শূন্যে ঝরে পড়া ভাসমান চকের
গুঁড়ো তোমাদের ‘আমি’ মনে হয়,
তোমাদের ভারতের ঘরে ফেরা
শ্রমিক মনে হয়।
বাতাসে অচৈতন্য চৈত্রের জীবাণু
কাঁধে সন্তান, কোলে পিচ রাস্তা
পিচের রাস্তাকে ভক্ষণ করেছ
হেঁটে চলেছি একসাথে একসঙ্গে
অনেক চকগুঁড়ো
অনেক বেপরোয়া পলাশের লাশ
ও কৃষিঋণ এবং অনন্ত দলিল
এবং অনন্ত আকাশ…
মায়াগুঁড়ো তুমি চকের হাত ধরো
ওই দেখো আঁকিবুকি রামধনু
রামধনুর আর একটু ও পারে আমাদের গ্রাম
পিছনে চাঁদ– পিছনে মালিকের ডেটল-শ্মশান
তবু এই দাগ– এই হাঁটা
অক্ষরের দাগ বুঝে বুঝে পথ চেনা
চেনা মেয়ে, আগের দলের চকগুঁড়োটি
কি অবিবাহিত?
তবে?
তবে তো উহার সঙ্গে এই কালো পিচের
সম্মন্ধ করলে মন্দ হয় না!
তুমি কি বল শ্রমশক্তি?
তুমি? তুমি কি বল ঈশ্বরভক্তি?
আমাদের হাঁটার
আমাদের ঝরে পড়ার পাশেও
গুটিগুটি চলেছে পাশের গাঁয়ের
কাকুতি ও মিনতি দুই বোন,
সঙ্গে তাহাদের কোলের বোনটি
সঙ্গে ভারতীয় বায়ু ও অগ্নি …
২/
মোমবাতির একটা দীর্ঘ কালো ছায়া
দেখা যাচ্ছে।
একজন ঝুলে থাকা মানুষ যেমন
ভাল্লুকে রূপান্তরিত হয়।
একটা বিপরীতমুখী রেখা তোমার
আমার সবার জীবনে আসুক।
একটা রিভার্সাল টার্ন।
ষাঁড়কে দেখা যাচ্ছে ওই প্রস্ফুটিত
ফুলের মতো, আলোর মতো।
জিলিপির বিয়ে ঠিক হয়ে গেল।
পাত্র ময়রার দোকানের এক নম্বর
কারিগর, ঈষৎ চুতিয়াও সে, সে একদিন
মিষ্টিকে তেতো বানাবেই।
বুল ভার্সেস বিয়ার ফাইট ইজ
কন্টিনিউড।
আরও নীচে থেকে, খাদের গভীর থেকে
একদিন হঠাৎ আমাদের লালায়িত ষাঁড়
উঠে আসবেই, সঙ্গে চাঁদের ক্ষতবিক্ষত
মায়া ও ভালবাসা।
জিলিপির বিয়েতে একটু বেশি খাওয়া
হয়েছিল, আমাদের সবার।
আমরা বেশি বেশি খাব বলে ষাঁড়কেই
ভাইজান ভেবেছি চিরকাল…
৩/
দেখি জিভ দেখি।
অ্যা অ্যা অ্যা
জিহ্বা দেখি
অ্যা অ্যা অ্যা
টর্চের আলো
আলজিভ অব্দি দেখা যায়
আর একটু দূরে কুলু-মানালিদের
শরীরশরীর বাড়ি
পেট ব্যথা
পাতলা জলের মতো বাহ্য,
সেই জলে চাঁদের ছায়া,
পরজন্মে বাঁশপাতা ভাসে
সকালে খালি পেটে একটা।
দুঃ রাঃ খাওয়ার পরে একটা।
ডাক্তার ছবি আঁকে সাদা পৃষ্ঠায়
জিভে শিলং পাহাড়
সাদা মেঘ
জিভে বাঁশবন, জিভে বাংলাদেশ
জিহ্বায় করোটিকঙ্কাল
এই জিভ নিয়েই
এতদূর এলাম
মায়ের হাতের রান্না লেগে আছে
এই জিভে
জিভ দেখি
অ্যা অ্যা অ্যা
ওই দূরে আলজিভ গ্রাম, শুক্রাণু-ডিম্বাণু
গাছেদের সারি, গাছে গাছে জিভ ঝুলে
আছে।
জিভে দুরারোগ্য রোদ, জিভে হাইকোর্ট।
জীবনের সর্বাত্মক স্বাদ লেগে আছে।
৪/
নিজের বৌয়ের স্তনের দিকে অজান্তে
চোখ চলে যায়, আনমনে চলে যায় চোখ।
সে যখন ওড়না খোঁজে, আমি লজ্জায়
পড়ে যাই। সে কি আমায় কামুক ভাবে?
ভাবে কি পরপুরুষ!
আমার সব আশ্রয় ভেঙে যায় ঝড়ে
আসলে সূর্য প্রণামের রীতি ও প্রেরণা
ছিল আমার অজানা
রানা রায়চৌধুরীর জন্ম ষাটের দশকে উত্তর ২৪ পরগনায়। সুরেন্দ্রনাথ কলেজের স্নাতক রানা পেশায় স্কুলশিক্ষক। তবে প্যাশন বলতে মূলত লেখালিখি। এ যাবৎ প্রকাশিত বারোটি কাব্যগ্রন্থ ও তিনটি গদ্যগ্রন্থ। লিখেছেন একটি উপন্যাসও। তাঁর কবিতার বই লাল পিঁপড়ের বাসা, অগাস্ট মাসের রাস্তা, একটি অল্পবয়সী ঘুম পাঠকমহলে সমাদৃত। লেখকের সদ্য প্রকাশিত গল্পের বই দ্রাবিড়ের ভাঙা উইকেট।
দারুণ..