নবীনা এক কবি, বেবী সাউ, তাঁর কবিতায় লিখেছেন এমন দু’টি লাইন যা আমার বিস্ময় জাগাল। লাইনদু’টি এই রকম:
সহজ সরল ভেবে পাঠযোগ্য ভূমি
তুমিও দাঁড়াও এসে…
আমি অবাক হলাম এই নতুনত্ব দেখে যে, ভূমিকেও পাঠ করা যায়, এমন কথা ভেবেছেন এই কবি। কই, আমি তো কোথাও পড়িনি ‘পাঠযোগ্য ভূমি’ কথাটি! এই চিন্তা আমার মনেও কখনও জাগেনি। অথচ আমিও তো কবিতা লেখার চেষ্টা করে চলেছি অনেকবছর যাবৎ! এই লাইনদু’টির প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অন্য একটি কবিতায় পেয়ে গেলাম এর সমধর্মী কথা। কীরকম? ‘অনুবাদে ভরে ওঠে ফলনের কথা।’ অর্থাৎ আগে পেলাম এমন ভূমির কথা, যা পাঠযোগ্য আর ভূমিতেই তো ফসল জন্মায়। এখানে পেলাম এমন ফলনের কথা যা অনুবাদে ভরে ওঠে।
রাবণ যখন সীতাকে হরণ করে নিয়ে আকাশপথে উড়ে চলেছিলেন, তখন জানকী তাঁর স্বর্ণাভরণ একের পর এক মাটিতে নিক্ষেপ করছিলেন। কেননা, ওই স্বর্ণালঙ্কার পরে যদি তাঁর অনুসন্ধানরত স্বামীর চোখে পড়ে, তাহলে সেই স্বামী, রামচন্দ্র বুঝতে পারবেন সীতাকে কোন দিক দিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমিও সেই রকম তরুণ কবিদের লেখার দিকে তাকিয়ে থাকি এই অনুসন্ধিৎসা ও আশা নিয়ে যে, কখন ঘাসের ফাঁকে জ্বলজ্বল করে উঠবে স্বর্ণকণা এবং আমি তা কুড়িয়ে নিয়ে পাঠকদের উপহার দেব। এমনই একটি স্বর্ণখচিত কবিতা এবার পুরোপুরি তুলে ধরব, যে-কবিতা এই কবির প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে:
ফাগুনদিন
এতকিছু গোপনের কথা…
শুনেই খিলখিলিয়ে উঠল সব পাখিদের মেয়ে
পাহাড়ে আগুন শুনে
তারা আরও কাছে এসে বসে
জানাল খবর
সন্ধের আওয়াজ ভেঙে
চাঁদ জেগে ওঠে ঠিক গভীর জঙ্গলে…
পাখিদের মেয়ে? তারা কি একদঙ্গল? এমন মধুর এক কল্পনাবলয় মনে তৈরি হয় এই ‘পাখিদের মেয়ে’ শব্দটি পড়ে, যার তুলনা নেই। এ-কবিতা সম্পূর্ণ হয় যখন জঙ্গলে চাঁদ দেখা দিচ্ছে। কখন দেখা দিচ্ছে? যখন বাসায় ফেরা পাখিদের মেয়েরা তাদের গুঞ্জন, তাদের খিলখিল হাসি বন্ধ করেনি তখনও—তবু গভীর জঙ্গলের মাথায় আমরা চাঁদকে ঠিকই জেগে উঠতে দেখলাম।
আবার, এর চেয়ে একেবারে অন্যরকম কবিতাও লিখেছেন বেবী সাউ— যে-লেখার প্রথম লাইনেই আমরা এক আশ্চর্যকে পাই। পুরো লেখাটি তুলে দিচ্ছি এবার:
বনভোজন
আনন্দের জন্য কিছু হত্যা আবশ্যক
আর হত্যাচিহ্ন মুছে ফেলায় জরুরি
একটি নির্মোহ বন
স্বচ্ছ জলাশয়
কী ঘটেছিল সেই বনভোজনে? কবিতার নাম তো বনভোজন। কী ঘটেছিল? কোনও হঠাৎ-সম্পর্ক? কোনও শরীরী দেওয়া-নেওয়া? অন্তত চুম্বন? তারপর কী ঘটল, যার জন্য হত্যা আবশ্যক হয়ে দাঁড়াল? সেই সম্পর্ক কি স্থায়ী হল না? নাকি অন্য সম্পর্কের হত্যা জরুরি হয়ে উঠল? কিছুই বলছেন না কবি, শুধু সঙ্কেত ফেলে রাখছেন সেই জানকীর গহনার মতো, যা আমাদের আরও গভীরভাবে চিন্তায় ডুবিয়ে নেবে। আমরা মনে রাখব, ‘নির্মোহ’ শব্দটি কবিতায় রেখেছেন কবি। সেই শব্দ কী বলতে চায়? কী জানাতে চায় ‘স্বচ্ছ জলাশয়’ কথাটি?

এক রহস্যময় আবহাওয়া ঘিরে নেয় আমাদের। মনে রাখতে হবে, এই কবিতায় রাত্রি নেই। আছে দিন। কারণ বনভোজন তো দিনেই হয়। আর দিন যখন থাকে, তখনই থাকে সূর্যালোক। সেই সূর্যালোকে জলাশয়ের স্বচ্ছতা বোঝা যায়। লক্ষ করার মতো আরও একটি গুণ এ-কবিতায় আছে। কত অল্প শব্দে, সামান্য আয়োজনে কবি তৈরি করেছেন এই সঙ্কেতময় কবিতাটিকে। লেখাটি সম্পূর্ণ হয়েছে মাত্র চার লাইনে। তার মধ্যে দু’টি স্পেস-এর ব্যবহার আছে। এ-লেখায় উল্লম্ফন ক্রিয়ার প্রয়োগ করেছেন এই কবি। যে-ক্রিয়ার ব্যবহার এখন কবিতায় কমই দেখা যায়। দু’টি লাইনের মধ্যবর্তী দুই শূন্যস্থানও এখানে কথা বলে উঠেছে যেন। কবিতাটির প্রথম পাঠ শেষ হওয়ার পর পাঠকের মন আবারও কবিতাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। এক-এক পাঠকের মন এক-এক রকম গন্তব্যের দিকে যেতে চাইলে বলার কিছু নেই। কবিতাটি এতই স্বাধীন। আমি শুধু বলব, এমন সঙ্কেতধর্ম এই কবিতাটিতে জন্ম নিয়েছে, যা দুর্লভ।
বেবী সাউয়ের আর একটি কবিতা তুলে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না, যে-কবিতাও অতি অল্প শব্দ ব্যবহার করে লেখা:
চিনি না কখনো তাকে
ভালবাসা ভেবে ভেবে নিমগ্ন প্রাকারে
জাগায় আমাকে
বারংবার
মধুডাঙাতীরে
এখানে খানিক বসো। কথা আছে।
কয়েক মুহূর্ত স্থায়ী একটি সম্পর্কের কবিতা যেন। পাঠক, লক্ষ করুন, কবিতার নামটিকে। ‘চিনি না কখনো তাকে।’ অথচ যাকে চিনি না, তাকেই বলা হচ্ছে ‘এখানে খানিক বসো। কথা আছে।’ এক নিরুচ্চার প্রেমসঙ্কেত এ কবিতা ধরে রেখেছে। ‘মধুডাঙাতীরে’ এই আশ্চর্য শব্দপ্রয়োগ কবিতাটিকে মাধুর্যে ভরে দেয়।
এবার অন্য একটি কবিতা পাঠকের সামনে উপস্থিত করি:
পরিব্রাজিকা
তুমিও সহজমতো বিশ্বাস করেছ সবকিছু।
সত্য ভেবে এ-সংসার। ভাঙা চাল। ভাতের কাঁকর।
নীরবে না-পাওয়া নিয়ে আমিও জপেছি রাধানাম
ঝড় এলে উড়ে যায় চাল, শস্য, তাও বলি তিষ্ঠ ক্ষণকাল
যেভাবে বানের জলে ভাসে কৃষিকাজ
কৃষকের মন ভাবে প্লাবিত এ মাটি
অধিক ফলনসুখে
বর্ষশেষে ভেজা নারী
কোথা থেকে কোথায় বা যায়!
এই কবিতার শেষে একটি বিস্ময়চিহ্ন আছে। কবিতার নাম তো ‘পরিব্রাজিকা।’ এ-লেখাও এক ছদ্মবেশী প্রেমের কবিতা। কৃষকের মন যে প্লাবিত মাটির কথা ভাবছে, ভাবছে অধিক ফলনসুখের বিষয়ে— এই ‘ফলনসুখ’ এবং ‘প্লাবিত মাটি’-র মধ্যে শরীরমিলনের অনুষঙ্গ পাওয়া যায় না, তা নয়। তবু এ-কবিতার ভেতরে রয়েছে এমন এক নারীর কথা, যে একটিই সম্পর্কে বন্দি নয়, সে কোথা থেকে কোথায় যে যায়, যেন নিজেই জানে না!
সত্যিই তো, জীবনে কতভাবে অকস্মাৎ কোন সম্পর্ক কখন এসে পড়ে, জীবন কি তা জানে? তাই ‘পরিব্রাজিকা’ এই নামকরণটি আরও এক দিক দিয়ে সঙ্কেতময় হয়ে ওঠে। তবে, কবিতাটির শেষ দু’টি লাইন অবিস্মরণীয়। ‘বর্ষশেষে’ কথাটি এখানে বলা আছে। কবিতার প্রথমে আছে ভাঙা চাল, ভাতের কাঁকরভরা নিতান্ত সাধারণ এক সংসারের কথাও। সে-সংসার কি কৃষকের? নাকি ‘পরিব্রাজিকা’ এসে কিছুদিন এখানে সংসার-সংসার খেলা নিয়ে মগ্ন ছিল? এই নারী, যার নিজের জীবনের গতির উপর, নিজের কোনও হাত নেই যেন, সে এক পুরুষ থেকে কি অন্য পুরুষে পৌঁছয়? এমন বহু বিচিত্র প্রশ্নের সামনে এসে এ-কবিতা আমাদের কেবল ভাবতে বলে আরও। আরও বেশি অধিকার করে নেয়।
এই কবি, বেবী সাউ, অপর একটি কবিতায় বলেছেন এমন লাইন: ‘দিতে তো পারিনি কিছু। শুধু বলে গেছি থেকে যাও’—এই লাইনটির সঙ্গে ‘পরিব্রাজিকা’ কবিতাটি মিলিয়ে পড়লে এক তীব্র প্রেমার্তিপূর্ণ কবিমরমের পরিচয় আমাদের সামনে না-এসে পারে না।
এই যে-সব কবিতা আমি আজ পাঠকদের সামনে তুলে ধরলাম, এই সব লেখাই পাওয়া যাবে ‘প্রতিভাস’ প্রকাশিত বেবী সাউ-এর ‘হেমন্তের অন্নপূর্ণা’ নামক কাব্যগ্রন্থে। এই বইয়ে একটি স্মরণীয় লাইন আছে: ‘জোনাকরা ফিরছে। তুমি চিত্রশিল্প গোটাও এবার’— তাই আমিও এবার ‘হেমন্তের অন্নপূর্ণা’ নামক সার্থক কাব্যগ্রন্থটি থেকে মনকে অন্যদিকে ফেরাতে চাইব। যদিও এই বইয়ের দু’টি লাইন আমাকে কেবলই পিছুটানে ডেকে নিয়ে যাবে। সেই লাইনদু’টি হল: ‘কেবল ফিরেছে ঘর/এবার লক্ষ্মীটি, ঘরে ফের।’ অর্থাৎ ঘর ফিরে এসেছে, কিন্তু ঘরে যার ফেরার কথা সে মানুষটি আসতে দেরি করছে কেবলই। অপূর্ব এই ‘লক্ষ্মীটি’ শব্দের ব্যবহার। এই দু’টি লাইন কী এক মধুরতায় আমার মন পূর্ণ করে দেয়।

এবার চলে যাই আরও এক নবীন কবির দিকে। তিনি কী বলছেন? একজায়গায় তাঁর কবিতা বলছে,
পলাশ লিখছ তুমি
পলাশ লক্ষ করে একদিন হেঁটে গিয়েছিলে
নির্ণয়ের দিকে
যা-কিছু অনির্ণয়, তা পলাশ…
এই কবির আরও একটি কবিতায় দেখা যায় তিনি কী লিখছেন এবং তিনি কী লিখতে চান। আমরা পড়ে দেখি তাঁর এই কবিতার কয়েকটি লাইন।
চড়ুইপাখিটির জন্য ছড়া লিখেছি
বাতাসের জন্য লিখেছি কবিতা
সমুদ্রের জন্য একটি উপন্যাস শুরু করব ভাবছি…
সমুদ্রের জন্য একটি উপন্যাস লেখার কথা যিনি ভাবতে পারেন, তাঁর কাব্যের নতুনত্বও আমাদের অবাক করে। এই কবির নাম তনুশ্রী কার্তিক। তিনি যা যা লিখতে চান, সে সব বিষয়ের কথা ভাবলেই মন এক অপ্রত্যাশিতের কাছে পৌঁছে যেতে চায়। যেমন তাঁর কবিতায় পাই এইরকম লাইন:
ছাদে চাঁদ নিয়ে এলে তুমি
অন্ধকারে চাঁদ লিখে ফেলা আজ
একটি প্রবাদ।
এমন সব লাইন পড়লে এই কবি, তনুশ্রী কার্তিকের কবিত্বশক্তি নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ থাকে না। আবারও তাঁর আরও কয়েকটি আশ্চর্য লাইন বলি।
বালিশের পাশে
বই রেখে ঘুমিয়ে পড়া আমার অভ্যাস
বই সদগুরু।…
এতক্ষণ লেখার কথা শুনছিলাম আমরা তনুশ্রী কার্তিকের কবিতায়। এবার তিনি এসে পৌঁছলেন বইয়ে। বললেন: ‘বই সদগুরু।’ এমন উচ্চারণ, বই বিষয়ে, আমি তো অন্তত কোনও কবিতায় পড়িনি। আশ্চর্য ও মোহিত হলাম এমন সাধারণ কথাকে এই উচ্চতার অসাধারণত্বে পৌঁছতে দেখে। বই থেকে আবারও লেখার প্রসঙ্গে ফিরে আসে তনুশ্রী কার্তিকের কবিতা। যেখানে তিনি বলেন:
লিখে রাখবার মতো কিছু নেই
তবু লিখে রাখা এই ঘর, মন্দির
আমগাছ, পুকুরের কথা
বেগুনফুল, লঙ্কাফুল, নয়নতারার কথাও।
এইসব লিখলে
মা-ঠাকুমার কথা লেখা হয়ে যায়।
কী অসাধারণ এই কবিমনের অনুভবশক্তি! ঘর লেখা, মন্দির লেখা নাহয় মানলাম— তারপর এল বেগুনফুল, লঙ্কাফুল, নয়নতারার কথা। একটি গ্রামের ছবি ফুটে ওঠে। কবি কি আসলে ঘর, মন্দির, লঙ্কাফুল, বেগুনফুলের কথা লিখতে চান? না। তিনি এইসবের মধ্যে দিয়ে মা-ঠাকুমার কথাই লেখেন। মা-ঠাকুমা আছেন কি নেই, এই কবির সাম্প্রতিক জীবনে, তা আমরা জানি না— এটুকু জানি, যে এইসব ঘর-মন্দির-লঙ্কাফুল-বেগুনফুল-নয়নতারা আসলে কবির মা-ঠাকুমা হয়ে প্রতীয়মান হল।
কাদের কথা বলতে বলতে কাদের কথায় এসে দাঁড়ালেন এই কবি! অথচ কত সহজ সরল, কত একমুঠো এই বলাটুকু! এই নিরাভরণ সৌন্দর্য আমাকে বিমুগ্ধ করে। এই যে বেগুনফুল-লঙ্কাফুল-নয়নতারা, এরা পাঠকের মন থেকে সরে যেতে চায় না কিছুতেই, কেবল এই সহজ সামান্য উপায়ে কথা বলার ধরনটির জন্যই। তনুশ্রী কার্তিক আরও একটি কবিতায় লিখেছেন এই কথা:
ওগো বরবটিলতা,
তোমার যৌবনের পাশে রেখে দিই
আমার যুবতীবয়স। আর কিছু না পারি
এইভাবে ঘুরে ঘুরে যেন আসি
সবুজ প্রভায়।…
এই সবুজ প্রভায় বারবার এসে পৌঁছেছে তনুশ্রী কার্তিকের কবিতা। বরবটিলতার পাশে এই কবি সমর্পণ করতে চেয়েছেন তাঁর নিজের যুবতীবয়স। এ এক অসামান্য সৌম্দর্যময় কাব্যোক্তি। প্রেমের কবিতার বেদনাও তিনি প্রকাশ করেছেন লুকিয়ে, মাত্র দুই লাইনের একটি কবিতায়। কবিতাটি এই রকম:
এত যে কথা চারপাশে
শুধু একটি নক্ষত্র ছুঁয়েছি বলে!
মাত্র দু’টি লাইন। শেষ লাইনের পরে বিস্ময়চিহ্ন। দু’টি মাত্র লাইন সঙ্কেত করল একটি গোপন, হয়তো বা সামাজিকভাবে অবৈধ, একটি প্রণয়সম্পর্কের দিকে। এই কবি অত্যন্ত সহজভাবে কথা বলে চলেন তাঁর কবিতায়। আর সেই সহজতার ঢল পাঠককে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তনুশ্রী কার্তিক বারবার ফিরে এসেছেন তাঁর ‘সবুজ প্রভা’য়, একথা তো আগে বলেইছি, এবার তাঁর আরও কয়েকটি লাইন বলি, যাতে বোঝা যাবে কতখানি প্রাকৃতিক তাঁর কবিতা।
…ঘরে বাইরে কোথাও হাওয়া ছিল না এতটুকু
হাওয়ার পাশে রাত্রি ডেকে এনে
ফুটেছি ওই কাঠচাঁপার গাছে।
এখানে, আমাদের দেখতে হবে, একবার এই কবিই বরবটিলতার পাশে এনে রেখেছিলেন তাঁর যুবতীবয়স। আর এইবার যেন তিনি নিজেই কাঠচাঁপা হয়ে প্রস্ফূটিতা হলেন।
তনুশ্রী কার্তিকের দু’টি কবিতার বইয়ের উপর নির্ভর করে আমি আজ তাঁর লেখা সম্পর্কে কয়েকটি কথা বললাম। একটি বইয়ের নাম ‘পাতাগুলি তুলে ধরি এসো’, যার প্রকাশক ‘ভাষালিপি।’ এই প্রকাশনা সংস্থাটি অনেক অচেনা কিন্তু শক্তিমান কবির বই প্রকাশ করে থাকেন। তনুশ্রীর অন্য বইটি প্রকাশ করেছেন ‘স্রোত’ নামক এক লিটল ম্যাগাজ়িন, যাঁরা গত আঠেরো বছর ধরে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম থেকে এই পত্রিকা প্রকাশ করে আসছেন। এবার কয়েকটি দু’ ফর্মার কবিতা পুস্তিকা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। সেই ‘স্রোত’ প্রকাশনী থেকে তনুশ্রী কার্তিকের যে-বইটি বেরিয়েছে, সেই বইয়ের নাম ‘ফুটেছি ওই কাঠচাঁপার গাছে।’
একজন তরুণী বলছেন, ফুটেছি ওই কাঠচাঁপার গাছে— এ কথা ভাবলেই কেমন একটা আনন্দ হয়, তাই না? ভারী সুন্দর এই নামকরণ। তনুশ্রী কার্তিকের ‘পাতাগুলি তুলে ধরি এসো’– ৩২ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থ থেকে একটি লেখা তুলে দিয়ে আজকের মতো কথা বলা সাঙ্গ করব আমি।
পথে পথে ফিরি করি ভোর—
এ-বাজারে ক্রেতা নেই
কিনবে যে-কবি নিশ্চিত তার হাড় মাস গুণে ফেলা যাবে
এরকম অসম্ভবে বের হই একা ফেরিউলি
একখানি ভোর রেখে বেচে দেব সব
ভোরের শিউলি হব, শ্রীপদে রাখব গরুড়ের গোড়
যে-কবি কাঁঠালের চোর, সে-ই বোঝে, সে-ই খোঁজে
নিদ্রার তুমুল থেকে জেগে ওঠবার মতো ঘাসচাপা একখানি ভোর
*ছবি সৌজন্য: লেখক
জয় গোস্বামীর জন্ম ১৯৫৪ সালে, কলকাতায়। শৈশব কৈশোর কেটেছে রানাঘাটে। দেশ পত্রিকাতে চাকরি করেছেন বহু বছর। আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন দু'বার - ১৯৯০ সালে 'ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা?' কাব্যগ্রন্থের জন্য। ১৯৯৮ সালে 'যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল' কাব্যোপন্যাসের জন্য। ১৯৯৭ সালে পেয়েছেন বাংলা আকাদেমি পুরস্কার। দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন কবিতার সাহচর্যে। ২০১৫ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি.লিট পেয়েছেন।
অপূর্ব! অপূর্ব!