কৈশোরে ছোটদাদুর কাছে হিমালয় ভ্রমণের গল্প শোনার একটা নেশা ছিল। কল্পনার পাখায় ভর করে আমার কিশোর মন মুহুর্তে পৌঁছে যেত ধ্যানমগ্ন হিমালয়ের গভীর গহনে। কখনও অমরনাথের গুহায়, কখনও স্বর্গারোহিনীর হিমবাহে, আবার কখনও বা রুদ্রপ্রয়াগে যেখানে অলকানন্দা আর মন্দাকিনীর পবিত্র মিলনে ফিরোজা জলের উচ্ছ্বাস।
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই বদ্রীনাথ থেকে চার কিলোমিটার উত্তরে সরস্বতী নদীর তীরে মানাগাঁওতে পা রাখতেই ছোটদাদুর গল্পটা মনে পড়ে গেল। এই মানা গ্রামেই তো একবার পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন ছোটদাদু! হিমালয়ের বন্ধুর পথে দিক্ভ্রান্ত হয়ে অনেক ঘোরার পর যখন সন্ধ্যা আসন্ন, তখন ছোটদাদুর কানে এসেছিল এক রহস্যময় কণ্ঠস্বর, “বেটা, তু রাস্তা খো গেয়া- মেরে পিছে আ যা।” ছোটদাদু চলেছিলেন এক অদৃশ্য সত্তাকে অনুসরণ করে- অবয়বহীন এক স্বর তাঁকে ফিরিয়ে এনেছিল মানাগ্রামে। সে আর এক জমাটি গল্প।
আমিও মানাগ্রাম থেকে চলেছি উত্তরে মহা-হিমালয়ের পথে। এ পথ ধরেই পঞ্চপাণ্ডব আর দ্রৌপদী যাত্রা করেছিলেন স্বর্গারোহণের উদেশে। কুমায়ুন থেকে গাড়োয়াল, দু-সপ্তাহের এই সফরে, অঙ্ক মিলিয়ে ১৪টি বিভিন্ন জায়গায় আমার যে অনন্য অভিজ্ঞতা হয়েছে, তারই কড়চা শুরু করলাম এই মানাগাঁও দিয়ে। কেন? কেন না, এই মানাগাঁও থেকেই বিরাট গল্প লেখার শুরু।
গ্রামের মধ্যে দুই পবিত্র গুহা- ব্যস গুফা আর গণেশ গুফা। মহর্ষি ব্যাসদেব তাঁর নির্জন গুহায় বসে সাধনা আর রচনা করলেও, শোনা যায় তাঁকে পাশের গুহাতে গিয়েই গণেশকে মহাভারতের ধারাভাষ্য শোনাতে হয়েছিল। মহাকাব্য লেখার শর্তাবলীতে রুদ্রপ্রতিম ছিলেন অনড়। গনেশ গুফার অদ্ভুত আকৃতি– অন্ধকারে গুঁড়ি মেরে ঢুকে প্রদক্ষিণ করতে হবে, মধ্যেখানে গম্বুজ আর তার পাশে একটি বড়সড় চাতাল।
মনশ্চক্ষে দেখতে চেষ্টা করলাম একদিকে শ্বেতশ্মশ্রুধারী মহর্ষি ব্যাস, অন্যদিকে গৌরীনন্দন- চলছে মহাভারতের আশ্রমবাসিক পর্বের বিবরণ- ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পর ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী আর কুন্তী রাজপ্রাসাদের সুখ পরিত্যাগ করে হিমালয়ের অরণ্য-কুটিরে যখন বিশ্রাম করছেন, তখন দাবানলের দহনে উপশম হল স্বজন বিয়োগের জ্বালা, ভস্মীভূত হলো তাঁদের নশ্বর দেহ। ধার্মিক বিদুর আর পুণ্যাত্মা সঞ্জয় যাত্রা করলেন মহা-হিমালয়ের পথে। সে পথের প্রথম বিস্ময়- বসুধারা। আমিও চলেছি এই অপূর্ব ঝর্ণার উদ্দেশ্যে। মানাগাঁওয়ে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। বসুধারার দর্শন সকলের মেলে না! সে কী! ঝর্ণা উধাও হয়ে যায় নাকি? “কোহরা মে ঢাক জাতা হ্যায়! সাচ্চা দিলওয়ালোকোই দর্শন মিলতা।” অথার্ৎ নির্মল হৃদয় নিয়ে পৌঁছতে না-পারলে বসুধারা কুয়াশায় ঢেকে যায়।

মানাগাঁও থেকে বেরতে বেশ দেরি হল। শ্রাবণের আকাশ মেঘে ঢাকা, কখনও দু’ এক পশলা বৃষ্টি, ১২ কিলোমিটার যাতায়াত করতে সন্ধে নেমে গেলে পাহাড়ে পথ হারাবার ভয়। অজ্ঞাত সেই মহাপুরুষ, যিনি ছোটদাদুকে পথ দেখিয়েছিলেন, তাঁর কথা স্মরণ করে বসুধারার দর্শন অভিলাষে চললাম। দেবতাত্মা হিমালয়ের কয়েকটি অনন্য স্থান আছে যার পরিধিতে প্রবেশ করলেই এক বিচিত্র অনুভূতি হয়। বসুধারার পথেও তাই হল। গগনচুম্বী হিমালয়ের মাথা মেঘের ঘোমটায় ঢাকা। কোথাও মেঘ এতো নীচে, যে সত্যিই ভ্রম হয় এই রাস্তা স্বর্গের সিঁড়ি কিনা। কোথাও মেঘ কেটে খাঁজ কাটা পাথরের চূড়া স্বমহিমায় জাগরিত, যার পাদদেশে শ্যামল সবুজের গালচে। মৌন পাহাড়ের বুক চিরে অলকানন্দা নদী পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে। তার সঙ্গে অন্তঃসলিলা সরস্বতী নদীর মিলন।
সামনে ভীমপুল- শোনা যায় খরস্রোতা সরস্বতীর জলোচ্ছাসের উপর পাণ্ডুপুত্র এক বিরাট পাথর ফেলে সেতুবন্ধন করেছিলেন। কিন্তু দ্রৌপদী বেশিদূর চলতে পারেননি। এরপর রাস্তা বন্ধুর ও অনির্দিষ্ট। ফিরতি পথের কিছু যাত্রীকে বসুধারা ফলসের কথা জিজ্ঞেস করতে তাঁরা জানালেন, ওখানে বৃষ্টি হচ্ছে- ঘন কুয়াশায় সব ঢাকা। নিরাশ হলাম। তবুও ফিরে যেতে মন চাইল না। বহু উঁচুনিচু পথ অতিক্রম করে, এক পাহাড়ি নদী পেরিয়ে অবশেষে বসুধারার প্রান্তে পৌঁছলাম। জলপ্রপাতের শব্দ শুনতে পেলাম। কিন্তু কোথায় ঝর্ণা? শুধু কুজ্ঝটিকা দেখতে এতদূর এলাম?
ক্লান্তি আর হতাশা নিয়ে একটি পাথরের উপর কিছুক্ষণ বসার পর যখন ফিরব ভাবছি তখন এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটল। কোনও এক জাদুকাঠির স্পর্শে উন্মুক্ত হল বসুধারা- সে কী অপূর্ব অনুভূতি! এর আগে আমি অনেক ঝর্ণা দেখেছি, ছবি তুলেছি, কিন্তু এ অনুভূতি অতুলনীয়। জীবনে এই প্রথমবার বাঁধনহীন আনন্দ আমার সারা সত্তা তোলপাড় করে দিল- দু’হাত তুলে বসুধারার জলের উচ্ছ্বাসে হৃদয়ের দ্বার খুলে দিলাম।

অন্ধবিশ্বাসের দোহাই না-দিয়ে যাঁরা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের বাইরে সবকিছুকে অলীক ভাবেন না তাঁদের জানাই একটি অদ্ভুত ঘটনা। ছবি তোলা আমার বিশেষ শখ। এ সফরে ক্যামেরা নেই সঙ্গে। কিন্তু মুক্তির আনন্দে অভিভূত হয়ে বসুধারার অনুপম সৌন্দর্যকে আমি আমার ফোনের সাহায্যে দু’টি চলমান চিত্রে বন্দি করি। কিন্তু সে দু’টিই আশ্চর্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়েছে।
জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা ক্ষণস্থায়ী, তার স্থান স্মৃতির গভীরে- মনের মণিকোঠায়। কলমের কালিতে আর আলোকচিত্রের রূপে অতীতের সে মধুর স্মৃতির মন্থন হয়। কিন্তু চলচিত্রের বর্তমান বোধহয় বেমানান। হিমালয়ের কিছু অভিজ্ঞতা সত্যি অপার্থিব- যেমন বসুধারার অমৃতপ্রবাহে আমার মুক্তি।
বসুধারা থেকে ফেরার পর আমি দুই বিশেষ ফুলের দর্শন পেলাম। না, হিমালয়ের উপত্যকায় নয়। মানাগাঁয়ের একটি ছোট দোকানে। ব্রহ্মকমল আর নীলকমল। ছোটদাদুর কাছে ব্রহ্মকমলের কথা শুনেছি। হিমালয়ের উঁচু পাহাড়ে ফুটে থাকা ব্রহ্মকমল প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি। ব্রহ্মকমলের দর্শন অত্যন্ত বিরল- পাতলা সাদা পাপড়ির ভিতর থেকে উদ্ভাসিত এক উজ্জ্বল আভা- মনে হয় স্বর্গের নন্দনকাননে সদ্য ফোটা। স্থানীয় প্রবাদে হিমালয়ে ফোটা একটি ব্রহ্মকমল এক সহস্র অন্য ফুলের সমান। তাই দেবালয়ে ব্রহ্মকমলের গুরুত্ব অসীম।

নীলকমলের নাম রূপকথার গল্পে আছে, কিন্তু বাস্তবে তার অস্তিত্ত্ব অবিদিত ছিল। বদ্রীনাথ আর কেদারনাথের পবিত্র মন্দিরের মধ্যবর্তী নীলকান্ত পর্বতে লোকচক্ষুর অন্তরালে নীলকমল ফোটে। মানাগ্রামের স্থানীয় দোকানের লোকটি জানাল একবছরে কদাচিৎ একটি নীলকমলের দর্শন মেলে। এটি একটি বড়সড় পদ্মফুল, যার মধ্যে থেকে নীল আভা ঠিকরে বেরচ্ছে। সংগ্রহ করা ব্রহ্মকমলকে যেমন বিগ্রহের পায়ে অঞ্জলি দেওয়াই হিমালয়ের এক অনন্য প্রথা, তেমন নীলকমল ঘরে রেখে দেওয়া হয়।

শুকিয়ে গেলেও তা বায়ুশোধন ও রোগসংক্রমণের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। সন্ধ্যায় মানাগাঁও থেকে সংগৃহীত একটি ব্রহ্মকমল নিয়ে আমি বদ্রীবিশালের পায়ে অর্পণ করি। সন্ধ্যারতির শুভক্ষণে শতসহস্র ভক্তের মাঝে সেই ব্রহ্মকমল বিগ্রহের শোভাবর্ধন করছে দেখে শিহরিত হয়েছিলাম।
এবার আসি গোড়ার দিকে। আমার হিমালয় ভ্রমণের প্রধান গন্তব্য ছিলো বাবাজি মহারাজের গুহা। ভারতবর্ষের পুণ্যভূমিতে গুরু, বাবাজি, মহারাজের কমতি নেই। কিন্তু এই বাবাজি মহারাজ অদ্বিতীয়। তিনি কুমায়ুন ও গাড়োয়াল হিমালয়ে অনাদিকাল থেকে অবস্থিত হলেও, বহির্জগতের কাছে প্রকাশিত হন যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী ও তাঁর কুলশিষ্য পরমহংস যোগানন্দের “অটোবায়োগ্রাফি অফ এ যোগী” এই বইটির মাধ্যমে। কথিত আছে, এই বাবাজি মহারাজ অমর। হিমালয়ের মানুষের কাছে তিনি এক কালপুরুষ, যিনি বহু নামে পরিচিত। তিনি কুমায়ুন হিমালয়ের অতি দুর্গম জায়গা- কুকুচিনার জঙ্গলে একটি গুহায় লাহিড়ী মহাশয়কে ধ্যানমন্ত্রে দীক্ষিত করেন। এই কুকুচিনাই আমার প্রাথমিক গন্তব্য ছিল।
বাবাজি মাহারাজের কিংবদন্তী অনুসরণ করে আমি প্রথম যাই হেইড্যাখান-এ। গৌতমী গঙ্গাতীরে অতি মনোরম এই হেইড্যাখান। ট্রেনে কাঠগুদাম স্টেশনে নেমে, সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা যাত্রা করে হেইড্যাখানের আশ্রমে পৌঁছলাম। আশ্রমটিতে তখন মেরামতি চলছে। ফলে একটি অপেক্ষাকৃত আধুনিক যাত্রীনিবাসে স্থান পাওয়া গেল। গৌতমী গঙ্গার এপারে বড় মন্দির ও যাত্রীনিবাস আর অন্য পারে আদি মন্দির ও প্রাচীন গুহা। বাবাজি মহারাজ এই গুহাতেই নাকি দু’ দু’বার প্রকাশিত হন ঠিক একশো বছরের ব্যবধানে- প্রথম হন ১৮৭০-এ। তারপর ১৯৭০-এ। ২১ জুলাই হেইড্যাখান পৌঁছনোর পর থেকে ওই গুহায় প্রবেশ করার জন্য মন আনচান করছে।

গৌতমী গঙ্গা মূল গঙ্গার একটি শাখা। শোনা যায় মহাদেব নিজে গঙ্গাকে গৌতমী মুনির সাধনাক্ষেত্র হেইড্যাখানে এনেছিলেন। শ্রাবণে এই গৌতমী গঙ্গা খরস্রোতা, কখনো প্লাবিত হয়। গঙ্গার চড়ায় একটি বিশাল গাছ যার দু’পাশ দিয়ে নদী বয়ে চলেছে। একটি স্থানীয় লোক জানাল জোয়ারের স্রোতে কখনও কখনও নদীর জল গাছের মাথা ছুঁয়ে যায়, কিন্তু গাছের কোনও ক্ষতি হয় না। লোকমুখে প্রচারিত, এই অবিনাশী গাছটি রোপণ করেছিলেন স্বয়ং গৌরী। আদি মন্দির আর বাবাজির প্রাচীন গুহা যে পাহাড়ে, তারই চূড়ায় ছোট-কৈলাশ। শিব-পার্বতী কৈলাশে ঘর বাঁধার আগে এখানেই থাকতেন। লোককাহিনীতে ছোট-কৈলাশ শিব-মহিমায় জাগ্রত। ট্রেকিংয়ের রাস্তাটি যেমন ভয়ানক তেমনই সুন্দর।
পরের দিনের ভ্রমণপথ ঠিক। কিন্তু আশ্রম-কর্তৃপক্ষ জানালেন, যে একা সে পথে যেতে দেওয়া যাবে না। কারণ গত কয়েক বছরে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। সবচেয়ে ভয়ানক হল, এক সুইডিশ সাহেবের দুর্ঘটনা, যিনি ছোট-কৈলাশ আরোহণের পথে কিছুদিন আগেই পা পিছলে উপর থেকে পড়ে প্রাণ হারান। তাঁর দেহ গ্রামের মানুষেরা খুঁজে পায়। সেটি শনাক্ত করতে বেশ বেগ পেতে হয় কর্তৃপক্ষকে।
বেলায় গৌতমী গঙ্গা পেরিয়ে ওপারে আদি মন্দিরে যাবার চেষ্টা করতে বুঝতে পারলাম, কনকনে জল কোমরের বেশ উপরে। নীচে অত্যন্ত পিচ্ছিল নুড়ি-পাথর। পা হড়কালে পাহাড়ি নদীতে ভেসে যাবার নিশ্চিত সম্ভাবনা। আমার টলোমলো পদক্ষেপ দেখে মন্দিরের পূজারী ওপার থেকে কাছা বেঁধে জলে নেমে পড়লেন। আমাকে হাত ধরে নিয়ে গেলেন অপর পাড়ে। আমার বাবাজির সেই বিখ্যাত গুহায় প্রবেশের ইচ্ছে শুনে বললেন পরদিন আসতে। এই পড়ন্ত বেলায় যাওয়া ঠিক হবে না। তাঁর কাছে গুহার গল্পই ছিল সেদিনের আকর্ষণ।

এই গুহা অতি প্রাচীন, যেখান থেকে বাবাজি মহারাজ দুবার প্রকট হয়েছিলেন যুবারূপে- পেশিবহুল ছিপ্ছিপে চেহারা, বাদামি চুল, গভীর দৃষ্টি আর ললাটে চন্দনের তিলক। তাঁকে এই অঞ্চলের লোক আগে কোনওদিন দেখেনি। গুহার বাইরে একটি বড় চাতাল নির্মাণ করা হয়েছে যার বাইরে লোহার দরজা। বিকেলের আলো ম্লান হয়ে এসেছে। মন্দিরে আরতি শুরু হবে। দেবভূমি এই হিমালয়। এর আনাচে কানাচে কত মন্দির, কত কিংবদন্তী, সাধু-সন্ন্যাসীদের সমাগম। বস্তুগত জগতের সঙ্গে এর কোনও মিল নেই। কোনও নিরীশ্বরবাদী মানুষকেও এই হিমালয়ের বাতাবরণ উদাস করে দেবে আর সে মানুষ খুঁজে ফিরবে সৃষ্টিকর্তার প্রছন্ন অস্তিত্ব।
*ছবি সৌজন্য: Facebook, Amazon, Indiatravelogue, Wikipedia
সৌমেন চট্টোপাধ্যায় পেশাগতভাবে অর্থায়ন ও বিনিয়োগ বিভাগের সঙ্গে জড়িত। নেশা বেড়ানো ,পাহাড়ে চড়া ও ছবি তোলা। হিমালয়ের প্রতি আকর্ষণ আশৈশব। বর্তমানে কাজের সূত্রে শিকাগোয় বসবাস।