সকালে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়েছেন, দুপুরের খাবার সময় দেড়টায়। কিন্তু ঠিক বারোটা সাড়ে বারোটা নাগাদ পেটটা কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে না? অথচ একথালা ভাতমাছের খিদে এ নয়। বরং একটু চিপস্ কিম্বা হাল্কা করে বাদাম কারিপাতা দিয়ে ভাজা চিঁড়ে অথবা গুড় দিয়ে পাক করা এক টুকরো ছোলার চাকের জন্য এই সময় মনটা কেমন আকুলি বিকুলি করে ওঠে না? ওঠে, কিন্তু মনকে আপনি কঠোর অনুশাসনে মানুষ করেছেন। আপনি বেশ ভালো করেই জানেন, তার এই কিছুমিছু-ইচ্ছার আব্দারে আস্কারা দিলে ওজন মেশিনে উঠে মাথা উঁচু করে আর দাঁড়াতে হবে না। কিন্তু এই ক্রিসমাসের ভরা বাজারে, যখন যেদিকে দু চোখ যাচ্ছে সেদিকেই শুধু কেক পেস্ট্রি ব্রাউনি চকোলেটের লোভনীয় সম্ভার আপনার মনের জোরের পরীক্ষা নিচ্ছে প্রতিনিয়ত, আপনার জন্য একটা ভালো খবর আছে।

এই দুপুর খিদের দোষে আপনি একা দুষ্ট নন। এ দোষ নিতান্তই আমাদের দেসোওয়ালি দোষ। মন্ডেলেজ় ইন্টারন্যাশনাল সংস্থার স্টেট অফ স্ন্যাকিং সার্ভে থেকে জানা যাচ্ছে, দুপুর ১২টা বেজে ৩ মিনিটে ভারতীয়দের মধ্যে ‘স্ন্যাকিং’ অর্থাৎ ওই কিছুমিছু খাবার ইচ্ছেটা সব থেকে বেশি করে চাগাড় দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সময়টা দুপুর ৩টে বেজে ৫ মিনিট আর ব্রিটেনে ৩টে ৪১ মিনিট।

এই সার্ভেয় অংশগ্রহণকারী ভারতীয়দের মধ্যে থেকে আটষট্টি শতাংশ খাবারকেই নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে যোগসূত্র বলে মনে করেন বলেও জানা যায়। আর তা মনে করারই কথা। কলকাতার চপ-মুড়ি, দিল্লির আলু চাট, মুম্বইয়ের পাও ভাজি, পুনের বাখড়ওয়াড়ি, তামিল কলার চিপস্, বিহারের লিট্টি প্রত্যেকেই স্ব স্ব মহিমায় নিজ নিজ পীঠস্থানে এবং সেখানকার মানুষের জিভে ঠোঁটে বিরাজ করছে। কে কার চেয়ে বেশি ভালো সেই নিয়ে কাজিয়াও কম পড়ছে না, আসমুদ্রহিমাচল অফিস পাড়ার খাবারের স্টলের ভিড়ও বাড়তি থেকে কমতির দিকে যাচ্ছে না।

অতএব বন্ধু, চিন্তা নয়। দুপুরের খাবারের ঘন্টা দেড়েক আগে একপ্রস্থ খিদে পাবেই…পেতে বাধ্য। কিছু স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্সের জোগান হাতের কাছে রাখুন। মনে রাখবেন এই সমস্যা আপনার একার নয়, এ আমাদের জাতিগত সমস্যা। নাহুম্স থেকে যে এক প্যাকেট ব্রাউনি কিনেছিলেন তার থেকে এক টুকরো ভেঙে মুখে দিন। এবার চোখটা বন্ধ করুন। ব্রাউনির ঘন গভীর কোকোবিলাস আপনার জিভের ওপর গলে মিলিয়ে যাওয়ার আগেই আপনি এই দুপুরখিদের সারসত্যটুকু উপলব্ধি করে ফেলবেন।

পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায় আকারে স্থূল, প্রকারে কুল এবং জোকার-এ মশগুল। ভালোবাসেন মার্ভেল, ডিসি, আর যা কিছু ফিশি। পূর্বজন্মে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন। বর্তমানে বাংলার নেশায় বুঁদ। পরজন্মে গল-দের গ্রামে খোলা আকাশের নীচে গোল টেবিলে নৈশভোজের আসরে বসে বুনো শূকরের রোস্ট খেতে চান।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *