ট্রেন ওদ্লাবাড়ি স্টেশনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে। শিলিগুড়ির পর কোথাও আর থামেনি। সোয়া একঘণ্টা লেট। এরপর ডামডিম পেরোলেই নিউ মাল জংশন। এ যাত্রায় কাঞ্চনকন্যায় বসেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন হয়েছে। সমান্তরাল ঘন জঙ্গল যখন বিপরীতমুখী দৌড় দেয়, সে সবুজের আড়ালে চলে যায়। আবার অরণ্যের ঠাসবুনট পাতলা হলেই সঙ্গ দেয়। এ লুকোচুরি খেলা চলছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে।
সকাল সাড়ে দশটায় কাঞ্চনকন্যা এসে দাঁড়াল নিউ মাল জংশনে। স্টেশন চত্বরের পার্কিং লটে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল রমেশ। অচেনা পাহাড়ি গ্রাম সুনতালের পথে যাত্রা শুরু হল। শুধু দিন তিনেকের শান্তিযাপন আর আলসেমি। সফরসঙ্গী বন্ধু লিপিকা। হেমন্তে পাহাড়ের ডাক… এই সময়টা কাঞ্চনজঙ্ঘা সাধারণত কাউকে নিরাশ করে না।

মালবাজারটা ছাড়াতেই চা বাগান। পিঠে ঝুড়ি নিয়ে পাতা তোলার কাজে ব্যস্ত শ্রমিক। ছবি তোলার অছিলায় জীবন-সংগ্রামের গল্প শুনলাম। গরুবাথান ফরেস্ট, নাকা চেকপোস্ট পেরিয়ে সোমবাড়ি বাজার। একটু এগিয়ে চেল নদীর সঙ্গে দেখা। পথ বিভাজন। ডানদিকে উঠে গেছে লাভা যাওয়ার রাস্তা। আমরা বাঁদিকে উতরাই পথ ধরে নেমে চলেছি।
চওড়া কাঠের ব্রিজ পেরিয়ে ক্ষণিকের বিরতি। নিবিড় সবুজে ঢাকা পাহাড় আর চেল নদীর যুগলবন্দি। বড় বড় পাথরকে পাশ কাটিয়ে বয়ে চলেছে। এমন এক নদীর পাড়ে দুদণ্ড বসতে মন চায়। দু-একটা মোমো-চাউয়ের দোকান, সরল কিছু হাসিমুখ, ধোঁয়া ওঠা মোমোর প্লেটে পাহাড়ি সুবাস আর কুলকুল শব্দ।
ফাগু চা-বাগান, ফাগু মনাস্ট্রিকে পিছনে ফেলে এবার চড়াই পথ শুরু হল। “আর কতদূর?” —উত্তরে রমেশ বলল, “সিক্সটিন কিলোমিটার।” বেশ কিছু হেয়ারপিন বাঁক। অনেকটা উঠে এসেছি। সংকীর্ণ রাস্তা, মাঝে মাঝে বেশ চড়াই। আরামদায়ক শীতল আমেজ। পাখির চোখে ধরা দিল বিস্তৃত উপত্যকার অপূর্ব প্যানোরামিক ভিউ। বেলা একটা নাগাদ পৌঁছলাম ইষ্টিকুটুম হোমস্টের দোরগোড়ায়, আগামী তিনদিনের অস্থায়ী ঠিকানা।

সুনতালে গ্রাম, নির্জনতার আরেক নাম। প্রথমটায় মনে হয়েছিল, জায়গাটা সুনতালেখোলা বা তার আশপাশে কোথাও হবে। তা নয়। হিমালয়ের কোলে ৬২০০ ফুট উচ্চতায় এর অবস্থান। গায়ে গা লাগিয়ে দুই যমজ গ্রাম…সুনতালে আর ঝান্ডি, জেলা কালিম্পং। ছেত্রী, শেরপা, রাই, বিশ্বকর্মা, লেপচা— দুই গ্রাম মিলিয়ে প্রায় শ’তিনেক লোকের বাস।
বাগানের বেড়ার গেট খুলে বেরিয়ে এলেন শুভম পোদ্দার। বাড়ি কলকাতায়। পাহাড়কে ভালবেসে প্রায় সারা বছরই পড়ে থাকে তার স্বপ্নের ফার্মহাউস ‘ইষ্টিকুটুম-এ। দোতলার ঘরে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। ফুলের বাগানে সেজে আছে উঠোন। কিছুটা জায়গা জুড়ে অরগ্যানিক সবজির চাষ। একপাশে ছাউনি দেওয়া বসার ব্যবস্থা। উল্টো দিকের পাহাড়টার পিছনে এক টুকরো রুপোলি শৃঙ্গের উঁকি, আর পাশের জঙ্গল থেকে ভেসে আসছে অচেনা আরণ্যক শব্দ।
ঝক্ঝকে আকাশ। মিঠে রোদে পিঠ দিয়ে বসে দুপুরের খাওয়াদাওয়া। শুভম বললেন, “ডানদিকের রাস্তা ধরে দু কিলোমিটার গেলে একটা সুন্দর ভিউ পয়েন্ট আছে।” বেলা গড়িয়ে বিকেল হতে চলল। পাহাড়ে ঝুপ করে সন্ধে নেমে যায়। দেরি না করে হাঁটতে লাগলাম। একটু এগোনোর পর সুনতালে গ্রাম শেষ, ঝান্ডি শুরু।

কাঁচা রাস্তা, মাঝে মাঝে ছোট ছোট বোল্ডার। সমান্তরালে ঘন অরণ্য। বুনো ফুলের গন্ধ। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা তিরতিরে সরু জলধারা রাস্তা ভিজিয়েছে। একটা বাঁক নিতেই প্রকৃতির রূপ খুলে গেল। ডানদিকে গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে তুষারাবৃত শৃঙ্গরাজির বিস্তার।
প্রায় চল্লিশ মিনিট হাঁটার পর পৌঁছলাম যে জায়গাটায়, সেখানে ‘ভিউ পয়েন্ট’ লেখা কোনও বোর্ড নেই, ওয়াচটাওয়ার নেই, ছাউনি দেওয়া বসার জায়গাও নেই। তবু নিজ গুণেই ভিউ পয়েন্ট হিসেবে তার পরিচিতি। অনেকটা নীচে বিস্তৃত উপত্যকা। তিস্তা, চেল আর ঢিস নদী এঁকেবেকে জড়াজড়ি করে বিনুনি পাকিয়েছে। শেষ বাড়িটার ছাদে ওঠার সিঁড়ির মুখটা রাস্তার দিকে।কারোর অনুমতি ছাড়াই উঠে পড়লাম। এরপর ঘাড় ঘুরিয়ে ডানদিকে তাকাতেই একরাশ মুগ্ধতা। শায়িত বুদ্ধ রূপে একই ফ্রেমে ধরা দিয়েছে সপারিষদ কাঞ্চনজঙ্ঘা।

দিন ফুরোচ্ছে। পশ্চিম আকাশের লালের আভা কাঞ্চনজঙ্ঘার গায়ে। সূর্য পাহাড়ের পিছনে চলে গেলেও লাল-হলুদ মেশানো অপরূপ এক সরলরেখার সৃষ্টি হয়েছে। নিস্তব্ধতার মাঝে চারপাশে পাখিদের দিন-শেষের আলাপচারিতা। পাশের টি-স্টল থেকে চা পাতা ফোটার গন্ধ ভেসে আসছে। ছাদ থেকে নেমে ধুমায়িত চায়ের কাপ নিয়ে লনে এসে বসলাম।
ধীরে ধীরে পাহাড়ের কোলে অন্ধকার নেমে এল। নীরবতার কালো চাদরে ঢাকা পড়েছে গ্রাম। দূরের পাহাড়ে বিক্ষিপ্তভাবে আলো জ্বলছে। আমরাও ফেরার পথে। জঙ্গলের পাশ দিয়ে রাস্তা। ঝিঁঝিঁ পোকার সশব্দ উপস্থিতি। হিমেল হাওয়ার কামড় ভালোই টের পাচ্ছি। হেড টর্চ জ্বেলে দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলাম। দুপুরে ‘ইষ্টিকুটুম’ থেকে ফলো করতে করতে আসা ‘জিগ্মি’ এখন পাহারা দিয়ে নিয়ে চলেছে।
রাস্তার ধারে বারান্দা থেকে অনেক নীচে শিলিগুড়ির আলো ঝলমলে চেহারাটা চোখে পড়ছে। বিরজু ভাইয়া বারান্দার টেবিলে চা আর ভেজ পাকোড়া দিয়ে গেছে। একইসঙ্গে বাগানে যেতেও বলে গেছে, ক্যাম্প ফায়ারের আয়োজন হচ্ছে। সেইমতো একটু পরে বাগানে এসে বসলাম। ঝলসানো চিকেনে কামড় দিয়ে বার-বি-কিউ এর আগুনে হাত-পা সেঁকতে বেশ আরাম লাগছিল। দুদিন পরেই অমাবস্যা। দূরের কালো পাহাড়ের কোলে জমাটবাঁধা আলোর রোশনাই লাভা আর কালিম্পং শহরকে চিনিয়ে দিচ্ছে।

ভোর পাঁচটায় ঘড়ির অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল। চারপাশ শুনশান, অন্ধকার। হাত দিয়ে জানালার ঝাপ্সা শার্সি মুছে বাইরের দিকে চোখ রেখে আকাশের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করলাম। মেঘমুক্ত। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম। শুভম বলেছিল, ছটা নাগাদ সূর্য ওঠে। তার আগেই যতটা পারা যায় এগিয়ে যেতে হবে। জিগ্মিও পিছন পিছন চলেছে।
ভিউ পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই পুব আকাশ লাল হতে শুরু করল। প্রথম রবি কিরণে কাঞ্চনজঙ্ঘা ধীরে ধীরে সোনার পাতে মুড়ে গেল। সোনালি বর্ণচ্ছটায় স্বর্গীয় মুগ্ধতা। নয়ন মেলে জগতের বাহার দেখতে দেখতে সময় কোথা দিয়ে কেটে গেল বুঝতে পারলাম না।
রোদ্দুর ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ের গায়ে। দৃশ্যপটেরও পরিবর্তন হয়েছে। সোনার পাতের মোড়ক থেকে বেরিয়ে এসে কাঞ্চনজঙ্ঘা এখন শ্বেতশুভ্র। গ্রামটা ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। আরেকটা কর্মব্যস্ত দিনের সূচনা। উঠোনের এক চিলতে সবজি খেতে কাজে লেগে পড়েছে স্থানীয়রা। পা ছড়িয়ে বসে গরম চায়ে শেষ চুমুকটা দিয়ে ফিরে চললাম।

হেমন্তের ফুরফুরে হাওয়ায় ইষ্টিকুটুমের কর্মীরা আজ চড়ুইভাতির মুডে। শুভম, বান্টি, বিরজু ভাইয়া, ছোট শুভম— সবাই গীতখোলায় পিকনিক করতে যাচ্ছে। বড় বড় হাঁড়ি, কড়াই, গ্যাস ওভেন, সিলিন্ডার, কাঁচা বাজার— গাড়িতে তোলা হচ্ছে। আমরা ছাড়া লজে আর কোনও গেস্ট নেই। “তোমরাও চলো”… শুভমের নিমন্ত্রণ পেয়ে ওদের সঙ্গী হলাম। মম্তা বহেনের বাড়ি থেকে দেশি মুরগি, লালি গুরাসের লোকাল ওয়াইন জোগাড় হল। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ গীতখোলার পথে।
ভিউ পয়েন্টের কাছে এসে গাড়ি থামল। এত বেলাতেও কাঞ্চনজঙ্ঘা বেশ ঝক্ঝক্ করছে। বান্টি বাঁশঝাড় থেকে কচিবাঁশ কেটে নিয়েছে, ব্যাম্বু চিকেন রাঁধবে। এ পর্যন্ত রাস্তা ঠিকঠাকই ছিল, এরপরই কঙ্কালসার চেহারা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। মাত্র আট কিলোমিটার রাস্তা পৌঁছতেই বেশ সময় লাগল।
একটা হেয়ারপিন বাঁকের পর উৎরাই। উপর থেকে গীতখোলাকে দেখা যাচ্ছে। বাকি পথটুকু দুমড়ে মুচড়ে আছে। পাহাড়ের ধার ঘেঁষে গাড়ি থামল। জলে ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে পিছল রাস্তা। সাবধানে পা টিপে টিপে ঝোরার সামনে ছোট সেতুটার ওপর এসে দাঁড়ালাম। স্থানীয় লোকজনদের এটাই চলার পথ। সমান্তরালে আরেকটা পরিত্যক্ত সেতু। গীতখোলার পুরনো ব্রিজ, সেবকের করোনেশনের আদলে আর্চ। চারপাশে আগাছা জন্মেছে। ওই ব্রিজের ওপরেই একপাশে শতরঞ্জি পেতে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, আরেক পাশে রান্নাবান্না।

ঘন অরণ্যের আলিঙ্গন। এক আকাশ নিস্তব্ধতা। শুধু গীতখোলার আছড়ে পড়ার শব্দ। ধাপে ধাপে নীচের দিকে নামতে নামতে গীতখোলা জঙ্গলের অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। ব্রিজের ওপর গ্যাস ওভেনে বিরিয়ানির হাঁড়ি চেপেছে। জুনিয়র শুভম আশপাশের জঙ্গল থেকে শুকনো পাতা, কাঠকুটো জোগাড় করে এনেছে। বাঁশপোড়া চিকেনের প্রস্তুতি চলছে। কচি বাঁশের ভিতরটা ভালো করে ধুয়ে, ছোট ছোট টুকরো করে কাটা মশলা মাখানো চিকেন পুরে, বাঁশের খোলা মুখটা কলাপাতা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হল। বাঁশটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আগুনে ঝলসে ব্যাম্বু চিকেন তৈরি।
এদিকওদিক এলোমেলো বেড়ানো সেরে এক পেট খিদে নিয়ে এক প্লেট বিরিয়ানি খেতে বসে পড়লাম। বান্টির রান্না লা-জবাব। হাতে হাতে আবর্জনাগুলো একটা বড় প্যাকেটে ভরে জায়গাটা পরিষ্কার করে ফেলা হল। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ লজে ফিরলাম। এ বেলা আকাশে মেঘ জমেছে। সানসেট তেমন জমল না। প্রাক দীপাবলির চোদ্দ প্রদীপে ইষ্টিকুটুম সেজেছে। দূরে পাহাড়ের গায়ে আলোর সাজ তো রোজকার ব্যাপার। তবে আজ শিলিগুড়ির মণিমুক্তো খচিত আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে না। ওদিকটা অন্ধকার। বোঝা গেল, শিলিগুড়ি মেঘে ঢাকা পড়েছে।

সকাল পরিষ্কার। ভোরের নরম আলোয় পাহাড়ের তুষারধবল রূপ দেখা থেকে আজও বঞ্চিত হলাম না। আজ যাব লুংসেল, সঞ্জীব ছেত্রীর বাড়ি। লাঞ্চের নিমন্ত্রণ। গীতখোলা যাওয়ার পথে আলাপ হয়েছিল। শুভমের বন্ধু। তার মুখে বাঙাল কথা শুনে বেশ অবাক হয়েছিলাম। কৌতূহল খানিকটা আন্দাজ করতে পেরে বলেছিল, “বাবা ছেত্রী, কিন্তু মায়ের ভাষা তো বাংলা (পড়ুন বাঙাল)।
বেলাবেলি পৌঁছে গেলাম সঞ্জীবের বাড়ি। গীতখোলার খুব কাছেই। পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেরা গ্রাম। সবুজের কোলে ছোট্ট হোমস্টে। নিজস্ব জমিতে অর্গ্যানিক ফলনের সমাহার। স্কোয়াশ, রাইশাক, মসেম ডাল থেকে শুরু করে পাহাড়ের এক ফালি ঢালে কয়েক ধাপ চা বাগান। কিছুই যেন বাদ নেই।
সঞ্জীবের ছোট্ট মেয়ে সঞ্জীবনী প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে।একবার বাগান দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে, আবার বাঁশের মাচানে উঠে নাচ দেখাচ্ছে…হৈচৈ করে মাতিয়ে রেখেছে। অনেকটা নীচে তিরতিরে জংলি ঝোরা। বাঁশঝাড়ে ঘেরা স্যাঁতস্যাঁতে, সরু পথ ধরে সঞ্জীবনীকে অনুসরণ করলাম। ওর প্রিয় জায়গা। জলে পা ভিজিয়েই কচি মুখে খেলে গেল নির্মল আনন্দ।

আজ দীপাবলী। পুজোর টিকা সকলের কপালে। গোবর দিয়ে উঠোনটা নিকোনোর পর রঙ্গোলি, প্রদীপ আর গাঁদা ফুলের সাজসজ্জার প্রস্তুতি চলছে। লাঞ্চের মেনুতে ভাত, ডাল, আলুভাজার পাশাপাশি ঘরোয়া পাহাড়ি ছোঁয়া… স্কোয়াশের শাক, পটলের তরকারি, মাছের মাথা দিয়ে স্কোয়াশ, চিকেন কারি, বাদামের চাটনি, মুলোর চাটনি, আদার চাটনি।
খোলা আকাশের নীচে মাচানে খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। হঠাৎই আকাশ বাদল মেঘে ছেয়ে গেল। টুপ্টাপ্ বৃষ্টির ফোঁটা শুরু হল। ঝেঁপে নামার আগেই লুংসেল থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। তবে সে বৃষ্টির রেশ রয়ে গেল রাতেও। সন্ধ্যার দিকে অল্প কিছু বাজি পুড়লেও রাত আটটার মধ্যে সব শুনশান। শুভমরা সবাই মিলে দিওয়ালি পালন করতে আবার সঞ্জীবের বাড়িতে চলে গেল। আজ রাতে আর ফিরবে না। আমাদের দেখভাল করার জন্য শুধু বিরজু ভাইয়া রয়ে গেল। গরম খিচুড়ি রাঁধছে সে।

শেষ রজনীটা একটু অন্যরকম হোক। উঠোনের একপাশে ছোট্ট তাঁবুতে রাত্রিবাস। রাত সাড়ে নটা নাগাদ তাঁবুতে সেঁধিয়ে গেলাম। দূরে পাহাড়ি গ্রাম ঘুমিয়ে পড়েছে অমাবস্যার অন্ধকারে। চারপাশে অপার শান্তির বসবাস। বৃষ্টি নামল, নামল পারদ। তাঁবুর মাথায় বৃষ্টির শব্দবাণ।
লেপ মুড়ি দেওয়া আদুরে ভোরে আলসেমি ভর করেছে। তাঁবুর জিপ টেনে মুখ বের করে দেখি তুলোমেঘ দল পাকিয়েছে পাহাড়ের খাদে। কুয়াশা ঘিরে ধরেছে। প্রকৃতি আজও অকৃপণ। কাঞ্চনজঙ্ঘা নতুন আলোয় ধোওয়া। সে আলোয় আলোকিত আমরাও। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এই আলোটুকু নিয়েই ফিরে যাব ঘরে।

প্রয়োজনীয় তথ্য
যাতায়াত– ট্রেনে নিউ মাল জংশনে এসে গাড়ি নিয়ে যেতে হবে সুনতালে-ঝান্ডিতে (Suntale Jhandi)। এছাড়া, কালিম্পং, লাভা থেকেও ঘুরে নেওয়া যায়।
থাকা– সুনতালে গ্রামে থাকার জন্য আছে ইষ্টিকুটুম হোমস্টে। যোগাযোগ – ৯৮৩৬০-৪৪৪৪৪, ৯৩৩৯৭-৪২৮৪৭
লুংসেলে থাকার জন্য আছে সঞ্জীবনী হোমস্টে। যোগাযোগ – ৯১২৬১-৯৪৪৮৯, ৯৮০০৪-৬০৫১০
*ছবি সৌজন্য: লেখক
দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। ভ্রমণ, আনন্দবাজার ই-পেপার, ভ্রমী পত্রিকার নিয়মিত লেখক। এছাড়া যারা-যাযাবর, তথ্যকেন্দ্র, লেটস্-গো, আজকাল, প্রতিদিন, গণশক্তি প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত। ট্র্যাভেল রাইটার্স ফোরাম ইন্ডিয়ার সদস্য। প্রধান শখ ও নেশা বেড়ানো আর ট্র্যাভেল ফটোগ্রাফি।
Asadharon lekha
সহজ সরল সুন্দর বর্ণনার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে মনে হল অনুভবের পাত্র পূর্ণ হয়ে উঠল।