লিলি-র ডাক্তারবাবুকে খবর দেওয়া হয়, তিনি এসে পিকপিক-কে দেখে বলেন,
“ওকে প্যারামিক্সো ভাইরাস ধরেছে। ওকে বাঁচানো কঠিন। ওই জন্য, অন্য পাখিরা ওর কাছে আসে না।”
শুনে সবাই খুব দমে গেল। এতক্ষণ ওরা ভেবেছিল, পিকপিক বুঝি পড়ে গিয়ে ঘাড়ে আঘাত পেয়েছে। ডাক্তার বোঝায়,
“এটা একটা স্নায়ুর রোগ। পাখিদের হয়।”
রাই রাকা এখন ভাইরাস শব্দটির সাথে পরিচিত। করোনা ভাইরাসের জন্য স্কুল বন্ধ। রাকা বলে, “ওকে কি মাস্ক পরতে হবে?”
ডাক্তার বলে, “হ্যাঁ, পরলে ভাল হত। তাই অন্য পাখিরা ওকে এড়িয়ে চলে।”
রাই বলে, “কোয়ারেন্টিন?”
ডাক্তার বলে, “ঠিক তাই।”
“ও কি আর উড়তে পারবে না?”
“বাহাত্তর ঘন্টার বেশি বাঁচে না। তবে তোমাদের কাছে দেখছি অনেকদিন রয়েছে।”
রাকা বলে, “বাহাত্তর মানে কী?”
রাই বুঝিয়ে দেয়, “সেভেনটি টু।”
ডাক্তার যাই বলুক, পিকপিক কিন্তু ওদের কাছে থেকে গেল। মামাবাড়ি থেকে ফিরে এসে ফ্ল্যাটের বারান্দায় ঘাড় নিচু করে এখন সে বকবকম বলতে পারে। মাঝেমাঝে অন্য পায়রা রেলিংয়ের উপর এসে বসে। পিকপিক-এর খবরাখবর নেওয়ার চেষ্টা করে। ঝুল বারান্দার নীচে কমলা ধুলোরঙা বিড়ালটাও আসে।
নিজের ঘরের জানলা দিয়ে রাকা রেলিংয়ে বসা পাখিটাকে দেখে আর দিদিকে বলে, “ওকে নিয়ে যেতে এসেছে?”
“হতেই পারে। ফ্যামিলির লোকের মন খারাপ হচ্ছে।”
রাই খুব গম্ভীর হয়ে জবাব দেয়।
একদিন আবার ব্যালকনি থেকে উড়ে গেল পিকপিক। নীচে এক ঝাঁক পায়রা খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে। তাদের দলে যোগ দেয়। খানিক বাদে সব পায়রা উড়ে যায়, শুধু পিকপিক ঘাড় কাত করে একা একা ঘুরে বেড়ায়। রাই রাকাদের আবাসনের সিক্যুরিটি মাসি দেখতে পেয়ে রাইকে ডাকে, “তোমাদের পাখিটা একা একা রয়েছে, নিয়ে যাও, নয়তো বিড়ালে ধরবে।”
শুনে রাই দুদ্দাড় করে নিচে নামে, পিকপিক-কে তুলে নিয়ে আসে।
“ওকে কি খাঁচায় রাখব?” রাকা জিজ্ঞেস করে। রাই বলে,
“না, কাউকে খাঁচায় রাখা কি উচিত্? তোকে যদি খাঁচায় রেখে দিই, কেমন লাগবে?”
“খুব খারাপ লাগবে।”
পিকপিকের আবার ব্যালকনিতে ঠাঁই হয়। এখন তার একটু একটু ডানার জোর বাড়ছে। বারান্দা থেকে উড়ে যায় আবার একা একা ফিরেও আসে।
কমলা ধুলোরঙা বিড়ালটা এখন ঠোঁট চাটে আর ম্যাঁও ম্যাঁও করে ঘুরে বেড়ায়।
ছবি সৌজন্য Pinterest
Asadharon likhechis. Tor Kali, kalom r Mon…tintei somprikto sathe Ei sahityer Janmo diyechie. Aaro lekh. Shubheccha yakrash.
প্রকৃতি আর শিশু মনের মেলা মেশা। এই শহরের ব্যালকনি থেকে পরিবারের শিশুর মনের ভাবনা।
ভাল লাগল। টার্গেট পাঠক পড়ুক।
পশু পাখি ও প্রকৃতিকে শিশু রাত নিজেদের জীবনে জুড়ে নিক। আজকাল তেমন দেখি কিছু অভিভাবক স্বার্থপরতার পাঠ দিচ্ছেন বাচ্চাদের,তার বিপরীতে এ গল্প স্নিগ্ধতা ছড়ায়।
ভাল লাগল। সুন্দর লেখাটা।
ছোটদের জন্য লেখা , ওদের মতো করেই । বেশ ভালো লাগলো ।