ডোনাল্ড ট্রাম্প চাপ বাড়াচ্ছেন। প্রথমে তিনি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলোচনার পরে জানিয়েছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে মধ্যস্থতা করার কথা বলেছেন এবং তিনি তাতে সাগ্রহে সম্মত। স্বাভাবিকভাবেই ভারতে এই বক্তব্যের প্রবল সমালোচনা হয়, কারণ ভারতের কঠোর অবস্থান এই যে কাশ্মীর প্রশ্ন ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা, সেখানে কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া যায় না। এর পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, ভারত ও পাকিস্তান অনুরোধ করলে তবেই আমেরিকা এ বিষয়ে মধ্যস্থতা করতে পারে, অন্যথা নয়। এতে মেঘ কিছুটা হালকা হলেও পুরো কাটেনি। হস্তক্ষেপ বা মধ্যস্থতার কথা আদৌ কেন উঠবে, সেই প্রশ্নটাই বড়।
এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও একখণ্ড মেঘ আকাশে ভাসিয়ে দিয়েছেন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশন চলছে নিউ ইয়র্কে। সেখানে দুনিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে আছেন নরেন্দ্র মোদী এবং ইমরান খান দুজনেই। আজ, শুক্রবার তাঁদের দুজনেরই সাধারণ পরিষদের সভায় বক্তৃতা দেওয়ার কথা। তার আগে বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, এই দুই দেশের দুই নায়ক, দুজনেই তাঁর খুব ভাল বন্ধু, তিনি তাঁদের বলেছেন, ‘(তোমাদের সমস্যা) মিটিয়ে নাও, জাস্ট মিটিয়ে নাও।’ তার পর যোগ করেছেন তিনি, ‘পারমাণবিক শক্তিতে শক্তিমান দুটো দেশ, ওদের (নিজেদের ঝগড়া) মিটিয়ে নিতেই হবে।’
১৯৯৮ সালে ভারত এবং পাকিস্তান পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুনিয়ার পারমাণবিক মানচিত্রে নিজেদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে, ক্রমে গোটা দুনিয়া সেই অস্তিত্বকে কার্যক্ষেত্রে স্বীকৃতিও দিয়েছে। তার পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই দুই দেশের বিবাদ নিয়ে, মানে প্রধানত কাশ্মীর সংক্রান্ত বিবাদ নিয়ে চিন্তিত। সেই নব্বইয়ের দশকের শেষেই তখনকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন কাশ্মীর সমস্যাকে ‘নিউক্লিয়ার ফ্ল্যাশপয়েন্ট’ বলে বিতর্ক তুলেছিলেন। তার পরেও মার্কিন সরকারের মুখপাত্ররা বার বার এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তবে কূটনীতির ভাষায়, অর্থাৎ কিছুটা ঘুরিয়ে, রেখেঢেকে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ও সবের বালাই নেই, তিনি দুমদাম কথা ছুড়ে দেন। এবারেও দিয়েছেন।
ধরে নেওয়া যায়, ভারতের সরকার বা কূটনীতিকরা এই মন্তব্যকে বাইরে বেশি গুরুত্ব দেবেন না, বিদেশ নীতির পরিচিত সুরেই কথা বলবেন, বলবেন, ভারত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পথেই সমাধান চায়, কিন্তু পাকিস্তানকে সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আবার পাকিস্তান তাদের পরিচিত লাইনেই বলবে, তারা তো সমাধানই চায়, ভারত অসহযোগিতা করছে। বস্তুত, আমেরিকার বা রাষ্ট্রসঙ্ঘের মধ্যস্থতাতেও পাকিস্তানের আপত্তি নেই, বরং সমর্থন আছে। তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম। এক, উত্তেজনার পারদ চড়া। দুই, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি সব ছক ভেঙে দিতে পারেন। অতএব কেবল ভারত ও পাকিস্তান নয়, গোটা দুনিয়ার নজর এখন নিউ ইয়র্কের সভার দিকে।
স্বতন্ত্র‚ চমকপ্রদ ও মন ভালো করা খবর পেশ করার চেষ্টা করি আমরা | প্রতিবেদন বিষয়ে আপনাদের মতামত জানান 'কমেন্ট' বক্সে | আপডেট পেতে ফলো করুন https://www.facebook.com/banglaliveofficial/