বিষ্ণুপুর ঘরানার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেতারবাদক, পদ্মশ্রী পণ্ডিত মণিলাল নাগ আজ ৮১ বছর পূর্ণ করলেন। তাঁর জন্মতিথি উপলক্ষ্যে বাংলালাইভের হয়ে কলম ধরলেন সুযোগ্যা কন্যা, সেতারবাদক মিতা নাগ।  শ্রী মণিলাল নাগের দীর্ঘ সঙ্গীত যাত্রার কিছু স্মরণীয় মুহূর্তের কথা পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে পেরে  আমরা মিতা নাগের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা পণ্ডিত মণিলাল নাগের দীর্ঘায়ু কামনা করি। 

বাঁকুড়া টাউনের ছোট কালীতলা মোড়ের বাড়িতে, এক বর্ষণমুখর দিনে বাবার জন্ম। সেটা ১৯৩৯ সালের ১৬ই অগস্ট। ওই বাড়িটা আমার বাবার দাদুর তৈরি। আমার দাদু শ্রী গোকুল নাগের গুরু ছিলেন আচার্য রামপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি বিষ্ণুপুর ঘরানার এক প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ও শিক্ষক। রবীন্দ্রনাথে ঠাকুরের স্বরলিপিকার সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন এই রামপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক ভাই। রামপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানের সংকলন ‘সঙ্গীত মঞ্জরী’ নামে রাজ্য সঙ্গীত একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়।

বিষ্ণুপুর ঘরানা অনেকটা উন্মুক্ত। অনেক ঘরানার বাজনার ধরনের সংমিশ্রণে এই ঘরানা তৈরি হয়। সেটাই এই ঘরানার একটা বৈশিষ্ট। বিষ্ণুপুরে ব্রজভাষা দিয়েও গান রচনা করা হয়েছিল এবং অনেক বাংলা খেয়াল হয়েছিল। জ্ঞানেন্দ্র গোস্বামী, রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় যে বাংলা খেয়ালের সূচনা করেন তার শুরু বিষ্ণুপুর ঘরানায়। বিষ্ণুপুরের অনেক গান ভেঙে রবীন্দ্রনাথ গান বেঁধেছিলেন।

অল ইন্ডিয়া রেডিওতে বাবা প্রথম অডিশন দেন পনের বছর বয়সে। অডিশনের সময় গারস্টিন প্লেসে উস্তাদ কেরামতুল্লা খাঁ বাবার সঙ্গে সঙ্গত করেছিলেন আর অডিশন নিয়েছিলেন তখনকার বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী উস্তাদ গোলাম মোস্তাফা খান সাহেব। শোনা যায় বাবাকে প্রথম অডিশনেই এ গ্রেড দেওয়া হয়েছিল কিন্তু পরে সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী বলেন বড্ড ছেলেমানুষ, এখনই এ গ্রেড পেলে ও বেশি অহঙ্কারী হয়ে যাবে, ওকে বি হাই-তে রাখ।

আমাদের বাড়িতে সঙ্গীত শিক্ষা এবং চর্চার একটা পরিবেশ থাকলেও, দাদুই প্রথম সঙ্গীতকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। রামপ্রসন্নবাবুর কাছে দাদু সেতার, তবলা, পাখোয়াজ, সুরবাহার, জলতরঙ্গ, এসরাজ এবং আরও নানা বাদ্যযন্ত্র শিখেছিলেন। পরবর্তিকালে দাদু উত্তরপাড়ার জমিদার বংশের পারিবারিক সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। উত্তরপাড়ায় এখন যে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চার পরিবেশ আমরা দেখতে পাই, তার অনেকটাই তৈরি হয়েছে আমার দাদুর হাত ধরে। শচীন দেব বর্মণ, রবীন চট্টোপাধ্যায়, কাননবালা, আঙ্গুরবালা, নৃত্যগুরু উদয়শঙ্কর এঁদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল উত্তরপাড়ার ওই বাড়িতে। সে সময় বছর তিনেক দাদু উদয়শঙ্করের অর্কেস্ট্রা পরিচালনা করেছেন এবং ওঁদের দুজনের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। শচীনদেব বর্মণের বিয়েও ওই বাড়ি থেকেই হয়। আমরা বরাবর দাদুকে দেখেছি সঙ্গীতের মধ্যেই ডুবে থাকতে। এবং ওঁর একটা অদ্ভুত অভ্যেস ছিল, সারাক্ষণ মৌমাছির গুঞ্জনের মতো একটা নাদের কাজ করে যেতেন।

জন্মদিনে বাবা

বাবা স্কুল ফাইনাল পাশ করে বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হন এবং ইতিহাস নিয়ে স্নাতক হন। তারপরে একাডেমি অফ মিউজিক ডান্স অ্যান্ড ড্রামা (যা এখন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত) থেকে মিউজিকে একটা ডিপ্লোমা করেন। দাদু বাবাকে পড়াশোনার দিকে কোনওদিনই বেশি জোর দেননি। তিনি নাকি বাবার স্কুলের হেডমাস্টারকে বলে রেখেছিলেন, ছেলে গানবাজনাকেই পেশা হিসেবে নেবে এবং মাঝেমাঝে স্কুল কামাই করবে। সুতরাং পড়াশোনার ব্যাপারে যেন ওকে বেশি চাপ না দেওয়া হয়।

অল ইন্ডিয়া রেডিওতে বাবা প্রথম অডিশন দেন পনের বছর বয়সে। অডিশনের সময় গারস্টিন প্লেসে উস্তাদ কেরামতুল্লা খাঁ বাবার সঙ্গে সঙ্গত করেছিলেন আর অডিশন নিয়েছিলেন তখনকার বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী উস্তাদ গোলাম মোস্তাফা খান সাহেব। শোনা যায় বাবাকে প্রথম অডিশনেই এ গ্রেড দেওয়া হয়েছিল কিন্তু পরে সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী বলেন বড্ড ছেলেমানুষ, এখনই এ গ্রেড পেলে ও বেশি অহঙ্কারী হয়ে যাবে, ওকে বি হাই-তে রাখ। তবে তার কিছুদিন পরেই আবার বাবাকে এ গ্রেড দিয়ে দিয়েছিলেন। বাবার প্রথম অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সও ওই পনের বছরে। তখন বাবার সঙ্গে সঙ্গত করেছিলেন পণ্ডিত আনোখেলাল মিশ্র। সেই অনুষ্ঠানের পর থেকে বাবাকে আর থেমে থাকতে হয়নি।

বাঁকুড়ার সেই বাড়ি যেখানে বাবা জন্মেছিলেন

নিখিল জেঠু কিংবা পণ্ডিত রবিশঙ্কর যখন নিজেদের কর্মজীবনের দোরগোড়ায়, ততদিনে বাবা পেশাদার শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছেন। আমার কাছে কোনও স্ট্যাটিসটিকস নেই, কিন্তু এ কথা আমি হলফ করে বলতে পারি যে বাবা ভারতবর্ষে যত অনুষ্ঠান করেছেন, তত আর কোনও সেতারী করেননি। এর একটা বড় কারণ, পণ্ডিতজি কিংবা নিখিল জেঠুদের সাম্মানিকের পরিমাণ বেশি ছিল এবং ওঁরা তা নিয়ে কোনওরকম কম্প্রোমাইজ করতেন না। কিন্তু বাবার তখন খুব টাকার দরকার। যে যা দিয়েছে তাতেই বাবা রাজি হয়ে গেছেন। গ্রামে গঞ্জে মফস্বলে এবং ভারতের নানা শহরে বাবা অজস্র অনুষ্ঠান করেছেন।

বাবা যে এত অনুষ্ঠানে ডাক পেতেন এর খানিকটা কৃতিত্ব শম্ভু জেঠুরও প্রাপ্য। শম্ভু জেঠু মানে শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন উত্তরপাড়া জমিদারবংশেরই সদস্য এবং দাদুর পরে বাবার অভিভাবক। তিনিই বাবাকে সঙ্গে করে সমস্ত অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন। শম্ভু জেঠুদের পারিবারিক সূত্রে বেনারসে বেশ কিছু বিষয় সম্পত্তি ছিল এবং সেই সুবাদে সেখানকার সঙ্গীতমহলে বেশ যাতায়াতও ছিল। পণ্ডিত বিরজু মহারাজের বাবা, রাজন সাজনজির বাবা, এঁদের সঙ্গে শম্ভু জেঠুর তুইতোকারির সম্পর্ক ছিল। তিনি বাবার সঙ্গে পণ্ডিত কিষণ মহারাজের আলাপ করিয়ে দেন। কিষণ মহারাজজি বাবাকে নিজের ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। বেনারস তখন সঙ্গীতের একটা তীর্থক্ষেত্র। বিশেষত শম্ভু মহারাজ, কিষণ মহারাজ এবং গুদাই মহারাজ – এঁদের সঙ্গে বাবার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে।

অল ইন্ডিয়া রেডিওতে বাবা প্রথম অডিশন দেন পনের বছর বয়সে। অডিশনের সময় গারস্টিন প্লেসে উস্তাদ কেরামতুল্লা খাঁ বাবার সঙ্গে সঙ্গত করেছিলেন আর অডিশন নিয়েছিলেন তখনকার বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী উস্তাদ গোলাম মোস্তাফা খান সাহেব। শোনা যায় বাবাকে প্রথম অডিশনেই এ গ্রেড দেওয়া হয়েছিল কিন্তু পরে সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী বলেন বড্ড ছেলেমানুষ, এখনই এ গ্রেড পেলে ও বেশি অহঙ্কারী হয়ে যাবে, ওকে বি হাই-তে রাখ।

বেনারস ঘরানার তবলিয়াদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে বাবার বাজনায় উপজ অঙ্গ এবং নাচের প্রভাব দেখা যায় যা তাঁর বাজনাকে অনেকের থেকে স্বতন্ত্র করে। এই একই ছন্দকারী পণ্ডিত রবিশঙ্করজির বাজনাতেও দেখা যায় কারণ তিনিও বেনারস ঘরানার দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। ছোটবেলায় দেখতাম কিষণ মহারাজজির ফোন এলেই বাবা বলতেন “নমস্তে মহারাজজি আজ্ঞা কিজিয়ে” আর পণ্ডিতজিও বলে দিতেন অমুক জায়গায় তোমাকে বাজাতে হবে। উত্তরভারতের এমন শহর নেই যেখানে বাবা বাজাননি। পাটনা, লখনৌ, দিল্লি, পঞ্জাব, চন্ডিগড়, কোথায় যাননি!

পন্ডিত খিষন মহারাজের সঙ্গে মঞ্চে বাবার সঙ্গে আমি

কলকাতায় প্রায় সমস্ত তবলিয়া কখনও না কখনও বাবার সঙ্গে বাজিয়েছেন। পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, পণ্ডিত কুমার বোস, পণ্ডিত সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় (যিনি দূরদর্শনে বাজাতেন), আমাদের বাড়িতে ওঠাবসা করতেন। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এক সময় বাবার সঙ্গে নিয়মিত রেওয়াজ করেছেন। পরে নিখিল জেঠুর সঙ্গে বাজাতে শুরু করায় ওঁকে প্রচুর বিদেশভ্রমণ করতে হত। আর একজন যাঁর নাম এঁদের সঙ্গে করতেই হবে, তিনি হচ্ছেন পণ্ডিত শঙ্কর ঘোষ অর্থাৎ বিক্রম ঘোষের বাবা। যেদিন বাজাতে বাজাতে শঙ্কর কাকুর দেরি হয়ে যেত, ঠাকুমা একেবারে ভাত খাইয়ে ছাড়তেন। বিশ্বনাথ বসু, রামকুমার চট্টোপাধ্যায়, হরিহর শুক্লা, শ্যাম গঙ্গোপাধ্যায়, এঁদের সকলের সঙ্গেই বাবার সুসম্পর্ক ছিল। তখনকার কলকাতার সাঙ্গীতিক পরিবেশটাই একেবারে আলাদা ছিল। সঙ্গীতের সব দিকপাল শিল্পীরা একে অপরের সঙ্গে এমন গভীর শ্রদ্ধার সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন, আজকের দিনে তার গুরুত্ব কিংবা মাধুর্য বোঝা কঠিন।

Manilal Nag, Gokul Nag, Mita Nag, Hirendranath Ganguly
আমাদের পরিবারের তিন প্রজন্ম ও শ্রদ্ধেয় হীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়

বাবা শ্রোতাদের ভালোবাসাও যেমন পেয়েছেন, তেমনই অজস্র পুরস্কারেও সম্মানিত হয়েছেন। সবচেয়ে বড় সম্মান পেয়েছেন এই বছর যখন পদ্মশ্রী পেলেন। এছাড়াও বঙ্গবিভূষণ, সঙ্গীত নাটক একাডেমি পুরস্কার এবং আরও অসংখ্য় ছোটবড় পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু বাবা এসবের ব্যাপারে অত্যন্ত উদাসীন একজন সহজ সরল মানুষ, যিনি সারাজীবনে একটা গাড়ি পর্যন্ত কেনার প্রয়োজন বোধ করেননি। দিনের পর দিন বাসে চেপে বাগবাজার থেকে বালিগঞ্জ ছাত্রদের শেখাতে গেছেন। পরে মেট্রো চালু হবার পর মেট্রো করে যাতায়াত করেছেন। এই সাদামাটা জীবনেই বাবা অভ্যস্ত, এবং আমাদের মধ্যেও বাবা সেই শিক্ষাই চারিয়ে দিতে পেরেছেন। আশির দশক অবধি অন্য রাজ্যে অনুষ্ঠানে যেতে হলে বাবা ট্রেনেই যেতেন। পরে খানিকটা সময় বাঁচানোর তাগিদে ফ্লাইটে চাপতে শুরু করেন। বাবার এই সহজ চরিত্রের জন্যই বাবা  কলকাতার সঙ্গীত মহলে পণ্ডিতজি নয়, মণিকাকা বা মণিদা হিসেবেই পরিচিত।

এখন বাবা নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছেন। পরিবার ও শিষ্যদের সঙ্গেই সময় কাটান। বেশ কয়েক বছর হল শেখানো ছেড়ে দিয়েছেন। বাবার সমসাময়িক শিল্পীরা সব একে একে প্রকৃতির নিয়মে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন। নিখিল জেঠু, পন্ডিত ভি জি যোগ, পন্ডিত রবিশঙ্কর এঁদের মৃত্যু বাবাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। আজ অবধি আমি বাবাকে একদিনই কাঁদতে দেখেছি। নিখিল জেঠুর মৃত্যুর দিন।

আমার গর্ব হয়, বাবা শুধু নিজের বাজনা নয়, নিজের জীবনবোধও আমাদের মধ্যে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। ওঁর এই আপাত সাদামাটা গভীর যাপনকে পাথেয় করে নিজের মতো করে নিজের বাজনা বাজিয়ে শ্রোতাদের আনন্দ দিতে পারব, এমন আশা নিয়েই এগিয়ে চলেছি।

মিতা নাগ বিষ্ণুপুর ঘরানার সেতারবাদক। তিনি পদ্মশ্রী শ্রী মণিলাল নাগের সুযোগ্য উত্তরাধিকার এবং পেশায় শিক্ষিকা। দেশে বিদেশে অসংখ্য অনুষ্ঠানে মিতা বাবার সঙ্গে এবং একক সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। নতুন প্রজন্মের সেতারীদের মধ্যে তাঁর বাজনা সমাদৃত।

10 Responses

  1. শ্রদ্ধেয় পন্ডিত মণিলাল নাগ জি -র সেতারবাদন সামনে বসে শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আজ তাঁকে নিয়ে লেখা এই প্রতিবেদনটি পড়ে খুবই সমৃদ্ধ হলাম।
    বিষ্ণুপুর ঘরানায় আমার ছোটমাসি এবং এক মাসতুতো বোন গান শিখেছে। বাঁকুড়ার পাঠকপাড়ায় আমার মামাবাড়ি হওয়ায় মা, মাসি ও মামারা শ্রদ্ধেয় গোকুল নাগের বাড়ির কথা বলতেন, কিশোরবেলা থেকেই শুনেছি। হয়তো দেখেওছি ছবিতে দেখানো বরেণ্য সঙ্গীতসাধকের জন্মভিটেটি।
    একটু স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়লাম।
    পন্ডিতজিকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই। আপনাকেও জানাই সশ্রদ্ধ অভিবাদন💐👏

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *