শেষের শুরু?

পার্কিং লটে আমার এয়ার কার পার্ক করে গাড়ির মধ্যেই বেশ কিছুক্ষণ বসে রইলাম। ভেতর থেকে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে সবকিছু। এক অদ্ভুত ঔদাসিন্য ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়ার মতো আমার চিন্তা চেতনাকে গ্রাস করে নিচ্ছিল। দিল্লির এই ইউনিভার্স স্পেস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে আসার পথে আকাশের টুকরো মেঘ এয়ার কারের উইন্ডস্ক্রিন ছুঁয়েই মিলিয়ে যাচ্ছিল, দেখে মনে হচ্ছিল এই অনাবিল পৃথিবীর সবকিছুই  যেন ওই ক্ষণিকের মেঘের মতোই, এই আছে আবার এই নেইও।

আমার চিন্তার জাল ছিন্ন করে গলায় ঝোলানো এয়ার ডিভাইসটা ভাইব্রেট করে উঠল। প্রফেসর ইউজিনের কল। কলটা রিসিভ করলাম না। পরিবর্তে একটা ছোট্ট মেসেজ মনে মনে ভাবলাম “চিন্তা করবেন না, আমি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার সঙ্গে দেখা করছি”। এয়ার ডিভাইসটি আমার মস্তিষ্কের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের সঙ্গে প্রোগ্রামিং করা আছে, আমি যা মনে মনে ভাবব সেটা আর আমাকে টাইপ করতে হবে না, এয়ার ডিভাইসটি সেই বার্তা পৌঁছে দেবে অভিষ্ট লক্ষ্যে। 

আমি গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে পৌঁছলাম প্রফেসর ইউজিনের ল্যাবে। ল্যাবটির মূল দরজায় লাগানো ফিঙ্গার সেন্সরের গায়ে আঙুল ছোঁয়াতেই পাশের পর্দায় আমার ছবিসহ পূর্ণাঙ্গ বিবরণ ফুটে উঠল ও দরজাটি খুলে গেল। কুড়ি ফুট বাই তেরো ফুটের এই  ল্যাবরেটরিটি বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী ইউজেনের প্রচুর যুগান্তকারী আবিষ্কারের সাক্ষী। ল্যাবটির পুব দিকে স্বচ্ছ একটি পর্দা আছে ওটির নাম ম্যাজিক কার্টেন, সেটির স্বচ্ছতা,  প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায়। এখন যেমন পর্দার ওপারে বসে ইউজিন আমাকে দেখতে পাচ্ছেন, কিন্তু আমি এদিকে দাঁড়িয়ে একটা সাধারণ আয়না দেখছি। আবার কখনও এটিকে সাধারণ কাচের মতো ব্যবহার করা যায়, তখন এটই পর্দা ভেদ করে দু’দিকের জিনিসই দিব্য দৃশ্যমান হয়। ম্যাজিক কার্টেন যেমন স্বচ্ছ তেমনই আবার দুর্ভেদ্যও বটে। এই পর্দা একমাত্র তারাই ভেদ করতে পারবে যাদের ডিএনএর তালিকা আগে থেকে পর্দার প্রসেসরে এনক্রিপ্ট করা আছে। এই আবিষ্কারের জন্য প্রফেসর ইউজিন নোবেল পেয়েছিলেন।

ওই পর্দার সামনে এসে আমি মুহূর্তকাল দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর দেখলাম প্রফেসর নিজেই ওপার থেকে পর্দা ভেদ করে বেরিয়ে এলেন। আমার দিকে তাকিয়ে চোখগুলো সরু করে সন্দেহের সুরে বললেন,

-মিস্ বাসু, তোমরা বাঙালি মেয়েরা এরকম একটা সংকটপূর্ণ সময়ে কী করে এমন শান্ত, স্নিগ্ধ চেহারায় থাকতে পারো? এই তিন হাজার কুড়ি সালেও শাড়ি পরিহিতা রমণী বড় বিরল!

উত্তরে আমি মুচকি হাসলাম।  

 

প্রফেসর বললেন

-গতকাল আমার সঙ্গে কমিটির চিফের কথা হয়েছে, আমি একটা প্ল্যান করেছি। কফি খেতে খেতে বাকি আলোচনা করা যাক্।

 

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

-আমাদের টিমের বাকি দু’জন কোথায়?

 

তখনই ল্যাবের মূল দরজার কাছ থেকে জলদগম্ভীর কণ্ঠে উত্তর এল

-প্রফেসর বাসু, দু’জন নয়, তিনজন।

 

আমি অবাক হয়ে পেছন ফিরে দরজার দিকে তাকালাম,আর ঠিক তখনই ডঃ ইউজিন বলে উঠলেন

-তুমি একদম সঠিক সময়ে এসেছ প্রফেসর আনোয়ার।

 

আমি মাথা ঘুরিয়ে ডঃ ইউজিনের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই উনি চোখ নাচিয়ে মজা করে আমাকে চাপা গলায় বললেন,

-ওহ্ বাসু, কিছু করার নেই, আনোয়ারের চেয়ে দক্ষ এমব্রায়োলজিস্ট এই মুহূর্তে আর কেউ নেই, ও সমস্ত এমব্রায়ো ও বীজগুলোকে দেখে রাখতে পারবে, আর তার সঙ্গে তোমাকেও।

 

আমি ডঃ ইউজিনকে কোনও উত্তর দিলাম না। একরাশ বিরক্তি নিয়ে ল্যাবের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলাম।

 

প্রফেসর আনোয়ার আলবার্তো, এই মুহূর্তে বিশ্বের একনম্বর এমব্রায়োলজিস্ট, উনি বিশিষ্ট পরিবেশবিদও বটে। গত কয়েক বছরে পৃথিবীর প্রায় সাতষট্টি   লাখ প্রাণী, জীব, উদ্ভিদ, ব্যাকটেরিয়া,ভাইরাসের স্পার্ম, এগ, বীজ ও নমুনা চাঁদে সুনিপুণ  সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ওঁর বিরাট ভূমিকা ছিল। এই কাজটি সাফল্যের সঙ্গে করার জন্য উনি সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশবিদের আখ্যা পেয়েছেন। তাই আমাদের এই মিশনে উনি যে থাকবেন তা প্রায় অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল।

বয়স আন্দাজ চল্লিশ, প্রায় ছ’ফুট লম্বা, কাঁচা আমের মতো গায়ের রং, শ্বেত শুভ্র চেহারার আমেরিকান জ্ঞানী মানুষটির চেহারায় বুদ্ধিদীপ্ততাকে ছাপিয়ে যেন এক শান্ত সমাহিত দীপ্তির প্রকাশ দেখা যায়, এক অদ্ভুত বরাভয়  যেন ওঁর দু’চোখের দৃষ্টির মধ্যে বিচরণ করছে। 

ক্ষণজন্মা প্রখ্যাত এই বিজ্ঞানীকে হঠাৎ করে দেখলে গ্রিকদেবতা বলে ভ্রম হয়,ওঁর মতো একজন প্রকৃতিবিদের সঙ্গে কাজ করতে আমার কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়। শুধু মাঝে মাঝে উনি একটু প্রগলভ হয়ে পড়েন। সেইজন্য প্রফেসর  ইউজিন জনান্তিকে বেশ কয়েকবার ওঁর সম্বন্ধে আমাকে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য  করেছেন। 

কিন্তু আমার এখন কেরিয়ার গড়ার সময় তাই আমি সুকৌশলে এই কথাগুলো বরাবর এড়িয়ে গিয়েছি। তবে এবার মনে হয়ে শেষ রক্ষা হলো না।

 

এই সমস্ত সাতসতেরো ভাবতে ভাবতে আমি একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। 

প্রফেসর ইউজিনের গলার স্বরে সংবিত ফিরে পেয়ে তাকিয়ে দেখি ডঃ আনোয়ার আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন, ওঁর দিকে তাকাতেই বললেন

“ডঃ নৈঋতা বাসু, এত দ্বিধা কেন?”

 

আমি মনে মনে চমকে উঠলাম, প্রফেসর কি মন পড়তে পারেন?

এইসব নিয়ে বেশিক্ষণ আর কথা এগোল না,কারণ আমাদের টিমের আরও দু’জন ততক্ষণে এসে পৌঁছেছেন।

 

ডঃ ইউজিন বললেন,

“প্রফেসর আনো, তোমাকে আমরা তো এই নামেই ডাকি। কনফারেন্সের আগে তোমার সঙ্গে বাকি টিম মেম্বারদের আলাপ করিয়ে দিই

তারপর কৃত্রিম গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, “মিস্ বাসুর নাম তো তো তোমরা আগেই শুনেছ, বত্রিশ বছর বয়সেই উনি বিশ্বের প্রথম সারির পদার্থবিদদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন, ইনস্টিটিউটের সকলের সর্বসম্মতিক্রমে ওকে এই মিশনে যোগ করা হয়েছে। “

আমি অপাঙ্গে ডঃ আনোর দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন।

 

ডঃ ইউজিন ওঁর সামনে বসে থাকা জার্মান ডাক্তার লুইস টেলরকে দেখিয়ে বললেন,

“ইনি বিশেষভাবে মহাকাশের জন্যই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তোমাদের প্রজেক্টের আগে লুইস বেশ কয়েকবার মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছেন, উনি একজন মনোবিদ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে  ডাক্তারও বটে ।”

লুইস অমায়িক হেসে সকলকে অভিবাদন জানালেন।

তারপর ডঃ ইউজিন ঘরে উপস্থিত চতুর্থ ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে একটু দম নিয়ে বলতে শুরু করলেন,

“ইনি হলেন স্পেসক্রাফট্ ইঞ্জিনিয়ার, ওঁর নাম রঘুরাঘবন রামামুথাম মুরুগান পিল্লাই”

তারপর হাঁফিয়ে গিয়ে, চশমার ওপার থেকে নিজের চোখ দুটোকে যথাসম্ভব  বড় বড় করে ওঁর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন

“পিল্লাই,পুরো নামটা বলতে পেরেছি? না কিছু বাদ পড়ে গেল”।

প্রফেসর ইউজিন এই তিনহাজার কুড়ি সালেও বিশেষ অর্ডার দিয়ে চশমা তৈরি করান, এখন সকলেই সামান্য সার্জারি করিয়ে চোখের পার্মানেন্ট পাওয়ার কারেকশন করে নেয়। উনি বোধহয় এই পুরো দেশে একমাত্র ব্যক্তি, যিনি চোখের পাওয়ারের জন্য চশমা পরেন।

 

পিল্লাই তামিলের মতো টেনে টেনে ইংরাজিতে বললেন “woকে স্যার, দিস টাইম আদুসারি”, আমরা ওর দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেই উনি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন “আই মিন,কারেক্ট স্যার”।

আমরা সকলে হেসে উঠলাম। আর ঠিক তখনই প্রফেসর ইউজিনের এয়ার ডিভাইস ভাইব্রেট করে উঠল,সেদিকে তাকিয়ে প্রফেসর গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

“টিম,তৈরি হও, আমাদের এখন কন্ফারেন্সে যেতে হবে”।

 

মিশন: সেভ দ্য ইউনিভার্স

একশো আটানব্বই তলায় তৈরি পুরোটাই ম্যাজিক কার্টেনে মোড়া অত্যাশ্চর্য এই কন্ফারেন্স হলটি বিশ্বের সেরা আশ্চর্য বস্তুর একটি। 

এত উঁচু থেকে দিল্লির প্রায় সব মিনার,সমাধি,প্রাসাদ দেখা যায়।  বাস্তবিকই মেঘজমিনে তৈরি এই ঘরটিতে দাঁড়ালে আমার মন  থেকে সব কলুষ,সব চিন্তা দূরে চলে যায়। কখনও নীল,কখনও সাদা আবার কালো মেঘের তোয়াজ মেখে ভেসে যেতে ইচ্ছা করে অনন্তের পথে।

কিন্তু আজ একটি বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ মিশনে আমরা এখানে একজোট হয়েছি। আজ আমাদের পৃথিবী বিপন্ন, তাই মনের বিলাসিতা করার সময় এখন নয়। 

প্রফেসর ইউজিনের সঙ্গে আমরা চারজন আমাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া আসনে বসলাম। 

আমাদের সকলের চোখের সামনে বাতাসে পনেরো ফুট বাই কুড়ি ফুটের একটা পর্দা ফুটে উঠল।

ততক্ষণে ঘরের মাঝখানে উপস্থিত ইনস্টিটিউটের প্রধান প্রফেসর হেনরী বলতে শুরু করেছেন,

-আজ আমরা এখানে কেন একত্র হয়েছি সকলেই জানি।আমাদের পৃথিবী ও চাঁদের আজ অস্তিত্ব সংকট। 

অতীত ঘাঁটলে জানা যায়,১৯৯৪ সালে শুমেকার লেভি 9 ধুমকেতুটির ২০টির বেশি টুকরো বৃহস্পতি গ্রহের দক্ষিণ গোলার্ধে ঘণ্টায় প্রায় ২,১০,০০০কি.মি বেগে পতিত হয়েছিল। এতদিন পর্যন্ত আমাদের সোলার সিস্টেমের দু’টি বস্তুর সংঘর্ষ একমাত্র এটিই।

এতদূর বলে চিফ একটু থামলেন,ওঁকে দেখে মনে হচ্ছে যেন এরপরের কিছু বাস্তব অথচ কঠিন কথা বলবার জন্য নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছেন।

-কিন্তু এবার বোধহয় সেই তালিকায় স্থান পেতে চলেছে আমাদের প্রিয় গ্রহ পৃথিবী ও চাঁদ। 

পৃথিবীতে  যে কোনও সময় মহাজাগতিক কিছু দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বা পৃথিবী আক্রান্ত হতে পারে অপ্রতিরোধ্য কোনও ভাইরাসে অথবা জীবকূলের ওপর নেমে আসতে পারে কোনও ভয়ংকর প্রাকৃতিক  দুর্যোগ এই সমস্ত আশঙ্কা করে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেকন থাঙ্গার নেতৃত্ব ২০২৫ সালে পৃথিবীর প্রায় সাতষট্টি  লক্ষ ডিএনএ ও এককোষি প্রাণীকে চাঁদের লুনার আর্কে সুরক্ষিত করে রাখার সংকল্প করা হয়।পরবর্তী সময়ও  এই গুরুত্বপূর্ণ  কাজটিকে  সুচারুরূপে চালনা করা ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। বেশ কয়েকবছর ধরে চাঁদে ডিএনএ সংরক্ষণের কাজটি অত্যন্ত দায়িত্বের সাথে পালন করে চলেছেন গবেষক আনো।

একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সকলের দৃষ্টি আমার পাশে বসে থাকা প্রফেসর আনোয়ারের দিকে ঘুরে গেল। ডঃ আনো চোখে বেদনা ফুটিয়ে কাঁপা কণ্ঠে প্রফেসর হেনরীকে বলে উঠলেন,

-কিন্তু স্যার,এত করেও শেষ রক্ষা কি হবে না? আমরা কি শেষ হয়ে যাওয়ার আগে একবার শেষ চেষ্টা করব না?

 

প্রফেসর হেনরী দৃপ্ত গলায় বললেন,

-নিশ্চয়ই,আনো,তোমাদের চেষ্টা  বিফলে যাবে না,আমার বিশ্বাস আমরা আবার ফিরবো। 

আজ থেকে ছয়মাস বাদে অর্থাৎ আগামী ৫ই নভেম্বর ৩০২০,আমাদের পৃথিবী ও তার একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের ওপর আছড়ে পড়তে চলেছে বিধ্বংসী অবলিটারেশন ৩০২০ ধূমকেতু,  প্রকান্ড এই ধূমকেতুর আক্রমণের পর খুব সম্ভবত চাঁদের আর কোনও অস্তিত্ব থাকবে না আর পৃথিবীর চিত্র কেমন হবে তা আমরা কেউ এই মুহূর্তে  কল্পনাও করতে পারছি না। এছাড়াও ভূবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন,ওই সমসাময়িক কালে প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম আগ্নেয়গিরি ট্যামু ম্যাসিফের অগ্নুৎপাতের কারণে পৃথিবীতে মহাপ্রলয় ঘটবে।

তাই এই বিপন্ন পৃথিবীর জীবকূলকে রক্ষা করার জন্য আমরা “সেভ দ্য ইউনিভার্স” প্রোজেক্ট প্ল্যান করেছি। এই প্রজেক্টের অন্তর্গত মহাকাশযানটি নভেম্বরের অনেক আগেই, ১৫ই অগাস্ট, ভারতের স্বাধীনতা দিবসে,পৃথিবীর প্রাণীকূলের ডিএনএ নিয়ে মহাকাশের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবে।

যেহেতু এই প্রজেক্টের ওপর আমাদের সকলের অস্তিত্ব নির্ভর করছে তাই এটির টেকনিক্যাল খুঁটিনাটির বিষয়টি আমরা এই মুহূর্তে গোপন রাখছি।

প্রজেক্ট হেড প্রফেসর ইউজিনের ওপর হাউসের সকলের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আমরা জানি আমরা একদিন সফল হবই।

প্রফেসর হেনরীর বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কন্ফারেন্স হল সকলের করধ্বনিতে গমগম করে উঠল।

আমি উদাস দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম,সূর্য তার সমস্ত দিনের কাজ শেষ করে আলোর ঝোলা গুটিয়ে মৃদু ছন্দে পৃথিবীর কাছ থেকে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছে।স্লেট রঙা শেষ বিকেল তার ধূসর আঙরাখা গায়ে দিয়ে ক্রমেই যেন ছেয়ে ফেলতে চাইছে নীলিমার নীলসাদা অবয়ব। তারই মধ্যে পৃথিবীর আসন্ন বিপদের বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ,  বিন্দু হয়ে মিলিয়ে যাওয়া পাখির দল পরম নিশ্চিন্তে  ঘরে ফিরছে পরের দিন আবার উড়ান ভরবে এই আশায়।

আমার নিজেকে বড় অপরাধী মনে হল,মানুষের এত জ্ঞান,শিক্ষা,অহংকার সবকিছুরই কি পতন অবশ্যম্ভাবী?

এত অপূর্ব প্রকৃতিকে আমরা রক্ষা করতে পারবো না?

বিষয়টি আঁচ করতে পেরে প্রফেসর ইউজিন আমার পিঠে হাত রেখে বললেন

-নৈঋতা,তোমরা পারবে,তোমাদের পারতেই হবে।

আমার পাশে বসা প্রফেসর আনো স্বগোতক্তি  করে উঠলেন

-আগেও তো পেরেছি,আমার বিশ্বাস  এবারও পারবো।

আমি একটু চমকে গিয়ে ওঁর দিকে তাকালাম,উনি যেন খুব সাধারণ একটা

 কথা বলেছেন এমন ভাবলেশহীন মুখ করে আমার পাশ থেকে উঠে পড়লেন।

Anuva Nath

অনুভা পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। সরকারি চাকরি করেন। লেখালেখি প্যাশন। সানন্দা ব্লগ, শুকতারা, এখন ডুয়ার্স, অপার বাংলা, প্রসাদ-সহ প্রচুর পত্রপত্রিকা, লিটিল ম্যাগাজ়িন, ওয়েবজিন ও সংবাদপত্রে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা প্রকাশ পেয়েছে। সন্ধ্যা ভট্টাচার্য স্মৃতি প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার পেয়েছেন ছোটদের জন্য লিখে। কলকাতা আন্তর্জাতিক অণু চলচ্চিত্র উৎসব ২০২০-তে, অমিয়া ভৌমিক স্বর্ণকলম পুরস্কার পেয়েছেন। কলকাতা আন্তর্জাতিক অণু চলচ্চিত্র উৎসব ২০২১-এর বিচারক ও সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *