প্রবাল আর ভাস্বতী। মার্কিন মুলুকে তাঁদের সুখের সংসারে যখন সুখের ভাঁড়ারে টান পড়তে শুরু করে, সকলের আগে কাঁপন লেগেছিল ছোট্ট মেয়ে তিতলির মনে। বাবা-মায়ের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের ছায়াটা যে সরে যেতে পারে মাথার উপর থেকে, সে কথা কি কল্পনা করতে পেরেছিল একরত্তি মানুষটা? টের পেলেও কি কিছু করার ছিল তার? দীর্ঘ আইনি টানাপোড়েনের পর মেয়ের কাস্টডি নিয়ে আমেরিকা ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন ভাস্বতী। কিন্তু মেয়েকে ছেড়ে দিতে চাননি প্রবালও। তাই প্রাণপণ চেষ্টায় আটকাতে চেয়েছেন ভাস্বতীকে। তিতলির জন্ম আমেরিকায়। সে মার্কিন নাগরিক। এই যুক্তিতে তার চলে যাওয়া আটকাতে দ্বারস্থ হয়েছেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের। কিন্তু সরকারি স্তরেও কিছু করা যায়নি। কারণ ভারত ‘হেগ অপহরণ চুক্তি’তে সই করেনি। এ ব্যাপারে আমেরিকার সঙ্গে তাদের কোনও রকম আইনি সমঝোতা নেই। ফলে মেয়েকে নিজের কাছে রাখার সমস্ত আইনি চেষ্টা বিফলে যায় প্রবালের। তাহলে উপায়? সে কি নিজের মেয়েকে অপহরণ করবে? সে কি বেআইনি পথে চরিতার্থ করতে চাইবে নিজের অপত্যস্নেহ? সে কি পারবে সফল হতে?
এমনই বহু নিরুত্তর, অস্বস্তিকর অথচ চরম প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন তোলে ‘অপহরণ’। সুদীপ্ত ভৌমিকের লেখা এবং সৌমেন্দু ভট্টাচার্য পরিচালিত নাটক অপহরণ, যার বীজ বোনা হয়েছিল সুদূর নিউ জার্সিতে। তাঁদের দল একটা (ECTA) এই নাটকের একাধিক মঞ্চসফল শো করেছে নিউ জার্সি এবং ডেলাওয়্যারে। সেই নাটক এই প্রথমবার আসছে বাংলায়। বাংলার দর্শকদের জন্য। চলতি বছরের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত চলবে ‘অপহরণ’-এর একাধিক প্রযোজনা, কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন মঞ্চে। প্রথম অভিনয় হবে ২৭ ডিসেম্বর গোবরডাঙা সংস্কৃতি কেন্দ্রে, তাদের সপ্তম জাতীয় নাট্যোৎসব রঙ্গ যাত্রা-তে। পরের দিন ২৮ ডিসেম্বর দুপুর তিনটেয় কলকাতার একাডেমি অফ ফাইন আর্টসে অনীক নাট্যদল আয়োজিত গঙ্গা যমুনা নাট্যোৎসবে হবে দ্বিতীয় অভিনয়। ২৯ ডিসেম্বর টলি ক্লাবে পরবর্তী অভিনয় সন্ধে সাড়ে ছটায়। ২ জানুয়ারি সন্ধেয সাড়ে ছ’টায় মিনার্ভা থিয়েটারে পূর্ব পশ্চিম নাট্যদলের আমন্ত্রণে আরেকটি অভিনয় হবে।
ECTA-র তরফে জানানো হয়, ‘অপহরণ’ একটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক সামাজিক সমস্যার মুখ হয়ে উঠতে চেয়েছে। কাস্টডির লড়াইয়ে হেরে যাওয়া বাবা-মায়েরা যে অনেকক্ষেত্রেই সন্তানকে ফিরে পেতে আইনের রাস্তা এড়িয়ে অন্ধকার রাস্তা বেছে নেন, বা বলা ভাল, বেছে নিতে বাধ্য হন, সে ব্যাপারেই আলেকপাত করতে চায় এই নাটক। কাটাছেঁড়া করতে চায় ‘ডিভোর্স’ নামক সামাজিক সমস্যার শিকড় নিয়ে, যেখানে টান পড়লে নড়বড়ে হয়ে পড়ে বিয়ের চৌহদ্দিতে বাঁধা থাকা একরত্তিদের জীবন। সত্যিই কি কোনও শিশুর পক্ষে বাবা নাহয় মা-কে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব? কাকে বেছে নেবে সে? কী করে সে বুঝবে তার বেড়ে ওঠার পক্ষে সবচেয়ে বেশি সহায়ক হবে কে? বাবা না মা? আইন কি সত্যিই এ ব্যাপারে শেষ কথা বলতে পারে? আইন কি বোঝে শিশুর মানসিক গঠন, তার ইচ্ছে-অনিচ্ছে, বাবা-মায়ের অপত্যস্নেহের গভীরতা? কতটা মরিয়া হলে একজন বাবা বা মা আইনের চোখ এড়িয়ে সন্তানকে কাছে পাবার চেষ্টা করে? এই সব প্রশ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া করে অপহরণ। এবং শেষমেশ এই জিজ্ঞাসাও রাখে যে এ সবের স্পষ্ট, একমাত্রিক, সাদা-কালো জবাব দেওয়া কি আদৌ সম্ভব? ‘অপহরণ’-এর বিষয়ে আরও জানতে এবং মিনার্ভার শো-এর টিকিট অনলাইনে বুক করতে চোখ রাখুন এখানে – https://banglalive.today/event/bengali-drama-apaharan-by-ecta-new-jersey/
লিখতে শিখেই লুক থ্রু! লিখতে লিখতেই বড় হওয়া। লিখতে লিখতেই বুড়ো। গান ভালবেসে গান আর ত্বকের যত্ন মোটে নিতে পারেন না। আলুভাতে আর ডেভিলড ক্র্যাব বাঁচার রসদ। বাংলা বই, বাংলা গান আর মিঠাপাত্তি পান ছাড়া জীবন আলুনিসম বোধ হয়। ঝর্ণাকলম, ফ্রিজ ম্যাগনেট আর বেডস্যুইচ – এ তিনের লোভ ভয়ঙ্কর!!