পরাণ, পরাণ, দুইডা খাইয়া যা

পরাণের মা শশীবালা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে, ডাকতে থাকে আম কাঁঠালের নরম ছায়ায় ঢাকা গ্রাম পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নদী চৈত্রের তাপে মাটিতে টান নামেই নদী, গরু মহিষ অনায়াসে হেঁটে পার হয়ে চলে যায় অথচ এই নদীই আবার বর্ষায় দুকূল ছাপিয়ে গ্রাম ভাসিয়ে দেয় পরাণ এখন সরু ডোঙায় লগি ঠেলে ঠেলে মাছ ধরছে মায়ের ডাক কানে যায় নৌকা পাড়ে লাগিয়ে, মাছের খলুই হাতে নিয়ে পাড়ের ঢাল দিয়ে লাফাতে লাফাতে উঠে আসে ওর এবার তেরো পেরিয়ে চোদ্দ হবে

বছরখানেক হল ওরা গুলঞ্চতলায় এসেছে বাংলার নানা গ্রাম ঘুরে ঘুরে পরাণের বাবা জনার্দন এখন গুলঞ্চতলায় থিতু ডাকাবুকো চেহারার জোরে জনার্দন পুলিশে চাকরি পেয়েছে বটে, কিন্তু স্বভাবে বেজায় মুখচোরা তাই বদলির কোপ তার ওপরেই বেশি বাংলার নানা জেলার অজগ্রামের ফাঁড়িতে দেড় থেকে দু’বছর করে কাটিয়ে, এখানে এসেছে এখন অবশ্য সাব ইন্সপেক্টর তাই পদমর্যাদা কিঞ্চিত শোভন যদিও তা দেখে উল্লসিত বা ঈর্ষান্বিত হবার মতো কাছাকাছি কোনও স্বজনবান্ধব নেই 

পরাণেরও শখের প্রাণ গড়ের মাঠ দু’বছর অন্তর স্কুল বদল, বন্ধু বদল এতে তার ভালোই লাগে আবার করে নতুন অঞ্চলের সঙ্গে ভালোবাসা হয়, নতুন বন্ধু হয়শুধু হয় না পড়াশুনোটা সারাদিন লগি ঠেলে, মাছ ধরে, বা গাছে চড়ে কেটে যায় মা খানিক দুঃখ করে,
এমন দিন কি দ্যাখার কপাল আছিলো? পোলাটা ব্যাবাক মুখ্যু হইয়া থাকব
তবে ওই কপাল চাপড়ানোই সার, জনার্দনের কানে কিছু ঢোকে বলে মনে হয় না সে জলস্রোতে ভেসে যায় 

শশীবালা আজ সকাল থেকে পরাণকে খুঁজে পাচ্ছে না আজ তার রাগ সপ্তমে চড়েছে শেষে নদীর পাড়ে এসে দেখা মেলে ছেলেকে উঠে আসতে দেখে মনে মনে তৈরি হয়, রাগ উগরে দেবে পরাণ দূর থেকে হাতের খলুই দেখিয়ে বলে,
জোড়া শোল পাইছি ঝাল রাইন্ধা দিবা
শশী দেখতে পায় খলুইয়ের ভিতর খলবল করছে কিছু একটা মুহূর্তে ভুলে যায়, ঠিক কী কারণে পরাণকে ডাকতে এসেছিল বলে,
তর বাপকে দুপুরের ভাতটা দিয়া আইসবি আর মাছের গল্প কইরা আসিস
মায়ে পোয়ে খুশি খুশি ঘরে ফিরে আসে

জনার্দন মাঝে মাঝে ভাবে, গুলঞ্চতলা কি পৃথিবীর বাইরে? কলকাতা শহর থেকে ইস্টবেঙ্গল এক্সপ্রেস ট্রেন চেপে গেদে স্টেশনে নামা ওদিকে ট্রেন চলে যায় দর্শনা পার হয়ে গোয়ালন্দ ঘাটের দিকে ফেলে আসা দেশের স্মৃতি উসকে দেয় প্রতিবার কিন্তু জনার্দনকে বাসে চেপে প্রায় একঘণ্টার পথ যেতে হয়, তারপর পায় হেঁটে মাইলটাক, তবে আসে গুলঞ্চতলা পৌঁছতে পৌঁছতে বেলা ঢলে পড়ে আর পথিক ভুলেই যায় সে কোথা থেকে কোথায় এলো? যেন জন্ম হতে সে চলেছে তো চলেছেই 

এই ফাঁড়িটা অবশ্য মোটামুটি নিরুপদ্রব পুলিশি দৌড়োদৌড়ি খুব কম গোটা ফাঁড়িতে জনা দশেক কর্মী জনার্দন সকালে সাইকেল চেপে ডিউটিতে আসে দুপুরে কখনও নিজে যায়, কখনও বা শশীবালা পরাণকে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দেয় চেয়ারে বসে এইসব ভাবতে ভাবতেই পরাণকে দেখতে পায় জনার্দন ছেলেটা কেমন বড় হয়ে গেল পড়াশুনোর ছিরিছাঁদ নেই, জীবনে কী যে করবে ঠিক নেই 

বছরখানেক হল ওরা গুলঞ্চতলায় এসেছে। বাংলার নানা গ্রাম ঘুরে ঘুরে পরাণের বাবা জনার্দন এখন গুলঞ্চতলায় থিতু। ডাকাবুকো চেহারার জোরে জনার্দন পুলিশে চাকরি পেয়েছে বটে, কিন্তু স্বভাবে বেজায় মুখচোরা। তাই বদলির কোপ তার ওপরেই বেশি। বাংলার নানা জেলার অজগ্রামের ফাঁড়িতে দেড় থেকে দু’বছর করে কাটিয়ে, এখানে এসেছে। এখন অবশ্য সাব ইন্সপেক্টর। তাই পদমর্যাদা কিঞ্চিত শোভন। যদিও তা দেখে উল্লসিত বা ঈর্ষান্বিত হবার মতো কাছাকাছি কোনও স্বজনবান্ধব নেই। 

পরাণ সাইকেল নিয়ে বাবার কাছে খাবার নিয়ে আসে আজ ভেবে রেখেছে, খুব গর্ব করে মাছের গল্প বলবে ভেতরে ঢুকে খেয়াল করে, হাজতে একটা রোগা লোক, কেমন মনখারাপ করা চোখ নিয়ে বসে আছে বাবাকে খুব আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করে, এত আস্তে যেন লোকটির কানে না পৌঁছয়,
বাবা, অই লোকটা কী করসে
ডাকাতি। 
পরাণ অবাক হয়ে তাকায়, অমন রোগা লিকলিকে চেহারায় ডাকাতি! মায়ের কাছে গল্প শুনেছে, বইতে পড়েছে বিশাল চেহারার ডাকাত, তার ইয়া মোটা গোঁফ, ভাঁটার মতো চোখ, রণপায়ে চেপে ক্রোশ ক্রোশ পথ পলকে পার হয়ে যায় শেষে কিনা এই রকম ছাপোষা, না খাওয়া ইঁদুরের মতো চেহারার ডাকাত! পরাণের মন খারাপ হয়ে যায় বাবার খাওয়া হলে বাসন নিয়ে ফিরে আসে মাকে জিজ্ঞাসা করে,
মা রোগা ডাকাইত হয়
খাওয়া শেষে শশীবালা দাওয়ায় আচার শুকোতে দিচ্ছিল ঘাড় ঘুরিয়ে বলে
কী কইলি?

পরাণ জবাব দেয় না আজ তার মনের মধ্যে তৈরি হয়ে থাকা ডাকাতের মিনারপতন হয়েছে কোনও কিছুই ভালো লাগছে না রাতে, বাবার কাছেই জানবেজনার্দনের চোর ডাকাত নিয়ে সময় কাটে ছেলেকে সেই সব গল্প শোনায় অজ পাড়াগাঁয়ের অপরাধীরাও বড় সাদামাটা, বড় কোনও ঘটনা ঘটানোর জোরটাই যেন তাদের নেই

পরাণের বন্ধু শ্যামল বয়সে একটু বড় কায়দা করে বিড়ি ফোঁকা ধরেছে গুলঞ্চতলার পাশে একটা মুসলমান গ্রাম আছে, সেখানকার আব্দুল, মজিদও পরাণদের খেলার সঙ্গী একসঙ্গেই গ্রামের হাইস্কুলে যায় তারপর ফেরার পথে পাড়া পাড়া চষে বাড়ি ফেরে কখনও বাস রাস্তার ধারেকখনও নদীর পাড়ে নদীর খাত জুড়ে মাটি ভেঙে ভেঙে অদ্ভুত সব কারুকার্য সেই সব পাড়ে পাড়ে ঘুরতে ওদের ভালো লাগে ঠাঠা রোদে যখন কেউ কোথাও নেই, কয়েকটা কিশোর যেন সেখানে আবিষ্কারের নেশায় মেতে ওঠে ঘন ঘাসের জঙ্গল ভেদ করে সরু পায়ে চলা রাস্তা কোথাও একটা ডাহুক একটানা ডেকে চলে আব্দুল বলে ওঠে,
পড়াশুনা কইরা কদ্দূর যাবা
পরাণের অবাক লাগেএমনটা তো সে কখনও ভাবেনি ইস্কুল যেতে হয় তাই যায়, সেখানে না গেলে কী হবে? তার পরিধির বাইরে পরাণ মাথা নাড়ে,
কইতে পারি না গেদে ইস্টিশন যাইতে পারি। আবদুল, শ্যামল আর মজিদ তিনজনেই হেসে ওঠে শ্যামল গম্ভীর হয়ে বলে,
গেদে হইয়া দর্শনা বা দর্শনা হইয়া গেদে কত কী আওন যাওন হয়! ধরতে পারলেই ট্যাহা। 

 

আরও পড়ুন: ঋতা বসুর গল্প: অক্ষর বদলে গেলে

 

পরাণ ঘাবড়ে যায় ইঙ্গিত বুঝতে অসুবিধা হয় না বাবা পুলিশ ছেলে চোর!
– আমার বাবায় পিটাইয়া ছাতু কইরা দিবে। 
আব্দুল বলে,
তর বাপে পুলিশ তর বেশি সুবিধা তরে কেউ কিসু কইব না। 
পরাণ উত্তর দিতে পারে না চুপ করে বসে থাকে সামনে বয়ে চলা নদীর জলের দিকে তাকিয়ে থাকে, হয়তো উত্তর খুঁজতে চায় শ্যামল বলে,
একদিন চল, দেইখ্যা আসি তারপর গেলি কী নাগেলি, সব তর উপর। 
মজিদ চুপ করেই ছিল অন্যদের গূঢ় পরিকল্পনা শুনে বলে,
আমি নাই, আমার ডর লাগে

শ্যামল আর আব্দুল যেন তাচ্ছিল্যর হাসি হাসে সেদিন বিকেলের আড্ডা কেমন তাল কেটে যায় এখন একটু একটু করে কৈশোরের গণ্ডি পেরচ্ছে পরাণ অনেক কিছু নতুন নতুন ইচ্ছের বীজ বুকের ভেতর জমা হয় বুঝতে পারে পৃথিবীটা হয়তো অনেকটাই বড়, অন্ততঃ গুলঞ্চতলার বাইরে তো বটেই কিন্তু যেতে সাহস হয় না বাবা মা কথা মনে হয়, বাবার হাজতে দেখা সেই রোগা ডাকাতটার কথাও মনে পড়ে কোনও রকমে বন্ধুদের কাটিয়ে বাড়ি ফিরে আসে 

গুলঞ্চতলার পাশে একটা মুসলমান গ্রাম আছে, সেখানকার আব্দুল, মজিদও পরাণদের খেলার সঙ্গী একসঙ্গেই গ্রামের হাইস্কুলে যায় তারপর ফেরার পথে পাড়া পাড়া চষে বাড়ি ফেরে কখনও বাস রাস্তার ধারেকখনও নদীর পাড়ে নদীর খাত জুড়ে মাটি ভেঙে ভেঙে অদ্ভুত সব কারুকার্য সেই সব পাড়ে পাড়ে ঘুরতে ওদের ভালো লাগে ঠাঠা রোদে যখন কেউ কোথাও নেই, কয়েকটা কিশোর যেন সেখানে আবিষ্কারের নেশায় মেতে ওঠে

রাতে বাবা ওয়াগন ব্রেকারের গল্প বলছিল খড়গপুর লাইনে নাকি তাদের খুব উৎপাত মালগাড়ির ডালা খুলে কয়লা চুরি করে বাবার এক বন্ধু সেখানকার দারোগা ওর তাড়া খেয়ে কয়েকজন এদিকে পালিয়ে এসেছে, দর্শনা হয়ে পূর্ব পাকিস্তান যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল জনার্দনের দল আজ তাদের পাকড়াও করেছে সীমান্ত এলাকা চোরাচালানকারীদের খুব পছন্দ বদমাইশগুলোকে কনস্টেবলরা আড়ং ধোলাই দিয়েছে পরাণ হঠাৎ জিজ্ঞেস করে,
কাল থানায় খাবার দিবার সময় ওগো দেহা যাবে?
জনার্দন বলে,
কী দেখবা? চোর? হ্যারা নাই চালান হইয়া গেছে গিয়া খড়গপুরের কেস অরাই কাস্টডি করবে। 
বিকেলে শ্যামল আর আব্দুলের কথা শুনে পরাণের বুকের মধ্যে একটা অবৈধ স্বপ্ন বাসা বাঁধবে বলে ঘুরছিল রাতের গল্প শুনে একটু স্তিমিত হয়ে পড়ে 

শ্যামল একদিন একটা দামি ঘড়ি পরে আসে সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে বলে, কত দাম জানিস? পরাণ হাতে নিয়ে দেখতে চায় শ্যামল চালিয়াতি করে বলে,
সেদিন তো যাবি বইল্যা আর আইলি না অহন দ্যাখতে চাইছস ক্যান? সেদিন আমার সঙ্গে আইলে, তরও এমন হইতো তারপর চোখ ঘুরিয়ে বলে,
এঁদো ডোবায় পইচা মরুম নাকি? উইড়া যামু তগো সাহস নাই, তরা নাগাল পাবি না বুকে সাহস লাগে, ইন্দুরের মতো ধুকপুক কইরা, আমার বাঁইচবার শখ নাই

যৌবনের চৌকাঠে দাঁড়ানো ছেলেগুলো স্বপ্ন দেখতে চায় বড়, আরও বড় হবার স্বপ্ন শুধু বোঝে না, কোন স্বপ্ন বৈধ আর কোনটা অবৈধ? তাদের বুঝিয়ে দেওয়ারও কেউ নেই পরাণ উত্তর না করে, চুপ করে থাকে ওর পেটের ভেতর কথাগুলো ঘুরে ঘুরে মরছে একবার ভাবে, শ্যামলদের সঙ্গে ভিড়ে গেলেই হয়পরক্ষণে ভয় লাগে বাবা জানলে কী হবে? মা তো বোধহয় মরেই যাবে

এরপর পরাণ আবার একদিন দুপুরের খাবার নিয়ে জনার্দনের ফাঁড়িতে পৌঁছয় বাবার ঘরের, পাশের ঘরে একজন ভদ্রলোক বসে আছে সাদা ধুতি পাঞ্জাবিতে বেশ মানিয়েছে চোখে কালো ফ্রেমের চশমা দরজার সামনে একজন বন্দুকধারী সেপাই দাঁড়িয়ে জনার্দন সেপাইটিকে বলে,
বন্দিরে আমার এইহান থিক্যা অর্ধেক ভাত দিবেন। 
আজ হাজত ফাঁকা, সেখানে কোনও অপরাধী নেই পরাণ বুঝতে না পেরে বাবাকে জিজ্ঞেস করে, বন্দি কে? জনার্দন চোখের ইশারায় ওই ধুতি পাঞ্জাবি পরা লোকটিকে দেখিয়ে বলে, – কাল থিক্যা মায়েরে দুইজনার মতো ভাত দিতে কবি রাইতে ফিরা আমিও কমুনে 

 

আরও পড়ুন: বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্প: প্রতিবিম্ব

 

সব গোলমাল লাগে পরাণের। এই বলছেবন্দিঅথচ হাজতে রাখছে না আবার নিজের খাবার ভাগ করে দিচ্ছে ভদ্রলোক দূর থেকে পরাণকে লক্ষ্য রাখছিলেন এবার ইশারা করে ডাকলেন।
কী নাম তোমার
আইজ্ঞা, পরাণ। 
ইস্কুলে যাও?
হ। 
কোন কেলাস
এইট। 
পড়তে ভালা লাগে
পরাণ বোঝে না কী উত্তর দেওয়া সমীচীন হবেমাথা নেড়ে হ্যাঁ না মাঝামাঝি কিছু একটা বলার চেষ্টা করে লোকটি বলে,
ইতিহাস পড়ো
ঘাড় কাত করে পরাণ লোকটি বলে,
আর কিছু পড়ো বা না পড়ো, ইতিহাস পড়বা না হইলে নিজেরে জানা বাকি থাইক্যা যাইব

পরাণ বড় বড় চোখে লোকটির দিকে তাকায় তার এত বছরের জীবনে, এই প্রথম এমন কথা শুনল সে লোকটির সঙ্গে কেমন বন্ধুত্ব হয়ে গেল রোজ ভাত নিয়ে আসে পরাণ খেতে খেতে লোকটা গল্প করে, অদ্ভুত সব গল্প গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে মাস্টারদা সূর্য সেনের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের গল্প, বিপ্লবী বাঘা যতীনের বুড়িবালাম, নেতাজি সুভাষ বোসের সাবমেরিন থেকে চে গুয়েভারা লড়াই এই দিন পরাণের মনের ভিতর ভদ্রলোক যেন আগুনের বীজ বপন করলেন দর্শনা দিয়ে স্মাগলিং, খড়গপুরে ওয়াগন ভাঙা মতো সাহসের কাজ ফিকে হয়ে আসে

প্রতিদিন দুপুরে অপেক্ষা করে থাকে, মা কখন খাবার দিতে পাঠাবে? সাইকেল নিয়ে দ্রুত আসতে থাকে মনে মনে ভাবে আজ কার কথা শোনাবে? বিনয় বাদল দীনেশ, নাকি ভগৎ সিং? সত্যি কত শত নাম কিছু কিছু ইতিহাস বইতে পড়েছে কিন্তু কাকু যেমন করে বলে, ছবির মতো সামনে ভেসে ওঠে 

ফাঁড়িতে ঢুকে রোজকার মতো পাশের ঘরে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই ছুটে বাবার ঘরে যায় পরাণ জনার্দন খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল পরাণ বলে,
বাবা, কাকায় কনে গেছে
নির্বিকার মুখে জনার্দন বলে,
সদরে চালান হইয়া গেছে। 
কও কী? ক্যান
কী মুশকিল! উনি কি এইহানে থাকতে আইসেন? ওঁর কেসএর ডেট পড়ে, তখন মাঝে মাঝে হাজিরা দিতে লাগে। 
কীসের কেস
মার্ডার কেস ওঁর হাতে অনেকগুলা ইংরাজ মহিলা মারা গেসলো দ্যাশ স্বাধীন হইছে কিন্তু বিচারব্যবস্থা হয় নাই এঁদের মতো মানুষকেও অহনও চুরদের নাহান কোর্টে ওঠতে হয়
মার্ডার শব্দটার বিরাট ওজন, তার ওপর ইংরেজদের মেরেছে শুনে পরাণের মনটা ভরে ওঠে
উনি স্বাধীনতা সংগ্রামী, বাবা
মাথা নাড়ে জনার্দন 

দূরে কোথাও বোধহয় বৃষ্টি হচ্ছে একটা ঠান্ডা জোলো বাতাস চৈত্রর নিদাঘ দুপুরকে কেমন মসৃণ করে দেয় পরাণের খুব ভালো লাগে বন্ধুদের গল্প বলতে হবে নতুন যুবকের চোখে, কে যেন স্বপ্ন এঁকে দিচ্ছে সাহসের, ভালোবাসার, আবেগের সে আবেগ দেশের জন্য 

এক সর্বগ্রাসী হাঁ-করা চোখ নিয়ে, কলকাতা ও সংলগ্ন শহরতলিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা সৌরভের। যা দেখেন, তাই মনে হয় ছুঁয়ে দেখলে ভালো হয়। কিছুটা প্রকৌশল, কিছুটা ছবি আঁকা, ভাষা শিক্ষা, থিয়েটার এমন আরও অনেক কিছু। এভাবেই ভেসে চলা। শৈশবে স্কুল পত্রিকায় হাত পাকিয়ে রেল স্টেশনে দেওয়াল পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিনের পাতা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বাণিজ্যিক পত্রিকায় পৌঁছনো। জীবিকার তাগিদে কম্পিউটারের সাথে সখ্য। পাশাপাশি কয়েক মাইল ‘কোড’লেখা চলে সমান্তরাল। কর্পোরেটের হাত ধরে পৃথিবীর কয়েক প্রান্ত দেখে ফেলার অভিজ্ঞতা। সবই উঠে আসে লেখায়। আপাততঃ কলকাতা ও ঢাকা মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা সাত।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *