আগের পর্বের লিংক: খলিল জিব্রানের দ্য প্রফেট-এর অনুবাদ: [কথামুখ] [প্রেম] [বিবাহ] [সন্ততি] [দান ও দাক্ষিণ্য] [পান-ভোজন] [কাজ-কারবার] [দুঃখ ও সুখ] [ঘর-বসত] [পরিধেয়] [বিকি কিনি]
অপরাধ ও শাস্তি
সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা শহরের অন্যতম এক বিচারক এবারে বললেন, অপরাধ ও শাস্তি সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।
এবং তিনি বললেন :
এ হল এমন এক অবস্থা, যখন তোমার আত্মা বাতাসেও হাতড়ে বেড়াচ্ছে।
আর একা এবং অরক্ষিত ভাবে তখনই তুমি এমন এক ভুল করে ফেল, যা আসলে তোমার নিজের ক্ষেত্রেও ঘটে যায়।
এবং এই ভুল করবার ফলেই, আশীর্বাদ প্রেরকের দরজায় কড়া নেড়ে, অবহেলিতের মতোই তোমাকে অপেক্ষা করতে হয়।
সাগরের মতোই অসীম তোমার শুদ্ধাত্মা;
যেটি চিরকাল অকলুষিত হয়েই আছে।
এবং ইথারের মতো তোমাকে তা শূন্যে তোলে, কিন্তু আবার ডানাও জুড়ে দেয়।
এমনকি তোমার ওই শুদ্ধাত্মাটি সূর্যেরই মতো;
তাই না জানে, এ কোনও ছুঁচোর সুড়ঙ্গ বা না খোঁজে সাপের গর্ত।
কিন্তু তোমার ওই শুধাত্মাটি যে শুধুমাত্র তোমারই অস্তিত্বে বাস করে , তা কিন্তু নয়।
যেমন তোমার অবয়ব, কিছুটা মানুষ আবার কিছুটা না মানুষও বটে,
কিন্তু অবয়বহীন সেই খুদে পিগমিটি, যে ঘুমন্ত অবস্থায় কুয়াশার মধ্যেই নিজের জাগরণের জন্যে, নিজেই হাচর পাঁচর করে চলেছে।
এবার বলব সেই মানুষটির কথা, যে তোমারই মধ্যে সুপ্ত।
এ হল সেইরকম ব্যাপার, যে তুমি জান কি তার অপরাধ এবং শাস্তিই বা কী; কিন্তু সে, না সেই শুদ্ধ আত্মা বা না সেই কুয়াশায় ঘুমিয়ে থাকা ওই পিগমিটি।
শুনেছি যে, কখনও কখনও তোমরা এরকমও বলেছ , যে এই অন্যায় যে বা যারা করে, সে বা তারা নাকি তুমি তো নওই এবং তারা তোমার একেবারেই অপরিচিত, আর তাই-জন্যে সেই তারাই তোমার জগতে এক অনুপ্রবেশকারীও বটে।
কিন্তু আমি বলব যে, পবিত্র ও সত্যনিষ্ঠও যেমন ছাপিয়ে যেতে পারেনা সেই উচ্চতা, যা তোমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই আছে,
তেমনই ওই দুরাত্মা এবং দুর্বলও ততটুকু নীচেই নামতে পারে, ঠিক যতটা নীচতাও তোমাদেরই মধ্যে আছে।
গাছে যেমন একটা পাতাই কেবল বিবর্ণ হয়না, কিন্তু এক নীরব অভিজ্ঞানে, ক্রমে বর্ণহীন হয়ে পড়ে সমস্ত গাছটাই,
এভাবেই, তোমাদের চোরা সম্মতি ছাড়া, অপরাধীও পারেনা কোনও অন্যায় করতে।
তাই,তোমরা দুজনেই মিছিল করেই এগোতে থাক, তোমাদের ওই শুদ্ধাত্মার দিকে।
তুমিই এই চলাচলের পথ এবং একই সঙ্গে এক পথিকও বটে।
কেউ একজন যখন মাটিতে পড়ে, সে আসলে পড়ে যায়, তার পিছনে থাকা লোকগুলির জন্যেই , আসলে যা, পাথরে হোঁচট খাওয়া থেকে এক আগাম সতর্কতা।
প্রত্যয়ী পদক্ষেপে এবং দ্রুততায় যারা তোমাকেও ছাড়িয়ে এগিয়ে গেছে ,তুমি তাদের জন্যেই সবসময় পড়ে যাও, কারণ হোঁচট খাওয়া ওই পাথরটিকে তারা দেখেও সরায়নি বলে।
আরও এক কথা, যা বললে তোমাদের হৃদয়ে ভার বোধ হবে:
যে খুন হল সেও তার নিজের খুনের জন্যে একবারেই যে দায়ী নয়, একথাও তো বলা যাবেনা,
তেমনই, যে সর্বস্ব খোয়ালে, সেও যে চুরির বিষয়ে একেবারে দোষমুক্ত , তাও নয়।
অসাধুর কাজকর্মের বিষয়ে ন্যায়পরায়ণও যে একেবারেই অপাপবিদ্ধ এমনও মোটেই নয়,
নিষ্ঠুরতা করবার সময় শুভ্র হাতের অধিকারীও জানবে যে, পরিচ্ছন্ন নয়।
হ্যাঁ, আর দোষীও তো অনেক সময়েই আহতের কারণেই দায়ী হয়।
এবং এ কারণেই যেহেতু অভিযুক্তও প্রায়শই নির্দোষ, তাই সে অনিন্দিতের ভার- বাহী হয়ে যায়।
ন্যায়কে যেমন অন্যায় থেকে আলাদা করা যায়না, তেমন একইভাবে তা যায়না সুজনের থেকে দুর্জনকেও;
কারণ, তারা দাঁড়িয়ে আছে এক সমান যূথতায় – সূর্যের মুখোমুখি যেন সাদা আর কালো এবং এ দু’টো সুতোর বুনোটই সমান ভাবেই বোনা।
কালো সুতোটি ছিঁড়ে গেলে, তবেই তাঁতি লক্ষ্য করবে, বস্ত্র খণ্ডের মধ্যে ওই ফুটোটি আর তখনই সে পরীক্ষা করবে তার তাঁত যন্ত্রটিরও।
তোমাদের মধ্যেই যদি কেউ বিচার চাও সেই স্ত্রীটির, যে পরপুরুষ-গামী,
তবে তার স্বামীর হৃদয়টিকেও ওজন করো সমান নিক্তিতে, আর আত্মাটিকেও মেপো সঠিক নির্ণয়ে।
যে তীব্র কষাঘাত করেছে পাপাচারীকে, তাকে তাকাতে দাও, অপমানিতের ওই আহত সত্তার দিকে।
সত্যের নাম নিয়ে, তোমাদেরই মধ্যে কেউ যখন অপর কাউকে শাস্তি দেবে এবং উদ্যত হবে অপরাধীর গাছটিকে নির্মূল করতে তখন কিন্তু সেই গাছের শিকড়টিও তাকে দেখতে দিও;
ওই শিকড় স্পর্শমাত্র সে একইসঙ্গে বুঝতে পারবে, ভাল ও মন্দের স্বরূপ; ফলন্ত এবং ফলহীন গাছের চেহারাটা, যা জড়িয়ে আছে এ পৃথিবীর অব্যক্ত হৃদয়ে।
আর এই যে বিচারকের দল, তোমারা তো ন্যায়পরায়ণ!
তাই, তার বিচার কী করবে, যে তার রক্ত মাংসের দেহে সাধু, কিন্তু মনে মনে চোর ?
আর তাকেই বা কী শাস্তি দেবে, যে শরীরে ঘাতক হয়েও নিজের সত্তায় নিজেই নিহত?
আর তাকেই বা কিভাবে মৃত্যুদণ্ড দেবে, যে তার কাজে একজন বিভ্রান্তকারী এবং অত্যাচারীও বটে,
অথচ একইসঙ্গে ক্ষুব্ধ এবং নিষ্ঠুর ?
এবং কী শাস্তি দেবে সেই তাদের, ইতিমধ্যেই যাদের আক্ষেপ , তাদের নিজস্ব কৃতকর্মের চেয়েও ঢের গুণ বেশি?
এই আক্ষেপই কি ন্যায় নয়, যা আইনের বলে বলবৎ হওয়ায় তুমি সানন্দে জারি করছ?
তাই, তুমি না পার অপরাধীর ঘাড়ে অহেতুক মনস্তাপ চাপিয়ে দিতে, না তা অপরাধীর হৃদয় থেকে ফেলতে পার উপড়ে।
অনাহুত তাকে ডেকে আনা উচিৎ রাত্রিতে, যাতে মানুষরা জেগে উঠে পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে।
আর এই যে তুমি বুঝতে চাও ন্যায়কে, তো কি করেই বা তা বুঝবে, যদি তোমাদের নিজেদের কাজকর্মকেই দিনের পূর্ণ আলোয় দেখতে না পাও?
এবং তখনই তুমি জানতে পারবে যে, দোষী হিসেবে যাকে খাড়া করছে এবং এই পতিত মানুষটি, এরা কিন্তু দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে গোধূলির সেই সন্ধিক্ষণে, যা আসলে সেই পিগমি সত্তাটির রাত ও শুদ্ধ আত্মাটির দিনেরও এক সন্ধিক্ষণ,
আর এও সত্য যে মন্দির কোনার ওই চূড়াটি থেকে কিছু কম উচ্চ নয় তার ভিতের পাথরটিও।
আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান।
ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।