গিন্নিমা বাপের বাড়ি তো, হেঁশেল-পাকে লকডাউন। তবে সে ব্যাপারেও তারতম্য বিস্তর। দেখতে হবে কোন বয়সের গিন্নি এবং কী কারণে এই বাপের বাড়ি যাওয়া! আর সে যাওয়ায় সঙ্গীসাথী কারা! ঠিক এভাবেই বাপের বাড়ি আসাটাও তো এর সঙ্গে ভীষণ ভাবে সেঁটে আছে।
কচি বউ বাপের বাড়ি যাবে! তা যাক; বাপ, মা, ভাই, বোন, সঙ্গী-সাথী চিরজীবনের মতো সব ছেড়ে এসেছে; দিন কতক না হয় ঘুরে আসুক; সংসারে মন বসবে। মা তো বলেই খালাস, কত্তামশাইও অরাজি নন। এদিকে মুহ্যমান মুষড়ে পড়া ভাবখানি নিয়ে তার নতুন বরটির শুধু ঘুরঘুর আর ঘুরঘুর। গিন্নিমায়েরও বেজুত ঠেকছে, যা হোক হাতে হাতে তো গুছিয়ে দিত, ফুটফরমাশেও ‘না’ বলত না। দৌড়ে ছুটে কাজ করবার ধাঁচটাও যেন হেঁশেল থেকে উবে গেল।
দ্বিতীয় পর্ব ছিল, বাচ্চা হতে বাপের বাড়ি। এখানে অবশ্য আর বউয়ের ইচ্ছেয় নয়, সামাজিক প্রথায়। বউ ‘পোয়াতি’ হলেই বাপের বাড়ি। কারণ এ বাবদ যাবতীয় খরচ বেয়াই বাড়ির। ‘পেটে বয়ে নিয়ে যাবে, আর ছেলে কোলে ফিরে আসবে’ – এমনই বিধান। এই বউ যখন প্রথম পোয়াতি, তখন একবার হেঁশেল টলবে; কারণ ইতিমধ্যে সবাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে তার শ্রম ও সেবায়। তবু, মন্দের ভালো ভেবেই বউকে রেখে আসা বাপের ঘরে। অন্তত প্রথম পোয়াতি তো যাবেই যাবে। তারপরের সবকটা এন্ডিগেন্ডি না হয় এ বাড়িতেই, কারণ প্রথম নাতি নাতনি ছেড়ে থাকতে তো বুক আবার ভেঙে খানখান হয়ে যাবে।
অন্য এক পর্বেও যে বাপের বাড়ি যাওয়া, তা হল হঠাৎ দুঃসংবাদ পেয়ে। বিশেষত মৃত্যু। আমার ঠাকুরদার মৃত্যুতে, বাবার জ্যাঠার ছেলে, আমাদের জ্যাঠামণি খড়দা থেকে সোজা কুষ্টিয়া চলে গেলেন, মেজপিসিমাকে আনতে। সে সময় তাঁর চার ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে একা হাতেই সংসার সামলালেন পিসেমশাই। এরকম সব অসময়ে, হেঁশেল সামলানো সত্যিই এক দায় হয়ে দাঁড়াত; তবে অন্যান্য আত্মীয় পরিজন এবং পরিচারিকা থাকায় আবার সামলেও যেত। গিন্নি যখন সব ফেলে এক বস্ত্রে বাপের বাড়ি ছুটে যেতেন, তখন সে এক হৈহৈ রব; যার একটাই সশব্দ প্রকাশ – ‘এখন উপায়?’ এরকম হুড়মুড় যাওয়া যে কত দেখেছি! আবার সংসারের অসুবিধে হবে বলে, গিন্নিকে ছাড়া হয়নি, তাও দেখেছি।
আমার ঠাকুমা প্রিয়লতা এবং দিদিমা ক্ষণপ্রভাকে দেখেছি ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে লুকিয়ে চোখের জল ফেলতে। জলপাইগুড়ির ‘খ্যাঁদা’ বা মালদার ‘জগা’ – এঁদের কারও মৃত্যুসংবাদেই বাড়ির কারও মনে হয়নি যে, দিদিদের একবার তাঁদের বাপের বাড়ি নিয়ে যাওয়া উচিত। ফলে সেই ছোটবেলা থেকে আমার তিরিশ- বত্রিশ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকা ঠাকুমা বা দিদিমা– এঁদের কাউকেই কখনও বাপের বাড়ি যেতে দেখিনি। সেই সব কিশোরী বয়সে বিয়ে হয়ে আসা বউরা কবে যেন এ বাড়ির সম্পত্তি হয়ে গেছে। আর তাঁদেরও মুখে সেই এক রা– সংসার ফেলে যাই কী করে!

তবে কর্তাদের জোর থাকলে, সোহাগি গিন্নিরা বেশ ঝমর ঝমর করেই বাপের বাড়ি যেতেন, চাল চুলোর হিসেব অন্যের হাতে সঁপে দিয়ে। আর তা কখনই এক মাসের কম নয়। বাপের বাড়িতে বিয়ে বা অন্নপ্রাশন মানেই সে এক জম্পেশ জাঁক। কর্তা সবই মানছেন, দেখছেন; কিন্তু আমল দিচ্ছেন না। কারণ তাঁর শুধু অর্থদণ্ডই তো নয়, আরাম আয়েশেরও তো হের ফের হবে বিস্তর। ঠিক সময় চুন ভেজানো জল, কুচনো হরতুকি, দু’পিঠ সমান ভাজা পেটির মাছখানি, নরম করে নাড়া চাল পটল- এসব কি অন্যের হাতে রুচবে! চেয়ে চিনতে হাল্লাক হলেও ভুলে মেরে দেবে অন্যেরা। একটাই ভরসা, যে যাবার আগে অনেকটাই গুছিয়ে রেখে যাবেন, আর ‘পইপই’ করে বলে দিয়ে অন্যের মাথায় গজাল দিয়ে গুঁজেও যাবেন।
অবিবাহিত দেওর-ননদরা নতুন বউদিকে নিয়ে মজা করবে। কোনওদিন এটা কম, তো অন্য দিন ওটা বেশি। নতুন গিন্নির কাছে গোপনে আবদার জানাবে তার বর। থিয়েটার সিনেমা দেখে ফেরার পথে একটু কেনা খাবারও আনা হবে, যোগ হবে রান্নার বই দেখে বানানো সালাদ –পুডিং, যা আসল গিন্নি থাকলে মোটেও হত না। শ্বশুরকে সময় মতো খাইয়ে দিয়ে, চাঁদের আলোয় ছাদের এক কোণে আসর বসবে। বউদিকে গান গাইবার জন্য জোরাজুরি করবে দেওর-ননদরা। ডেপুটেশন পিরিয়ডে নতুন গিন্নি যেমন হালচাল শিখে যাবে, তেমনি বইয়ে দেবে ছুটির হাওয়া। নিয়ম না হয় একটু কম কম হবে; একটু বেশি পোড়া লাগবে বাসনে, সময়ের হেরফেরে অশুদ্ধ হবে না মহাভারত, বামুনদিদি ওস্তাদি করবে ভুল বারে মোচা রান্না বা বেগুন পড়ানোর জন্যে, দু’একটা জিনিস হারাবে, কিছু ভাঙবে ছটফটানিতে, তবু জারি থাকবে অল্পবয়সীদের পিকনিক – যা প্রায় হেঁশেলেরই মতো।
অন্য এক পর্বেও যে বাপের বাড়ি যাওয়া, তা হল হঠাৎ দুঃসংবাদ পেয়ে। বিশেষত মৃত্যু। আমার ঠাকুরদার মৃত্যুতে, বাবার জ্যাঠার ছেলে, আমাদের জ্যাঠামণি খড়দা থেকে সোজা কুষ্টিয়া চলে গেলেন, মেজপিসিমাকে আনতে। সে সময় তাঁর চার ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে একা হাতেই সংসার সামলালেন পিসেমশাই।
আর অন্যদিকে মাঝারি সাইজ বালক বালিকারা এই সুযোগে ঘুরে আসবে জেঠিমার বাপের বাড়ি বা কাকিমার মামার বাড়ি। আলুর ঝালুর সম্পর্কে বেড়েই যাবে সমবয়সী বন্ধু আর পরিচিতের দল। আসল গিন্নি ফিরবেন একবোঝা নতুন জিনিসপত্রে এটা সেটা নিয়ে, আর ক্রমে বুঝবেন যে তাঁর সেই ‘পইপই’ করে বলে যাওয়ার ধার শুধু তাঁর কর্তাটিই ধারেন, বাকিরা ভেসেছে ছুটির আমোদে। গিন্নি বুদ্ধিমতী হলে ছাড় দেবেন তাঁর কর্তৃত্বে; এরপর থেকে কর্তাকে রাজি করাবেন, আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি দু’জনে গিয়ে মাঝে মাঝেই ছুটি কাটিয়ে আসবার জন্যে। আর এর উল্টোটা হলে ফিরে এসেই এমন দাপাদাপি করে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধাবেন গিন্নিমা, যেন সকলেই পেটে গামছা বেঁধে খিদে চেপে কাল কাটিয়েছে। তবে যে গোত্রের গিন্নিই হোন না কেন, কর্তাটি যদি অসাবধানে বলে ফেলেন, বউমা তোমার রান্নার হাতটিই পেয়েছেন, বা বড় ছেলে যদি বলে যে, মাংসটা তো এবার থেকে আমার বউকে রাঁধতে দিলেই পারো – ব্যস আর রক্ষেটি নেই, ফোঁস ফোঁস ফ্যাঁচ – ‘বেশ! এই চললুম বাপের বাড়ি।’
আমার মামার বাড়ি যেমন আড়ে দিঘে মিলিয়ে মস্ত এক পরিবার, তেমন তার নাটকীয়তাও দেখবার মতন। বড় মেসো তাঁর ‘শোভা’কে চোখে হারাতেন, তাই তাঁদের তিন ছেলে মেয়ে এবং পোষা কুকুর ‘জনি’ সমেত আলিগড় থেকে চলে আসতেন খড়দায়। বড় মাসির হেঁশেল আসত কয়েকটা পেল্লায় ট্রাঙ্কে বন্দি হয়ে। তাঁকে তাই সব সময় হুঁশিয়ার থাকতে হত, স্বামীর সবরকম তদারকিতে। তবে মেজোমাসি মাঝে মাঝেই তাঁর পরিচারক রাখাল বা হাত নুটকো স্বপনদাকে সঙ্গে নিয়ে খড়দায় বাপের বাড়ি চলে আসতেন বরের ওপর মান করে; মেজো মেসো বাড়ি ফিরে ছেলে মেয়ের কাছে সব শোনামাত্রই, সকালের ঝগড়া ভুলে বউ নিতে হাজির এবং মান ভাঙাতে সঙ্গে থাকত মিঠাপাতি পান এবং গায়ে মাখার ‘বসন্ত মালতী’। মাসির রান্না ছাড়া আর কারও রান্না নাকি তাঁর নাকের তলা দিয়ে গলত না। সেজো মাসি রেগেমেগে একাই ট্যাক্সি ডেকে চলে এসে বলতেন, ‘ওরে ওই পাষণ্ডটার কাছে আমাকে আর পাঠাসনি, একটা ভাল উকিল পাচ্ছি না বলে, এখনও একসঙ্গে আছি।’
তখন না মোবাইল, না ঘরে ঘরে টেলিফোন। পরদিন বড়মামার অফিসে পৌঁছনোর অপেক্ষা; সেজো মেসোর ফোন, ‘উনি কি এখনও খড়দায়, না তুমি কলকাতার বাসায় ওঁকে দিয়ে গেছ?’ হাওয়া সুবিধের নয় বুঝলেই অফিস কামাই করে, সোজা খড়দা। মাসি তখন ভোল বদলে মামিদের বলবে, ‘তোদের ছোড়দা নিশ্চয় না খেয়ে এসেছে। এত বেলায় আর ভাত না দিয়ে বরং খান তিরিশেক লুচিই ভেজে দে।’ আর আমার মায়ের যেহেতু একই পাড়ায় শ্বশুরবাড়ি এবং বাপের ঘর, মায়ের তাই বড় দুঃখ ছিল যে, জুত করে বাপের বাড়ি থাকা হল না। মনে আছে, মা একবার তিনদিনের ছুটিতে আমাদের দু’বোনকে নিয়ে দাদুর বাড়ি থাকতে এলেন। পৌঁছে দিতে এসে বাবা প্রায় রাত দশটা অবধি কাটিয়ে এমন মুখ করে ফিরে গেলেন, যেন শ্বশুরবাড়ি ফিরতে হচ্ছে; পরদিন বিকেলে ঠাকুমা চলে এলেন দেখা করতে। কিছুক্ষণ পরেই বাবা এসে বললেন, ‘বাড়ি চল, একরাত এখানে কাটিয়েছ এই ঢের।’
গিন্নি বুদ্ধিমতী হলে ছাড় দেবেন তাঁর কর্তৃত্বে; এরপর থেকে কর্তাকে রাজি করাবেন, আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি দু’জনে গিয়ে মাঝে মাঝেই ছুটি কাটিয়ে আসবার জন্যে। আর এর উল্টোটা হলে ফিরে এসেই এমন দাপাদাপি করে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধাবেন গিন্নিমা, যেন সকলেই পেটে গামছা বেঁধে খিদে চেপে কাল কাটিয়েছে।
তবে বাপের বাড়ির খেলা জমে যেত দিদিমাকে নিয়ে। শুনেছি, মায়ের কথায় বালিকা বউকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে, বেজায় মনমরা ভাব কাটাতে রোজ নাকি দিদিমার ছবির সঙ্গে দাদামশাই শুধু যে কথা বলে যেতেন তাই নয়, সেই ছবিকে নিজের পাত থেকে বাঁচিয়ে, মাছ-ভাত-ক্ষীরও খাওয়াতেন। দিদিমার বারোটি ছেলে মেয়ের মধ্যে দু’জন বাচ্চা বেলাতেই মারা যায়। মায়ের কাছে শুনেছি, দাদুর সঙ্গে ঝগড়া হলেই নাকি তিনি কোলেরটিকে ট্যাঁকে, তার বড়টিকে হাতে এবং আর একটু বড়টিকে আঁচলের খুঁট ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি ছাড়তেন। বাকি তিনজন আর একটু বড় হওয়ায় তারা বাড়ি ছাড়ত না বটে, তবে এমন শোরগোল তুলত যে দাদামশাই বাধ্য হতেন তাঁকে মাঝ রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনতে।

আমি বড় হয়ে দেখেছি, দিদিমার, মাঝে মাঝেই এ মেয়ে নয় ও মেয়ের বাড়ি গিয়ে বেশ অনেকদিন করে থাকা। দু’একদিন কাটতে না কাটতেই মেয়েদের বাড়ি দাদামশাইয়ের লোক যেত, না হয়তো তাঁর একটি মোক্ষম চিঠি… ‘পত্রপাঠ পূর্বক তোমাদের মাকে, মানে আমার পরিবারকে ফেরত করার ব্যবস্থা কর।’ দিদিমা ফিরে এলেই বলতেন, ‘উইকেড উয়োমান ফিরে এয়েচেন; উনি কিন্তু ভাল করেই জানেন যে বউরা আসলে নারকেলের নুনঠিকরি আর চালতা চুরটা তেমন জমাতে পারে না।’ হায় রে! কচি বেলায় সেই ফটোকে খাওয়ানো তাঁর আদরের ‘মন্টু’ হয়ে গেল ‘উইকেড উয়োমান’ এবং তাকে খাওয়ানোর বদলে হয়ে দাঁড়াল – ‘পরিবার’ মানেই খাব খাব আয়েশ।
একালে এই বাপেরবাড়ি ব্যাপারটাই অন্যরকম হয়ে গেছে। ইদানীং ছেলে-বউ দু’জনেই প্রবাসে বা বিদেশে থাকে বলে যখন তারা বাড়ি ফেরে, যে যার বাপের বাড়ি চলে যায়। ছেলে বউ আমেরিকা থেকে দেশে ফিরল, তাদের কুচো ছানা নিয়ে; তো ছানা সমেত বউ চলে গেল তার বাপের বাড়ি বেঙ্গালুরু, আর ছেলে তার মায়ের বাড়ি সোনারপুর। ফিরে যাবার আগে দিন দু’য়েকের জন্য ছানাটিকে নিয়ে শ্বশুর শাশুড়ির কাছে থাকতে এল বউ। তাছাড়াও আজকাল তো মা-বাবা দু’জনেই ছেলেমেয়েদের কাছে থাকতে, ‘বাপের বাড়ি’ সমেত চলে যান, তাদের প্রবাস বা বিদেশের বাড়িতে মাসের পর মাস ছুটি কাটাতে। আরও এক রকম যা ব্যাপার হয়েছে, তা হল ছেলেমেয়েরা আজকাল বসবাসের ফ্ল্যাট ছাড়াও, বাড়তি আর একটা আস্তানা করে রাখছে, ছুটিছাটায় থাকবার জন্যে। এখানে কোনও মানুষ নয়, বাড়িটাই অপেক্ষা করে থাকে, কবে আবার মানুষের গন্ধ পাওয়া যাবে! যাকগে, বাপের বাড়ি না হোক আরও একটা বাড়তি বাড়ি তো বটে! এখনকার সব দিক সামলানো মেয়েদের কাছে তাদের নিজের মনের সজীবতাই হল বাপের বাড়ি, আর সেই মনকে আদর আত্তি দিয়ে যত্নে গুছিয়ে রাখার দায়ও তো তাদের কাঁধে।
হচ্ছিল সেকেলে কথা, তাই প্রাচীন সময়ে বাপের বাড়ি থেকে লেখা, এক গিন্নির চিঠির নমুনা দিয়ে, বানান অপরিবর্তিত রেখে, শেষ করি আমার এই হেঁশেল কাঁথার নকশাটি। চিঠিটি আমার ঠাকুরদার মাসি হেমলতার লেখা; তাঁর বাপের বাড়ি আনুলিয়া থেকে লিখছেন, খড়দার শ্বশুরবাড়িতে তাঁর বর সুরেন্দ্রকে। সাল, আনুমানিক – ১৮৯০, প্রথম সন্তান বাদলকে কোলে নিয়ে সম্ভবত দ্বিতীয়বার সন্তানসম্ভবা হলে বাপের বাড়ি আনুলিয়া থেকে, যেখানে তখন ম্যালেরিয়ার প্রচণ্ড প্রকোপ। চিঠিটি তাঁর নাতি, আমার কাকা অঋণ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে পাওয়া। ।
প্রাণাধিক, আনুলিয়া ৪ঠা অক্টোবর
আজ সকালে তোমার পত্র পাইয়াছি। বাদল পূর্বাপেক্ষা ভাল আছে। নিয়ম মতো ঔষধ খাইয়াছে। গণেশবাবু প্রত্যহ দেখেন না, যেদিন জ্বর হয় তাঁহার বাড়ি গিয়া দেখাইয়া আসি। জ্বর রাত্রেই বেশি হয়, সকালে কমে। যাক্ তাহার জন্যে ভাবনা নাই, যত ভাবনা তোমারই জন্য। বিশেষত তুমি আবার খামখেয়ালী মানুষ। একটু ভাল থাকিলেই হয়তো ঔষধ খাওয়া বন্ধ করিবে। বৃহস্পতিবার কলকাতায় যাইতেছ, ডাক্তার কি বলেন, বদলাইয়া দেন কিনা জানিতে ইচ্ছা করে। বাদলের পেনি এবং টুপি কিনিয়া বাবার নিকটেই দিও। উনি ১৮ই অক্টোবর বাড়ী আসিবেন। সেই মতো ষ্টেশনে তুলিয়া দিলেও হইতে পারে। টুপি গত বৎসর যে প্রকার কিনিয়াছো সেই প্রকার দিবে। নীল লাল অথবা যে কোনও রংয়ের হউক না কেন আপত্তি নাই। জ্বর চারিদিকে ছড়াইয়াছে। ওখানেও জ্বর হইতেছে শুনিয়া ভাবিত রহিলাম। সাবধানে থাকিও। তোমার শারীরিক সংবাদ সমুদয় লিখিও। চোকের এবং সর্বাঙ্গের হলুদ বর্ণ গিয়াছে কিনা, শরীরে কিরূপ বল পাও ইত্যাদি।
তারপর – তোমার পত্রের শেষ কয়েক ছত্রে যাহা লিখিয়াছো তাহার আর উত্তর কি দিব? আমার নভেলীয়ানা নাই, লোক দেখানো নাই। তাই তুমি আমার এ নীরব ভালবাসা বোঝনা। আমার মত যে ভালবাসিতে না জানে সে আমার ভালবাসার গভীরতা কিরূপে বুঝিবে? “ভালবাসি ভালবাসি” করিলেই বুঝি বেশী ভালবাসা জানান হয়!
মা ভাল আছেন। এবার রক্ত আমাশয় এক বিষয়ে বড়ই কষ্ট পাইয়াছেন।
তুমি কাহিল মানুষ – আলিঙ্গন না করিয়া চুম্বনই ভাল।
আজ বিদায়
তোমারই হেম
আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান।
ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।
লেখা ও চিঠির যুগলবন্দী ভারি চমৎকার। পুরনো-নতুন,সাবেক-আধুনিক সবটাকে মিলিয়ে দিল।বাপের বাড়ির দ্যোতনা এখানে দাম্পত্য সম্পর্ক এ রঙফেরানো আবার কখনো মুক্তির আস্বাদও বটে।
আদর নিও শ্রাবন্তী
আপনার লেখা পড়তে এত ভাল লাগে! অপূর্ব আপনার লেখা দিয়ে ছবি আঁকার ক্ষমতা।
ধন্যবাদ দয়িতা।
ভারি সুন্দর চিত্রকল্প
আনন্দ পেলাম।
ভারি সুন্দর লেখা । সব যেন চোখে ভাসে ।
ধন্যবাদ
সেই সব দিনের গন্ধ নিলাম বুক ভ’রে আপনার লেখার মাধ্যমে। ভালো তো লাগেই, বড্ড মন কেমনও করে। অনেক দিন পর বসন্ত মালতীর উল্লেখ আরোও নস্টালজিক করে দিল।
ভারি আনন্দ পেলাম। এসব জানতে ইচ্ছেও তো করে