একটা মেল ট্রেনের হঠাৎ ড্রাগন সাজার ইচ্ছে হয়েছিল
আগুন নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে সে যখন শূন্যে লাফ দিতে উদ্যত
পাহাড়ের চুড়া থেকে এক জাদকর বললো, দাস্ ফার, এন্ড নো ফারদার!
একটু দূরে মুচকি হেসেছিল সমুদ্র।
একটি রমণীকে উপহার দিতে গেলাম গুঞ্জাফুলের মালা
সে বললো, আমি টিশিয়ানকে ভালোবাসি, আমায়
মুখ ফেরাতে বলো না!
শিল্পের নারীরা কখনো মুখ ফেরায় না
মাটির প্রতিমাই শুধু গলে গলে যায়
শিল্পের নারীরা পতঙ্গভুকের মত শিল্পীকেও খেয়ে
হজম করে ফেলে
তার বুক ছেঁড়া জামাও কেউ চেয়ে দেখে না
এত অন্ধকার, চাঁদের ওপিঠের মতন চির অন্ধকার
তার জঠরে
বাসি ফুল আর বেলপাতায় দাপাদাপি করে ধেড়ে ধেড়ে ইঁদুর
শব্দে গাঁথা মালাটা কচমচিয়ে খেয়ে যায় ছাগলে…
এবার সমুদ্রের পালা
সে মেল ট্রেনকে বললো, ভাঙো, ভাঙো, ব্রিজটা ভেঙে
ঝাঁপ দাও খাড়িতে
ওসব জাদুকর ফাদুকর, রাজা-গজা আমি ঢের দেখেছি
ওদের কারুকে দেখেছো তোমার ছন্দপতন নিয়ে চোখের
জল ফেলতে
যে চোখের জলকে ওরা বলে কবিতা!
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৪ সালে, বাংলাদেশের ফরিদপুরে। মৃত্যু ২০১২ সালে কলকাতার বাড়িতে। মধ্যবর্তী সময়টিতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় গদ্যসাহিত্যের অন্যতম ব্যক্তিত্ব, যদিও ওঁর সাহিত্যজীবনের শুরু হয়েছিল কবিতা দিয়ে। ১৯৫৩ সালে কবিতা পত্রিকা 'কৃত্তিবাস'-এর যাত্রা শুরু তাঁরই হাত ধরে। বরাবর কবিতাকেই নিজের 'প্রথম প্রেম' বলে আসা সুনীল অবশ্য পরবর্তীকালে গদ্যকার হিসেবে খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছন। প্রথম উপন্যাস 'আত্মপ্রকাশ' প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে দেশ পত্রিকায়। তারপর থেকেই গদ্যকার সুনীলের জয়যাত্রা শুরু। পূর্ব পশ্চিম, সেই সময়, প্রথম আলো-র মতো ম্যাগনাম ওপাস বেরিয়েছে তাঁরই কলম থেকে। পুরস্কারের সংখ্যা অগুন্তি। আনন্দ পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার সবই ছিল ঝুলিতে।