পুরনো দিনের মানুষরা অনেকেই অন্য নানা ব্যাপারের মতো দুর্গাপুজো নিয়েও আক্ষেপ করেন। তার মূল কথাটা হল, পুজো আর আগের মতো নেই। এই আক্ষেপের সবটাকেই নিছক অতীতচারিতা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমাদের শারদীয় উৎসবের অনেক ভাল জিনিস সত্যিই হারিয়ে গেছে, বিশেষ করে সেই যে একটা সবাই মিলে কাজ করে পুজোর আয়োজনের রীতি ছিল সেটা এখন অনেক কমে গেছে, তাতে আমাদের স্বাভাবিক আনন্দের ভাগে টান পড়েছে নিশ্চয়ই।কিন্তু এখনকার শারদোৎসবের সব সমালোচনা বোধহয় মেনে নেওয়া যায় না। অন্তত একটা ব্যাপারে আক্ষেপ শুনলে তার যৌক্তিকতা নিয়ে একটু ভেবে দেখা দরকার হয়। সেটা হল পুজোর খাওয়াদাওয়া। আগে পুজোর সময় দু’বেলা পাত পেড়ে খাওয়ার চল ছিল অনেক বাড়িতেই। আত্মীয়স্বজনের ভিড় লেগেই থাকত, বিশেষ করে কিছু কিছু বাড়িতে সে ভিড় অন্যদের চেয়ে বেশিই হত। একান্নবর্তী পরিবারে এমনিতেই লোক বেশি, তার ওপর এই সময়টাতে বাইরে কাজ করা বা পড়াশোনা করতে যাওয়া সদস্যরা ফিরে আসত, ফলে প্রতিদিনই যেন যজ্ঞিবাড়ি। চর্ব্যচোষ্যলেহ্যপেয় মিলিয়ে একেবারে এলাহি কাণ্ড রোজ রোজই। দারুণ আনন্দের ব্যাপার ছিল বইকি।সেই তুলনায় এখন? পুজোর দিনগুলোতে অনেক বাড়িতে রান্নাঘর প্রায় শাটডাউন হয়ে যায়। বিশেষ করে বহুতল এবং বহু ফ্ল্যাটওয়ালা আবাসনগুলিতে তো কমিউনিটি হলে দু’বেলা ভোজ বাঁধা। বাড়ির মেয়েরা সাফ বলে দেন, এই ক’দিন রাঁধতে পারব না, ব্যস। আর তাই নিয়ে অনেক বাড়ির পুরুষেরই মুখ হাঁড়ি হয়ে যায়, মুখে কিছু বলতে না পারলেও ভেতরটা গুমরে মরে, আজ কিছুতেই যায় না মনের ভার। কেউ কেউ তো মুখ ফুটে বলেই দেন, এ-সব ফ্যাশন হয়েছে, পুজোয় বাড়িতে একটু ভাল রান্নাবান্না হবে না! পুজোর বাড়িতে ভাল রান্নাবান্না করতে গেলে যে এই ক’টা দিনও বাড়ির মেয়েদের হেঁসেলে বন্দি থাকতে হয়, সেটা তাঁরা ভাবেন না।এ খানেই সমস্যা। পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে গেলে অনেক সময়েই তার মাসুল গুনতে হয় কাউকে না কাউকে। সাধারণত সেই মাসুল গোনার দায়টা এসে পড়ে তাঁদের ওপর, সামাজিক ক্ষমতার দাঁড়িপাল্লায় যাঁদের ভার কম। আমাদের সমাজে মেয়েরা চিরকালই পুরুষ-শাসিত। ফলে সামাজিক ঐতিহ্য রক্ষার দায় বর্তায় তাঁদেরই ওপর। তাই কেবল যুগের হাওয়াকে মেনে নেওয়ার দায়ে নয়, সামাজিক সাম্যের যুক্তিতেও পুজোর সময় বাড়িতে সাত পদ রান্নার পুরনো ঐতিহ্যটাকে বিদেয় করাই ভাল। তাতে রসনার একটু লোকসান হয় বটে, কিন্তু বিবেকের অনেক লাভ। অবশ্য সেই লাভ বোঝার জন্যে বিবেক থাকাটা জরুরি। পিতৃতন্ত্রের তা আছে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন।
সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় হাসিখুশি, এমনকী যখন সেই মোড-এ থাকেন না, নিজেকে ঠেলে হিঁচড়ে হিহিহোহো’তেই ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেন। জাপটে ভালবাসেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সিরিয়াল, গান, রাস্তায় নেড়িবাচ্চার লটরপটর কান। পড়াশোনার সময় ফিল্ড করেছেন, হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভেঙেছেন, গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়েছেন, এক বার পাহাড় থেকে অনেকটা হড়কে পড়ে মুচ্ছো গেছিলেন, উঠে দেখেন, কবর! এক বার ম্যানেজমেন্ট কোর্সের অঙ্গ হিসেবে চিন গেছিলেন, রাত্তির দুটোয় সাংহাইয়ের রাস্তায় হারিয়ে গিয়েও কাঁদেননি। ফিউজ সারাতে পারেন, পাখার কার্বন বদলাতে পারেন, কাগজের চোঙ পাকিয়ে গাড়িতে পেট্রল ঢালতে পারেন, চিনেবাদাম ছুড়ে দিয়ে মুখে নিপুণ লুফতে পারেন। ব্যাডমিন্টন খেলার ইচ্ছে খুব, কিন্তু জায়গা ও র্যাকেট নেই। অরোরা বোরিয়ালিস যারা দেখেছে, তাদের একাগ্র ভাবে হিংসে করেন। দেশের বাড়িটা উনি বড় হওয়ার পর ছোট হয়ে গেছে বলে, আর আমির খান এক বার কার্টুন এঁকে দিয়েছিলেন— সে কাগজ হারিয়ে গেছে বলে, জেনুইন কষ্ট পান। এক বার ঈগলের রাজকীয় উড়ান আগাগোড়া খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।