শুরুতে ফোড়ন আর কষা শেষ করে রাঁধুনির হাত ধোয়াজল – এই হল আসল রেসিপি| না হলে ‘স্বাদ’ হলেও ‘তার’ হবেনা| মানে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট| আর খাওয়ার পর যদি ফোড়নের ঢেকুর ওঠে তো সব বরবাদ| বুক-গলা-জিভ সব আড়ি-আড়ি-আড়ি| ফোড়ন এমনই জিনিস যে সেই পুরো রান্নাটার তদারকি করে|কনস্টিটিউশনে প্রিয়াম্বলের মতে| আইনের ওপর আইন| ধারার মধ্যে উপধারা সকল| টুকরো-টাকরা‚ মশলা‚ জল‚ তেল‚ নুন-সবের ওপর মহাদেবাদিদেব|

সেরেস্তা সেরে‚ উঠোনে দাঁড়িয়ে‚ পিরানখানি খুলে ভিজে গামছায় বুক পিঠ আড়াআড়ি মুছতে না মুছতেই হাসি ফুটে উঠত কত্তার মুখে|কারণ‚ জলখাবারে আলু ছোকা হচ্ছে‚ সাদা ফুলকো লুচির সঙ্গে| হিং ফোড়নেই আচমণ সারা| হিং আবার কাবুলি হিং| ঢেলা পাকানো থেকে এক চিমটি খুবলে বুড়ো আঙুলে ও তর্জনীতে চেপে‚ বাড়িতে বানানো ঘিয়ে‚ লোহার গরম কড়ায়‚ টুক| কাঠের জ্বালে এমনিই চারকোল ফ্লেভার| তার সঙ্গে গন্ধ ভুর ভুর এবং পেট জুড়োনো হিং সংযোগ|

এই সংযোগের বাহার কোথাও ‘ফোড়ন’‚ কোথাও ‘ছোঁক’‚ কোথাও ‘সম্বর’ কোথাও বা ‘ফুরণ’ | ছ্যাঁক করলেই হবেনা‚ ছোঁকের ম্যাজিক চাই| তরকারি-ঝোলে-ঝালে ফোড়ন দাড়ি একটু চাপা থাকলেও ডাল এবং অম্বলে সে একঘর| তাকে ছাড়া বাকি সব সেদ্ধ-পোড়া রান্নাই নয়| বিউলির ডালে আদা-মৌরি ফোড়ন ছাড়া সে তো গাঢ় ফ্যান বিশেষ| হড়-হড়ে থলথলে| অথচ গরম-পাক সরষের তেলে আদা- মৌরি‚ শুকনো লঙ্কার ছোঁক দিয়ে শুকনো খোলায় টালা বিউলি ডাল- হলুদ ছাড়া আহা বাহা তাহা তবে সামান্য মিষ্টিও| একেবারে হাবড়হাটি| এরকমই অড়হড় ডালের ফোড়ন| জিরে‚ রাঁধুনি (সামান্য)‚ ছোট এলাচ‚ শুকনো লঙ্কা আর তেজপাতা| সোনা রং টলটলে ঘি’তে| ফোড়ন দিয়ে ডাল সাঁতলালেই কচি থেকে বুড়ো-বুড়ি সবার ঘন্টি বেজে উঠল| রাতের খাওয়ার পিঁড়ি পড়বে| ঘি মাখানো ফুলকো রুটি‚ চাপ চাপ অড়হর ডাল আর ক্ষীর| সঙ্গে আম হলে তো কথাই নেই| না গুরুপাক‚ না দুঃস্বপ্ন| অনেকেই অড়হর ডালে হিং দেয়| আবার দেয়ও না| তেমনি হয়‚ মিষ্টি মিষ্টি বা একটু ঝাল ঝাল| কিন্তু অড়হর কেনার সময় থেকেই রাঁধুনে এবং খাইয়ে দু’জনেই ফোড়নের গন্ধ পায়| এরকমই রাঁধুনি আর পাঁচ ফোড়নের জিরে-ঝাল| পটল বড়ি বা বেসনের বড়া আর আলু দিয়ে‚ নিরামিষ্যি| পাঁচ ফোড়নের রাঁধুনি থাকলেও ফোড়নে আরও এক চিমটে| রুই কাতলার ঝোলেও চলবে| সঙ্গে সামান্য ধনে বাটা| ধনে আর মৌরী ফোড়ন দিয়ে ভাপানো আলুর তরকারি| সে সুগন্ধও ভোলার নয়| জিরে-ধনে-হিং ফোড়ন মানেই ধোঁকার ডালনা কড়ায় চড়ল| ঘি এর ওপর ফোড়ন টেলেই বাটা মশলায় কষা আর নামানোর সময় ঘি|

সরষে-শুকনো লঙ্কার ফোড়নে ঝাঁঝ উঠলেই সঙ্গে সঙ্গে তা মোলায়েম হলো‚ টোপা কুল বা পাকা আমড়া‚ নয়তো সেদ্ধ চালতার ঝপাং-এ‚ নুন হলুদের জলে যত সেদ্ধ হবে তত জমবে ফোড়নের ‘তার’|  চিনি বা ভেলিগুর দিয়ে নামানোর সময় মরচে রং ধরে টসটস করছে কড়া| পাথরের বাটিতে ঢালবার পর- আহা| ফোড়ন ভাসা ‘অম্বল’| টক টক আম ঝোল এবং আম ডালেও এই একই ফোড়ন| রান্নার সময় ঘি বা সাদা তেলে চটচটিয়ে‚ রান্নার পর পুষ্ট হয়ে ভেসে ওঠা| একটু বেশি তাত লাগলেই সর্ব রক্ষে. পুড়ে চাই- ‘ম্যা গো’-‘ম্যা গো’ |

ফোড়নের একটা সর্বসম্মত ছোট সিলেবাস আছে| বিশেষত অঞ্চল ভেদে| সম্প্রদায় ভেদে| রাঁধুনি-পাঁচ ফোড়ন-হিং-মৌরি যদি বাঙালি ঘটিদের এজমালি সম্পত্তি হয় তো‚ ‘কালো- জিরা কাঁচা লঙ্কা হল সম্পূর্ণ বাঙাল ফোড়ন বিশারদী| যে কোন জ্যান্ত মাছ এমনকী ইলিশও- জমে যাবে শুধুমাত্র ওই ‘কালো-জিরা’ কাঁচা লঙ্কার ফোড়নে| আমার বাঙাল শাশুড়িমা বলতেন ‚ আঁশ ছাড়া নরম মাছে সরষা লঙ্কাবাটা আর ইলিশ ছাড়া অন্য রকম মাছে আদা পেঁয়াজ| উনি ছিলেন ঢাকা আর ফরিদপুরের মিশেল| আমার বোনের শাশুড়িমা ‘চিটাগাং’- ঘরানার‚ ‘লইট্ট্যে’ নিপুণ| থকথকে রসুন থেঁতো দিতেন প্রায় আধকড়া সরষের তেলে| ওই রসুন ফোড়নের ‘বাস’- ফুটপাথ থেকে পাওয়া যেত| এপারের হিং এর মতো ছিল ওঁর রসুনের ফোড়ন গন্ধ| মাছ রান্নার ফোড়ন দারিতে অনেক ‘ফরেনি’ ঢুকেছে| আমি নিজেই কালোজিরের বদলে কালো সরষে দিতে ভালোবাসি| আমার বেয়ান ভালোবাসেন পাঁচফোড়ন দিয়ে রুই কাতলার ঝাল ঝোল| মহাশ্বেতাদি‚ আমার সহকর্মী- সে দিত কালো মরিচ বাটা- ঝিঙে দিয়ে মাছের ঝোলে| আমি ভাবতাম বুঝি গোল মরিচ| সেটা আসলে‚ কালো জিরে| আমার ঠাকুমা অনেক সময় সরষে এবং পোস্ত মিশিয়ে ফোড়ন দিয়ে মাছের ঝাল করতেন| কী মাছ তা মনে নেই| একটা আলাদা শিষিতে সেটা মেশানো থাকতো|

মাংসের ফোড়নের তারতম্যে বোঝা যেত কোন রাঁধুনির কোন হেঁশেল| দিল্লি সিমলা ঘরানার মা-মাসি-দিদারা শুকনো-লঙ্কা তেজপাতা গরম মশলার ফোড়ন‚ রান্না মাংসের ওপর বড় গোল হাতায় এক ঘাবলা ঘি দিয়ে তাতে ফোড়নের মশলা ফুটিয়ে ছড়িয়ে দিতেন| এদেশি বাপের বাড়িতে আলু দিয়ে মাংসের ঝোলে জিরে-তেজপাতা আর ঘি ফোড়নে সাঁতলে‚ ‘নিবু’ আঁচে ধনে -জিরে -আদা বাটা মিষ্টি ঘেঁষা ঝাল ঝোল| আবার ঘি-গরম মশলার ফোড়ন মানেই আমার বোন রঞ্জার রান্না পাঁঠার মাংস| আমার রান্না ঝাল মাংস কষা মানে- ফোড়ন ছাড়া| পেঁপে কোরা মধু আর লেবুর রসে জাড়িয়ে ঘি-আদা-ধনে বাটায় কষা| বিহারী স্টাইলে-ধনে- জিরে শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে ডাল ঝোল ও একেবারে অন্যরকম| ওরা ফোড়নে পেঁয়াজ‚ আদা রসুন ও দেয়| তার ঝাঁঝ ও গন্ধ দুই বেশ মাংসল|

আর যে সব হেঁশেল আলো রান্না- যেমন বেগুনের লুমা| এতে অবশ্যই সর্ষে ফোড়ন| কাঁচকলার কোপতায় জিরে তেজপাতা| পটলের ডালনাতেও তাই| কিছু স্বাদ গন্ধ একেবারে আলাদা| ছানার ডালনায় -ঘি-জিরে-গোটা গরম মশলা- একেবারে ছানার গন্ধে মিশে একাকার| পোস্ততে অনেকে কালো জিরে ফোড়ন দেন| অনেকে রসুন| আমার মতে পোস্ত একাই একশো| তেল খেতে খেতে আলুর গায়ে মেখে শুকনো-সাকনা‚ অথচ তুলতুলে| তবে ফুলকপি বা বাঁধা কপির ডালনায় ফোড়ন বাহার- জিরে – লঙ্কা-তেজপাতা দিলেই সে মাত হবে এমন নয়| এর দাবী কাটা ধোয়া থেকে| প্রতি পর্যায়ে মাপে মাপ না হলেই হয় ঝ্যালঝেলে না হয় চেয়ে থাকবে ফ্যালফ্যালে| কুমড়ো ছোলার ছক্কাতেও সেই জিরে-ধনে-হিং ফোড়ন‚ কুমড়ো গদগদে হয়ে স্বাদ দেবে| তবে লাউ বড়িতে শুধু তেজ পাতা| নারকেল-চালকুমড়োতে ছোঁক নয়| নরম আঁচে শুধু ছ্যাঁক‚ ভায়া এর কোনও শেষ নেই| যতদিন রান্নাকে ভালোবাসা ততদিনই ফোড়ন-ফাড়ন|

তবে এখন তো অনেক হেঁসেল‚ অনেক রাঁধুনি| আর ‘যে রাঁধে‚ সে চুলও বাঁধে|’ তাই শুধু মা-মাসি- মেয়ে বউ নয়‚ এ রাজ্যে ও রাজ্য এবং এ দেশ ও দেশও দক্ষিণ ভারতীয়‚ ‘সম্বর’ এখন ঘরে ঘরে| তাই ‘সরষে-কারিপাতা’ এখন খুব প্রিয় ছোঁক| আগে মোহন ভোগ মানেই ঘি-মৌরি| এখন নোনতা সুজিতে কারিপাতা কালো সরষে ও চিনাবাদাম| সেই সুগন্ধ মানেই উপমা বা চিঁড়ের পোহা| গোলমরিচ মাখনের ছোঁক মানেই মঙ্গলা স্যূপ বসালো| মাখন- গোল মরিচের ছোঁক মানেই শীত আসন্ন বা এসে গেছে| এ বার আলু মরিচ বা কর্ণ পালং‚ চিকেন-কিমা-ক্যাপসিকাম| সঙ্গে হার্ড ডোস্ট আর স্যূপ| কিন্তু ভাত-রুটি-পরোটার সঙ্গে যে সব ঘরোয়া খাবার তার ফোড়নেই যত ঝাঁঝ আর তত গুণ|

পায়েসে যেমন দুধের গন্ধ তেমন ফোড়নদারিও কম নয়| ঘিয়ে নেড়ে কামিনী আতপ যখন ছোঁকছ্যাঁক  তখনই একটু ছোট এলাচও | দুধ ফুটলে দু-এক দানা বড় এলাচ| এ হলো এলাচ গন্ধি পায়েস| আবার‚ ফুলকপি‚ বাঁধাকপি‚ সাদা আলুর পায়েস ফোড়ন হল ঘি-এ কাজু পেস্তার ছোঁক| এলাচের বাহাদুরি কম‚ বাদাম-গন্ধের নির্যাস-এ চাল ছাড়া| বিবাদের রাতে খাওয়ার কম গুরুপাক পায়েস| আমার ঠাকুমা আবার সামান্য ঘিয়ে শুকনো মহুয়া ফুল নেড়ে দুধ ফেলে ঢিমে কয়লার আঁচে ফোটাতেন| সে দুধ এগিয়ে দিলে কখনও না করিনি| গোবিন্দভোগ চালের পায়েসে দিতেন পায়েস পাতার কুচি| ফোড়ন ধেরে গেলেই সেগুলো তুলে ফেলতেন|

তবে বর্ষার খিচুড়ির ফোড়ন মানেই ঝমঝম বৃষ্টি আর ভূতের গল্প| ছুটির দিনে না হলে রাতেই বেশি জমতো| সঙ্গে মাঁসের শুকনো কষা আর পাঁপড়| চাল-ডাল আলু ফুটে এলেই হাতায় করে জিরে লঙ্কা পেঁয়াজ কুচি- এক থালা ঘি-এ| এবার সেই ঘি ফোড়ন ঢেলে দিলেই রমরমিয়ে খিদে| তবে এ হল মুসুর ডালের সেদ্ধচালের  খিচুড়ি| চাল কম ডাল বেশি| মুগ-মটর মেশালে নিরামিষ খিচুড়িতে জিরে তেজপাতা আর গোটা গরম মশলা| শুধু সোনা মুগ ডালে‚ গোবিন্দ ভাগ চালের খিচুড়িতে ঘি-জিরে গরম মশলার ফোড়নে নারকেল পড়বেই| ফলে সেই কুচো নারকেলের গন্ধই বলে দেবে যে এর পর পাঁচ ভাজা সমেত আর কী কী হবে| এ সব ফোড়নে চাকলাকি বা পরতন্ত্র না ঢোকানোই ভাল| সাবেক স্বাদ টাইম টেস্টেই|

রান্নার এই ফোড়নদারি‚ লড়াই হাঁড়ি হাতা থেকে কখন যে আমাদের কথায় এসে ঠেকবে তার হদিশ কেউ রাখেনি| থাপুস থুপুস গিন্নিরা বেশি কথা বলতেন না| তবে বাচলতা কানে গেলেই ফোড়ন কাটতেন| নতুন কিছু-অপছন্দের হলেই বলতেন‚ ‘দু’দিনের বৈরাগী ভাতকে কয় অন্ন’| কচি বউ‚ লাউ আর চাল কুমড়ো গুলিয়ে ফেললেই‚ ‘বাপের জন্মে দেখেনি চাষ’ ধান দেখে কয় দুব্বোঘাস’| এইসব নিরামিষ ফোড়নের সঙ্গে থাকতো কান গরম হয়ে যাওয়া বা লজ্জায় লাল-বেগুনি হয়ে যাওয়া সব ফোড়নও| মল‚ ছম ছম বাজলেই ‘ধিঙ্গি মদ‚ মা আমার’|

আর এরই সঙ্গে ছিল গল্পের মাঝখানে ফোড়ন কেটে পালিয়ে যাওয়া ছোট কাকা‚ সেজ পিসি বা না’মামা| ছিল দাদুদের ফোড়ন-গিন্নীকে নিয়ে‚ বৌমাদের নিয়ে বা নাতনিদের নিয়ে মশকরা| ধোপা-নাপিত বলে ফোড়ন| হা-ভাতে বলে ফোড়ন| মড়া-কান্না বলে ফোড়নও| ফোড়ন কাটার অধিকার সবার থাকলেও‚ সকলে ফোড়ন নবিশ হতেন না| এটাতে পারদর্শিতা লাগত| জায়গা মত মাথা খেলানো এবং বলার অঙ্গ ভঙ্গি| কেউ এক ফোড়নে হাসতো| কেউ বা কাঁদতো| কারোরটা আবার ব্যাটে বলে হতো-না| তার ভাগ্যে ‘ভাগ এখান থেকে‚ বোকা কোথাকার|’

রান্নাঘর এখন ফিটফাট| স্মোকলেস| ওপেন কিচেন| নানা তৈজসপত্রের প্রদর্শনী| চিমনি তো আর ফোড়ন ঝাঁঝ টানতে পারেনা| ছোট‚ খুপড়িতে ফোড়নদারি করলেই সকলের কাশি এবং গেল গেল রব| এ.সি মেশিনের দম ফাঁস| তাই চারকোল ফ্লেবার বা কোল্ড স্যালাড অনেক আরামদায়ী| ফোড়নের বদলে মোগলাই এবং আখনির জল ঢের ঢের ভদ্র| ডি-টক্স ওয়াটারের মতো ডি-টক্স ডায়েটও ফোড়নহীন| না রান্নায়‚ না আলাপচারিতায় ফোড়ন এখন অ্যান্টিক| লেখার বিলাস| ব্যঞ্জুনে গিন্নিদের আঁচলের সেই চাবির গোছা যেমন এখন ডিজিটাইজড নম্বরে-সেভ অ্যান্ড অর্ডার‚ ফোড়নও এখন ঠাকুমার ঝুলি বা চাঁদের মা বুড়ির চরখার সুতোয় দু’এক গাছি সোনার ‘হালি’| কালে ভদ্রে মনে পড়া উদাসী মনের বাঁকটুকু|

Mandar Mukhopadhyay

আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান।
ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *