সুনীলদা বলতেন, ‘তুমি রোগের কথা কক্ষনও বলবে না।
বরং দ্যাখো, রোদ উঠেছে। ছেড়ে যাচ্ছে অনেক দূরের গাড়ি…’
দুর্বল যে-মানুষ, তাকে চোখের কোণে অসুখ দিয়ে চেনা।
সেই থেকে মন সামলে আছি। বর্ষায় হ্রদ, শীতকালে পাহাড়ি। 

একটা দুটো পাখি এসে সহজ কথা পড়িয়ে দিচ্ছে
জামাকাপড় শুকোচ্ছে না, এমন যেন কুয়াশা-সংসার
দেখতে দেখতে সকাল মিহি, দেখতে দেখতে এবারও শীত শেষ
ময়দানে কে তুলছে ছবি ঝাপসা হওয়া নামহীন ঘোড়ার। 

সুনীলদা বলতেন, ‘রোজ সকালবেলা নিয়ম করে বোসো
লেখা আসুক, না আসুক, সে-সম্ভাবনার কাছেই যেও রোজ’।
অসুখ আমায় রাখলে দূরে নিজেকে আর কীভাবে দিই দোষও
হাতের পাতা সমান্তরাল, সেই তো আমার রুলটানা কাগজ।

মৃত্যু যখন কাছ দিয়ে যায়, চাদর-বাতাস ঝাপটে লাগে মুখে,
দেখি আমার প্রতিবেশীর দরজা দেয়াল যন্ত্রণা-নিকনো,
একটা বছর সমস্ত দিন মুহূর্ত মন বলিনি বন্ধুকে
দুঃখ ভারী সঞ্চয় হয়, যখন তুমি কড়ির মতো গোনো। 

সুনীলদা বলতেন, ‘কারও যাবার রাস্তা আটকে দাঁড়াবে না।
যে যেতে চায়, সে যাক’। যেমন শীত চলেছে মুখটি তুলে, দূর…
এমন যে নিরাশ্রয়, সে বিনিময়ের ছাউনি দিয়ে কেনা
অতীত এখন ভোর পাচ্ছে, দূর থেকে সে বিস্মৃতিমেদুর। 

একজন দু’জন করে, তিনজন চারজন করেই যায়
যখন যেমন হাত ছাড়ানোর, যেভাবে ঠিক বছরও যাচ্ছে
পুকুড়পাড়ে কলসি রাখা, শিশির পড়ে আলপথে, কান্নায়…
তারিখ কিছু খুচরো করে সমগ্রকে নতুনে পাক সে। 

সুনীলদা বলতেন, ‘যখন কেউ নেই, ঠিক তখন তুমি আছ’।
হাতের মুঠোয় রোদের মতো, হাওয়ার মতো আবার ফিরে চাই
টাটকা কিছু সময়, তোমার হাসির মতো ঝলমলে ওই গাছও।
জীবন, তুমি যাবার দিনে একবারও কি দেবে না রোশনাই? 

Srijato

শ্রীজাত জাত-কবি। লেখা শুরু করেছিলেন নব্বইয়ের দশকের শেষাশেষি। ২০০৪-এ এসেই কাব্যগ্রন্থ 'উড়ন্ত সব জোকার'-এর জন্য আনন্দ পুরস্কার। গীতিকার হিসেবেও জনপ্রিয়তার শিখরে। পাওয়া হয়ে গিয়েছে ফিল্মফেয়ারও। ২০১৯-এর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে বই 'যে জ্যোৎস্না হরিণাতীত', গদ্যসংকলন 'যা কিছু আজ ব্যক্তিগত' এবং উপন্যাস 'যে কথা বলোনি আগে'। এ যাবৎ প্রকাশিত বাকি কাব্যগ্রন্থের তালিকা এপিকসদৃশ দীর্ঘ। ট্রোলিংয়ের তোয়াক্কা না-করেই ফেসবুকে নিয়মিত কবিতা লিখে পাঠকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে পছন্দ করেন টেক স্যাভি কবি।

2 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *