল। বরুণা বলল আপনার ছেলের জায়গায় আমি আপনার দেখাশোনা করব। সুচারুর মা তখন চলে গেছেন। আমি একা। সব সমস্যা যায়নি তখনও। সংসারে উপার্জনের প্রয়োজন ছিল, সামান্যই পেনশন আমার।  বরুণা ভেবেছিল একটা স্কুল টিচারি ও পেয়ে যাবে।

‘আমার না থাকবার কোনও কারণ নেই। আমি বিয়ে করিনি। আমার মা-বাবা পৃথিবী ছেড়েছেন দীর্ঘকাল হয়েছে। মিথ্যে বলব না, বরুণা পুরোপুরি আমার উপর নির্ভর করে থাকে আর বিকু আমার সন্তান না হলেও ওর চাইতে আপন আমি কাউকে ভাবি না। একটা পরিবার তৈরি করবার কথা ভাবাই যায়। বরুণাকে আমি বিয়ের প্রস্তাব দিলে ও হয়তো অমত করবে না, তবে মেসোমশাইয়ের বয়েসের কথা ভেবে ওঁকে কোনও আঘাত দিতে চাই না। ওঁর মনে বরুণা আর বিকু সুচারুর স্মৃতির রেশ হয়ে আছে। একটু অপেক্ষাই না হয় করলাম। আর সব সম্পর্কের কি নাম থাকে?’  

না থাকে না। সুচারু বুঝল, যে বৃত্ত থেকে ও  স্বেচ্ছায় ব্রাত্য হয়েছে, সেখানে এখন অন্য লোক। এতদিন পরে এসে জায়গার দাবি জানানোটাই অন্যায়। কেউ তো সত্যিই অপেক্ষা করে নেই। বাবাকে প্রণাম করে উঠে দাঁড়ালো ও।

‘যাই, কলকাতার ট্রেন ধরতে হবে। একবার দেখে গেলাম আপনাদের। ভাল লাগল। ভাল থাকবেন।’

রাঘব বললেন, ‘বরুণা আসা পর্যন্ত বসে যান। আসবার সময় হয়ে গিয়েছে।’
‘দেরি হয়ে যাবে। আমার হয়ে ক্ষমা চেয়ে নেবেন ওঁর কাছে।’ 

বাইরে এসে সুচারু দেখল, যে অটোটায় সওয়ারি হয়নি বলে আসতে চায়নি, সেটা এবার সওয়ারি নিয়ে এসেছে। এগতে গিয়ে দেখল বরুণা। অটোওয়ালা কিছু একটা বলছে ওকে, অল্প অল্প মাথা নাড়াচ্ছে বরুণা। সুচারুকে দেখতে পায়নি। সুচারু দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে স্টেশনের হাঁটাপথ ধরে, এখনও সময় আছে খানিকটা। এত বছর পরে সেতু বাঁধবার চেষ্টা করার মানেই হয় না। সুচারু তার নিজের রাস্তায় হাঁটতে লাগল। সে রাস্তা ওকে নিয়ে যাচ্ছে বরুণা আর বিকুর থেকে অনেক দূরে — শেষবারের মতো।       

 

বৃত্তান্তর পর্ব ৩
বৃত্তান্তর পর্ব ২
বৃত্তান্তর পর্ব ১

স্নিগ্ধা সেন পারিবারিক সূত্রে ওপার বাংলার হলেও আজন্ম কলকাতারই বাসিন্দা। চল্লিশ বছরেরও বেশি ইংরাজি সাহিত্যের অধ্যাপনা করেছেন, প্রথমে ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশনে, এবং পরে একাধিক ওপেন ইউনিভারসিটিতে। সাহিত্যচর্চার শখ বহুদিনের। আশি পেরিয়েও চর্চা চলছে পূর্ণ উদ্যমে। কলকাতার অনেক পত্র পত্রিকায় লেখা বেরিয়েছে - গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ। সাম্প্রতিক প্রকাশিত দুটি বই – ‘হ্যামলেট’ এবং ‘ওদের কি খেতে দেবে’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *