নরেন্দ্র মোদীর পর এ বার বায়োপিক তৈরি হতে চলেছে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর।

ঠিক এক বছর আগে, ২০১৮ সালের ১৬ অগস্ট প্রয়াত হয়েছেন বাজপেয়ী। সূত্রের খবর, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরই রূপোলী পর্দায় দেখা যাবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বায়োপিক। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে চিত্রনাট্য লেখার কাজ। তবে বাজপেয়ীর চরিত্রে কে অভিনয় করবেন, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

২০১৭ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ এবং বর্ণময় জীবন নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন এন পি উল্লেখ। বইটির নাম ‘দ্য আনটোল্ড বাজপেয়ী’। সম্প্রতি ওই বইয়ের স্বত্ব কিনেছে অমাস ফিল্মস নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা। উল্লেখের বইটির উপর ভিত্তি করেই তাঁরা সিনেমা বানাবেন বলে জানিয়েছেন প্রযোজনা সংস্থার কর্ণধার। সিনেমাটির নামও প্রাথমিক ভাবে ‘দ্য আনটোল্ড বাজপেয়ী’ রাখা হবে বলে স্থির হয়েছে। বাজপেয়ীর শৈশব, বেড়ে ওঠা, কবিতা চর্চা, আরএসএসে যোগ দেওয়া থেকে শুরু করে রাজনাতিক জীবনের সবকিছুই থাকবে ছবিতে।

অমাস ফিল্মের কর্ণধার শিবা শর্মার কথায়, ”দ্য আনটোল্ড বাজপেয়ী আমাদের স্বপ্নের প্রজেক্ট। আমি অত্যন্ত উত্তেজিত এই ছবিটি নিয়ে। ওঁর মতো মাপের নেতার জীবন নিয়ে কাজ করতে পারা বিরাট ব্যাপার। বাজপেয়ী সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য রয়েছে বইটিতে। সিনেমাতেও সেগুলি থাকবে।” তিনি জানান, ইতিমধ্যেই চিত্রনাট্য লেখার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে কাস্টিং এখনও হয়নি।

নিয়মিত কবিতা লিখতেন বাজপেয়ী

বাজপেয়ীর জন্ম ১৯২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর। গ্বালিয়রে। ১৯৪২ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে যোগ দেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তাঁকে গ্রেফতারও করে ব্রিটিশ পুলিশ। যদিও আরএসএস ওই আন্দোলনে অংশ নেয়নি। এর পর তিনি যোগ দেন ভারতীয় জনসংঘে। লোকসভায় জনসংঘের সাংসদ হিসাবে সাড়া জাগানো বক্তৃতা করেন। তাঁর ভাষণ শুনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু জানিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে বাজপেয়ী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন। সেই ভবিষ্যতবাণী মিলে গিয়েছিল নয়ের দশকের শেষে। তবে তার আগে ১৯৭৭ সালে মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বে জনতা সরকার তৈরি হলে বাজপেয়ী মন্ত্রী হন। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত বিদেশমন্ত্রী ছিলেন তিনি। সেই সময় রাষ্ট্রসংঘে হিন্দিতে বক্তৃতা করে নজর কাড়েন বাজপেয়ী। ১৯৮০ সালে বিজেপি তৈরি হলে বাজপেয়ী হন দলের প্রথম সভাপতি।

বিজেপি-র অন্দরে লালকৃষ্ণ আডবাণীর কড়া হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিপরীতে নরম হিন্দুত্বের রাজনীতির প্রবক্তা হিসাবে পরিচিত ছিলেন বাজপেয়ী। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। কিন্তু সেই সরকার টিঁকেছিল মাত্র ১৬ দিন। এর পর ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত ১৩ মাস প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বাজপেয়ী। তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন ১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিতে, ৫ বছরের জন্য। বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রীত্বের সময় সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল কারগিল যুদ্ধ। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গাও তাঁর আমলেই।

রাজনৈতিক কাজকর্মের ব্যস্ততা সামলে নিয়মিত কবিতা লিখেছেন অটলবিহারী। তাঁর কবিতাপাঠের প্রশংসায় সরব হয়েছেন কট্টর বিরোধীরাও। বায়োপিকে ঠিক কী ভাবে উপস্থাপন করা হবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে, এ বার তারই প্রতীক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *