উদয়পুরে রবিবারের দুটো আকর্ষণ ছিল। সকালে মাছের বাজারে হাজিরা দেওয়া ছিল এক আবশ্যিক ব্যাপার। কখনও খবর আসত মাল্লাতালাইতে পিচোলার মাছ এসেছে। সেদিন থাকত বাড়তি উত্তেজনা! এক দৌড়ে সেখানে হাজির বাঙালি মাছের লোভে। কিন্তু মাছের বাজারে বছরে চারমাস বিক্রি বন্ধ থাকত। সেই সময়ে রুটিনে তারতম্য ঘটত। বিকেলের নামচার কিন্তু কোনও পরিবর্তন হত না বছরভর। ঘাটি পেরিয়ে একলিঙ্গজির মন্দির। দেবদর্শনের চেয়ে বেশি আকর্ষণের ছিল মন্দিরের মূল দরজার উল্টোদিকে মির্চি-বড়া বা লংকার চপ। একটা মির্চি-বড়া সেখানে দাঁড়িয়ে খেয়ে ঝালে হুসহুস করতে করতে এক কাপ চা, আর কিছু মির্চি-বড়া সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফেরা। আবার এক চক্কর চায়ের সঙ্গে ‘টা’ হিসেবে খাওয়ার জন্যে। 

তাই উদয়পুরে বাংলা থেকে গয়নার কারিগররা এসেছে খবর পেলেই দৌড়তাম হাতিপোল ছাড়িয়ে সোজা গিয়ে ঘণ্টা-ঘরের মোড়ে, এক সাইডে গাড়ি রেখে। এ বাড়ির উঠোন, ও বাড়ির খিলেন পার হয়ে যখন তাদের মধ্যে গিয়ে পৌঁছতাম, তাদের “হাতের কাজ” শুরু হয়ে গিয়েছে। দশ মিনিটের মধ্যেই আসত একজোড়া বেগুনি আর একজোড়া আলুর চপ।

বাঙালি স্বর্ণকাররা রাজস্থানে পৌঁছলে উদ্বৃত্ত সময়ে সেখানে বাঙালি তেলেভাজা বানাতে বসত কিছু উপরি রোজগার করে নেওয়ার জন্যে। কলকাতা থেকে আসার পথে মুড়ি নিয়ে আসত দিল্লির লালকেল্লার পাশের বাংলাদেশী কলোনি থেকে। আর এমন ব্যবস্থা করে আসত, যাতে মুড়ি শেষ হয়ে এলে ওদের খবর পাঠালে ওরা যেন চেতক এক্সপ্রেসে নতুন মুড়িভর্তি বস্তা তুলে দেয়। সেই চপমুড়ি খেয়ে একটা স্বস্তি হত, এক চেনা স্বাদ মুখে নিয়ে নিজের দেশ, নিজের মাটিকে ফিরে পেতাম খানিকক্ষণের জন্যে হলেও। 

ছত্তিসগড়ের ভাটাপাড়াতে থাকাকালীন মাছের বাজারের গপ্পো ছিল না। রবিবারের সকাল কাটত ল্যাদ খেয়ে। বিকেলের গন্তব্য থাকত স্টেশনের অদূরে আলুবোন্ডার দোকান, যেখানে শহরের মুষ্টিমেয় বাঙালি গুটিগুটি পায়ে রবিবার বিকেলে ঠিক হাজির হত। শহর থেকে বাইরে গেলে কৌরধা-তিলদা মোড়ে গাড়ি থামিয়ে সবজি পকৌড়ি খেতে ভুলে যেতাম না। কিন্তু মন কোথায় যেন খুঁতখুঁত করত- তেলেভাজা খাচ্ছি, কিন্তু খাচ্ছি না গোছের। ভাটাপাড়ায় একটাই দুর্গাপুজো হত। আর একটাই কালীপুজো। প্রত্যেক বছর এক মৃৎশিল্পী রথের দিন আসতেন সেখানে ঠাকুর বানাতে। সেই শিল্পীর জোগাড়ে মানুষটি ছুটির দিনে আর বাদলার বিকেলে তেলেভাজা বানাতে বসতেন বঙ্গসমাজের বারান্দায়। আর সব স্থানীয় বাঙালিরা দুর্যোগ ভুলে ঠিক সেখানে হাজির হত। কী আছে এই বাঙালি তেলেভাজায় যা বড়া বা পকৌড়িতে বাঙালিরা পায় না, দীর্ঘদিন সে দেশে বসবাস করেও? কচৌরি, ভাজি, বড়া, টিক্কা বা পকৌড়ি তো ভারতবর্ষের অন্য জায়গায় কম হয় না! তবে কিসের জন্যে বাঙালি চপ তেলেভাজা অন্যদের থেকে আলাদা? 

Chops in the shop
আলুর চাকা বেসনে ডুবিয়ে ছাঁকা তেলে ভাজলেই কেল্লাফতে

আসলে, আমরা বাঙালিরা চিরকালই একটু অন্যরকম, খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে। উত্তরভারতের রান্নায় যেমন মোগলাই খানার প্রভাব পড়েছিল, বাংলাতে তেমন সাহেবি খাবারের প্রভাব পড়েছিল শহর কলকাতার আদিকাল থেকে। বিলেত থেকে আসা সাহেবরা চপ কাটলেট খেতেন আর বাঙালি আড়চোখে জুলজুল করে চেয়ে দেখত- বিধর্মী খাবার যে! লন্ডনের ভোজনবিলাসীরা ভেড়া আর শুয়োরের পাঁজরের পাশের মাংস দিয়ে চপ বানালো। আর তার স্বাদ এত মোলায়েম যে সাহেবরা কলকাতায় এসেও ভুলতে পারল না। ইংরেজিতে ‘চপ্‌’ মানে ফালি করে কাটা। সেখান থেকে খাবারের নামই ‘চপ’ হয়ে গেল। ধর্মসঙ্কটে পড়া বঙ্গসন্তানদের জিভ থেকে জল পড়তে লাগল সেই খাবার দেখে। এদিকে এই সব কেষ্টর জীব মেরে খেলে খেলে যে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে! 

চাহিদাই উদ্ভাবনের কারণ, নাকি নোলা সুড়সুড় নতুন খাবার আবিষ্কারের কারণ, সেটা নিয়ে মাথা খারাপ না করে বাঙালি আবিষ্কার করে ফেলল যে, বেগুনের ফালি, কুমড়োর ফালি বেসনে ডুবিয়ে মুচমুচে করে ভাজলে সেটাও কিন্তু বেশ চপের মতোই হয়! অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা ইতিমধ্যে যে মটন চপ খেতে শুরু করেছে, সেটা দেখতে লখনউয়ের শামি কাবাবের বেরাদরের মতো। আর ভারতীয় স্বাদটা বজায় রাখতে কিমার সঙ্গে মাখছে ধনেপাতা। তারপর পাউরুটির গুঁড়ো মাখিয়ে ভাজছে। কিন্তু সেই জমানার মধ্যবিত্ত বাঙালি হেঁসেলে কিমা আর পাঁউরুটি, দুটোই নিষিদ্ধ খাবার। তাতে কী? আলু চটকে তাতে সামান্য মশলা মাখিয়ে, তাকে বেসনের লেইতে ডুবিয়ে ছাঁকা তেলে ভেজে দিব্যি বাঙালিরা আলুর চপ বানিয়ে ফেলল, যা খেতে অতি সরেস!

মজা পেয়ে বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ এবার ঝাঁপিয়ে পড়ল সবজিবাজারে! পেঁয়াজি, ফুলুরি থেকে শুরু করে মোচার চপ, ফুলকপির বড়া, হিঞ্চে শাকের চপ, পাঁচমিশেলি সবজির চপ (সায়েবি নাম ভেজিটেবিল চপ)– সবই বানিয়ে ফেলল। সবার আকৃতি কি আর সাহেবদের চপের মতো? এক্কেবারেই না। কিন্তু কী এসে যায়? আসল ব্যাপারটা হচ্ছে রসনা। খেতে ভাল লাগলেই হল! তাই চপ তার নামের পাশে ‘তেলেভাজা’ শব্দটা বসিয়ে নিজের ব্যাপ্তি বাড়িয়ে নিল। পেটের তাগিদে আশপাশের রাজ্য থেকে কলকাতায় আসা মানুষজন রোজগারের একটা রাস্তা খুঁজে পেয়ে চপ-তেলেভাজার পসরা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ল শহরের কোণে কোণে। 

Potato fritters or Alur chop
গরম তেলে আলুর চপ!

মিষ্টি যদি সিনেমা হয়, চপ-তেলেভাজা হচ্ছে টিভি সিরিয়াল। মিষ্টির জগতে তাই উত্তম-সৌমিত্র সুচিত্রা-সাবিত্রী থেকে শুরু করে দেব-জিৎ-কোয়েল-পাওলি সব্বাইকে পাওয়া যায়, তাদের ফ্যান-ক্লাবে ফ্যান বোঁবোঁ করে ঘোরে। চপ-তেলেভাজা কিন্তু এক্কেবারে শোবার ঘর অবধি পৌঁছে গিয়েছে। মেঘলা দিনে বালিসে ঠেস দিয়ে টিভি সিরিয়াল দেখতে দেখতে কোনও নাম না জানা অভিনেতার কেরামতি দেখে পাশের প্লেটে রাখা বেগুনিতে কামড় দিয়ে যখন মুখ দিয়ে “বাঃ!” শব্দটা বেরিয়ে আসে, সেটা নাম না জানা দোকানের চপ-তেলেভাজার জন্যে, নাকি নাম-না-জানা অভিনেতার কাজ তারিফ করে, সেটা বলা মুস্কিল। চপের দোকান মানুষের মুখে পরিচিতি পায়। খুব কম চপের দোকানকে লোকে নাম দিয়ে চেনে। কিন্তু তাতেও অনিতা কানওয়ার, রাম কাপুর বা ওপরাহ উইনফ্রেও কেউ কেউ হয়, যারা সিনেমা না করে, টিভির দৌলতেই তুমুল জনপ্রিয় হয়েছে। 

kalika the snack shop
সূর্য সেন স্ট্রিটের বিখ্যাত চপের দোকান কালিকা

যেমন সূর্য সেন স্ট্রিটের কালিকাআজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগে কালীপুজোর দিন যাত্রা শুরু বলে নাম কালিকা। এমন একটা জায়গায় দোকানের লোকেশন, এক্কেবারে শুরু থেকেই সুপার হিট্‌। চারপাশের মেসবাড়ির আবাসিক থেকে শুরু করে কলেজ ফেরত ছাত্রছাত্রী, অফিসফেরত শিয়ালদামুখী মানুষ, সব্বাই হোঁচট খেতে লাগল এই দোকানের আলুর চপ, মোচার চপ, বেগুনি আর ফুলুরির টানে। পরবর্তীকালে মাংসের চপ, মাছের চপ, ডিমের চপও লিস্টিতে যোগ হল। আর সেগুলো জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দিল। আজও সন্ধ্যে সাতটায় কালিকায় পৌঁছুলে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়, সব চপই প্রায় শেষ! 

কিছু দোকান আছে যাদের নাম “বরণীয় বাঙালি”দের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। উদাহরণ দেওয়া যাক। বরানগর বাজারের কাছে ফাগুলাল সাউয়ের দোকান থেকে গিরীশ ঘোষ নাকি চপ খেতেন আর রামকৃষ্ণের জন্যে সেই নিরামিষ তেলেভাজা নিয়ে যেতেন। সেই ফাগুলাল সাউয়ের দোকান ‘মুখোরুচি’ নামে আজও রমরমিয়ে চলছে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিধান সরণির লক্ষ্মীনারায়ণ সাউয়ের দোকানের চপ খেতে ভালোবাসতেন। তাই সেই দোকান ‘নেতাজীর চপের দোকান’ বলে লোকে বেশি চেনে। নেতাজির জন্মদিনে আজও বিনাপয়সায় চপ বিতরণ করা হয়। হরিশ মুখার্জি স্ট্রিটে নরেন্দ্রর দোকান বিখ্যাত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ওই দোকানের চপের প্রতি আবাল্য অনুরাগের জন্য। 

Kalika Non veg chop
কালিকার বৈশিষ্ট্য – নিরামিষ ও আমিষ চপের সহাবস্থান

ঢাকুরিয়ার ‘জিহ্বার জল’ কিন্তু কোনও নামী মানুষের নামের সঙ্গে না জড়িয়েই বিখ্যাত হয়েছিল, কালিকার মতো। কলকাতার অন্য তীর্থস্থানের মতো বিডন স্ট্রিটের কাশীরামের দোকান বা বাগবাজার স্ট্রিটের পটলার দোকান, এণ্টালির শ্যামলবাবুর দোকান স্বাদের গুণেই তেলেভাজাপ্রেমীদের কাছে ঠোক্কর খাওয়ার জায়গা হয়ে গিয়েছে। পটলার দোকানের লড়াইয়ের চপ, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে সমানভাবে জনপ্রিয়, খাওয়ার জন্যে মেট্রো করে লোকে খেতে আসে কলকাতার দক্ষিণপ্রান্ত থেকে। আপনজন বা নিরঞ্জন আগারের মতো দোকানদের কথা এখানে না-ই বা বললাম!

এই চপের দোকানগুলোর তো কয়েকটার নাম জানি, কয়েকটা মালিকের নামে বিখ্যাত। কিন্তু মানিকতলা মোড়ের অদূরে, শীতলা মন্দিরের দুই পাশে যে দুটো চপের দোকান ছিল, তাদের তো ঠিকুজি কুষ্টি কিচ্ছু জানতাম না! না দোকানের, না কারিগরের! তবু ওপরে ছড়ানো মশলার আর চাটনির রঙ দেখে বোঝা যেত কোন দোকান থেকে কেনা মোচার চপ! ঢাকুরিয়া রথবাড়ির কাছে পাম্পহাউসের পাশে যে ফুলুরিওয়ালা ফুলুরি বিক্রি করত, সেটা কিনতে যাদবপুর থেকে লোকে চলে আসত; আমার বন্ধু তথা বিখ্যাত ফিল্ম পরিচালক প্রেমেন্দুবিকাশ চাকীর ঠাকুরদা “নির্ঘাত আফিম মেশায়, না হলে এত বিক্রি হয় কী করে!” বলে রোজ বিকেলে ওই ফুলুরিতে কামড় বসাতেন। যাদবপুর স্টেশন রোডের কাছে চালপট্টিতে ঢোকার মুখে এক ভদ্রলোক অফিস থেকে ফেরার পথে রোজ বসে বেগুনি বিক্রি করতেন। তাঁর বেগুনি হত সবুজ গেরস্ত বেগুনের। তিনি যখন বেগুনির জন্য ফালি কাটতেন, অবাক বিস্ময়ে দেখতাম। কিশোরবেলার সেই মুচমুচে বেগুনির কথা আজও চাকীর সঙ্গে আড্ডায় ফিরে ফিরে আসে। 

Laxminarayan Shaw chop
বিধান সরণির বিখ্যাত নিরামিষ চপের দোকান লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ

পাইকপাড়া ইন্দ্রলোক হাউসিং পেরিয়ে টালা পার্কের দিকে যেতে বাঁদিকে দুটো দোকানের সামনে আজও লোকে গাড়ি দাঁড় করিয়ে আলুর চপ, পেঁয়াজি নিয়ে বাড়ি যায়। শুধু বর্ষাকালে না, সারা বছরই। আনোয়ার শাহ রোডে লর্ডসের মোড় থেকে দূরদর্শন কেন্দ্রর দিকে বেঁকে অটোস্ট্যান্ডের পাশে বাবা আর মেয়ে একটা চপের দোকান চালাতেন। সেখানে আলুর চপ, বেগুনি ছাড়াও শীতকালে একটা ফুলকপির চপ পাওয়া যেত, যা এক কথায় অনবদ্য। কলকাতার বাইরে থাকাকালীন কয়েকদিনের জন্যে কলকাতা এলে লটে মাছের চপের লোভে পৌঁছে যেতাম এক জায়গায়– ত্রিধারার দুর্গাপুজো যেখানে হয়, সেখান থেকে মনোহরপুকুরের দিকে কয়েক পা গেলেই একটা দোকান! ঢাকুরিয়ার ‘জিহ্বার জল’, সুকিয়া স্ট্রিটের ‘গীতিকা’ বা মানিকতলা বাজারের মুখে চপের দোকান থেকে লোকে ধোঁকা আলাদা করে কিনে নিয়ে যায় বাড়িতে ধোঁকার ডালনা রান্না করবে বলে! 

The vegetarian variety at Laxminarayan Shaw
এখানকার নিরামিষ চপ তৈরি হয় পেঁয়াজরসুন ছাড়া

পূর্ণদাস রোডের আজাদহিন্দ ধাবার উল্টোদিকে মাসির দোকানে চপমুড়ি খেতে ওই রাস্তায় গেলেই দাঁড়িয়ে পড়া যায়। ঠিক এমনই পাওয়া শেক্সপিয়ার সরণির ওপর কলামন্দির থেকে বিড়লা গার্লস কলেজের দিকে অল্প হাঁটলে এক ফুটপাথের দোকান।  হরি ঘোষ স্ট্রিটে ‘বোমা’ বা ‘বোমার চপ’ কয়েক প্রজন্ম খেয়ে চলেছে। কোন্নগরের ভণ্ডুলের দোকানের ‘বোমা’ খেতে গঙ্গা পার হয়েও লোকে ভিড় জমায়। যাইহোক, এখানে এবার থামা উচিৎ- কোন্নগর আপাতত শেষ স্টেশন হোক।

ডালহৌসি চত্বরের কথা এই লেখাতে বলা মুস্কিল, কারণ কার কথা বলতে কাকে বাদ দিয়ে ফেলে বাকি জীবন পাপবোধে ভুগব! এমনিতেই কলকাতার অলিতে গলিতে পাওয়া অজস্র চপ-তেলেভাজার দোকানের কথা বাদ থেকে গেল! নিরামিষ আর আমিষ চপ একইসঙ্গে একই দোকানে বিক্রির ঝুঁকি কালিকা, এণ্টালির শ্যামলবাবু, আর মনোহরপুকুরের দোকানটা ছাড়া খুব কম দোকানই নিয়েছে। বাকি দোকানগুলো নিরামিষ চপ-তেলেভাজা নিয়েই চার-ছয় মেরে চলেছে বছরের পর বছর। যদিও লক্ষ্মীনারায়ণ সাউয়ের মতো কেউ কেউ কুচো নিমকি, পাপড়ি, চানাচুরও রাখে আজকাল।

চপ নিয়ে লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যাদবপুর ক্যান্টিনে মিলনদার ঢপের চপ, স্কটিশ চার্চ কলেজের ক্যান্টিনের গোপালদা আর প্রেসিডেন্সি কলেজ ক্যান্টিনের প্রমোদদার ভেজিটেবিল চপ আর মেডিকেল কলেজ ক্যান্টিনের হাফ ডিমের চপের কথা না লিখলে, যেগুলো বয়েসকালে খেয়েছি বলে চপ নিয়ে লেখার জন্য আজও বেঁচে আছি! 

Chop with Puffed rice
চপের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। পেঁয়াজ লঙ্কা সরষের তেল দিয়ে মাখা মুড়ি

শেষ করব করব ভেবেও হাতটা সুড়সুড় করছে দুটো অভিজ্ঞতা বলতে। একসময় অফিসে যাওয়ার পথে বাসে করে প্রত্যেক সোমবার বর্ধমানের তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ডে নামতাম। সেখানে চপ ভাজছে অনেক জায়গায়, আর সঙ্গে মুড়ি বিক্রি হচ্ছে। লোকে মুড়ি কিনছে, তাতে জলের ঝাপটা দিয়ে নরম করে গরম চপ মেখে খাচ্ছে। খাওয়ার ধরন দেখে শহুরে রসনা চমকে উঠলেও সাহস করে খেয়েছিলাম। জানি না, শহুরে মানুষ হজম করতে পারবে কিনা– কিন্তু এর স্বাদ সত্যিই অনন্য। আর একবার কালনা কলেজের সামনে একটা দোকানে দেখেছিলাম টোম্যাটো থেকে বাঁধাকপি- প্রায় সমস্ত সবজিরই চপ পাওয়া যায়। দোকানে গিয়ে বললে ভেজে দেয়। পায়ে পায়ে এগোচ্ছিলাম, আমার বিচক্ষণ ভাই চিণ্টু আমায় টেনে ধরে বলেছিল “দাদা যাস না! আমাদেরও ভেজে দেবে!” 

পুনশ্চ: এই কোভিডের বাজারে জানি না এই সমস্ত দোকান এখন আর আছে কিনা। নাকি মানিকতলার দোকানদুটোর মতো হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সবকটাই ছিল! আলুর চপের দিব্বি!   

 

*ছবি সৌজন্য: তীর্থঙ্কর দেব ও অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়

পেশার তাগিদে সার্ভিস সেক্টর বিশেষজ্ঞ, নেশা আর বাঁচার তাগিদে বই পড়া আর আড্ডা দেওয়া। পত্রপত্রিকায় রম্যরচনা থেকে রুপোলি পর্দায় অভিনয়, ধর্মেও আছেন জিরাফেও আছেন তিনি। খেতে ভালোবাসেন বলে কি খাবারের ইতিহাস খুঁড়ে চলেন? পিনাকী ভট্টাচার্য কিন্তু সবচেয়ে ভালোবাসেন ঘুমোতে।

5 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *