এক ছিল মোটা কেঁদো বাঘ,
গায়ে তার কালো কালো দাগ।
বেহারাকে খেতে ঘরে ঢুকে
আয়নাটা পড়েছে সমুখে।
এক ছুটে পালালো বেহারা,
বাঘ দেখে আপন চেহারা।
গাঁ – গাঁ করে ডেকে ওঠে রাগে,
দেহ কেন ভরা কালো দাগে।

ঢেঁকিশালে পুঁটু ধান ভানে,
বাঘ এসে দাঁড়ালো সেখানে।
ফুলিয়ে ভীষণ দুই গোঁফ
বলে, চাই গ্লিসেরিন সোপ।

পুঁটু বলে, ও কথাটা কী যে
জন্মেও জানি নে তা নিজে।
ইংরেজি – টিংরেজি কিছু
শিখি নি তো, জাতে আমি নিচু।

বাঘ বলে, কথা বল ঝুঁটো,
নেই কি আমার চোখ দুটো।
গায়ে কিসে দাগ হল লোপ
না মাখিলে গ্লিসেরিন সোপ।

পুঁটু বলে, আমি কালো কৃষ্টি
কখনো মাখি নি ও জিনিসটি।
কথা শুনে পায় মোর হাসি,
নই মেম – সাহেবের মাসি।

বাঘ বলে, নেই তোর লজ্জা?
খাব তোর হাড় মাস মজ্জা।

পুঁটু বলে, ছি ছি ওরে বাপ,
মুখেও আনিলে হবে পাপ।
জান না কি আমি অস্পৃশ্য,
মহাত্মা গাঁধিজির শিষ্য।
আমার মাংস যদি খাও
জাত যাবে জান না কি তাও।
পায়ে ধরি করিয়ো না রাগ!

ছুঁস নে ছুঁস নে, বলে বাঘ,

আরে ছি ছি, আরে রাম রাম,
বাঘনাপাড়ায় বদনাম
রটে যাবে; ঘরে মেয়ে ঠাসা,
ঘুচে যাবে বিবাহের আশা
দেবী বাঘা – চণ্ডীর কোপে।
কাজ নেই গ্লিসেরিন সোপে।

অলংকরণ: নন্দলাল বসু

Rabindranath tagore

রবীন্দ্রসাহিত্যের বিপুল সম্ভার থেকে কিছু মণিমুক্তো তুলে এনে সাজিয়ে দিল বাংলালাইভ। মলাট কাহিনির বিষয় হোক বা বিশেষ কোনও ঘটনা, সবক্ষেত্রেই আজও প্রাসঙ্গিক যাঁর লেখা, তাঁকেই পুনরাবিষ্কার করতে চেয়ে বাংলালাইভের এই প্রয়াস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *