ভারতীয় সংস্কৃতিতে হালফিলে এক নতুন উৎসব আমদানি হয়েছে। হ্যালোইন। খানিক ভূতচতুর্দশীর ভাবধারায়। “অনেক পণ্ডিতদের মতে, “হ্যালোইন” বা “অল্ হ্যালোজ্ ইভ্” হল খ্রিস্টধর্মের একটি বার্ষিক উৎসব যা প্রাথমিকভাবে কেলটিক ফসল কাটার উৎসব দ্বারা প্রভাবিত। হ্যালোইন বা হ্যালোউইন, “অল হ্যালোজ’ ইভ”-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি অলহ্যালোইন, অল হ্যালোজ’ ইভ, বা অল সেইন্টস’ ইভ হিসাবে পরিচিত। একটি বার্ষিক উদযাপন বা ছুটির দিন যা প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে পালিত হয় ৩১ অক্টোবর তারিখে, অল হ্যালোজ’ ডে বা সমস্ত হ্যালোজ দিবসে পাশ্চাত্য খ্রিস্টীয় ভোজোৎসবের প্রাক্কালে। বছরের এই দিনটি নিবেদন করা হয় মৃত, সাধু (হ্যালোজ), শহীদ এবং সমস্ত বিদেহী বিশ্বাসীদের স্মরণ করে। হ্যালোইন উৎসবের পিছনে যে মূল ধারণা, তা হল হাস্যরস ও উপহাসকে হাতিয়ার করে মৃত্যুর মুখোমখি দাঁড়িয়ে তার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা। আইরিশ, ইংরেজ বা ওয়েলশরা বিশ্বাস করতেন যে প্রত্যেক নতুন বছরের আগের রাতে (৩১ অক্টোবর) সাহেইন, মৃত্যুর দেবতা, আঁধারের রাজ পুত্র, সব মৃত আত্মাকে ডাক দেন। তাঁদের বিশ্বাস, এই দিন মহাশূন্য এবং সময়ের সমস্ত আইনকানুন স্থগিত করা হয় এবং জীবিতদের বিশ্বে যোগদান করতে মৃত আত্মাদের অনুমতি দেওয়া হয়। একটি লোককাহিনীতে আছে যে, সমস্ত মৃত ব্যক্তিরা ৩১ অক্টোবর রাত্রিতে জীবিতদের বিশ্বে আসে আগামী বছরের নতুন দেহ পরিগ্রহ করার জন্য। এজন্য গ্রামবাসীরা এই খারাপ আত্মাদের থেকে বাঁচার জন্য ব্যবস্থা নেয়। এই প্রথাটি ছিল পবিত্র বেদির আগুন নিবিয়ে, পরের দিন সকালে নতুন আগুন জ্বালানো (যেটি নতুন বছরের আগমন প্রতীক)। আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যবাসী কেল্ট সম্প্রদায়ের পুরোহিতরা নতুন আগুন জ্বালানোর জন্য মিলিত হতেন একটি অন্ধকার ওক (যাকে পবিত্র গাছ হিসেবে বিবেচনা করা হত) বনের ছোট পাহাড়ে এবং বীজ ও প্রাণী উৎসর্গ করতেন। আগুনের চারিদিকে নাচ-গান করতেন. সকাল হলে পুরোহিতরা প্রতি পরিবার থেকে জ্বালানো আগুনের কয়লা সংগ্রহ করতেন। এ সব কথাই উইকিপিডিয়ার দৌলতে আমরা জানি।

কালে কালে ব্যাপারটা অন্য রূপ নিয়েছে। কুমড়োকে নানা ডিজাইনে কাটাকুটি করে লন্ঠন বানানো, ট্রিক অর ট্রিট, বনফায়ার আর বীভৎস পোশাক পরে বিশেষ করে ভূত-পেত্নী-রাক্ষসের মতো সেজেগুজে, ভূতুড়ে বাড়ি বেড়াতে গিয়ে, ভয়ের সিনেমা দেখে একটা ভয়ঙ্কর রকম ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি করেই “বীভৎস-মজা”। বাচ্চারা কেবল ট্রিক অর ট্রিট করেই আনন্দে মশগুল থাকে। চকোলেট, লজেন্স আর উপহারে তারা ক্ষান্ত দেয়। এটা একটা নতুন রকম উৎসব, সন্দেহ নেই, তবে যে মহিমায় তাকে পালন করা হয়, আমাদের ভূতচতুর্দশী তার কাছে ডাহা ফেল। চোদ্দ প্রদীপ নিতান্ত ম্লান।

তবে কিনা প্রশ্ন জাগে মনে, ভারতের মতো একটা দেশে নতুন করে বীভৎস-উৎসব পালন করার প্রয়োজনীয়তা কী? আমাদের ঐতিহ্যবাহী দেশে তো নিত্যনিমিত্তিক নিজস্ব হ্যালোইন অভ্যাস করে থাকি। আমরা নিয়মিত ডাইনি সন্দেহে হত্যা করি, কিছু দিন অন্তর গণপিটুনি প্র্যাকটিস করি, যাতে হাত খোলতাই থাকে, গরু পাচার কিংবা গো-মাংস রাখার সন্দেহে খাপ-পঞ্চায়েত বসাই, বউ বা প্রেমিকার ওপর রাগ হলেই অ্যাসিড ছুঁড়ে মুখখানা বীভৎস বানিয়ে ফেলি, ঘুরতে-ফিরতে ধর্ষণ করি, অন্তঃসত্ত্বাকে পেটে লাথি মারি, বাচ্চাদের কিডন্যাপ করে অল্প পঙ্গু বানিয়ে ভিক্ষে করাই, আরও কত কী!

এত জ্যান্ত অভিজ্ঞতা থাকতে আমাদের কী প্রয়োজন হল যে নকল সেজে ন্যাকামি করে হ্যালোইন পালন করতে হবে? যেখানে হাতে গরম, তাজা সমস্ত উপকরণ রয়েছে, সেখানে দুধের বদলে ঘোল কেন? আমাদের রাজকন্যা কম পড়তে পারে, কিন্তু ডাইনি তো কম পড়েনি! আমাদের গাঁয়েগঞ্জে শিক্ষিত মেয়ের অভাব হতে পারে, কিন্তু কন্যাভ্রূণ তো কম পড়েনি! হরিয়ানা রাজ্য প্রায় মেয়েশূন্য হয়ে আসতে পারে, কিন্তু ধর্ষণের জন্য মেয়ে কম পড়েছে কি? এত আবাদির দেশে যখন আমরা গরুর নামে দু-চার জনকে নিকেশ করতে পারি, তখন আর নতুন করে বীভৎস রসের উৎসবে মাতব কেন?

সত্যি বলতে কি, আমার মনে হয় ভূতচতুর্দশীর রাতে এবং হ্যালোইনের দিনে দেশি বা বিদেশি ভূতেরা নিশ্চয়ই দল বেঁধে আমাদের দেশে আসে এবং অবাক হয়ে যায় আমাদের ভূতের নৃত্য দেখে। নেহাত তারা মানুষ নয়, তাই তাদের ঘটে শুভবুদ্ধি আছে, আর তাই এ সব কীর্তিকলাপ নিজেরা শেখে না, শেখার কথা ভাবতেও পারে না।

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় হাসিখুশি, এমনকী যখন সেই মোড-এ থাকেন না, নিজেকে ঠেলে হিঁচড়ে হিহিহোহো’তেই ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেন। জাপটে ভালবাসেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সিরিয়াল, গান, রাস্তায় নেড়িবাচ্চার লটরপটর কান। পড়াশোনার সময় ফিল্ড করেছেন, হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভেঙেছেন, গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়েছেন, এক বার পাহাড় থেকে অনেকটা হড়কে পড়ে মুচ্ছো গেছিলেন, উঠে দেখেন, কবর! এক বার ম্যানেজমেন্ট কোর্সের অঙ্গ হিসেবে চিন গেছিলেন, রাত্তির দুটোয় সাংহাইয়ের রাস্তায় হারিয়ে গিয়েও কাঁদেননি। ফিউজ সারাতে পারেন, পাখার কার্বন বদলাতে পারেন, কাগজের চোঙ পাকিয়ে গাড়িতে পেট্রল ঢালতে পারেন, চিনেবাদাম ছুড়ে দিয়ে মুখে নিপুণ লুফতে পারেন। ব্যাডমিন্টন খেলার ইচ্ছে খুব, কিন্তু জায়গা ও র‌্যাকেট নেই। অরোরা বোরিয়ালিস যারা দেখেছে, তাদের একাগ্র ভাবে হিংসে করেন। দেশের বাড়িটা উনি বড় হওয়ার পর ছোট হয়ে গেছে বলে, আর আমির খান এক বার কার্টুন এঁকে দিয়েছিলেন— সে কাগজ হারিয়ে গেছে বলে, জেনুইন কষ্ট পান। এক বার ঈগলের রাজকীয় উড়ান আগাগোড়া খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।

2 Responses

  1. Halloween নিয়ে লেখা টা দারুন হয়েছে । গালেৱ উপর চড় টা ফাটাফাটি। কিন্তু এত মোটা চামড়া – চড়টা বুঝতে পাৱলে হয়; নইলে সনাতন নিয়েই হেঁচকি তুলব আমরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *