রেডিওর গল্প দাদুর আসর-এর স্মৃতি থেকে অমিতাভ শুরু করেছে গল্প বলার আসর। প্রত্যেক মাসের শেষ শুক্রবার রাতে কালীবাড়ির বেসমেন্টের স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে বিনে পয়সায় গল্প শোনা, গল্প বলা আর চা বিস্কুটের আসর। প্রথমদিকে লোকজন তেমন জুটছিল না, কিন্তু অমিতাভ নিউ জার্সি আর নিউ ইয়র্কের কয়েকটা বাঙালি ক্লাবে পাবলিসিটি ছড়াল – আপনাদের জীবনকাহিনি শুনতে চাই। যে কোনও অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে আসুন। সঙ্গে নিখরচায় চা, কুকি ও ক্র্যাকার।

নোনতা, মিষ্টি বিস্কুটের লোভে কেউ উইক ডে-তে অন্যের বক্‌বকানি শুনতে আসবে না। কিন্তু উপযুক্ত নীরব শ্রোতা পেলে নিজের না-বলা বাণী শোনানোর এমন সুবর্ণ সুযোগ অনেকেই হাতছাড়া করতে চাইল না। কালীবাড়ির বেসমেন্টে গুটি গুটি লোক জড়ো হতে লাগল। শ্রোতা কম, বক্তা বেশি। তার মধ্যে মহিলাদের দেখা নেই। তারা সারা সপ্তাহের চাকরি আর সংসারের ঝক্কি সামলে ফ্রাইডে ইভনিং-এ রিল্যাক্স করতে চায়। পার্টিতে যেতে চায়। কারুর সন্তোষী মা আছেন। শুক্রবার নেমন্তন্ন থাকলে টক ছাড়া নিরামিষ রান্নার সঙ্গে আড্ডাই অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং দ্যান কালীবাড়ি গিয়ে যদু, মধুর বোকা গল্প শোনা। এমনকি অমিতাভর বউ বৈশালীও একদিনও গল্প বলার আসর-এর ধার মাড়াল না। বাচ্চাদের ওই ড্যাম্প্‌ বেসমেন্টে নিয়ে গিয়ে হুড়োহুড়ি করতে দেবে না। আসলে কালীবাড়িতে কন্‌স্ট্রাকশন হচ্ছে। ওই বেসমেন্টও কালক্রমে নতুন করে ফিনিশ হবে। কিন্তু আপাতত বিনে পয়সায় লম্বা ঘরটা পাওয়া যাচ্ছে। অমিতাভ মহিলাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য নতুন ফন্দি আঁটল। গল্প বলার আসরের ফাঁকে ফাঁকে গানের ডালি, স্বরচিত ও অস্বরচিত কবিতা পাঠ। 

ক্রমশ আসরটা আর স্ত্রী-ভূমিকাবর্জিত রইল না। প্রোগ্রামও শুধু বাংলায় সীমাবদ্ধ রইল না। অনির্বাণের স্বচক্ষে দেখা ভূতের গল্পের পরেই বেহালায় হংসধ্বনি। গাইনি ডাক্তার পদ্মিনী রামামূর্তি মাথা নত করে ছড় টেনে চলেছেন। সারাদিনে তিন চারটে সি-সেকশনের পরে বেহালাবাদনই তাঁর বিনোদন। এইভাবেই অমিতাভ গল্প বলার আসরকে জনপ্রিয় করার চেষ্টায় নানা বৈচিত্র্য তথা আইটেম জুড়ে দিতে লাগল। তবে গল্প বলার আগ্রহেই লোক আসছে বেশি। কালীবাড়ি কর্তৃপক্ষ বেসমেন্টে আরও দু সারি চেয়ার বাড়িয়ে দিল। যারা আসছে, তারা ওপরে মা-কালী দর্শন করে কাঠের বাক্সের কাটা গর্তে পাঁচ-দশ ডলার প্রণামীও দিয়ে আসছে। একই বাড়িতে ধর্ম ও সংস্কৃতির সমন্বয়। 

এক শুক্রবার সন্ধেয় গজর গজর করতে করতে প্রণতি আর শঙ্কর দত্ত এল। আইটেম-এ আছে – শঙ্কর গত পঞ্চাশ বছর ধরে এয়ারপোর্টে বাঙালিদের আনতে যাওয়া আর পৌঁছে দেওয়ার অভিজ্ঞতার গল্প বলবে। অমিতাভ বুঝিয়েছিল এ আর কি নতুন কথা? এখানে গল্প কোথায় শঙ্করদা? শঙ্কর দত্ত বলেছিল, শুধু আমার নয়, প্রণতিরও মজার গল্প আছে। ওর কতরকম এক্সপিরিয়েন্স যে হয়েছে। 

আসরে গল্প শুরু করেই প্রণতি বিরস কণ্ঠে বলল- এই মিড্‌ল ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সগুলো এক নতুন উপদ্রব হয়েছে। কলকাতা থেকে যে আসছে, হয় এমিরেটস্‌, কাতার নয়ত এতিহাদ না কী যেন। তার মানেই নিউ জার্সি থেকে কেনেডি এয়ারপোর্টে যাও। আনতে যাওয়া, পৌঁছে দেওয়া, কম ড্রাইভিং? আজকাল রাস্তাঘাট পালটে গেছে। শঙ্কর তো দুবার ভুল ব্রিজে উঠে পড়ল। একবার ফেরার পথে নিউ জার্সির বদলে লং আইল্যান্ড চলে যাচ্ছিল। দেশের লোকেদের বুঝতে হবে, আমাদেরও বয়স হচ্ছে। বারবার বলা সত্ত্বেও নুআর্কের ফ্লাইট নেবে না।

প্রণতির বিরক্তি প্রকাশে শঙ্কর একটু অপ্রস্তুত। বলল, দ্যাট্‌স্‌ ওকে। আত্মীয়, বন্ধুদের জন্যে এটুকু তো করাই যায়। আমার এক্সপেরিয়েন্সগুলো মজার। 

অমিতাভ ঘড়ি দেখে বলল- সেরকম কিছু বলুন। আপনার গল্পের পর অনসূয়ার নজরুলগীতি। আসর শেষ হবে কালীবাড়ির প্রিস্ট কানুভাইয়ের ছোট্ট মজার গল্প দিয়ে।

শঙ্কর দত্ত শুরু করল – তখন বছর খানেক হল এদেশে এসেছি। নিউইয়র্কে নতুন চাকরি। কুইন্স্‌-এর অ্যাপার্টমেন্টে থাকি। দেশ থেকে এক কাকা চিঠি লিখলেন, অমুক তারিখে তাঁর পরিচিত কোনও মিশনের এক স্বামীজি শিকাগোয় পৌঁছবেন, আমি যেন অবশ্যই এয়ারপোর্টে থাকি। আর স্বামীজিকে রিসিভ করে শিকাগোর সাবার্বে একটা ঠিকানায় পৌঁছে দিই। আমার সেই কাকা গ্রামে থাকতেন। নিশ্চয়ই বুঝতেও পারেননি নিউইয়র্কে থেকে শিকাগোর এয়ারপোর্টে কাউকে রিসিভ করতে যাওয়া সম্ভব নয়। কাকাকে সে কথা চিঠিতে জানিয়েওছিলাম। কিন্তু স্বামীজিকে পিকআপ করার ব্যবস্থা করেছিলাম। আমার বন্ধু তপেন্দু তখন শিকাগোর হসপিটালে রেসিডেন্সি করছে। ও এয়ারপোর্টে গিয়ে স্বামীজিকে আমার আর কাকার নাম-টাম বলে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়েছিল। পরে কাকা চিঠি লিখেছিলেন – ‘তোমার দেওঘর বিদ্যাপীঠে পড়া সার্থক হইয়াছে।‘ আসলে আমার মনে হয়েছিল কিছু একটা ব্যবস্থা তো করতেই হবে। আর তপেন্দুর কথাও ভাবো! হসপিটালে রেসিডেন্ট মানে তখন ও উদয়াস্ত ডিউটি করছে! শুধু আমার ফোন পেয়ে অচেনা এক ভদ্রলোককে আনতে চলে গেল। 

শঙ্করের গল্পের পরে প্রণতি জিজ্ঞেস করল – আমার কি আর বলার সময় আছে? শ্রোতা, বক্তারা বলল – হ্যাঁ, হ্যাঁ। আপনার মজার গল্পটাও শুনি।

প্রণতি শুরু করল – যাকে নিয়ে গল্প, সে এখানেই বসে আছে। আমাদের পূর্ণেন্দু।

পূর্ণেন্দু হাসছে – ওহ মাই গড! আবার সেই গল্প! আগে জানলে বউকে নিয়ে আসতাম।

পূর্ণেন্দুর বউ ঋতু সেদিন নাটকের রিহার্সালে গেছে। তাকে ছাড়াই তার চল্লিশ বছর আগে নববধূ হয়ে কেনেডি এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর গল্প শুরু করল প্রণতি – তোমরা তো জানো, পূর্ণেন্দু আর আমি ক্লাসমেট ছিলাম। একটু আত্মীয়তার সূত্রও আছে। ও সেসময় ওহায়োর কলাম্বাসে থাকে। আত্মীয়তার সূত্রেই পূর্ণেন্দুর বিয়ের চিঠি পেয়েছিলাম। তার তিন-চার মাস বাদে পূর্ণেন্দু ফোনে জানাল ওর নতুন বউ এয়ার ইন্ডিয়ায় কেনেডি এয়ারপোর্টে আসছে। ও কলাম্বাস থেকে একদিন আগে আমাদের কাছে চলে আসবে। পরদিন বউ আনতে এয়ারপোর্টে যাবে। খুব ভাল লাগল। এই সুযোগে ওর বউকেও দেখা হবে। দুদিন ধরে বেশ রান্নাবান্না করলাম, যাতে পরে গল্প করার সময় পাই। 

পূর্ণেন্দু সারাদিন ড্রাইভ করে এসে পৌঁছল। একটু বিয়ের গল্প শুনলাম। পরদিন বলল – তোরাও আমার সঙ্গে এয়ারপোর্ট চল। আমি ইস্ট কোস্টের এদিকটা তেমন চিনি না। রাস্তাফাস্তা হারিয়ে কোথায় চলে যাবো!

ভাবলাম নিজে থেকেই যখন বলছে, তখন নবদম্পতিকে ডিসটার্ব করার কিছু নেই। কিন্তু আমার মেয়ে তখন খুব ছোট। শঙ্কর ওকে নিয়ে বাড়িতে থাকল। আমি পূর্ণেন্দুর সঙ্গে এয়ারপোর্ট রওনা হওয়ার আগে শঙ্করকে ভাত রান্না শেখালাম। তখন মাইক্রোওয়েভ, রাইস্‌ কুকার ছিল না। স্টোভে ভাত রান্না করে কোল্যান্ডারে (বড় ছাঁকনিতে) ফ্যান্ গেলে রাখতে বলে দিলাম। এয়ার ইন্ডিয়ার অ্যারাইভ্যাল টাইম-এর দেড় ঘন্টা পরে যেন জল গরম করে চাল ছাড়ে, এই সব ইনস্ট্রাকশন দিয়ে পূর্ণেন্দুর সঙ্গে বেরিয়ে গেলাম। 

এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট দেরি করে এল। তখন বোধহয় সন্ধে ছটা, সাড়ে ছটা হবে। আমরা দোতলার উঁচু বারান্দা থেকে কাচের ওপারে উকিঝুঁকি দিচ্ছি। দলে দলে ইন্ডিয়ান প্যাসেঞ্জার মালপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসছে। কিন্তু পূর্ণেন্দু একটু উদভ্রান্ত। আমাকে জিজ্ঞেস করল – ও এসেছে তো রে? নাকি ফ্লাইট মিস করেছে? আমি বললাম – দাঁড়া না, এখনও তো কত লোক বেরোচ্ছে। প্লেন মিস করলে ফোন করত না? 

কিন্তু সত্যিই নববধূর দেখা নেই। পূর্ণেন্দু হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ল- দ্যাখ তো, ওই যে এগিয়ে আসছে, ঋতুই তো? তোর কি মনে হয়? – আশ্চর্য! তুই নিজের বউ চিনতে পারছিস না? আমি তো তার একটা ছবিও দেখিনি। আমার ধমক খেয়ে চিন্তিত মুখে পূর্ণেন্দু বিড়বিড় করতে লাগলো – মুখটা ঠিক আমারও মনে পড়ছে না। বিয়ের পরে মাত্র সাতদিন দেখেছিলাম। তারপর ক’মাস হয়ে গেছে তো।

হঠাৎ দেখলাম একমাথা সিঁদুর আর লম্বা বিনুনি দুলিয়ে একটি মেয়ে বেরিয়ে আসছে। আমি বললাম – এ নিশ্চয়ই তোর বউ। পূর্ণেন্দু মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলল – ইউ আর রাইট।

প্রণতির গল্পে লোকজন এমন হাসতে শুরু করেছে যে, পূর্ণেন্দুকে অমিতাভ বলল- পূর্ণেন্দুদা, এই স্মৃতিশক্তি নিয়ে তুমি কি করে হায়ার সেকেন্ডারিতে ফার্স্ট হয়েছিলে?

প্রণতি এখানেই গল্পটা শেষ করে দিতে পারত। কিন্তু শঙ্কর বলল – আর ফেরার পরে পূর্ণেন্দুর সঙ্গে ঋতুর ডায়ালগটা বললে না?

পূর্ণেন্দু হাসছে – কি রে? বাকিটা চেপে গেলি কেন? তোর বরের ভাত রান্নাটা বল?

প্রণতি ভাবছিল এত সময় নেওয়াটা কি ঠিক? এখনও নজরুলগীতি বাকি। মন্দিরের পুরোহিতের মজার গল্প বাকি। কিন্তু অমিতাভ বলল- আপনার বাকি গল্পটা শেষ করুন। দরকার হলে কানুভাইয়ের গল্প অন্যদিন শুনব। 

প্রণতি সংক্ষেপ করতে চাইল – আর বেশি বাকি নেই। ফেরার পথে আমি পিছনের সিটে বসে দেখলাম পূর্ণেন্দু ঋতুকে পাশে বসিয়ে সিট বেল্ট বাঁধা শেখাতে গিয়ে একটু জড়াজড়ি করল। তারপর গাড়ি চালাতে চালাতে জিজ্ঞেস করল – আমার লাস্ট চিঠিটা পেয়েছিলে? ঋতু বেশ সপ্রতিভ – হ্যাঁ, পেয়েই তোমার বাবাকে দ্যাখালাম।

গাড়ি হঠাৎ স্লো হয়ে গেল। পূর্ণেন্দু বউয়ের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল – চিঠিটা তোমাকে লিখেছিলাম। হঠাৎ বাপিকে দেখালে কেন?

-বাঃ, সব ডিটেইল্‌স্‌ তো ওখানেই লেখা ছিল। আমার ফ্লাইট নম্বর, তোমার ফোন নম্বর, প্রণতিদির অ্যাড্রেস, ফোন নম্বর। বাবা সব আমার নোটবুকে লিখে দিলেন। 

গাড়ি তখন ভুল রাস্তায় চলেছে। একে সন্ধে হয়ে অফিস ছুটির প্রচণ্ড ট্র্যাফিক। তার ওপর অন্যমনস্ক হয়ে পূর্ণেন্দু আমার কোনও কথা কানে নিচ্ছে না। দু বার আলো ঝলমলে ভেরাজ্যানো ন্যারোজ ব্রিজ-এর একজিট বুঝতে না পেরে এধার ওধার পাক খেতে লাগল। মুখে বলল- ইস্টকোস্টের এদিকটা তেমন চিনি না। পেছনের সিট থেকে ধমক দিলাম – আমার কথাও তো শুনছিস না। ওই দ্যাখ্‌ ব্রিজের সাইন দিচ্ছে। লেফট লেন এ ঢোকার চেষ্টা কর। পেছনে গাড়ির হর্ন, প্রায় প্রাণ হাতে করে ব্রিজে উঠতে পারলাম। ঋতু শুধু বলল- এবার ঠিক যাচ্ছি তো? প্রণতিদি, আপনি সামনে বসলে ভাল হত। ওকে একটু রাস্তাগুলো বলে দিতেন। 

পূর্ণেন্দু অপমানিত হচ্ছে ভেবে আশ্বাস দিলাম – একদম ঠিক যাচ্ছি। ব্রিজ শেষ হলেই কোন হাইওয়ে ধরতে হবে বলে দেব। এমনই যুগ ছিল যে, তখন জিপিএস্‌ ও নেই। সেল ফোনও নেই। আমাদের যে ফিরতে এত দেরি হচ্ছে, সেটা শঙ্করকে জানাতেও পারিছি না। ভাত ঠিকমত করতে পারল কিনা কে জানে? 

ব্রিজের আলোর মালা পার হয়ে ঠিকমত হাইওয়ে ধরা পর্যন্ত পূর্ণেন্দু বউয়ের সঙ্গে কথা বলেনি। তারপর হঠাৎ জিজ্ঞেস করল – আমার চিঠিটা যখন বাপিকে দিলে, সেটা ব্লিচড্‌ না আনব্লিচড্‌ ছিল?

ঋতু অবাক! বলল – তার মানে? আমি তখন ভাবছি কি করে ওকে বোঝাব, যে আটা মানে আনব্লিচড্‌ ফ্লাওয়ার। ময়দা হচ্ছে ব্লিচড্‌ ফ্লাওয়ার। পূর্ণেন্দু বলতে চাইছে, চিঠিটা কি আমার প্রেমের ভুষি শুদ্ধ বাবাকে ধরিয়ে দিয়েছিলে? না, পেন দিয়ে কাটাকুটি করে ভুষি বাদ দেওয়ার পর দেখিয়েছিলে? কিন্তু ম্যায় চুপ রহুঙ্গি। নিজের ডিগনিটি বজায় রাখা উচিত। আটা, ময়দা আর ভুষির ক্যাচালে না গিয়ে গাড়ির জানলা দিয়ে দৃশ্য দেখতে লাগলাম। ক্রমশ বাড়ির কাছাকাছি আসছি। পূর্ণেন্দু বউয়ের কাছ থেকে সদুত্তর না পেয়ে হঠাৎ বলল- এনি ওয়ে, চিঠিটা কোথায়? ঋতু দৃপ্তকণ্ঠে ঊত্তর দিল-জানি না। বোধহয় ফেলে এসেছি।

এই হচ্ছে উপযুক্ত জবাব। সেদিনই বুঝেছিলাম হায়ার সেকেন্ডারির ফার্স্ট বয় বউয়ের কাছেই ফেল মারবে। যাক গে, গল্পটা বড় লম্বা হয়ে যাচ্ছে। শেষকালে যা হল, বাড়ি ফিরে দেখি মেয়ে ফ্রোজেন পিৎজা খাচ্ছে। আমাদের এত দেরি হচ্ছে দেখে শঙ্কর এয়ার ইন্ডিয়ার অফিসে ফোনও করেছিল। ওদের সঙ্গে শঙ্করকেও এক কাপ কফি ধরিয়ে দিয়ে, ফ্রিজ্‌ থেকে কনকনে রান্নাগুলো বার করলাম। কিন্তু ভাত কোথায়? তখনই চোখে পড়ল খাবার টেবিলে ওদের জন্য সাজিয়ে রাখা ডিনার সেটের পাশে মস্ত ছাঁকনিটা খোলা অবস্থায় পড়ে আছে। ভেতরে সাদা ন্যাড়ামাথার মতো একরাশ শিহরিত কদম ফুল। শঙ্কর কোন কালে লং গ্রেইন বাসমতী চালের ভাত রান্না করে ছাঁকনির মধ্যে ঢেলে দিয়েছিল। ফ্যান ঝরা ঠাণ্ডা ভাত খাড়া খাড়া হয়ে শ্বেত কদম ফুল ফুটিয়েছে।

প্রণতির গল্প শুনে হাসাহাসি শেষ হওয়ার আগেই অনসূয়া বলতে লাগল- এর পরে আর গান হবে না। প্লিজ, অন্যদিন গাইব। 

পূর্ণেন্দু বলল- আমার আর ঋতুরই বরং সেদিন শঙ্করদের সঙ্গে খেতে বসে গাওয়া উচিত ছিল- বাদলদিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান। 

অমিতাভ দেখল লোকজন উঠতে শুরু করেছে। সে রাতের মতো সভা শেষ হল। 

একমাস বাদে আবার এক শুক্রবার আসর বসল। এবার অনসূয়ার নজরুলগীতি আগে হবে। তারপর পরিমল বাগচীর হাসির গল্প। দেখা যাচ্ছে হাসিরই ডিম্যান্ড বেশি। দুঃখের গল্প একদম শোনা যাচ্ছে না। তবু অমিতাভর আশা- হাসি কান্না হীরা পান্না দোলে ভালে। ভালো কান্নার গল্পও ডেফিনিট শোনা যাবে।

অনসূয়া ক্ল্যাসিক্যাল গাইয়ে। প্রফেশনাল প্রোগ্রামেই শুধু ক্ল্যাসিক্যাল গায়। এখানে বাঙালিদের বেশিরভাগেরই সে গানে তেমন মন নেই। কিন্তু কালীবাড়িতে চেনাশোনা লোকজন গান শুনতে চাইলে তাদের পছন্দমতো কিছু শুনিয়ে যায়। আজ অনসূয়া হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে দিয়ে শুরু করতেই বাঙালিদের আহা, অসাধারণ ইত্যাদি বিশেষণের মাঝে পরিমল বাগচী চলে এলেন। উনি যথার্থই সঙ্গীত রসিক। ওঁর কথায় অনসূয়া কবীর আর মীরার ভজন গেয়ে শোনাল। 

কফি, ডোনাট, ক্র্যাকার দিয়ে ছোট্ট স্ন্যাক্‌স ব্রেকের পর পরিমল বাগচী বললেন-আমার অভিজ্ঞতার গল্প আমেরিকায় আসার পর প্রথম বাঙালি প্রতিবেশীকে নিয়ে। আসল নামটা বলতে চাই না। ধরো তার নাম ছিল বিজন রায়। একটা হাইরাইজ অ্যাপার্টমেন্টের এগার তলায় আমরা পাশাপাশি অ্যাপার্টমেন্টে ছিলাম। স্বামী, স্ত্রী দুজনেই হাসিখুশি আন্তরিক টাইপ। ওদের দুটো ছোট ছোট ছেলে। আমাদের একটা ছেলে। তার তখনও স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি। কিন্তু একসঙ্গে হুড়োহুড়ি, খেলা, আর টিভিতে কার্টুন দেখার জন্যে যখন তখন ওদের বাড়ি চলে যায়। ওরাও আসে। বিজনগিন্নীর সঙ্গে আমার বউ, চন্দ্রাও বেশ আড্ডা দেয়। ছেলেরা ছোট বলে দুজনেই বাইরে চাকরি টাকরি করে না।

অন্য অ্যাপার্টমেন্টের এক গিন্নীর সদ্য ড্রাইভার লাইসেন্স হওয়াতে, ছেষট্টি সালের মডেলের একটা রঙ চটা গাড়িতে চড়ে এরা শপিং করতে যায়। কে মার্ট-এর সেল্‌ থেকে দরকারি, অদরকারি জামাকাপড়, বাসনটাসন কিনে আনে। কে কবে ইন্ডিয়া যাবে বলে আত্মীয়স্বজনের জন্যে কোলন্‌, সোয়েটার, ব্যানলনের গেঞ্জি-টেঞ্জি কিনে ক্লোসেটে লুকিয়ে রাখে। ধরা পড়লে বাড়িতে একটু তর্কাতর্কি হয়। তখন আমাদের স্ট্রাগলিং পিরিয়ড। দিনে ফুলটাইম চাকরি করে, রাতে ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করছি। বাজে খরচ পোষায়? ওই গাড়িউলি হুজুগে মহিলার পাল্লায় পড়ে এরা ছেলেপুলে নিয়ে প্রায়ই দুপুরে দোকানে দোকানে ঘোরে। টয়স্‌-আর-আস্‌ থেকে ছেলের খেলনা আর ছোট্ট ছোট্ট গাড়ি কেনা বেড়ে যাচ্ছে।

তিনটে বাচ্চা মিলে সব গাড়ি জড়ো করে হয় এ বাড়ি, নয় ও বাড়ির লিভিং রুমের কার্পেটে কার রেসিং চালিয়ে যাচ্ছে। চন্দ্রার ধৈর্য্য কম আর দুপুরে বই পড়ার অভ্যেস বলে, বিজনগিন্নীর অ্যাপার্টমেন্টেই সারা দুপুর তান্ডব চলে। টিভিতে কার্টুন চ্যানেল বন্ধ করার উপায় নেই। ওরা তিনজনে হয়ত তখন ক্রিং ক্রিং করে ট্রাইসাইকেল চালাচ্ছে। নয়তো, পিঠে তোয়ালে ঝুলিয়ে সুপারম্যান সেজে দু হাত ছড়িয়ে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারপরেই কেউ চিৎপটাং। হাহাকার কান্নার শব্দ। বিজনগিন্নী ডোরবেল দিচ্ছেন। আমার ছেলেই আছড়ে পড়েছে। চন্দ্রা দৌড়ে ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া মাত্র ধড়াম্‌ করে অ্যাপার্টমেন্টের দরজা লক্‌ড হয়ে গেল। তারপর চন্দ্রা ছেলের কান্না থামাচ্ছে। বিজনগিন্নী বিল্ডিং সুপারকে ফোন করছে। সুপার এসে মাস্টারকি দিয়ে দরজা খুলল।

একদিন সন্ধেবেলায় ক্লাস না থাকায় অফিস থেকে সময়মতো বাড়ি ফিরছি। শুনলাম পাশের ফ্ল্যাটে হুলুস্থুল হচ্ছে। কর্তাগিন্নীর চিৎকার, ছেলেদের কান্না, ধুমধাম আওয়াজ। হলটা কী? চন্দ্রা ভয়ে ভয়ে বলল- ওরা আজ বল ছুঁড়ে লিভিংরুমের শ্যাণ্ডেলিয়র ভেঙেছে। সারা কার্পেটে ভাঙা কাচ। ভাগ্যিস সান্টু, মান্টু বেঁচে গেছে। 

ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম- শুভ তখন কোথায় ছিল? চন্দ্রা বলল- ওর সকাল থেকেই একটু টেম্পারেচার এসেছে দেখে খেলতে পাঠাইনি। বোধহয় জ্বর এনে ভগবান বাঁচিয়ে দিলেন। 

আমি শুভর জ্বর শুনেও যেন স্বস্তি পেলাম। ঠিক করলাম এ অ্যাপার্টমেন্ট ছাড়তে হবে। ওই ডানপিটে ছেলেদের সঙ্গে শুভর দিনরাত খেলা বন্ধ করতে হবে। 

ওদিকে পাশের ফ্ল্যাটে উত্তেজনা থেমে গেছে। নিজে থেকেই একবার গিয়ে ডোরবেল দিলাম। বিজন দরজা খুললেন। তখনও অফিসের জামাকাপড় চেঞ্জ করেননি। থমথমে মুখ। বিজনগিন্নী এসে ভদ্রতা করলেন- আসুন। দেখেছেন তো কি কাণ্ড। দেখলাম ভাঙা শ্যাণ্ডেলিয়রের পাশে ভ্যাকিউম ক্লিনার। কিন্তু ও ভাবে কি ভাঙাচোরা কাচের টুকরো তোলা যাবে? বললাম- রাবার গ্লাভ্‌স্‌ পরে তোলা যাবে না। গ্লাভ্‌স্‌ কেটে যাবে। ছোট তোয়ালে দিন। আগে বড় টুকরোগুলো সাবধানে তুলে ফেলা যাক। 

আমি আর বিজন মিলে সেই কাচের টুকরো সরিয়ে দিয়ে ভ্যাকিউম চালিয়ে কার্পেট পরিষ্কার করলাম। বিজন বললেন-একটু বসে যান। মেজাজটা এত চড়ে গিয়েছিল কি বলব? ছেলে দুটোকে খুব মেরেছি। দিনকে দিন অসভ্য হয়ে উঠেছে। আপনার ছেলেকে আর মিশতে দেবেন না। 

বললাম – শুভরও তো বন্ধু দরকার। একদিন একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। 

বিজনগিন্নী বললেন-সারাক্ষণ অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে ওরাই বা কী করবে বলুন? এই সেপ্টেম্বর থেকে সান্টু কিণ্ডারগার্টেনে গেলে তবু খেলার সঙ্গীসাথী পাবে। মান্টু তখন আরও জ্বালাবে। ওঁকে কত বলি ওদের প্রিস্কুলে ভর্তি করে দিতে। ওদের বয়সের বাচ্চারাই তো যায়।

বিজন রেগে উঠলেন- কত খরচ জানো? যে মা-রা চাকরি করে, তাদের বাচ্চারা ডে-কেয়ার, প্রিস্কুলে যায়। তুমি বাড়িতে থেকে ওদের দেখবে বলেই তো এই ডিসিশন।

আমি আর ওঁদের কথার মধ্যে থাকতে চাইলাম না। ওঠার সময় বিজন বললেন-বুঝলেন, এবারে ওদের মাসে একবার ধোলাই দেব। সেদিন কিছু বদমায়েশি করুক, না করুক। 

সে কি মশাই? শুধু শুধু বাচ্চা দুটোকে মারবেন?

ইয়েস্‌। তাহলে একটা ভয় থাকবে। রোজ রোজ অফিস থেকে ফিরেই তো ওদের মার নালিশ শুনতে হয়। আজ সান্টু এই করেছে। কাল মান্টু ওই করেছে। যখন তখন রান্নাঘরের নব ঘুরিয়ে দিচ্ছে! সারা বাড়ি গ্যাসের গন্ধ। একদিন স্টোভ জ্বলে যাচ্ছে। এদের মেরে শায়েস্তা না করলে, একদিন গুষ্টিশুদ্ধ পুড়ে মরব বুঝলেন?

বুঝলাম এবং সিদ্ধান্ত নিলাম এ বছরের লিজ্‌ শেষ হলেই অ্যাপার্টমেন্ট বদলে অন্য শহরে চলে যাব। নয়ত, ধারে কাছে থাকলে সান্টু, মান্টুর সঙ্গে শুভর প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ঠেকানো যাবে না। 

বিজনের আর এক সমস্যা ছিল গাড়ি। দেড় বছর আগে তিন বাঙালি একেকজন পঞ্চাশ ডলার দিয়ে দেড়শ ডলারে একটা পেল্লায় সাইজের পুরনো গাড়ি কিনেছিলেন। সব এ অ্যাপার্টমেন্ট হাউসের বাসিন্দা। সকালে তিনজনে সাবওয়ে নিয়ে যে যার মতো অফিস যেতেন। সন্ধেবেলায় পালা করে একেকজন বউ, বাচ্চা নিয়ে দোকান, বাজারে যেতেন। ছুটির দিনেরও পালা ঠিক করা থাকত। গাড়িটা ছিল বিজনের নামে। মেইন্‌টেনেন্স্‌, ইন্সিওরেন্সের পেমেন্ট বাকি দুজন তাদের অংশটা বিজনের সঙ্গে শেয়ার করত। কিন্তু অশান্তি শুরু হল উইকএন্ডে বেড়ানো নিয়ে। সে গল্পও বিজনের মুখেই শুনেছিলাম। 

দেখুন মশাই, এই ভাগাভাগি আর পোষাচ্ছে না। কতদিন ধরে গিন্নীকে কথা দিয়েছি সান্টু, মান্টুদের নিয়ে সি-বিচ্‌-এ যাব। জোনস্‌ বিচ্‌-এ সারাদিন কাটাব। কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন খাব। ওদের জন্যে সুইমিং ট্রাংক কিনেছি। আমার জন্যেও একটা কিনলাম। সাঁতার না জানলেও বিচ্‌-এ কি আর ফুলপ্যান্ট পরে যাব? তাছাড়া জলের মধ্যে ছেলে দুটোকেও দেখতে হবে। জানেন তো কি বিচ্ছু!

বাঃ, দারুন প্ল্যান! এই উইকএন্ডেই যাচ্ছেন নাকি?

বিজন- সেটাই তো প্ল্যান ছিল। হঠাৎ অ্যাডভান্স্‌ না জানিয়ে দেবু সরকার ফোন করেছে, ওই দিনই নাকি ওরা নিউ জার্সির বিচ্‌-এ যাবে। আচ্ছা, আমার প্ল্যানটা জানল কী করে বলুন তো? শুনেই মাথা গরম হয়ে গেল। তার ওপর গিন্নীর কট্‌কটে কথা- আমরা কি একটা গাড়ি কিনতে পারি না? দু বছর হল আমেরিকায় এসেছি। এখনও সেই ঝরঝরে গাড়ি। তাও আবার শেয়ারে কেনা।

আমি সায় দিলাম-সেটা উনি বলতেই পারেন। কিনে ফেলুন একটা নতুন গাড়ি। 

কালই কিনে নিচ্ছি। আমার সোজা হিসেব। দেড় বছর আগে পঞ্চাশ ডলার করে দুজনে দিয়েছিল। এখন দুজনকে পঁচিশ, পঁচিশ ক্যাশ দিয়ে দিচ্ছি। 

ডেপ্রিসিয়েশন ধরলে আরও কম পাওয়ার কথা। এনিওয়ে, ঠকাব না। কাল পেমেন্ট মিটিয়ে দিয়ে দেবুর পার্কিং লট থেকে গাড়িটা নিয়ে আসব। পরশুদিন জোনস্‌ বিচ্‌।

আমি চমকে উঠে বললাম- সর্বনাশ। ওই গাড়িটাই কিনছেন? সেদিন যখন স্টার্ট দিচ্ছিলেন, মাফলারের গর্জন শুনছিলাম। গাড়ির পেছনে কালো ধোঁয়াও দেখলাম। 

বিজনের মুখে আত্মপ্রসাদের হাসি- সেটাই তো অ্যাডভ্যান্টেজ। একদিন হাইওয়ে দিয়ে চালাচ্ছিলাম। বেশি স্পিড দিয়ে ফেলেছি। হঠাৎ পেছনে সাইরেন বাজিয়ে পুলিশের গাড়ি। বুঝলাম বেশি স্পিডের জন্যে ধরতে আসছে। এখনই গাড়ি থামিয়ে টিকিট দেবে। তক্ষুনি ডিসিশন নিয়ে প্রচণ্ড জোরে গ্যাস প্যাডেলে চাপ দিলাম। গাড়ির পেছনে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আষাঢ়ে মেঘ হয়ে গেল। চট করে একটা একজিট নিয়ে পালিয়ে গেলাম। পুলিশ অত ধোঁয়ার মধ্যে গাড়ির নাম্বার প্লেটও দেখতে পায় নি। 

বিজনকে অবশ্য বেশিদিন আর ওই পক্ষীরাজ চালাতে হয়নি। একদিন আষাঢ়ে মেঘ সৃষ্টি করেই গাড়িটা পার্মানেন্ট জবাব দিয়েছিল। আমরা ততদিনে অন্য শহরে চলে গেছি।

পরিমল বাগচী গল্প শেষ করে জল খাচ্ছেন। হঠাৎ পেছনের চেয়ার থেকে অপরিচিত একটি ছেলে জিজ্ঞেস করল- সেই বিজনবাবু, আই মিন, যাঁর আসল নাম শৈলেন ঘোষ, তাঁর সঙ্গে আপনার আর কন্ট্যাক্ট নেই? 

পরিমল থতমত হয়ে বললেন- না কন্ট্যাক্ট নেই। শুনেছিলাম টেনেসি চলে গিয়েছিলেন। বাট, হাউ ডু ইউ নো হিম?

ছেলেটি হাসল – উনি আমার জ্যাঠামশাই। পরে আমার বাবাকেও স্পন্‌সর করে নিয়ে এসেছিলেন। ইনফ্যাক্ট, আমরা ওঁদের জন্যেই তাড়াতাড়ি সেট্‌ল করতে পেরেছিলাম। আমি ওখানকার স্কুল থেকেই হাইস্কুল কমপ্লিট করেছিলাম। 

পরিমল জিজ্ঞেস করলেন – আর সান্টু, মান্টু?

ছেলেটি যেন একটু গর্বের সঙ্গেই উত্তর দিল – সান্টু লইয়ার। বস্টনের একটা ল ফার্মের পার্টনার। মান্টু মাইক্রোবায়োলজিতে পিএইচডি করে ওরিগন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আছে। 

আর তুমি? তোমার কী নাম? 

অরিজিৎ ঘোষ। সাউথ ব্রান্‌স্‌উইকে রিসেন্টলি মুভ করে এসেছি।

অমিতাভ বলল- পরিমলদার গল্পটা কিন্তু শেষ করল অরিজিৎ। একজন মানুষকে যেন আমরা সম্পূর্ণভাবে দেখতে পেলাম।    

ছবি Novocom.top

দীর্ঘকাল আমেরিকা-প্রবাসী আলোলিকা মুখোপাধ্যায়ের লেখালিখির সূচনা কলকাতার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প‍র্বে। আমেরিকার নিউ জার্সির প্রথম বাংলা পত্রিকা "কল্লোল" সম্পাদনা করেছেন দশ বছর। গত আঠাশ বছর (১৯৯১ - ২০১৮) ধরে সাপ্তাহিক বর্তমান-এ "প্রবাসের চিঠি" কলাম লিখেছেন। প্রকাশিত গল্পসংকলনগুলির নাম 'পরবাস' এই জীবনের সত্য' ও 'মেঘবালিকার জন্য'। অন্য়ান্য় প্রকাশিত বই 'আরোহন', 'পরবাস', 'দেশান্তরের স্বজন'। বাংলা সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য নিউইয়র্কের বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্ঘ থেকে ডিস্টিংগুইশড‌ সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *