আগের পর্ব- ঈশ্বর: পর্ব ১

মৃণাল: মহারাজ, এই ম্যাডাম এসেছেন প্রেস থেকে। টাইমস। বলছেন আপনার সঙ্গে এপয়েন্টমেন্ট করা আছে। 

অতুল: একটু অপেক্ষা করতে বলুন। আমি ক্লাসটা শেষ করেই ওনার সঙ্গে কথা বলছি। 

মৃণাল: আমি বলেছিলাম মহারাজ। উনি বলছেন ওঁর সময় নেই। এর পর আর-একটা এপয়েন্টমেন্ট আছে। 

অতুল: তাহলে আজ না করে দিন। 

মৃণাল: না করে দেবেন? সেটা করা বোধহয় ঠিক হবে না মহারাজ। টাইমস বলে কথা। তাছাড়া, এতদিন বাদে আপনি আমেরিকায় এসেছেন – সন্ন্যাস নেবার পর এই প্রথম। মানুষের কাছে পৌঁছনর এ এক সুবর্ণ সুযোগ। এই অপরচুনিটি ছাড়া ঠিক নয়। 

অতুল: কিন্তু এরা সব বসে আছেন – 

মৃণাল: আপনি একটা ব্রেক নিন না। ওরা কোনও আপত্তি করবেন না। নাহয় ওদের সামনেই আপনি ইন্টার্ভিউটা দেবেন। ওদের ভালই লাগবে। 

অতুল: বেশ। আপনি ওনাকে নিয়ে আসুন। আমি এদের বলছি। 

(মৃণাল বেরিয়ে যায়। অতুল ভক্তদের বলে) 

অতুল: আমরা এখন একটা ছোট বিরতি নেব। টাইমস থেকে একজন অতিথি এসেছেন আমার সাক্ষাৎকার নিতে। ওনার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আপনারাও কথোপকথনের অংশীদার হন। আশাকরি আপনাদের ভালই লাগবে। 

ভক্ত ১: হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আপনি কথা বলুন। আমরা শুনব। 

অতুল: বেশ বেশ। ওনার সঙ্গে কাজটা শেষ করেই আমি – 

(শাশ্বতীকে নিয়ে মৃণাল প্রবেশ করে। শাশ্বতীকে দেখে চমকে ওঠেন অতুল। শাশ্বতীও থমকে দাঁড়ায়।) 

মৃণাল: আসুন ম্যাডাম। মহারাজ, ইনি হলেন শাশ্বতী সেন। টাইমস পত্রিকা থেকে এসেছেন। ম্যাডাম আপনি বসুন। আপনার কফি, চা, জল – কিছু লাগবে? 

শাশ্বতী: কি? কী বললেন? না না আমার কিছু লাগবে না। 

অতুল: নমস্কার। আমি আশা করিনি – মানে কোনও বাঙালি জার্নালিস্ট আসবেন এটা আমার জানা ছিল না। 

শাশ্বতী: নমস্কার। আমিও ঠিক – এটা একেবারেই অভাবনীয় – আমি ঠিক… 

মৃণাল: ম্যাডাম আপনি শুরু করতে পারেন। আমি এখানেই আছি, কিছু লাগলে বলবেন। 

অতুল: হ্যাঁ আপনি শুরু করুন। শুনলাম আপনার তাড়া আছে। এরাও অপেক্ষা করছেন – 

শাশ্বতী: এখানে? (মৃণাল কে) ইন্টার্ভিউটা কি এখানে হবে?  

মৃণাল: হ্যাঁ, মহারাজ তো তাই বললেন। 

শাশ্বতী: না, এখানে সবার সামনে ইন্টার্ভিউ করা সম্ভব নয়। আমি ওনার সঙ্গে প্রাইভেটলি – একান্তে কথা বলতে চাই। 

অতুল (সামান্য হেসে): আপনার লেখাটা তো সবাই পড়বে। তাই না? তাহলে সবার সামনে কথা বলতে অসুবিধে কোথায়? 

শাশ্বতী (কঠিন স্বরে): অসুবিধে আছে। (থেমে) মৃণাল বাবু, আপনি এঁদের বলুন কিছুক্ষণ বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে। আমি আধঘণ্টার বেশি সময় নেব না। 

মৃণাল: কী করব মহারাজ?  

(অতুল কয়েক মুহূর্ত শাশ্বতীর দিকে চেয়ে রইলেন। তারপর ভক্তদের বললেন।) 

অতুল: আমার এই অতিথি একটু নিভৃতে আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। তাই আমি আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা যদি কিছুক্ষণ বাইরের লবিতে অপেক্ষা করেন। যে ধ্যান মন্ত্র আপনাদের দিয়েছি, তাই জপ করুন। 

ভক্ত ১: নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই মহারাজ। আমরা বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করছি। 

ভক্ত: আপনি যতক্ষণ খুশি কথা বলুন। পরে আমরা টাইমসে আপনার সাক্ষাত্‍কার পড়ে নেব। চলুন, চলুন – 

(ভক্তরা সবাই উঠে দরজার দিকে এগোন) 

অতুল: অসংখ্য ধন্যবাদ। মৃণাল বাবু, আপনি যদি এঁদের জন্য একটু চা জলখাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন  – 

মৃণাল: হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই! আমি দেখছি। 

শাশ্বতী: যাবার সময় দরজাটা বন্ধ করে দেবেন। 

মৃণাল: নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই। 

(মৃণাল বেরিয়ে যায়। শাশ্বতী অপেক্ষা করে যতক্ষণ না দরজা বন্ধ হয়। ) 

অতুল: বসুন।  

শাশ্বতী: আমি ভাবতে পারছি না! তুমি অতুলানন্দ? 

অতুল: আমি তো তাইই জানি। কেন? আপনার – আমিও তাহলে অনুমতি নিয়ে তুমি বলছি। তোমার কোনও সন্দেহ আছে? 

শাশ্বতী: আমারাই ভুল। আরও খোঁজখবর নিয়ে তারপর আমার আসা উচিৎ ছিল। হ্যাঁ, আমি পড়েছি, মহারাজ অতুলানন্দ এম-আই-টির পি এইচ ডি। কিন্তু এই অতুলানন্দ যে এম আই টির অমিত মুখার্জি, সেটা কোথাও লেখা ছিল না। 

অতুল: সেরকম লেখা থাকার তো কোনও কথা নয়। 

শাশ্বতী: ওয়েবসাইটে তোমার ছবিটা দেখেছি, কিন্তু – 

অতুল: এটা স্বীকার করছি। ওয়েবসাইটের ছবি দেখে আমাকে চেনা খুবই মুশকিল। দীর্ঘ অসুস্থতার পরে অনেক ওজন কমে গিয়েছিল, মুখ ভর্তি দাড়ি, মাথায় টুপি – আমিও আমাকে চিনতে পারিনা। 

শাশ্বতী: এখন পারো? 

অতুল: তুমি কি সাক্ষাত্‍কার শুরু করে দিয়েছ? রেকর্ডার বার করনি কিন্তু। 

শাশ্বতী: আমার কথার জবাব দাও। আমি যার সঙ্গে কথা বলছি, সে কে? অমিত মুখার্জি, না কি অতুলানন্দ মহারাজ। 

অতুল (হেসে): তুমি আসার একটু আগেই আমরা এই প্রসঙ্গেই আলোচনা করছিলাম। বেদান্তের সাহায্যে বুঝতে চেষ্টা করছিলাম আমি কে – 

শাশ্বতী: Don’t give me that crap! সোজা কথায় বল,  who are you? 

অতুল (গম্ভীর): তুমি কোথাও একটা ভুল করছ শাশ্বতী। তুমি অমিত মুখার্জি নয়, অতুলানন্দের সঙ্গেই কথা বলছ। 

শাশ্বতী: মুখোস – মুখোস পরে আছ তুমি। আগে সায়েনটিস্টের মুখোস পরতে, এখন সন্ন্যাসীর মুখোস। 

অতুল: মুখোস তো আমরা সবসময়েই পরে থাকি শাশ্বতী। জ্ঞানে অথবা অজ্ঞানে। আর সেই মুখোসটাকেই আমি বলে ভাবতে থাকি। তাই তো আমি কে, এটা জানা এত জরুরি। আর মানুষকে নিজেকে চিনতে শেখানটাই আমার কাজ। 

শাশ্বতী: আর আমার মত রিপোর্টারের কাজটা কী জানো? এই রকম ভণ্ড মুখোসধারীদের মুখোস টেনে খুলে সবার সামনে নগ্ন করে দেওয়া। 

অতুল (হো হো করে হেসে ওঠে): বাঃ, খুব ভাল। তুমি তো আমার কাজ আরও সহজ করে দিলে। মুখোস ছেড়ে বেরোন টাই তো সবচেয়ে কঠিন কাজ। সেটা যদি তুমি করে দিতে পারো – 

শাশ্বতী: তোমার কি বিবেক, মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই? আমি যদি আমার কাগজে তোমার আসল পরিচয়টা দিয়ে দিই, তোমার অবস্থাটা কী হবে তুমি বুঝতে পারছ? 

অতুল: যা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি কিছু তো আর হবে না। 

শাশ্বতী: তার মানে? 

অতুল: তুমি অযথা সময় নষ্ট করছ শাশ্বতী। তোমার যদি সাক্ষাত্‍কার নেওয়া হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে আমি আমার ভক্তদের ভেতরে আসতে বলি? ওরা বড় বিচলিত হয়ে আছে। 

শাশ্বতী: তোমার কি কোনও আক্ষেপ নেই? কোনও আত্মগ্লানি নেই? কোনও আফসোস নেই? 

অতুল: নেই। অতুলানন্দের কোনও আক্ষেপ নেই, গ্লানি নেই, আপসোস নেই – 

শাশ্বতী: আর অমিত মুখার্জির? 

অতুল (বিরক্ত): আঃ! কেন ওই নামটা বার বার উচ্চারণ করছ? আমি কোনও অমিত মুখার্জিকে চিনি না।   

শাশ্বতী: মিথ্যুক! মিথ্যাবাদী! 

অতুল: তুমি আমাকে যা খুশি বলতে পার। আমি ক্রুদ্ধ হব না। সন্ন্যাসীর ধর্ম ক্রোধকে জয় করা। কিন্তু সত্যি আমি খুব ব্যস্ত। তোমার যদি আর কোনও প্রশ্ন করার না থাকে, তাহলে তুমি এস। 

শাশ্বতী: হ্যাঁ প্রশ্ন আছে। অনেক অনেক প্রশ্ন আছে। আমি তোমাকে অত সহজে ছেড়ে দেব না। 

অতুল: বেশ, বল কি তোমার প্রশ্ন। 

(শাশ্বতী রেকর্ডার বার করে অন করে।) 

শাশ্বতী: সন্ন্যাস নেবার আগে তোমার নাম কি ছিল? 

অতুল: বলতে পারব না। পূর্বাশ্রমের কথা সন্ন্যাসীদের মনে রাখতে নেই। মনে থাকলেও তা উচ্চারণ করতে নেই। তুমি অন্য কোনও প্রশ্ন কর। 

শাশ্বতী: তুমি সত্যি আমার প্রশ্নের উত্তর দেবে না? 

অতুল: তোমার প্রশ্ন যদি আমার পুর্বাশ্রম সংক্রান্ত হয়ে থাকে, সে প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। 

(শাশ্বতী দরজার কাছে গিয়ে বলেন) 

শাশ্বতী: মৃণাল বাবু, আপনি ওনাদের ভেতরে আসতে বলতে পারেন। 

অতুল: তোমার সাক্ষাৎকার শেষ? 

শাশ্বতী: প্রায় শেষ। বাকিটুকু ওনাদের সামনেই করতে পারব। 

(ভক্তরা প্রবেশ করে তাদের আসন গ্রহণ করে।) 

শাশ্বতী: আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন সম্প্রতি কিছু মানুষ ভবিষ্যৎবাণী করেছেন যে পৃথিবী খুব শীঘ্র ধ্বংস হয়ে যাবে। যদিও কিছু মতান্তর রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ ভবিষ্যৎ বক্তাদের মতে আর মাত্র দিন দশেক আয়ু আমাদের এই পৃথিবীর। আপনি কী বলেন? 

অতুল: পৃথিবী ধ্বংস হবেই – আজ নয়ত কাল। কিন্তু সেই কাল কবে আসবে আমি তা সঠিক বলতে পারব না। 

ভক্ত ১: অ্যাঁ? সেকি? পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে? 

মৃণাল: হ্যাঁ, সেরকম একটা গুজব শোনা গিয়েছে বটে। কিন্তু এরকম তো প্রায়ই হয় – কেউ না কেউ এরকম দাবি করেন – কিন্তু সেসব কিছুই সত্য নয়। কিছু পাগলের প্রলাপ মাত্র। আপনারা বিচলিত হবেন না। 

শাশ্বতী: আজ থেকে আঠেরো বছর আগে, এই রকম এক ভবিষ্যতবাণী হয়েছিল। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। ম্যাসাচুসেটসে কেম্ব্রিজ শহরে এক বিজ্ঞানী সেই দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি অনেক অঙ্ক কষে, জটিল থিয়োরি টিয়োরি দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে সেই ভবিষ্যৎবাণী অব্যর্থ। অন্যান্য বিজ্ঞানীরা খুব হাসা হাসি করেছিলেন, কিন্তু উনি ওনার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। আপনারা কেউ জানেন সেই ঘটনার কথা?

ভক্ত ২: এরকম একটা কোথাও শুনেছিলাম মনে হয়। ঠিক মনে পড়ছে না। 

ভক্ত ৩: আমি তো ওই অঞ্চলেই থাকতাম।  তেমন কিছু শুনেছি বলে মনে পড়ছে না। 

শাশ্বতী: মহারাজ, আপনি কিছু শুনেছিলেন?

অতুল: না, আমার সেরকম কোনও ঘটনার কথা মনে পড়ছে না। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, আপনি কেন এই গল্প আমাদের শোনাচ্ছেন? 

শাশ্বতী: একটু ধৈর্য ধরুন, আপনি সব বুঝতে পারবেন। আপনারা যে ঘটনাটা সম্পর্কে খুব একটা কিছু জানেন না, সেটা খুব একটা আশ্চর্যের কথা নয়। সবাই মনে করেছিল পাগলের প্রলাপ, কেউ বিশেষ পাত্তা দেন নি। কিন্তু সেই বিজ্ঞানী তাতে নিরস্ত হলেন না।  উনি এক জঘন্য পরিকল্পনা করলেন। ওনার কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝালেন, এই প্রলয় থেকে বাঁচার একটা উপায় উনি বার করেছেন।  বললেন, ওনার বাড়ির বেসমেন্টে উনি একটা শেল্টার বানাবেন। এক জটিল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি হবে সেই শেল্টার। বাইরে মহাপ্রলয় ঘটে গেলেও, শেল্টারের বাসিন্দাদের কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু এই শেল্টার গড়তে খরচ হবে প্রচুর। ওনার অন্ধ ভক্ত ছাত্র ছাত্রীরা, তাদের পরিবার, তাদের বন্ধুবান্ধব বেঁচে থাকার এই লোভ সম্বরণ করতে পারলেন না। তাঁরা তাদের জীবনের সমস্ত সঞ্চয় এনে তুলে দিলেন এই বিজ্ঞানীর হাতে। মহাপ্রলয়ের আগের দিন, সবাই দুরু দুরু বুকে এসে হাজির হল সেই বিজ্ঞানীর বাড়িতে। মাটির নীচে বেসমেন্ট ঘরে নানান যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, তার আলো ইত্যাদি দেখে তাঁরা নিশ্চিন্ত হলেন। সবাই এসে ঢুকলেন সেই ঘরে। তাঁদের বিশ্বাসে যাতে কোনও টান না ধরে, তাই সেই বিজ্ঞানী তার বাগদত্তা বান্ধবীকেও সেই ঘরে এনে বন্দি করলেন। সবাইকে বললেন, চব্বিশ ঘণ্টা এই ঘরে কাটাতে হবে তাদের। উনি পাশের ঘরে বসে সব নিয়ন্ত্রণ করবেন। বললেন, আপনারা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন। আমাদের এই আশ্রয় যেন আমাদের রক্ষা করে। ওঁর বান্ধবী কাঁদতে কাঁদতে বললেন তার খুব ভয় করছে। উনি যেন পাশে থাকেন। বিজ্ঞানী আশ্বাস দিলেন, উনি কাছেই থাকবেন। চিন্তা না করতে। বলে ঘর থেকে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন। ওই ছোট্ট ঘরে গাদাগাদি করে প্রায় শ খানেক মানুষ। সবাই মনে নিদারুণ আশঙ্কা নিয়ে ইষ্টনাম জপ করতে থাকলেন। একটু বাদে আলো নিভে গেল। এয়ার-কন্ডিশন বন্ধ হয়ে গেল। বাইরে থেকে ভয়ঙ্কর সব আওয়াজ ভেসে আসতে লাগল। সেই শ্বাসরোধকারী আবহাওয়ায় আতঙ্কে অনেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। বিজ্ঞানীর বান্ধবী তখন অন্তঃসত্ত্বা।  নিদারুণ কষ্টে তার হাত পা শিথিল হয়ে যেতে লাগল। মনে হল তিনি আর বেঁচে থাকবেন না। এই ভাবে চব্বিশটা ঘণ্টা পার হল, কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন অনন্ত কাল।  বাইরের সেই ভয়াবহ শব্দ ধীরে ধীরে কমে গেল। সবাই একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টা পরেও ঘরের দরজা খুলল না। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলেন, কিন্তু সেই বিজ্ঞানী এসে দরজা খুলে দিলেন না। সকলের মনে আশঙ্কা জন্মাতে লাগল, তাহলে কি মহাপ্রলয় ওই বিজ্ঞানীকেও গ্রাস করেছে? প্রায় ঘণ্টা ছয়েক অপেক্ষা করার পর যখন কেউ দরজা খুলল না, তখন চেষ্টা করা হল দরজা ভেঙে ফেলার। বেশ কিছুক্ষণ পরে তাঁরা সফল হলেন। দরজা ভেঙে সবাই বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলেন, পরিষ্কার নীল আকাশ। জীবন যেমন চলছিল তেমনই চলছে। প্রলয়ের চিহ্ন মাত্র নেই কোথাও। হতবাক হয়ে সবাই তখন সেই বিজ্ঞানীর খোঁজ করতে লাগলেন। কিন্তু সেই বিজ্ঞানীকে কোথাও পাওয়া গেল না। লজ্জার মাথা খেয়ে অনেকে পুলিশের কাছে গেলেন। কিন্তু সেই বিজ্ঞানীকে পুলিশও খুঁজে বার করতে পারল না। প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ডলার আত্মসাত্‍ করে তিনি উধাও হয়ে গেলেন।  

চলবে…

সুদীপ্ত ভৌমিক একজন প্রতিষ্ঠিত নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা। ওঁর নাটক অভিবাসী জীবনের নানা দ্বন্দ ও সংগ্রামের কথা বলে। সুদীপ্তর নাট্যদল একতা (ECTA) উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিমবঙ্গের নাট্যপ্রেমীদের কাছে এক পরিচিত নাম। ভাষানগর পুরস্কার, নিউ জার্সি পেরি এওয়ার্ড নমিনেশন, সিএবি ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস এওয়ার্ড ইত্যাদি সম্মানে ভূষিত সুদীপ্ত ড্রামাটিস্ট গিল্ড অফ আমেরিকার পূর্ণ সদস্য। ওঁর পডকাস্ট স্টোরিজ অফ মহাভারত অ্যাপল আইটিউনস-এ শ্রেষ্ঠ পডকাস্টের স্বীকৃতি পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *