দেশ জুড়ে এবং দেশের বাইরেও কোটি কোটি মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে বসেছিলেন অযোধ্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় জানতে। প্রধান বিচারপতি রায় ঘোষণা শুরু করার পরে প্রথম যে খবরটি টিভির পর্দায় ভেসে উঠল, তা হল: পাঁচ বিচারপতি একমত হয়ে রায় দিয়েছেন। কোনও সন্দেহ নেই, এই একটি বাক্যে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সমস্ত মানুষের মনে একটা স্বস্তি নেমে এসেছিল। অনেক ঐতিহাসিক মামলার রায়েই বিচারকদের ঐকমত্য হয় না। বিভাজিত রায় আসে। অনেক সময় আবার বিভাজন হয় না, ‘কনকারেন্ট’ বা সহমত রায়ের অঙ্গ হিসেবে বিচারকরা কেউ কেউ আলাদা সিদ্ধান্ত লেখেন। কিন্তু অযোধ্যা মামলার রায় তেমন কিছু হলে পরিস্থিতিতে বাড়তি জটিলতা দেখা দিতে পারত। কারণ এই মামলার এবং তার ভিতরে থাকা বিবাদের প্রাণকেন্দ্রে আছে বিভাজনের প্রশ্ন।

সেই বিভাজনের বাইরেটা সম্পত্তির অধিকার নিয়ে। সর্বোচ্চ আদালত সম্পত্তির মামলায় একটা মধ্যবর্তী অবস্থান নিয়েছেন। একদিকে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের দাবির যুক্তিগ্রাহ্যতা মেনে নিয়ে এবং বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনাকে অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁদের অযোধ্যায় বিকল্প পাঁচ একর জমি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, অন্যদিকে বিতর্কিত জমি এবং তার সন্নিহিত এলাকার দায়িত্ব কার্যত তুলে দিতে চেয়েছেন একটি ট্রাস্টের হাতে, যে ট্রাস্ট গঠন করবেন কেন্দ্রীয় সরকার। এই সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক পরিণাম কোন দিকে যাবে, সেটা জল্পনার ব্যাপার, ভবিষ্যতের ব্যাপার। কিন্তু রায়টির এই অংশে একটা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং যার তাৎপর্য অনেক।

কিন্তু কেবল সম্পত্তির বিবাদ তো নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল বিশ্বাসের প্রশ্ন, ধর্মাচরণের প্রশ্ন। সেই প্রশ্নেও বিচারপতিরা একটা ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, রামলালা বিরাজমান আইনি সত্তা, কিন্তু রামজন্মস্থান তা নয়। বলেছেন, বিশ্বাস ব্যক্তির ব্যাপার, কিন্তু সেই বিশ্বাসকে গুরুত্বও দিয়েছেন। বলেছেন, আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে এইটুকু বলা যায় যে, ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের জমির নীচে অ-ইসলামি কাঠামোর নিদর্শন পাওয়া গেছে, কিন্তু রামজন্মভূমি সম্পর্কিত বিশ্বাস এবং রামলালার পূজার্চনার ঐতিহ্যকেও সম্মান দিয়েছেন।

মহামান্য সর্বোচ্চ আদালতের রায় শিরোধার্য, সে কথা বলা বাহুল্য। আশা করা যায়, সমস্ত পক্ষই এই প্রাথমিক এবং অবশ্যপালনীয় কথাটি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবেন। কিন্তু তার পরেও, আদালতের প্রতি ষোলো আনা শ্রদ্ধা রেখেও, বলা চলে— এই বহুমাত্রিক ভারসাম্যের মধ্যে দিয়ে যে সিদ্ধান্তে সুপ্রিম কোর্ট পৌঁছেছেন, তাতে ভারসাম্য কতটা বজায় থাকল, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। যে জমিতে বাবরি মসজিদ ছিল, তার ভার ন্যস্ত হবে একটি ট্রাস্টের হাতে, যে ট্রাস্ট গঠন করা হবে কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে। মসজিদের জন্য বিকল্প জমি দেওয়া হবে। অর্থাৎ, এক ধরনের ক্ষতিপূরণ হিসেবে। এই ক্ষতি এভাবে পূরণ করা যায় কি না, তা নিয়ে সংশয় আছেই। থাকবেও।

তবে এখন যেটা সবচেয়ে বড় কথা, তা হল শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা। প্রাথমিক লক্ষণ দেখে মনে হয়, সেটা বজায় থাকবে। প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য নেতারা সবাই বলেছেন, এই রায়কে জয়পরাজয় হিসেবে না দেখে সারা ভারতের এগিয়ে যাওয়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে দেখতে। সেটা যদি সত্যিই হয়, তবে এত দিনের পুরনো একটা সঙ্কটের অবসান ঘটতে পারে।

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় হাসিখুশি, এমনকী যখন সেই মোড-এ থাকেন না, নিজেকে ঠেলে হিঁচড়ে হিহিহোহো’তেই ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেন। জাপটে ভালবাসেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সিরিয়াল, গান, রাস্তায় নেড়িবাচ্চার লটরপটর কান। পড়াশোনার সময় ফিল্ড করেছেন, হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভেঙেছেন, গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়েছেন, এক বার পাহাড় থেকে অনেকটা হড়কে পড়ে মুচ্ছো গেছিলেন, উঠে দেখেন, কবর! এক বার ম্যানেজমেন্ট কোর্সের অঙ্গ হিসেবে চিন গেছিলেন, রাত্তির দুটোয় সাংহাইয়ের রাস্তায় হারিয়ে গিয়েও কাঁদেননি। ফিউজ সারাতে পারেন, পাখার কার্বন বদলাতে পারেন, কাগজের চোঙ পাকিয়ে গাড়িতে পেট্রল ঢালতে পারেন, চিনেবাদাম ছুড়ে দিয়ে মুখে নিপুণ লুফতে পারেন। ব্যাডমিন্টন খেলার ইচ্ছে খুব, কিন্তু জায়গা ও র‌্যাকেট নেই। অরোরা বোরিয়ালিস যারা দেখেছে, তাদের একাগ্র ভাবে হিংসে করেন। দেশের বাড়িটা উনি বড় হওয়ার পর ছোট হয়ে গেছে বলে, আর আমির খান এক বার কার্টুন এঁকে দিয়েছিলেন— সে কাগজ হারিয়ে গেছে বলে, জেনুইন কষ্ট পান। এক বার ঈগলের রাজকীয় উড়ান আগাগোড়া খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।

One Response

  1. শিরোধার্য বলার পরও সমালোচনা!!!! আমি বিগত ৪০ বছরে সুপ্রিম কোর্টকে কোনো হটকারী সিদ্ধান্ত নিতে দেখিনি। আফজাল গুরুর বেলাতেও নয়। জানতে ইচ্ছে করছে লেখিকার কি আদপেই বিবাদটি জানা আছে? ধর্মীয় পরিসর বাদ দিলে এটি আদপে একটি জমির মালিকানা বিশেষত আদি মালিকানা নিয়ে বিবাদ । সুপ্রিম কোর্ট শুধু সেটাই নির্ধারণের চেষ্টা করলেন। বরং বহুবার ধর্মীয় ব্যাপার যুক্ত থাকার কারণে বহুবার আপোষে মিটিয়ে নিতে বলেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট বা পৃথিবীর যেকোনো কোর্টের কাছেই তথ্য প্রমান ই শেষ কথা। ধর্মীয় দর্শন বা ক্ষতিপূরণ নয় যেকোনো মালিকানা সংক্রান্ত বিবাদের ক্ষেত্রে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *