গোলগাল, বেশ আহ্লাদী । নানা পরিসরে তার অবাধ গতিবিধি, শুভ্র, সুন্দর অব্যর্থ উপস্থিতি। জোট বাঁধতে ওস্তাদ। এবং সেই সব সুপারহিট জুটি উত্তম সুচিত্রার জুটিকেও হার মানাতে পারে। নরমে গরমে মানুষকে বশে আনতে সে এক্সপার্ট। পুজোর আগে তার সঙ্গে আলাপ ঝালিয়ে নিলেন শর্মিলা বসুঠাকুর।

বুঝে গেছেন তো কার কথা বলছি? হ্যাঁ, লুচি। রোববারের সকালে, হঠাৎ অতিথি এলে, পিকনিকের মেনুতে, স্কুলের টিফিনে, জন্মদিনে, বিয়েবাড়ির ভোজের শুরুতে ইনি হাসিমুখে হাজির। এই তালিকা অনন্ত।

আর থাকেন পুজোর ভোগে, প্রসাদী থালায়। দিনাজপুরের কান্তনগর গ্রামের ঠাকুরবাড়ির ভোগে লুচি মাস্ট। দুর্গাপুজোর কয়েকদিন আগে কান্তজিকে দিনাজপুর রাজবাড়িতে আনা হয়। এবং ভোগ হিসেবে যে লুচি দেওয়া হয় তা বগি থালার মতো পেল্লাই। এই লুচির বিশেষত্ব হল না ভাঙলে এই লুচি ফোলা অবস্থায় থেকে যায়। অতএব লুচির মাহাত্ম্য বর্ণনা যে সে কাজ নয়।

দুর্গা পুজর অষ্টমীর দিন বহু বাড়িতেই নিরামিষ খাওয়ার রীতি। ভরসা লুচি। সবসময় বেশ হালকা, ফুরফুরে মেজাজ তার। তাই তো সহজেই ভাবভালবাসা তার। বোঁটা ওয়ালা লম্বা বেগুন ভাজা, ছোলার ডাল, কালোজিরে ছেটানো আলুর সাদা তরকারি, রগরগে আলুর দম, বিশাল আলু দেওয়া মাটনের ঝোল সব্বার সঙ্গে সে সমান স্বচ্ছন্দ। আর শেষ পাতে? ঘিয়ে মাখোমাখো মোহনভোগ, বোঁদে, রসগোল্লা, পায়েস কে নেই? নলেনের মায়াবি আদরে সোহাগী লুচি পৌষ মাসে সর্বনাশ-এর অ্যান্তিথিসিস।

পুজো দোরগোড়ায়। এই সময় আকাশে উৎসব ভাসে। আর উৎসব মানেই তো উদযাপন। উদযাপন মানেই পরিবার-পরিজন নিয়ে খাওয়াদাওয়া, আনন্দ করা। সেখানে আমাদের পরম প্রিয়, আচারে, অনুষ্ঠানে সব সময় পাশে থাকা একান্ত আপনজন কে কি বাদ দেওয়া যায়? তার  কোমল, শুভ্র, পবিত্র উপস্থিতিতেই তো উৎসবের মঙ্গলবার্তা।

রইল দুটি রেসিপি

ছানার লুচি

উপকরণ: ময়দা ২৫০ গ্রাম, ছানা ২০০ গ্রাম, নুন সামান্য, ময়ানের ঘি ১ চা-চামচ, ভাজার জন্য ঘি বা সাদা তেল।

প্রণালী: সব উপকরণ একসঙ্গে ভাল করে মেখে, লেচি কেটে লুচি বেলে নিন। ছাঁকা তেলে ভেজে নিন। লাল যেন না হয়।

লুচির পায়েস

উপকরণ: ময়দা ১০০ গ্রাম, ময়ানের জন্য ও লুচি ভাজার জন্য ঘি, দুধ ১ লিটার, চিনি ২০০ গ্রাম, ছোট এলাচ কয়েকটা।

প্রণালী:ময়ান দিয়ে ময়দা মেখে লুচি ভেজে নিন। দুধ ঘন করুন, চিনি দিন। লুচি টুকরো করে দিন। ফুটে উঠলে এলাচ গুঁড়ো দিয়ে নামিয়ে নিন। ঠান্ডা করে উপরে বাদাম, কিশমিশ, পেস্তা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।   

সাংবাদিক, প্রশিক্ষিত নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যসমালোচক। দীর্ঘদিন সম্পাদনা করেছেন সানন্দা পত্রিকা। যদিও কর্মজীবনের শুরু হয়েছিল দর্শনের অধ্যাপনা দিয়ে। পরে প্রাণের তাগিদে সাংবাদিকতাকেই পাকাপাকি ভাবে বেছে নেন। অবসর নেওয়ার পরও তুমুল ব্যস্ত। রান্নাবান্না, বেড়ানো, সাজগোজ নিয়ে অবিরাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতেই থাকে। ভালোবাসেন বই পড়তে, ভালো সিনেমা দেখতে আর খাওয়াতে। নিবিড় ভাবে বিশ্বাস করেন ভালো থাকায়, জীবনের রোম্যান্টিকতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *