গুটি গুটি করে কেমন বড় হয়ে গেছে কলকাতাটা;
টালিগঞ্জের কিনারে, যেখানে শেয়াল ছুটে বেড়াতো
এখন পাতাল রেল, উড়াল পুল, আর রাস্তার জঙ্গলে
ছুটে বেড়াচ্ছে মিনি, ট্যাক্সি আর অটো।

শিকড়হীন মধ্যবিত্তের কয়েক কাঠা জমি থেকে হয়েছে ঘর,
ঘর থেকে তলা, তলা থেকে পরিবার, পরিবার থেকে পাড়া;
পাড়া পাড়া জুড়ে খাল ধারে হয়ে উঠেছে
নেতাজিনগর, শান্তিনগর, রানীকুঠি,
বাঁশদ্রোণী, বিধানপল্লী, সোনারপুর, সন্তোষপুর।

স্রোত নেই খালের জলে, অল আউট জ্বেলে মশার সঙ্গে ঘর করা;
জলের পাশে বিকিকিনি, চা-বিস্কুট, দর্জি, ইস্ত্রি, মুদি, সবজি-আনাজ,
মাঝে মাঝে দিশি ডিম বা মুরগি।
বারের-পুজো থেকে খ্রিস্টমাস দেবতাদের গমনে ও আগমনে
সহিষ্ণু মানুষ আর অসহিষ্ণু অটো, রিক্সা, সাইকেলেরা
পাশে সরে গিয়ে ছেড়ে দেয় রাস্তা।

উদ্বাস্তু, বিগত পিতা-মাতা, আর প্রবাসী সন্তানদের অভাবে
গোটা পড়াটাই থেমে গেছে মধ্য-প্রজন্মের প্রৌঢ়ত্ত্বে ।
রাস্তার সহস্র গর্তের মতো ঘরে ঘরে ক্ষত রেখে
পাড়া ছেড়ে উড়ে গেছে সন্তানেরা,
গুরগাঁও, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ,
ভেলোর, দুবাই, আমেরিকা।

ইলেক্ট্রিক, নর্দমা, না জলের ? খেয়াল নেই এ গর্ত কিসের;
ঠিকাদার আসে যায়, পাম্প লাগায়,
মাথার উপর দিয়ে প্লেন উড়ে যায়,
আর বড় হয় গর্তরা।
সহিষ্ণু মধ্য-প্রজন্ম বেপাড়ার ঘুরপথে
যায় বাজারে, যায় হাসপাতালে, যায় ওষুধের দোকানে,
নতমুখে দাঁড়ায় অটোর লাইনে।
বড় হতে থাকে আশেপাশের গর্তগুলি,
আর বর্ষার বেনো জলে ভরে যায় অলি গলি

১৯৮৫ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস। গত পাঁচিশ বছর আছেন ডেট্রয়ট শহরে। পেশায় মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রফেসর। জন্ম ও ছোটবেলা কেটেছে কদমতলা, হাওড়ায়। পড়াশোনা খড়্গপুর আই. আই. টি. ও আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। নেশার মধ্যে ছবি তোলা ও ছবি আঁকা, লেখা লেখি, ঘুরে বেড়ানো, নাটক ও পলিটিক্স। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে রাজনৈতিক পরিবর্তন আনার কাজে বিশেষ ভাবে জড়িত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *