***

বেটসু-তে চার বছর ইঞ্জিনিয়ারিং, পরের বছর বিএসএনএল-এর সরকারি চাকরি, আর তার তিন বছর পর দুম করেই কারও সঙ্গে কোনও পরামর্শ না করে চাকরি ছেড়ে দেওয়া – একমাত্র কন্যাসন্তানের মতিগতি ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেন না মা-বাবাও। দ্যুতিদীপার বাবা জানতে চেয়েছিলেন,
-এখন কী করবে?
-মাস-কমিউনিকেশন পড়ব ওপেন ইউনিভার্সিটিতে। আর চাকরি খুঁজব। ফর আ টাইম বিইং।
-বেশ। তাহলে এ বাড়ির বাইরে গিয়ে খোঁজো।
বাপ-মেয়ের অপ্রতিরোধ্য জেদের কাছে গোপনে কান্নাকাটি করা ছাড়া দ্যুতিদীপার মায়ের আর কোনও রাস্তা ছিল না। দ্যুতিদীপা বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথম দশদিন এক বন্ধু ও বন্ধুপত্নীর বাড়িতে থেকেছিল। তারাই আলাপ করিয়ে দিয়েছিল ধীমানের সঙ্গে। ট্রাভেল এজেন্সির কারণে ধীমানের বিস্তর চেনাশোনা। বড়সড় আবাসনে একটা এক কামরার ভাড়ার ফ্ল্যাটের বন্দোবস্ত, গ্যাসের কানেকশন, সেকেন্ড হ্যান্ড ফ্রিজ, বন্ধুদের সহযোগিতায় এক এক করে জুটে যাচ্ছিল সবই। নতুন ফ্ল্যাটে প্রথম পাঁচ মাস সঞ্চিত অর্থে দিনযাপন। তখন ধীমান আর ওর দূর সম্পর্কের ভাই পার্থজিৎ ফ্ল্যাটে দেখা করতে আসার সময় প্রায়ই বাজার করে এনে দিত। টাকা দিতে চাইলে বলত, “লিখে রাখ, চাকরি পেয়ে শোধ করে দিস।” ষষ্ঠ মাসের মাথায় একটা অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এজেন্সির চাকরি। কলেজে পড়ার সময় ফটোগ্রাফিতে ডিপ্লোমার সার্টিফিকেটটা বিস্তর উপকারে দিয়েছিল। তিনমাস ইনটার্নশিপের পর ওই কোম্পানিতেই চাকরি পাকা হয়ে গেল দ্যুতিদীপার। বছর তিনেক হল সে এই অ্যাড এজেন্সিতে। ন’মাসে ছ’মাসে বাড়ি যায়। মূলত মাকে দেখতে। বাড়ি ছাড়ার পর এই তার চতুর্থ পুজো। দু’বছরে দু’বার ইনক্রিমেন্ট হয়েছে। মায়ের জন্য ঢাকাই জামদানি কিনবে এবার। অনেক পুরনো একটা ছিল মায়ের, পেস্তা-গ্রিন, ফেঁসে গেছে।

ধীমানের ফোনটা যখন এল, দ্যুতিদীপা অফিসে কাজের চাপে বিপর্যস্ত হয়ে আছে। একটা ডিটারজেন্টের শুট চলছে নিচের ফ্লোরে। চার লাইনের জিঙ্গল লিখে দিয়েছিল, বড়কর্তাদের পছন্দ হয়নি। দু’বার ফোন কেটে দিয়েছিল দ্যুতিদীপা। সঙ্গে সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ এলো- ‘খুব দরকার’। কিউবিকল থেকে বেরিয়ে দ্যুতিদীপা লিফটে নেমে অফিসের বাইরে এল। ব্যাপারটা কী! বাইরে মিড-সেপ্টেম্বরের ঠা ঠা রোদ্দুর। মন্টুদার দোকান থেকে লাল চা নিয়ে ‘লিখে রাখো’ বলেই ধীমানকে ফোন করল। প্রথমে বেজে গেল পুরোটা। তিন মিনিটের মধ্যে রিং ব্যাক। দ্যুতিদীপা চায়ের ভাঁড়ে শেষ চুমুক দিচ্ছে।

-কত তাড়াতাড়ি বেরোতে পারবি অফিস থেকে?
-মানে!
-পনেরো মিনিটে যাচ্ছি। গিয়ে বলছি। তুই কাজ মিটিয়ে নে।
কিছুই বুঝতে পারছে না দ্যুতিদীপা। একেবারে লস্ট লাগছে। পার্থজিৎকে একটা ফোন করা দরকার।
-হ্যালো, বল।
-কী ঘটেছে কিছু জানিস? ধীমানদা এইমাত্র ফোন করল…l
-বিতনুদা আইসিইউ-তে… দীপু তুই দাঁড়া আমি আসছি।
কথা বলতে বলতে দ্যুতিদীপা বসে পড়েছে রাস্তার মাঝামাঝি একটা বাঁধানো ডিভাইডারের ওপর। আট, না না, ন’দিন আগেই ও-বাড়ি গেল দ্যুতিদীপা। বিতনুদা বললেন বড্ড গা গোলাচ্ছে। বাড়িতে ওমেপ্রাজল আর ডোমপেরিডনের কম্বিনেশন রাখাই ছিল। দ্যুতিদীপা গুছিয়ে রাখে এইসব, প্রায় এক বছর যাবৎ। গ্লাসে জল ঢেলে বিতনুর হাতের তালুতে ওষুধ রাখল দ্যুতিদীপা। আধঘণ্টা বসল। রহিমার রান্না টেবিলে ঢাকা দেওয়া। ঠাম্মা আর মিতালি ভেতরের ঘরে সিরিয়াল দেখছেন। বিতনুদা বললেন, “অনেকটা সুস্থ লাগছে এখন।”
-পুজোয় কী নেবেন বললেন না তো? পাঞ্জাবি?
-তোমার যা ইচ্ছে দিও।
-আমাকে নেবেন? হাহা করে হাসতে হাসতে বলে ওঠে চপল যুবতী। বৃদ্ধ-তরুণ মাথা নিচু করে বসে থাকেন। লজ্জা পেলে তাঁর গালে লালচে আভা খেলে যায় আজও। এই ন’দিনে ফোনে আর মেসেজে কথা হয়েছে চার-পাঁচবার। স্বাভাবিক কথা, কুশল বিনিময়, যেমনটা হয়ে থাকে। মেসেজগুলো দেখছে দ্যুতিদীপা।

বারোই সেপ্টেম্বর: ফিরেছেন? চা খেয়েছেন?
-হ্যাঁ এই একটু আগে। তুমি ফিরলে?
-এখনও না। আজ বেরোতেই নটা বেজে যাবে।
-সেকি! বাড়ি গিয়ে খেয়ে শুয়ে পোড়ও তাড়াতাড়ি।
-আপনিও দেরি করবেন না। ভালোবাসি…l

আটই সেপ্টেম্বর: বিতনুদা, পত্রিকার লেখাটা পড়লেন? কী অদ্ভুত জীবন ছিল না, মহিলার? কত স্ট্রাগল।
-পড়েছি সকালেই। আমি জানতাম তোমার মেসেজ আসবে।
-আপনি তো জানেন আমায়, অনেকটা।
-জানতে চেষ্টা করি মাত্র। এত সহজে কি তোমার তল পাওয়া যায়?’

ছয়ই সেপ্টেম্বর: আর বমি পায়নি তো আজ? অফিসে বেরোনোর দরকার নেই। ফোন করে দিন। রেস্ট নিন।
-আমি ঠিক আছি। চিন্তা কোরও না। বিকেলের দিকে একবার ঘুরে আসব ভাবছি। মিটিং আছে।
-বড্ড অবাধ্য আপনি। মা বকে না?
-হা হা। এই তো বকছে।

হলুদ ট্যাক্সি অফিসের সামনে থামে। অনতিদূর থেকে ধীমান দ্যুতিদীপাকে দেখতে পায়। হাত ধরে তাকে ডিভাইডারের ওপর থেকে তোলে।
-পাগল হয়ে গেলি নাকি! আয় ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। ভেঙে পড়লে চলবে?
-পার্থ আসবে…l
-হ্যাঁ ফোন করল একটু আগেই। চা খাবি একটা?
-কী করে এসব… ধীমানদা…!
-অফিসে ঢুকছিলেন দু’টো নাগাদ। বাস থেকে নামার সময় মাথা ঘুরে পড়ে যান। গলির মোড়ে প্রায় সব দোকানেই উনি চেনামুখ। তারা ধরে তুলে বেঞ্চে শুইয়ে দেয়। অফিস থেকে লোকজন ডেকে আনে। কলিগরা অ্যাম্বুলেন্সে করে নার্সিং হোমে নিয়ে আসে।
পার্থজিৎ এসে ট্যাক্সির পিছনের সিটে বসে পড়ে। পাশে দ্যুতিদীপা। সামনে ধীমান। -তোমাকে খবর দিল কে? গায়ত্রী? দ্যুতিদীপা জানতে চায়।
-সহকর্মীরা ভর্তি করার পর বৌদিকে ফোনে জানায়। বৌদি আমাকে ফোন করেন। মেঘও কলেজ থেকে রওনা হয়ে পড়েছে শুনলাম।
দ্যুতিদীপার ডানহাতের ওপর পার্থজিৎ আলতো হাত রাখে। গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে দ্যুতিদীপার।

লাউঞ্জে অনেক ভিড়ভাট্টা। তার মধ্যেই একটা চেয়ারে বসে আছেন গায়ত্রী, দু’হাতের ওপর চিবুক রেখে। পাশের চেয়ারে ওঁর এক অল্পবয়সী মহিলা সহকর্মী। ধীমান ওঁদের দিকে এগিয়ে যায়। দু’মিনিট কথা বলে, আবার ফিরে আসে। রিসেপশনের সামনে দাঁড়িয়ে ওরা তিনজন।
-মেঘের আসতে এখনও ঘণ্টা দুই।
-কেমন আছে? দ্যুতিদীপা জানতে চায়।
-জ্ঞান ফেরেনি। দেখা যাক। দু’টো ভিজিটিং কার্ড দিয়েছে ওয়ার্ড থেকে। একটা বৌদির কাছে, আর একটা তোরা রাখ। ক্লায়েন্ট মিটিং সেরে আমি সন্ধেয় আসব। ধীমান ওই হলুদ ট্যাক্সিতেই বেরিয়ে যায় গন্তব্যের দিকে। আজ তো শুক্রবার। দ্যুতিদীপা সন্ধেয় যাবে ভেবেছিল বিতনুর কাছে। ফোনে একবার বিতনু বলেছিল তার হলুদ পাঞ্জাবি পছন্দ, যেরকম হলুদ ব্যাগি টপ পরে দ্যুতিদীপা আসে মাঝেমধ্যে। আগামীকাল কিনত হয়ত।

গায়ত্রী একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাদের দিকে তাকান। অল্প হাসেন কি? দ্যুতিদীপা বুঝতে পারে না। পার্থজিৎ দ্যুতিদীপাকে দাঁড় করিয়ে রেখে একটা বিস্কুটের প্যাকেট কিনে আনে। নিজেরা খায়, এগিয়ে গিয়ে গায়ত্রী আর তাঁর সহকর্মীকেও দিয়ে আসে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দু’টো সিট খালি হতেই পার্থজিৎ ঝটিতি দখল করে নেয় চেয়ার। দ্যুতিদীপা অসংখ্য মানুষের মুখ দেখতে থাকে। লিফ্টম্যানের তিতিবিরক্ত মুখ, চড়া লিপস্টিক পরা রিসেপশনিস্টের ভাবলেশহীন মুখ, এবং অগণিত নিকটজনেদের উদ্বিগ্ন, সন্ত্রস্ত মুখ। অসুখ, অর্থব্যয়, বিচ্ছেদের ভারে ক্লিষ্ট মানুষেরা অধীর অপেক্ষায় বসে থাকে এইখানে, এই লাউঞ্জে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামতে থাকে। দ্যুতিদীপা বিক্ষিপ্তভাবে কথা বলে চলে পার্থজিতের সঙ্গে। একটা চেনা কণ্ঠস্বর শুনে মুখ তুলে তাকায়। অদ্বয়। মায়ের কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে। তাদের দেখতে পেয়ে হাত নাড়ে একবার। কিছুক্ষণের মধ্যেই ধীমান আর বিতনুর দুজন সহকর্মী এসে পৌঁছয়।
-জ্ঞান ফিরেছে?
-নাহ – পার্থ উত্তর দেয়।
-রাতে তো এখানে বসে থেকে লাভ নেই। ধীমান তুমি বৌদিকে নিয়ে এগিয়ে পড়ো। দেখি অদ্বয় কী করে। বিতনুর প্রৌঢ় সহকর্মী বলেন। গায়ত্রী অদ্বয়কে একা রেখে যেতে চায় না। ফলত একে একে বেরিয়ে পড়ে সকলেই। দ্যুতিদীপা বসে থাকে, আর দীপুর জন্য তার ভ্রাতৃপ্রতিম বন্ধু, পার্থ। পৌনে ন’টা নাগাদ বেসরকারি ক্যান্টিনে একগাদা টাকাপয়সা দিয়ে রুমালি রুটি আর চিকেন কারি খায় ওরা। আর প্রতি এক ঘন্টা অন্তর রিসেপশনে গিয়ে জিগ্গেস করতে থাকে, থার্ড ফ্লোর আইসিইউ বেড নম্বর একুশ – পেশেন্ট কেমন আছেন?

চতুর্থবার দ্বিতীয় শিফটের রিসেপশনিস্ট একটু বিরক্ত হয়েই জবাব দেন, “আপনারা বসুন। জ্ঞান ফিরলে আপনাদের জানানো হবে।” রাত বাড়ে। মানুষের সমাগম কমতে থাকে লাউঞ্জে। ডিনারের দেড় ঘন্টা পর ঠিক বারোটা বাজলে বিতনুদা দুটো সিডেটিভ খান – ভাবে দ্যুতিদীপা। অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসের আগে বিতনু মোটেই এত নিয়মনিষ্ঠ ছিলেন না। পার্থজিৎ সামনের ফাঁকা চেয়ারে পা তুলে একটু হেলান দিয়ে বসেছে। কানে ইয়ারফোন গোঁজা। দ্যুতিদীপা পুরনো এসএমএস-এ চোখ বোলায় আবার। বিতনু ছাড়া আর কেউ তাকে এসএমএস করেনা। সকলেই তো হোয়াটসঅ্যাপ করে।

অগস্ট মাস – তুমুল বৃষ্টির সন্ধেয় বিতনু লেখেন:
-বাড়ি ফিরেছ? ভেজোনি তো?
-অল্প। কী করে জানলেন?
-আন্দাজ করেছিলাম। ছাতা নিয়ে তো তুমি বেরোবে না। ওষুধ খেয়ে নাও একটু।
-মাথা মুছিয়ে দিন আমার।
-এসো।’
এই একটা শব্দ, মাত্র একটা শব্দের জন্য দ্যুতিদীপা পৃথিবীর যাবতীয় নিয়ম-নিষেধ-যুদ্ধ-প্রেম-ন্যায়-অন্যায়কে উপেক্ষা করে চলে যেতে পারে। বসতে পারে তাঁর মুখোমুখি, যা সে কখনও বসেনি অদ্যবধি। আর বসে বলতে পারে- ‘আমাকে নেবেন?’ তিনি বলবেন- ‘এসো।’ উঠুন বিতনুদা, আমাদের এখনও কত কথা বাকি!

শহুরে হাসপাতালে দ্রুত ভোর হয়। শেষরাতে সামান্য চোখ লেগে গিয়েছিল দ্যুতিদীপার। উঠেই সে সোজা রিসেপশনের দিকে যায়। “থার্ড ফ্লোর, আইসিইউ, বেড নম্বর একুশ – কোনও আপডেট?”
-মিস্টার সান্যাল তো? হ্যাঁ আমরা তো পাঁচটা দশে বাড়ির লোককে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি ওনার জ্ঞান এসেছে। ওঁরা এসেও পড়েছেন হয়তো, গিয়ে দেখুন। -ওহ…!
দ্যুতিদীপার ডানহাতের রিস্ট ওয়াচে পাঁচটা বাহান্ন। ভিজিটিং কার্ড দেখিয়ে এলিভেটরে ওঠে। থার্ড ফ্লোরের দরজা খুলে ভিজিটিং কার্ড দেখাতে, কর্তব্যরত নার্স বলেন, “ওঁকে তো এইমাত্র বাড়ির লোকের সঙ্গে কেবিনে পাঠানো হল, একটা ফ্লোর নিচে নেমে যান। নিচে গিয়ে ডানদিকের প্রথম ঘর।” দ্যুতিদীপা দ্রুত, খুব দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে তার পরম কাঙ্ক্ষিত মুখটুকু দেখবে বলে। কেবিনের দরজায় ঢোকার আগে ঈষৎ থমকে যায়। শায়িত বিতনু, গায়ে সবজেটে চাদর। পায়ের কাছে বেডের রেলিঙে হাতের ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে অদ্বয়। বিছানায় গা ঘেঁষে বসে আছেন গায়ত্রী। পরস্পর মুখোমুখি। গায়ত্রীর ডানহাত বিতনুর বুকের ওপরে, বাঁহাতের আঙুল মৃদু বোলাচ্ছেন বিতনুর ধূসর চুলের মধ্যে। বিতনু একহাতে জড়িয়ে রেখেছেন গায়ত্রীর একটা হাত। অন্যহাতে ফ্লুইডের চ্যানেল। পর্দার আড়াল থেকে দু’জনের নিবিষ্ট কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে, কিন্তু শব্দগুলো অস্পষ্ট। বাড়ির লোক… বাড়ির লোক… ভাদ্রের সকালের আলো ও-বাড়িতে কেমন হয় দ্যুতিদীপা জানে না। ছেড়ে চলে যাওয়ার পনেরো বছর পরেও, গায়ত্রী জানে। কিছু আলো সুস্থির, পুরাতন বৃক্ষের মতো।

লাউঞ্জে বসে এখনও ঘুমোচ্ছে পার্থজিৎ। দ্যুতিদীপা হসপিটালের গেটের কাছে এসে সেলফোন থেকে এগারো সংখ্যার ল্যান্ডলাইন নম্বর ডায়াল করে। ওপ্রান্তে প্রৌঢ় পুরুষকণ্ঠ ফোন ধরেন। দ্যুতিদীপা প্রায় অস্ফুটে বলে –
-হ্যালো
-তিতির? কী ব্যাপার?
-এমনিই।
-এত সকালে তো তুই উঠিস না!
-তাতে কী? তুমি তো ওঠো।
-কিছু বলবি?
-বাবা, আজ বাড়ি যাব?

কয়েক সেকেন্ডের নৈঃশব্দ… বাড়ির ফোনের অন্যপ্রান্ত থেকে ভেসে আসে,
-এসো।

অবন্তিকা পাল। জন্ম ১৭ জুন ১৯৮৬, হাওড়া। কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জে.বি.রায়. স্টেট আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হসপিটাল থেকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক। স্নাতকোত্তর স্তরে মনস্তত্ত্বের পাঠ দ্বিতীয় বর্ষে অসমাপ্ত থেকে গেছে। তবে লেখার পরিসরে সমাজবিজ্ঞান ও মানবাধিকার চর্চা অব্যাহত। কবিতার সঙ্গে নৈকট্য আশৈশব। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ২০১৩-তে। ২০১৭-এ প্রথম প্রবন্ধের বই। প্রথম সারির বাংলা দৈনিক, একাধিক জনপ্রিয় পত্রিকা ও ওয়েবম্যাগাজিনে তাঁর নিবন্ধ প্রকাশিত হয় নিয়মিতভাবে। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সময়ে কবি ফৈজ আহমেদ ফৈজ-এর সর্বজনবিদিত 'হম দেখেঙ্গে' (দেখে নেবো আমরাই) কবিতাটির বাংলা অনুবাদ করে অবন্তিকা জাতীয় স্তরের সংবাদমাধ্যমেও জায়গা করে নিয়েছেন।