যেদিন প্রথম এই লকডাউন শুরু হল, আস্তে আস্তে কাজে ডুবতে থাকলাম…। প্রচলিত জীবন থেকে যে অনির্দিষ্ট কাল সরে থাকতে হবে সেটা মানিয়ে নিতে, বুঝতে পারিনি। কিছুদিন পর কাজের মধ্যেই হঠাৎ ছেলে মনে করাল, “আগে কত রান্না একসঙ্গে করতাম দু’জনে…মনে পড়ে?”

মনে পড়ে গেল। আর হঠাৎই মনে হল, দিনগুলো হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে হুশহাশ। বাঁচা হচ্ছে কই? সামনের দিনগুলো আরও অনির্দিষ্ট, অনিশ্চত। তাই ঘরে বসেই নিজের মতো কিছুটা সময় কিছু না কিছু করে কাটানো যাক… ছোট্ট করে ঘুরে ফেলা যাক পৃথিবী! 

পৃথিবীভ্রমণে আজ চলেছি ইউক্রেইন। জানিনা দেশটা কেমন। রাদুগা প্রকাশনীর বইগুলোতে কী সুন্দর সুন্দর বরফ ঢাকা ছবি থাকত… দেখতাম মুগ্ধ হয়ে। ওরা কী করে কী পড়ে কী খায় জানতে ইচ্ছে হত। এখন গুগল থাকার সুবাদে অনেকটাই কাছের মনে হয়। কোনওদিন যেতে পারব কিনা জানি না, অন্তত ওদেশের রান্না ছাদের বাগানের হার্বস দিয়ে বানিয়ে খাওয়া যাক! সেই যে মোকাম্বোতে খেয়েছিলাম, ভুলতে পারিনি…

chicken a la kiev
আস্ত অবস্থায় দেখতে লাগে এমনটিই। সঙ্গে একটু মাখনে সঁতে করে নেওয়া সবজি। ছবি – লেখক


কী কী করলাম

********************


ছোট্ট শহর, সব লোকজন কাছের। বলতেই বাড়িতে দিয়ে গেলো চিকেন ব্রেস্ট। বোনলেস। একটা ছুরি দিয়ে চিরে নিলাম। ওই খানিকটা খোলা বইয়ের পাতার মতো। তারপর নুন-মরিচ মাখিয়ে একটা পুঁচকে হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে নিলাম। দিয়ে সোজা ফ্রিজে। 

এবারে স্টাফিং। এক ছুটে মায়ের ছাদের বাগানে। বর্ষার বৃষ্টি পড়া কচি সবুজ অরিগ্যানো আর বেসিলের পাতা তুলে আনতে গিয়ে চোখ গেল হলুদ মৌরিফুলগুলোয়… হাতের মুঠিতে একটু মৌরী ফুল…

মাখন দিয়ে মিহি কুচো রসুন আর হার্বস মাখিয়ে সেও গেলো ফ্রিজে। ঘণ্টা দুই পর কাজ সেরে, চিকেন ব্রেস্ট বের করে ওই ঠান্ডা মাখন ভিতরে লম্বা করে দিয়ে রোল করে আবার ফ্রিজে। ততক্ষণে ব্রেড ক্রাম্ব, ময়দা আর ডিম ফেটিয়ে রেডি। এক একটা রোলে ময়দা, ডিম আর ব্রেড ক্রাম্ব মাখিয়ে, তেল গরম করে আঁচ কমিয়ে ভাজা।

সার্ভ করার প্লেটটায়  মিষ্টি মতন হলুদ মৌরিফুল আর কিছু সেদ্ধ সবজি, মাখন দেওয়া…

Chicken A la Kiev
রোল ভাঙতেই গলগলিয়ে বেরিয়ে আসা সোনালি হলদে মাখন আর টাটকা হার্বের গন্ধ। তৈরি চিকেন আ লা কিয়েভ। ছবি – লেখক

**************************************

মাংস কাটার একটা ছুরি কিনতে হবে ভালো। আর মিহি করে হার্বস কাটা শিখতেও হবে। যা হোক, কাটার পর গলে পড়া মাখন আর অরিগ্যানো থাইম এর সঙ্গে হালকা রসুনের গন্ধটা সব খুঁত ঢেকে দিল। সঙ্গে ওই টাটকা মৌরিফুল আর তার গন্ধ…

Shruti Gangopadhyay Author

শ্রুতি অনেকদিন ধরে চক ডাস্টার নিয়ে স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডে ফিজিক্স লিখতেই স্বচ্ছন্দ। সামান্য ও এত ক্ষুদ্র মানুষ, যে জীবনেও কখন হাইজে়নবার্গস আনসার্টেনটি প্রিন্সিপল কাজে লেগে গেছে অজান্তে। বর্ধমানে থাকার অবস্থানটি এতটাই সুনিশ্চিত, যে পিএইচডি উত্তর, উচ্চশিক্ষার মোমেন্টাম সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলা শেষ হলেও বাকি থাকে নিশ্চিন্তে আকাশ নদী পাখি আর প্রজাপতির গল্প শোনা।

2 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *