করোনাকালীন লকডাউনের কল্যাণে, সে আধাই হোক কি পুরোই হোক, সেই মার্চ মাস থেকে প্রায় টানা চারমাস গৃহবন্দী। আজ মা মেয়ে অনেকখানি হাঁটলাম। হাঁটা শুরুর আগে মাস্ক পরে নিয়েছিলাম দু’জনেই। গড়িয়াহাট মোড় থেকে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির দিকে হাঁটছিলাম আমরা। ডানহাতে প্রাপ্তি। 

ওখান থেকেই তোর হলুদ পার্টিওয়্যারটা কিনেছিলাম, মনে আছে?
ইস মা, কি মন খারাপ লাগছে দেখে! সব তো বন্ধ এখন।
মান্যবর পেরোতেই,
— আচ্ছা মা, আমরা কি সেই কচু চিংড়ির রেস্টুরেন্টটা ফেলে এলাম নাকি?
— আরে হ্যাঁ, কস্তুরী, সে তো হিন্দুস্থান রোডে! অনেক আগে ছাড়িয়ে এসেছি। যাবি নাকি? সামনে আরেকটা আছে। পাশ দিয়ে গেলে গন্ধ পাওয়া যাবে বলছিস?
হাঁটতে হাঁটতে প্যান্টালুন পেরিয়ে আইটিআই-এর  উল্টোদিকে মিউরালে সামনে।
ওকি মা, তুমি মিউরালটা খেয়াল করনি এতদিন? ওটাই তো ল্যান্ডমার্ক রকু- বাড়িতে যাবার। 

নাহ, আইটিআই-এর পাশের গলিতে ঢুকতে দিচ্ছে না এখন। ওটা বন্ধ। অতঃপর সোজা হন্টন মেন রোড ধরেই। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের মুখে ধাবা, আর রাস্তা পেরোলেই একটু ঢুকে বলরাম মল্লিকের বেকড রসগোল্লা!
উফ্ মা, এবার কিন্তু টর্চার হয়ে যাচ্ছে শুধু হোর্ডিং দেখে দেখে।
চল চল, হবে ওসব। ভ্যাকসিন আসুক, আবার দল বেঁধে খেতে যাওয়া টাওয়া তখন।
বাঁ হাতে বিড়লা সভাঘর ছাড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে এবার গুরুসদয় মোড়। রাস্তায় গাড়িঘোড়া প্রায় নেই বললেই চলে, হয়তো সময়টার জন্য।
চল নন্দনে যাই, দেখে আসি কেমন আছে!
— মা, মনে আছে, আমরা নন্দনেঅপুর পাঁচালী’ দেখেছিলাম দিদানকে নিয়ে?”

রবীন্দ্রসদন, নন্দনের চত্বর আমার খুব প্রিয় জায়গা। ছোট ছোট জটলায় আড্ডা, লিটল ম্যাগাজিন, চা কফির ঠেক, বাটিগরম ভাজা…। ওদিকে বাংলা পরিষদ, আর এদিক দিয়ে বেরিয়ে শর্টকাটে অ্যাকাডেমি। আজ সেসব কিছুই নেই, দু’দিকের গেট বন্ধ। অ্যাকাডেমি সামনে শুধু পুরনো নাটকের হোর্ডিং ঝুলছে, মোহরকুঞ্জ ফাঁকা জমি, আর দূরে ভিক্টোরিয়ার পরি একলা ডানা ঝাপটাচ্ছে। মনখারাপ করা চারপাশ, জায়গাগুলোকে উপভোগ করার উপায় নেই তাদের স্বমহিমায়, তবু দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো হাঁটার নেশায় পেয়েছে আমাদের। হাঁটতে হাঁটতে খেয়ালই হয়নি দু’জনের, কখন পার্কস্ট্রিট চলে এসেছি। পিটার ক্যাটে সামনে আজ কোনও লাইন নেই, গতবার দেড় ঘন্টা ওয়েটিয়ে পরে টেবিল পেয়েছিলাম। 

অক্সফোর্ড বইয়ে দোকানটা যেন কোথায় মা? সেই লিট্ ফেস্টে এসেছিলাম নন্দনা মাসির প্যানেল শুনতে, উল্টোদিকে না?
না, না, একটু ডায়াগনালি সামনে যেতে হবে।
আচ্ছা দাঁড়াও, তাহলে কার্সারটা ঘোরাই।
— ধুরবাঁদিকে ঘোরালেই তো ট্রিংকাতে হিট করছে!
উফ মাগুগল ম্যাপে অ্যাঙ্গেল করে কার্সার ঘোরানো যায় না! আমার সঙ্গে কয়েকদিন হাঁটো ধৈর্য ধরে, ঠিক শিখে যাবে। 

আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের বায়োস্ট্যাটিসটিক্স-এর অধ্যাপক ড: মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়ের গবেষণার বিষয়বস্তু ক্যান্সার ডেটা মডেলিং। জন্ম এবং লেখাপড়া কলকাতায়। কর্মসূত্রে বিশ্বনাগরিক। লেখালেখির শুরু কলেজজীবন থেকেই। কবিতার পাশাপাশি ছোটগল্প, মুক্তগদ্য এবং প্রবন্ধ লেখেন। বাতায়ন, পরবাস, বাংলালাইভ, সুইনহো স্ট্রিট, কেয়াপাতা, গল্পপাঠ, সাহিত্য কাফে, TechTouchটক, Antonym ইত্যাদি বহু পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: একলাঘর (যাপনচিত্র প্রকাশনী)।

6 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *