ডাক্তারি পড়তে এসে একটা জিনিস প্রথমেই বুঝে গেল সুমন্ত্র। আগে মানুষের শরীরটাকে চিনতে হবে। ভালভাবে বুঝতে হবে। তবে না ডাক্তারি! ডাক্তারির প্রথম শিক্ষাবর্ষেই শিখতে হবে শারীরবিদ্যা। ইংরেজিতে যাকে বলে অ্যানাটমি। তবে অস্বস্তির ব্যাপারটা হল অ্যানাটমি শিখতে গেলে মৃতদেহ কাটতে হবে। এটাই যা ঝক্বি!
হোস্টেলে ঢুকেই বন্ধু হল অনেক। নতুন মেডিকেল কলেজ। নতুন বন্ধু। গ্রামের ছেলে সুমন্ত্র। নদীয়ার চাপড়াতে ওদের বাড়ি। চাপড়ায় এখনও গ্রাম্যভাব রয়ে গেছে। কাজেই শহরের ঝাঁ চকচকে মেডিকেল কলেজে পড়তে এসে প্রথমেই একটু হকচকিয়ে গেল সুমন্ত্র। বেশিরভাগ বন্ধু ইংরেজি মিডিয়াম থেকে এসেছে। ফটাফট ইংরেজি বলে। বাংলা মাধ্যম বলে একটু কুণ্ঠিত হয়ে থাকে সুমন্ত্র। অ্যানাটমি ক্লাস নেন আসাদ স্যার। পড়ান খুবই ভাল কিন্তু বার বার বলেন, যে অ্যানাটমি মুখস্থ করার বিদ্যা নয়। ভাষা কোনও সমস্যা নয়। সে ইংরেজিই হোক কিংবা বাংলা। বিষয়টা জানতে হবে।
“তাহলে কী করব স্যার ?”
“মড়া কাটবি। রোজ ক্লাসের শেষে ডিসেকশন করবি নিজের হাতে।”
সুমন্ত্র থতমত খেয়ে গেল।
“পারব স্যার ?”
“কেন পারবি না ? একটা নতুন বিষয় কোনও না কোনওদিন তো শুরু করতেই হয়। মৃত মানুষের শরীর নিজে হাতে না কাটলে শিরা-ধমনি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চিনতে শিখবি না। এটা বই পড়ে হয় না।”
আসাদ স্যার ছাড়াও ক্লাস নিতে শুরু করলেন শিবশঙ্কর স্যার আর অতীন স্যার। ওঁরাও একই কথা বলতে লাগলেন। যতই বই মুখস্থ করো আর ছবি আঁকো না কেন, মানুষের শরীর ঠিকঠাক চিনতে বুঝতে গেলে শব ব্যবচ্ছেদ করতে হবে।
প্রথম প্রথম একটু যে ভয় করত না, তা নয়। শ্যামবাজার পাঁচমাথার কাছে খালপাড়ের এই মেডিকেল কলেজটায় সন্ধে হতেই নিঝুম ভাব। হাসপাতালটা জমজমাট। কিন্তু অ্যানাটমি হলের পাশে পরিত্যক্ত বিল্ডিং। বহু পুরনো এই বাড়িগুলো নিরাপদ নয় বলেই বাতিল। তার পাশে মর্গ। বেওয়ারিশ লাশে ভর্তি। বিটকেল, পচা গন্ধ বেরোয়। সুমন্ত্র পারতপক্ষে ওই দিক দিয়ে যায় না। উৎকট গন্ধ ছাড়াও একটা গা ছমছমে ব্যাপার আছে। এগুলো কাউকেই বলা যাবে না অবশ্য। হাসাহাসি করবে বন্ধুরা। মৌ, মহর্ষি, ইন্দ্রাণী, অর্পণ, অরবিন্দ। ডাক্তারি পড়তে এসে ভূতের ভয় ব্যাপারটা সত্যিই হাস্যকর। ভূত বলে কিচ্ছু নেই। সব মানুষের কল্পনা। ছোটবেলায় একটা ভূতের গল্পের বই পড়ে বেদম ভয় পেয়েছিল সুমন্ত্র। বইটার নাম, ‘কৃষ্ণনগরে যেও না’। রাতের শেষ ট্রেনে কৃষ্ণনগরে যাওয়ার সময় এক যাত্রীর এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়েছিল। একটা বিশ্রী রক্তমাখা পিশাচ চেহারা ট্রেনের জানলায় বারবার দেখা দিয়ে যাচ্ছিল। এটা অবশ্য ক্লাস সেভেনে পড়েছিল সুমন্ত্র। তখন অনেকটাই ছোট ছিল। এখন ভাবলে হাসি পায়।
ক্যান্টিনে চা, ফিশ রোল খেয়ে মেজাজটা ফুরফুরে ছিল সুমন্ত্রর। তপনদা ফিশরোল দারুণ বানায়। মাছের পুরের মধ্যে কাজু, কিশমিশ। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যেতে হোক না কেন, ফিশরোল খেতে কলেজ ক্যান্টিনে ফিরে আসতেই হবে।
সামনে বড়দিন। তারপর নিউ ইয়ার। গোটা দশ দিনের ছুটি। চাপড়ায় ক্রিসমাসে একটা মেলা বসে। পান ভোজন তো আছেই। দারুণ লাগে ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় নাগরদোলা চাপতে আর বন্দুক দিয়ে বেলুন ফাটাতে। সুমন্ত্র ভুলেই গেছিল বড়দিনের ছুটির আগে পরীক্ষা। গুনগুন করে ফিল্মি গানের সুর ভাঁজতে ভাঁজতে হোস্টেলের কমনরুমের দিকে এগোচ্ছিল। ধান্দাটা আর কিছুই না, ক্যারম খেলার। হঠাৎ ঘাড়ে এক টান। তাকিয়ে দেখল চশমা পরা শিবশঙ্কর স্যার। আগের দিন স্যারের কাছে পড়া পারেনি সুমন্ত্র। স্যার বলেছিলেন পরীক্ষায় ফেল করলে কপালে বিপদ আছে। গার্জিয়ান কল হবে। ঘাড়ে টান পড়তেই সুমন্ত্রর আক্বেল গুড়ুম। চশমার ফাঁক দিয়ে কটমট করে তাকিয়ে স্যার।
“কী হল রোল নাম্বার তিরাশি?”
শিবশঙ্কর স্যার প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর রোল নম্বর মনে রাখেন। পড়াশোনায় ফাঁকিবাজি, ওঠাপড়া বিলক্ষণ বোঝেন। শুকনো ঠোঁট চাটল সুমন্ত্র।
“কাল পরীক্ষা। তুই ক্যারম বোর্ডের দিকে ঝুঁকছিস যে বড়?”
“ইয়ে”, সুমন্ত্র মাথা চুলকাল। “না স্যার, আমি হোস্টেলের রুমেই যাচ্ছি।”
“ফের মিথ্যে কথা ! দেখি তোরই একদিন কী আমারই একদিন। কাল অ্যাবডোমেন থেকে কোশ্চেন করব। ফেল করলে এখানেই নিউ ইয়ার কাটাবি। বাড়ি যাওয়া বন্ধ।”
সর্বনাশ! গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল সুমন্ত্রর। অ্যাবডোমেন তো ভাল করে পড়াই হয়নি। এক রাতে পাঁচশো পাতার বই কীভাবে পড়া সম্ভব? আসন্ন পরীক্ষায় ফেল এবং পরবর্তী দুর্ঘটনাগুলো মনে মনে ভাবতে গিয়ে কান্না এসে গেল সুমন্ত্রর। কবে থেকে ভেবে রেখেছে বাড়ি যাবে। এটা আবার লিখিত পরীক্ষা নয় যে হল কালেকশন করা যাবে। মৌখিক অর্থাৎ ভাইভা। বলতে না পারলে স্যার তখনই চেঁচিয়ে অপমান করবেন। সুমন্ত্রর মাথা টিপ টিপ শুরু হল। একরাতের মধ্যে যতই পড়ুক না কেন, পাশ করা অসম্ভব। তা ছাড়া বাড়িতে যদি সুমন্ত্রর ফেলের খবর পৌঁছে যায়, আর এক কেলেঙ্কারি। মা তো মারতে মারতে আধমরা করে দেবে। বাবা কথা বলা বন্ধ করবে। সুমন্ত্র মাথার দু’পাশের রগ টিপে ধরে অ্যানাটমি হলের সিঁড়িতে বসে পড়ল।
হঠাৎ মিশমিশে কালো চেহারার একটা ছায়া আবির্ভূত হল সুমন্ত্রর সামনে। ঘন অন্ধকারে শুধু সাদা দু’পাটি দাঁত ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সুমন্ত্র আঁতকে উঠে পড়ে যাচ্ছিল। ছায়ামূর্তি খপ করে ধরে ফেলল তাকে। মূর্ছা যেতে যেতেও চমকে উঠল সুমন্ত্র। ভূতের হাত তো এমন গরম হয় না। সাধারণত কনকনে বরফের মতো ঠান্ডা আর ধোঁয়া ধোঁয়া। কিন্তু এই হাত তো বেশ নরম। একটা আপন আপন ভাব।
“দীনু ডোমকে চিনো না ?” ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা শুরু করল ছায়ামূর্তি। সুমন্ত্র স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। যাক বাবা ভূত নয়।
“সুনো, হামার বাত শুনলে এক রাতের মধ্যে পাশ হয়ে যাবে। মগর এক কাম করনা হোগা।”
সুমন্ত্র অন্ধকারের মধ্যে উজ্জ্বল আলোর রেখা দেখতে পেল। বলে কী লোকটা ? পাশ করে যাবে? লোকটা যা বলবে তাই করবে ও। দরকারে পায়ে পড়বে। ভূতের পা থাকে না। কিন্তু ইনি তো মানুষ। ঝুঁকে প্রণাম করতে গেল সুমন্ত্র।
“আরে আরে কেয়া কর রহে হো?” সুমন্ত্রকে দু’হাতে তুলে দাঁড় করিয়ে দিল লোকটা।
“এত ভয় পেলে ডাগদারি করবে কীভাবে?”
ঢোঁক গিলল সুমন্ত্র। “বাঁচান আমাকে প্লিজ।”
“স্যার বলে যদি ডাকো, তবেই এমন মন্তর দেব যে কালকের পরীক্ষার ভয় সব ফুস।” লোকটা হেঁড়ে গলায় এমন অট্টহাস্য করে উঠল যে সুমন্ত্র কেঁপে উঠল।
“আচ্ছা দীনু স্যার।”
“দ্যাখো, মন থেকে বলবে। আমি কিন্তু জাতে ডোম। তোমরা তো আবার জাত পাত ধম্ম মানো।” সুমন্ত্রর মনে পড়ে গেল ডাক্তারিতে চান্স পাওয়ার পর দাদু একটাই কথা বলেছিলেন। চিকিৎসকের জাত, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ কিচ্ছু হয় না। ডাক্তার এমন একজন মানুষ যার ধর্ম হল মানবতা। দীনুর হাত জড়িয়ে ধরল সুমন্ত্র।
“বাঁচান , স্যার।”
ফিসফিস করে কানে কী যে বলল দীনু! সুমন্ত্রর মুখে আবছা হাসি ফুটে উঠল।
পরদিন পরীক্ষার হলে ভয়ে কাঁপছিল সবাই। শিবশঙ্করস্যার একটা লাঠি হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পাশেই একটা ব্যবচ্ছেদ করা মৃতদেহ শোয়ানো। স্যার লাঠি দিয়ে ইঙ্গিত করে দেখাচ্ছেন, “আইডেন্টিফাই।” উত্তর ভুল হলে ওই লাঠি দিয়েই পিঠে দু’ঘা দিচ্ছেন। মোহনা আর মধুশ্রী মুচকি হাসছে। মেয়েগুলো গদগদ করে মুখস্থ করে আর ভড়ভড় করে উগরায় পরীক্ষায়। সুমন্ত্রর রাগ হল।
“এই যে মিস্টার তিরাশি, বল তো এটা কী?”
একটা নালির মতো জিনিস তুলে ধরলেন স্যার লাঠি দিয়ে।
দ্বিধা না করে গলা ঝেড়ে স্পষ্টভাবে বলল সুমন্ত্র, “ইউরেটার। মূত্রনালি।”
স্যার সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন জুড়েছেন, “ফাংশন বল। কাজ।”
“আজ্ঞে, কিডনি থেকে ইউরিন মানে ইয়ে মূত্র বয়ে আনে।”
পরপর বেশ কিছু প্রশ্ন করলেন স্যার আর সুমন্ত্রও ঝপাঝপ উত্তর দিয়ে দিল। স্যারের ভুরু কুঁচকে গেল।
“এগুলো তো তোদের সিলেবাসে ছিল না। জানলি কোত্থেকে?”
দীনুরহস্য ফাঁস করা যাবে না। সুমন্ত্র গিলে নিল দীনুর নাম।
দীনুদা যে সত্যিই বড় শিক্ষক, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। ডোম দীনুদা মানুষের হাড়ের কাঠামো দশ মিনিটে মুখস্থ করিয়ে দেয়। মাথার করোটি থেকে পায়ের আঙ্গুলের সমস্ত হাড় নাম্বারিং করে চিনিয়ে দেয়। সে-রাতে মোক্ষম টিপস দিয়েছিল দীনুদা। শিবশঙ্কর স্যারের ফেভারিট প্রশ্ন ইউরেটার। সে সিলেবাসে থাকুক বা না থাকুক।
পরবর্তী ছ’মাসে সুমন্ত্র অ্যানাটমির অনেক কিছুই শিখে ফেলল দীনুদার কল্যাণে। ভাল বডি অনেকদিন আসছে না বলে ডিসেকশন হচ্ছে না। কেউ যদি বডি দান করে তবেই নতুন করে শব ব্যবচ্ছেদ করা যাবে। পুরনো শুকিয়ে যাওয়া মৃতদেহ কেটে লাভ নেই কারণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ঠিকঠাক চেনা যায় না। দীনুদার স্টকে বালতিতে ফরম্যালিন দিয়ে ভিজানো কিছু ভিসেরা ছিল। পাকস্থলী, যকৃৎ, প্লীহা — সেগুলো হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে জেনে নিল সব।
বডি পাচ্ছি না কোথাও! আফসোস করছিলেন আসাদ স্যার।
“তোদের ফার্স্ট এমবিবিএস পরীক্ষা আর দু’মাস বাকি। একটা ভাল বডি না পেলে তো মুশকিল। ফাইনালি সব একবার ঝালিয়ে দেব ভেবেছিলাম!”
সুমন্ত্র, মহর্ষি, কল্লোলদের অবশ্য ফুর্তির বিরাম নেই। বডি পাওয়া যাচ্ছে না সেসব নিয়ে মাথা ঘামানগে স্যারেরা। যে ক’দিন বডি ডিসেকশন হচ্ছে না তাড়াতাড়ি ছুটি হচ্ছে। হাতিবাগানে প্রচুর রেস্তোরাঁ। একটা গোল মতো বাড়ি আছে। রগরগে ঝাল কষা মাটন যা রাঁধে ! উফফ। আর একটু এগিয়ে সোজা হাঁটতে থাকলে পরপর কাফে। ব্রেন চপ, কবিরাজি কাটলেট। রোববার সকালে শ্যামবাজারের পাঁচ মাথার মোড়ে মোদকের দোকানটায় ফুলকো লুচি আর সাদা আলুর তরকারি। আহা, যেন অমৃত। নিজেরা শুধু খায় না। দীনুদার জন্যও নিয়ে আসে। দীনু স্যার আছে বলেই অ্যানাটমিতে ভয় কেটে গেছে। পোস্টমর্টেমের দু’ একটা বডি ঠিক লুকিয়ে চুপিয়ে জোগাড় করে রাখে তাদের জন্য। সবাইকে বলতে মানা। এগুলোর কোনওটার হাত নেই, কোনটার পা। ধড়, মুণ্ডহীন শবও থাকে।
“তোমার ভয় লাগে না দীনুদা?” দীনুস্যার হো হো করে হাসেন।
“ডোমের ভয় করলে চলবে? ডোম হল প্রদীপের পিলসুজ। তোমরা হলে প্রদীপের আলো। আমরা আছি বলেই না তোমরা এত পড়ালিখা করতে পারছ। ডাগদার হচ্ছ।”
“দীনুদা, তুমি ভূতে বিশ্বাস কর?”
“ফের দাদা? স্যার ডাকতে প্রেস্টিজে লাগে বুঝি?”
সুমন্ত্র জিভ কেটে বলল, “দীনুস্যার তুমি কিছু মনে করো না। আমরা তোমাকে ভালবাসি বলেই মুখ ফসকে দাদা বেরিয়ে পড়ে।”
ফাল্গুনের মাঝামাঝি। ফার্স্ট এমবিবিএস থিওরি পরীক্ষা শেষ। এখন হাতে কলমে। যাকে বলে প্র্যাকটিকাল। অ্যানাটমির স্যারেদের ভুরু কপালে। ভাল বডি পাওয়া যায়নি। ছেলেমেয়েদের কীভাবে পরীক্ষা হবে? প্রিন্সিপালের মাথায়ও হাত। বয়েজ হোস্টেলে ওদিকে ছাত্রদের মধ্যে তুমুল আনন্দনৃত্য শুরু হয়েছে। বাঁচা যাবে এ যাত্রা। বডি না পেলে পরীক্ষায় এমনিই পাশ করিয়ে দেবে সবাইকে। গার্লস হোস্টেলে মেয়েরা একটু সন্দিগ্ধ। বডি না পেলে পরীক্ষা কেঁচে যাবে?
“তোদের, মেয়েদের এই সন্দেহবাতিক গেল না। পরীক্ষা হবে না। প্লেন অ্যান্ড সিম্পল।” বলে উঠল আমোদ।
“চল, দীনুস্যারকে জিজ্ঞাসা করে আসি।” ইন্দ্রাণী প্রস্তাবটা দেওয়ার পরই সুমন্ত্র বলল, “রাইট। ওনলি ওয়ান ক্যান সেভ আস। দীনু স্যার।” মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে দীনুস্যার। সবকিছু শোনার পর বলল, “চিন্তা করো না। আজ সকালে হেড ডিপ আর সুপার স্যারও আমাকে বডি আনতে বলেছেন। উ তোমরা পাস করিয়ে যাবে।”
“তার মানে বডি আসছে?”
“হুঁ। আসি গিছে। আরে আমার একটা দায়িত্ব আছে তো?”
“তাহলে আমাদের একটু কাটাছেঁড়া করে দেখাবে না?”
“নাহ, এটা জোচ্চুরি। পরীক্ষার বডি।”
“কোথায় আছে?” দীনুস্যার মাথা নেড়ে চলে গেল। “উসব দু’নম্বরি হবে না।”
“তার মানে বলবে না বুঝলি?” মহর্ষি রেগে গিয়ে বলল, “এই নাকি দীনুস্যার! ধুস! এর থেকে অন্য মেডিকেল কলেজে চান্স নিয়ে দেখলে বেটার হত।”
“টর্চ আছে তোদের কাছে? চল তো একবার মর্গের ভিতরে ঢুকে দেখি সত্যিই কোনও বডি আছে কিনা!”
“এত রাতে মর্গে ঢুকবি? সাপখোপ থাকতে পারে।”
“এই সাহস নিয়ে ডাক্তারি পড়তে এসেছিস? বাড়িতে গিয়ে আঙুল চোষ তাহলে!” সব্যসাচী নিচু গলায় বলল।
এক এক করে ভাঙা জানলা পেরিয়ে ঢুকল ওরা ভিতরে। অসহ্য দমচাপা গন্ধ। নাড়িভুঁড়ি গুলিয়ে বমি উঠে আসছিল ওদের। ঘন অন্ধকারের মধ্যে ইঁদুরের ছোটাছুটি। কোনার দিকে একটা পলিথিনে ঢাকা মড়া।
“পেয়েছি, এই তো!”
এক ঝটকায় চাদর সরিয়েই আঁৎকে উঠল সুমন্ত্র। তীক্ষ্ণ চিৎকার করে উঠল স্থান কাল ভুলে। দীনুস্যারের নিষ্প্রাণ দেহটা শোয়ানো আছে ট্রলিতে। চোখ দুটো খোলা স্থির। ছাতের দিকে। কাছে গিয়ে টর্চ মেরে খুঁটিয়ে দেখল সুমন্ত্র। গা ঠান্ডা, শক্ত। পাথর চোখের দৃষ্টি মেডিকেল কলেজের ছাদ ফুঁড়ে আকাশে মিশেছে। আমোদ বলল, “রাইগর মর্টিস মানে অনেকক্ষণ আগে।”
তাহলে কে ওদের সঙ্গে কথা বলল আধঘণ্টা আগে? কে আশ্বস্ত করল ওদের? সুমন্ত্র দরদর করে ঘামতে ঘামতে লাফিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে চেঁচিয়ে উঠল “দীনু স্যার!” কোথাও কিছু নেই। শুধু একটা প্যাঁচা ফরফর করে উড়ে গেল পাকুড়গাছ থেকে।
“দীনু নেই। দু’দিন আগে মারা গেছে ঘুমের মধ্যে।” কাঁদতে কাঁদতে বলল হরিয়া। “আমাদের জীবনের কি দাম আছে গো? আমরা তো কেউ নই তোমাদের। বডি দান করে গেছে দীনু।” কী উত্তর দেবে বুঝে উঠতে পারল না ওরা।
অমাবস্যার নিঝুম নিশি । খালপাড়ের মেডিকেল কলেজের ভাঙা পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে ক্রমাগত ঘুরতে লাগল সুমন্ত্রর ভয়ার্ত স্বর! দীনু স্যার! দীনু স্যার!
পেশায় ডাক্তার দোলনচাঁপা নতুন প্রজন্মের লেখকদের মধ্যে পরিচিত নাম। মূলত গল্প এবং উপন্যাস লেখেন বিভিন্ন ছোটবড় পত্রপত্রিকায়। 'চন্দ্রতালের পরীরা' এবং 'ঝুকুমুকু' তাঁর লেখা জনপ্রিয় কিশোরসাহিত্যের বই।
বেশ ভালো লাগলো। প্লট ত একটু অন্য রকমের। আর RG Kar এর local flavour টা খুব সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছো। আরো গল্পের অপেক্ষায় রইলাম। Well done
খুব ভালো লাগল৷ ভূতের গল্প হলেও একটু অন্যরকম৷ স্নেহ ও মানবিকতার আবেদন লাভ করলাম৷ দীনু স্যারকে প্রণাম৷
Feeling nostalgic.
Thnk to you -dolon.
You represent it as if we r still at that golden era of our life.
Loved it
Absolutely brilliant .
Relived my college days .
Very exciting, Dolon Champa, ekdom tan tan uttejona chhilo galpotar modhye. R born n brought up at College Street bole, pariparshik o khub chena, so, I could associate myself with the ambience.
Erokom aro kayekta r apekkhay roilam.
গল্প টা খুব ভালো। অ্যানাটমি ক্লাসে ডোমেদের সহযোগিতা ভোলা যায় না।
ভালোই লাগলো । কিন্তু শিবশঙ্কর আমার ছাত্র। রাগীই নয়। ছেলে মেয়েরা ভালোবাসে। আর দিনু কে আমি চিনি। কিছু অসঙ্গতি আছে কারণ আমি যে ওখানে HOD ছিলাম , দবটাই ভালো চিনি। দিনু কি সত্যি নেই? আমার বাড়িতে অনেকদিন এসেছে। হরিয়া তো আগেই মার গিয়েছিল। ভালো লিখেছে। চালিয়ে যাও।
শিবু কিন্তু মাটির মানুষ ।আবার বলছি।
ভালো লাগলো। শিবশঙ্কর বাবুর সত্যিই কি ফেভারিট প্রশ্ন ইউরেটার নিয়ে?
বেশ ভাল লাগলো
Darun purano sei diner kotha
Golpo ta pore purono kotha mone pore gelo. Golper choritroder songe amar chena manush gulor odbhut mil. Khub sundor
Ek kathai Durdanto
অন্য রকম গল্প। বেশ ভাল লাগল।
নস্টালজিয়া.. আর. জি.কর এ এনাটমি র dissection র দিনগুলো র কথা মনে পড়ে গেলো
অকপট ও অনুভূতিময় চমৎকার লেখা। অভিনন্দন জানাই।
জীবন ও মৃত্যু ইন্দ্রিয় ও অতীন্দ্রিয় বাস্তব ও কল্পনা।
সুন্দর গল্পবিন্যাস পাঠকে সারাক্ষণ আগ্রহী ওকৌতুহলী
করে রাখে।
আরও গল্প চাই।
ভালো গল্প। আর জি করের ফ্লেভার পাওয়া গেল।
দারুণ গল্প! আরও চাই!
ধন্যবাদ ।
চমৎকার
চিকিৎসকের জাত,ধর্ম,বর্ণ,লিঙ্গ কিছু হয় না।ডাক্তার এমন একজন মানুষ যার ধর্ম হোলো মানবতা।এই শিক্ষা প্রতি টি মানুষের বেলাতেও প্রযোজ্য।
Thanks a lot for the article post. Really looking forward to read more. Really Cool. Rosalia Laurent Engracia