তন্ত্রসাধক পরিবার থেকে সরোদশিল্পের অপরিচিত আঙিনায় পা রেখেছিলেন তিনি। সারা ভারতে তখন সরোদ বাজাতেন মাত্র ছ’জন। সাধারণ মানুষ সরোদের নামও শোনেনি। বড়বাজারের শিবঠাকুরের গলির ৩১ নম্বর বাড়ির মেজ ছেলে যে সেই বাজনা নিয়ে ভারতজোড়া তথা জগৎজোড়া নাম করবেন, এমনটা কেউই ভাবেননি। তিনি, তিমিরবরণ ভট্টাচার্য, প্রথম নামেই বিখ্যাত। বিদেশি যন্ত্র ব্যবহার করে খাঁটি ভারতীয় অর্কেস্ট্রার জন্মদাতা হিসেবে আজও তিনি পরম শ্রদ্ধেয়, স্মরণীয়। এক অর্থে বলা যায়, ভারতীয় ফিল্ম মিউজিককে থিয়েটারের প্রভাবমুক্ত করে তাকে এক অন্য মাত্রায় বেঁধে দিয়েছিলেন তিমিরবরণ। 

তিমিরবরণের বাবা জ্ঞানেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ। পরিবারে প্রায় সকলেই সংস্কৃতে পণ্ডিত। জ্ঞানেন্দ্রনাথের তিন ছেলে– বড় মিহিরকিরণ, মেজ তিমিরবরণ ও ছোট শিশিরশোভন। তবে ভট্টাচার্য পরিবারের খ্যাতি তখন সঙ্গীতের চেয়ে তান্ত্রিক সাধনমার্গের কারণেই বেশি। পাথুরিয়াঘাটার রাজপরিবার ছিলেন ভট্টাচার্যদের মন্ত্রশিষ্য। সে বাড়ির জামাই বিখ্যাত ধ্রুপদশিল্পী আশুবাবু, পাখোয়াজশিল্পী নগেন দেব, খেয়ালশিল্পী রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী আসতেন শিবঠাকুরের গলিতে। তাঁদের হাতেই ভাইদের তালিম শুরু। দাদা মিহিরকিরণ বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ করতেন। খুব অল্পবয়সে পিতৃহারা হয়ে দাদাকেই পিতৃসম জ্ঞান করতেন তিমিরবরণ। দাদার সঙ্গীতচর্চার প্রভাব ছিল তাঁর জীবনে অনেকখানি।

তিমিরবরণের পড়াশোনা শুরু হয় ওরিয়েন্টাল সিভিল স্কুল ও সিটি ট্রেনিং স্কুলে। ১৯১৫ সালে ক্ল্যারিওনেটশিল্পী রাজেন্দ্রলাল চট্টোপাধ্যায়ের কাছে হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিতে শুরু করেন। সেই সময়ই একদিন ব্যাঞ্জো সারাতে চিৎপুর রোডে বাজনার কারিগর গোবর্ধনের কাছে যান তিমিরবরণ। তাঁর হাতে ব্যাঞ্জো দেখে গোবর্ধন হেসে ফেলে বলেন, ‘বাবু, এ সব খেলনা যন্ত্র কেউ বাজায় নাকি? আপনি বরং সরোদ বাজান!’ তিমিরবরণ অবাক। এ যন্ত্রের নামও শোনেননি তিনি। দাদা মিহিরকিরণকে টানতে টানতে দোকানে নিয়ে গেলেন নতুন যন্ত্র দেখাতে। তাঁরও সেই প্রথম সরোদ চাক্ষুষ করা! কারণ আর কিছুই নয়, সেই বিশের দশকে ভারতে মাত্র ছ’জন ওই যন্ত্র বাজাতেন। ফিদা হুসেন খাঁ, আলাউদ্দিন খাঁ, আবদুল্লা খাঁ, হাফিজ আলি খাঁ, করমতুল্লা খাঁ এবং আমির খাঁ। ফলে সরোদ দেখে, তার আওয়াজ শুনে দুই ভাই মুগ্ধ।

Timir_Baran 1925
তিমিরবরণ, ১৯২৫ সালে।

তিমিরবরণ গোঁ ধরলেন এই যন্ত্রই শিখবেন। গুরু কোথায়? গোবর্ধনই বাতলে দিলেন। তিনি যে সরোদটি বানাচ্ছিলেন, তা ছিল উস্তাদ আমির খাঁ সাহেবের, যিনি তখন মেছোবাজারে থাকতেন। তাঁর কাছেই শিক্ষা শুরু হয়। গোড়ায় স্থির হয়েছিল তিনি সপ্তাহে দু’দিন করে আসবেন। কিন্তু ছাত্রের আকুলতা, ক্ষমতা আর অধ্যবসায় দেখে খাঁ সাহেব রোজ দুবেলা শেখাতে আসতে শুরু করলেন। তিমিরবরণের নাতনি এক স্মৃতিচারণে লিখেছেন,

‘বিকেল পাঁচটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তালিম চলে। মাঝে শিষ্যই সাজিয়ে দেন তামাক, খাস ফৌজদারি বালাখানা থেকে আনা। আমির খাঁ নিজের সরোদটিও রেখে গেলেন শিষ্যের বাড়িতে। টানা পাঁচ বছর এমনটা চলতে থাকল। এমনও দিন গিয়েছে, যখন কলকাতা শহর বৃষ্টিতে ভাসছে। কিন্তু সরোদ শিক্ষায় খামতি নেই। কারণ, বুক সমান জল ডিঙিয়ে ততক্ষণে দরজায় টোকা দিচ্ছেন ওস্তাদজি, স্বয়ং আমির খাঁ।’

১৯২৫ নাগাদ তিমিরবরণ খবর পেলেন গৌরীপুরের রাজবাড়িতে মাইহার থেকে আসছেন বাবা আলাউদ্দিন খাঁ। এসরাজশিল্পী শীতল মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তিন ভাই একসঙ্গে সাক্ষী থাকলেন এক অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতার। সামনে থেকে শুনলেন বাবা আলাউদ্দিনের সরোদবাদন। আর সেই সন্ধেই পালটে দিল তিমিরবরণের জীবনের অভিমুখ। সরাসরি বাবা-জির কাছে গিয়ে জানালেন, আপনার কাছে বাড়া বাঁধতে চাই। তিনি পাত্তা দিলেন না। কিন্তু তিমিরবরণ ছাড়ার পাত্র নয়। অপারগ হয়ে তাঁর কাছে বাজনা শুনতে চাইলেন আলাউদ্দিন খাঁ। মনপ্রাণ ঢেলে বাজালেন তিমিরবরণ। অকুণ্ঠ প্রশংসা করলেন বাবাজি কিন্তু শেখাতে রাজি হলেন না। শেষমেশ গৌরীপুরীরের রাজকুমারর উপরোধে তিনি নরম হলেন। মাইহারে এসে থাকার অনুমতি দিলেন তিমিরবরণকে। সেই শুরু হল তাঁর জীবনের এক অন্য অধ্যায়। কলকাতার পাঠ চুকিয়ে নির্জন মাইহারে পাড়ি দিলেন তিমিরবরণ। সে সময়ের কথা লিখেছেন তিমিরবরণের নাতনি।

“কিছু দিন থাকা-খাওয়া ওস্তাদজির বাড়িতেই। পরে আলাউদ্দিনের আবেদনে মাইহারের মহারাজা একটি মন্দিরে তিমিরবরণের থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। সেখানেই একটি ইকমিক কুকারে রান্না করতেন ঠাকুরদা। সেই সময়ে প্রতি মাসে কলকাতায় ভাইকে কুড়ি টাকা পাঠাতেন তিনি। …তবে নাওয়া-খাওয়া ভুলে ঠাকুরদার প্রথম কাজটি ছিল শিক্ষাগ্রহণ। বাবার কাছে শিক্ষাগ্রহণও যে খুব একটা সহজ নয়। আলাউদ্দিন নাকি মাত্র এক বার শিক্ষার্থীকে বাজিয়ে শোনাতেন, তাও মিনিট ১৫। সেটাই মনে রেখে ঠিকঠাক বাজাতে হবে। না হলে জুটতে পারে হুঁকো হাতে বাবার মার। ঠাকুরদার অবশ্য সাধকের নিষ্ঠা। গ্রীষ্মে রাতভর বাজাতেন। শীতে রাত তিনটেয় ঘুম থেকে উঠে টানা সাত ঘণ্টা চলত অভ্যেস।…”

আস্তে আস্তে খ্যাতি পেতে শুরু করলেন তিমিরবরণ। স্বয়ং ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর আমন্ত্রণে চা-চক্রে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আলাপ হল। তিনি বাজনা শুনতে চাইলেন। বলাই বাহুল্য, এ সুযোগ ছাড়েননি তিমিরবরণ। কবিকে শোনালেন ‘পুরিয়া ধনেশ্রী’। মুগ্ধ কবি শিল্পীকে আমন্ত্রণ জানালেন শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রমে। বললেন, ‘তোমার মতো লোক আমার দরকার’। তাছাড়াও কখনও কাজি নজরুল, কখনও দিলীপকুমার রায়, কখনও সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, কখনও বা সত্যেন্দ্রনাথ বসু… তিমিরবরণের বাজনা নাড়িয়ে দিয়েছিল সকলকে।

Timir Baran
কবি সমীপে তিমিরবরণ ও তাঁর ভাই শিশিরশোভন

এরপরেই অদ্ভুতভাবে তিমিরবরণের সঙ্গে যোগাযোগ হয় উদয়শংকরের। তিনি তখন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী। গোটা ইউরোপ আমেরিকায় অনুষ্ঠান করছেন। সেই সময় সুইৎজারল্যান্ডের এক ইমপ্রেসারিও তাঁকে বললেন, দলে ভারতীয় যন্ত্রশিল্পীরা থাকলে অনুষ্ঠান আরও মনোজ্ঞ হবে। অতঃপর তাঁকে নিয়েই উদয়শংকর চলে এলেন কলকাতায়। যোগাযোগ করলেন বিখ্যাত সংগঠক হরেন ঘোষের সঙ্গে। কারণ? নিজের একটি অনুষ্ঠানে কলকাতা তথা ভারতের বিশিষ্ট শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানাতে চাইছিলেন তিনি। খুঁজছিলেন এমন একজন সঙ্গীতজ্ঞকে যাঁর পরিচালনায় বৃন্দবাদন হবে সম্পূর্ণ ভারতীয় কাঠামোতে। তিমিরবরণকে সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হল। তিনি অবশ্য ততদিনে মাইহার থেকে ফিরে বাবা আলাউদ্দিনের দেখানো পথে ‘মাইহার ব্যান্ড’-এর অনুপ্রেরণায় বাড়ির ছোটবড় অনেককে নিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন পারিবারিক অর্কেস্ট্রা। নাটকে সঙ্গীত পরিচালনার কাজও শুরু করে দিয়েছেন।

সেসব শুনে আর দেরি করেননি উদয়শংকর। পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে নিমন্ত্রণ করলেন তিমিরবরণ ও মিহিরকিরণকে। তিমিরবরণকে প্রস্তাব দিলেন তাঁর দলে যোগ দেবার। চিঠিতে বাবা আলাউদ্দিনের আশীর্বাদ নিয়ে তিমিরবরণ আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলেন উদয়শংকরের ব্যালে ট্রুপে। ১৯৩০ সালে বাজনার দল নিয়ে বিদেশযাত্রা করলেন তিমিরবরণ। ১৯৩১ সালে পারির সঁজে লিজেঁ-তে অনুষ্ঠান করেন উদয়শংকর। গোটা ইউরোপ মাতিয়ে দেয় তিমিরবরণের বৃন্দবাদন। খোদ রবিশংকর তাঁর আত্মজীবনীতে বারবার উল্লেখ করেছেন ‘তিমিরদা’-র কথা। এমনকী, লম্বা, সুগঠিত চেহারা, লম্বা চুলের পুরুষটি যে মহিলামহলে অতীব জনপ্রিয় ছিলেন, সে কথাও লিখেছেন।

কিন্তু বিদেশে থাকতে ভালো লাগত না তিমিরবরণের। তাই কলকাতায় ফিরে নিউ থিয়েটার্সে যোগ দিলেন তিনি। দেশবিদেশের বাজনা একসঙ্গে করে ভারতীয় সুর সৃষ্টি করতে লাগলেন। কখনও বালি, কখনও জাভা, কখনও ভিওলা, কখনও ব্যাঞ্জো… নতুন নতুন পরীক্ষানিরীক্ষায় মেতে থাকলেন তিনি। এমন সময়ে নিঃশব্দে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপও করে ফেললেন। সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘দেবদাস’ ছবির। সহকারী খেমচন্দ প্রকাশ। ১৯৩৫-এ সেই ছবির মুক্তির পর প্রভূত প্রশংসা পেল তিমিরবরণের কাজ। রাতারাতি খ্যাতির শিখর ছুঁয়ে ফেললেন। তারপর একের পর এক ছবির কাজ। ১৯৩৬-এ ‘পূজারন’, ১৯৩৮-এ ‘অধিকার’, ১৯৪০-এ ‘দীপক’, ‘কুমকুম’, ‘সুহাগ’, ১৯৪১-এ ‘রাজনর্তকী’, ১৯৪৯-এ ‘সমাপ্তি’ প্রভৃতি। এরমধ্যে ‘রাজনর্তকী’ ছিল  ইংরেজি ভাষায় তৈরি প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের ভারতীয় ছবি। প্রযোজনা করেছিলেন হোমি ওয়াদিয়া, শ্রেষ্ঠাংশে পৃথ্বীরাজ কাপুর ও সাধনা বসু। 

Timir Baran Bhatacharya
নিজের জগতে একলা সাধক

ইতিমধ্যে ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এম্পায়ার থিয়েটারে রবীন্দ্রনাথের নাটক ‘ডালিয়া’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুখ্য চরিত্রে কেশবচন্দ্র সেনের পৌত্রী, প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক মধু বসুর স্ত্রী, প্রতিভাময়ী নৃত্যশিল্পী-অভিনেত্রী সাধনা বসু। বৃন্দসঙ্গীত পরিচালনায় তিমিরবরণ। তাঁদের পরিচয় হয়েছে সেখানেই। আর তার কয়েক বছরের মধ্যেই সেই সম্পর্ক ফের মোড় ঘোরাল তিমিরবরণের জীবনের। সাধনাদেবীর ডাকে নিউ থিয়েটার্স ছেড়ে ক্যালকাটা আর্ট প্লেয়ার্সে সঙ্গীত ও অর্কেস্ট্রা পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন তিনি। কারও কথাই শুনলেন না। সেখানে ‘ওমরের স্বপ্নকথা’, ‘বিদ্যুৎপর্ণা’, প্রভৃতি ছবিতে সুর দিলেন। ১৯৫৬ সালে ছবির কাজে ডাক পেয়ে পাকিস্তানে যান তিমিরবরণ। সে বছরে তৈরি পাকিস্তানি ছবি ‘অনোখি’-তে সঙ্গীত পরিচালনা করেন। তারপর একাধিক ছবির কাজে মুম্বই-কলকাতা যাতায়াত করেছেন। ‘বন্দিতা’, ‘উত্তরায়ণ’, ‘বিজয়া’ থেকে শুরু করে ষাট-সত্তরের দশকের হিট ছবি ‘থানা থেকে আসছি’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘ডাক দিয়ে যাই’-এর মতো ছবিতে কাজ করেছিন। কিন্তু যে কাজের স্বপ্ন চোখে নিয়ে তিনি সরোদকে হাতিয়ার করেছিলেন, সে কাজ তারপরে খুব একটা এগোতে পারেনি।

পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে নিমন্ত্রণ করলেন তিমিরবরণ ও মিহিরকিরণকে। তিমিরবরণকে প্রস্তাব দিলেন তাঁর দলে যোগ দেবার। চিঠিতে বাবা আলাউদ্দিনের আশীর্বাদ নিয়ে তিমিরবরণ আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলেন উদয়শংকরের ব্যালে ট্রুপে। ১৯৩০ সালে বাজনার দল নিয়ে বিদেশযাত্রা করলেন তিমিরবরণ। ১৯৩১ সালে পারির সঁজে লিজেঁ-তে অনুষ্ঠান করেন উদয়শংকর। গোটা ইউরোপ মাতিয়ে দেয় তিমিরবরণের বৃন্দবাদন। খোদ রবিশংকর তাঁর আত্মজীবনীতে বারবার উল্লেখ করেছেন ‘তিমিরদা’-র কথা। এমনকী, লম্বা, সুগঠিত চেহারা, লম্বা চুলের পুরুষটি যে মহিলামহলে অতীব জনপ্রিয় ছিলেন, সে কথাও লিখেছেন।

নিউ থিয়েটার্স ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত তাঁর পরবর্তী জীবনের পক্ষে খুব সুখকর হয়নি, সেকথা তাঁর নিজের লেখাতেই পাওয়া যায়। পরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীতবিভাগে যোগ দিয়ে কিছুদিন অধ্যাপনাও করেছেন। পেয়েছেন সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার, দেশিকোত্তম, আলাউদ্দিন পুরস্কার-সহ একাধিক সম্মান। কিন্তু আর্থিক অবস্থা ক্রমশ ভেঙেছে। একসময় যিনি এমন রোজগার করেছেন, যে প্রতিমাসে স্রেফ শখের জন্য গাড়ি বদলাতেন, তাঁকেই শেষ জীবনটা কাটাতে হয়েছে সীমাহীন দারিদ্রে, নেতাজিনগরের ছোট্ট একটেরে ঘরে। তাঁর জাতীয় অর্কেস্ট্রা তৈরির স্বপ্ন অসফল হয়েই থেকে গিয়েছে।

‘বন্দেমাতরম’ গানটির যে সুরটি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত, আজও যে কোনও দেশাত্মবোধক অনুষ্ঠানে যে সুরটি সাধারণত গাওয়া হয়, সেই ‘দুর্গা’ রাগাশ্রিত সুরটি দিয়েছিলেন তিমিরবরণ। মহাত্মা গান্ধী নিহত হবার দিনে আনন্দবাজার পত্রিকা ও হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডের যৌথ ‘লেবেল’-এ গানটি রেকর্ড করেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতা অবলম্বন করে খাঁটি ভারতীয় শৈলিতে অর্কেস্ট্রেশন শুরু করার কৃতিত্বও তিমিরবরণের দখলে। কবি শুধু সে বৃন্দবাদন শুনেছিলেন তা-ই নয়, অকুণ্ঠ প্রশংসাও করেছিলেন। ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ ও ‘শিশুতীর্থ’ তাঁর দুটি এরকম কাজ। অথচ ভারতীয় ‘সিমফনি অর্কেষ্ট্রা’-র এই প্রবাদপুরুষের নাম এখন ক’জন জানে? আজ তাঁর জন্মদিনে, আসুন নতুন করে স্মরণ করা যাক এই অসীম প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পীর অবদানকে।

 

*তথ্যসূত্র: রাগ অনুরাগ – রবিশংকর 
আনন্দবাজার পত্রিকা – সুর সাম্রাজ্যের ত্রিশ টাকা
উদয়-পথের সহযাত্রী – তিমিরবরণ ভট্টাচার্য

*ছবি সৌজন্য: Pinterest, Anandabazar, Wikimedia commons, Bollywoodirect

banglalive logo

মৌলিক‚ ভিন্নধর্মী ও সময়োপযোগী - এমনই নানা স্বাদের নিবন্ধ পরিবেশনের চেষ্টায় আমরা। প্রতিবেদন বিষয়ে আপনাদের মতামত জানান 'কমেন্ট' বক্সে | নিয়মিত আপডেট পেতে ফলো করুন - https://www.facebook.com/banglaliveofficial

One Response

  1. এই বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী কে ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে এনে শুধুমাত্র ওনাকে সন্মান জানানো নয়, আমাদের বিস্মৃত অতীত কেও কষাঘাত করলেন। আমরা কত সহজে ভুলে যাওয়া জাতি !! আপনাকে ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *