ঘটনাটা বেশ পুরানো। আট বছর আগে বিহারের মুজাফ্ফরপুর জেলার বাহবাল গ্রামের শিব নারায়ণ প্রসাদের স্ত্রী সুশীলা দেবীকে, ‘ শ্রী কৃষ্ণ মেডিক্যাল কলেজ হসপিটাল’-এ ভর্তি করা হয়েছিলেন পা পুড়ে যাওয়ার কারণে। কিন্তু ডাক্তাররা তাঁর পায়ের চিকিৎসা না করে ভুলবশত তাঁর গল ব্লাডার অপারেশন করে ফেলেন। ডা. নন্দ কিশোর মিশ্র এবং ডা. কৃষ্ণ কুমারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে হসপিটালের বোর্ড। যদিও দুজনেই তাঁদের দোষ অস্বীকার করেছেন এবং জানিয়েছেন যে তাঁরা ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন।

ডা. মিশ্র এখন আর এই হসপিটালে কাজ করেন না। কিন্তু সেই সময় তিনি সার্জারির সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। এখন উনি পেনশন পান। সরকার থেকে জানানো হয়েছে যে তাঁর পেনশনের ১০% কেটে নেওয়া হবে। ডা. কৃষ্ণ কুমার এখন বিহার হেলথ সার্ভিসে কাজ করেন। তাঁর আগামী তিন বছর মাইনে যে বাড়ানো হবে না তা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য দপ্তরের মুখ্য সচীব সঞ্জয় কুমার। আট বছর আগে ডা. কুমার ওই হাসপাতালে অ্যানাসথেশিওলজি বিভাগে সিনিয়র রেসিডেন্ট ছিলেন। সঞ্জয় বাবু আরও বলেছেন যে এই পদক্ষেপ বিহারের প্রতিটি ডাক্তারের কাছে নিদর্শন হয়ে থাকবে। কেউ চিকিৎসায় গাফিলতি করার সাহস পাবেন না।

ডা. মিশ্র অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মানেননি। উনি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন যে সুশীলা দেবী নামের কাউকে উনি চেনেন না। তাঁর কোনও চিকিৎসাও উনি করেননি। সার্জারি যে ডাক্তার করেছিলেন, তিনি ওঁর ইউনিটের সদস্য ছিলেন বলে, তাঁকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। উনি জানিয়েছেন যে রোগী ভুল পরিচয় দিয়েছিলেন বলেই সমস্যা হয়েছিল। হাসপাতালের কর্মী এবং নার্সরা সেই ভুলটা ধরতে পারেননি বলে আজ তাঁকে অপদস্থ হতে হচ্ছে।

‘ডা. ভরদ্বাজ, (সেই সময়ে হেড অব সার্জারি ছিলেন) আর আমি এক সঙ্গে দুটো ওটিতে অপারেশন করছিলাম। নার্স যখন কিরণ দেবীর নাম ধরে ডাকেন, ওই ভদ্রমহিলা এগিয়ে আসেন। নার্স তাঁর নাম কিরণ দেবী কি না জানতে চাওয়া, উনি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানান। আর এখান থেকেই গন্ডগোলের সূত্রপাত। ভদ্রমহিলার অপারেশন যেহেতু দুবার আগে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাই ওঁর মনে হয়েছিল যে তৃতীয় বারও পিছিয়ে দেওয়া হবে। সেই ভেবে উনি কিরণ দেবী সেজে অপারেশন থিয়েটারে চলে আসেন। অন্যাসথেটিস্টকেও উনি একই কথা বলেন। এবার আসল কিরণ দেবীর গল ব্লাডার স্টোন অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। আমি সেই সময় অন্য একজন রোগীর অপারেশন করছিলাম। যে ডাক্তার সুশীলা দেবীর অপারেশন করেন, তিনি ভেবেছিলেন যে কিরণ দেবীর অপারেশন করছেন। আর যেহেতু তিনি আমার ইউনিটে কাজ করতেন, তাই আমাকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়,’ জানালেন ডা. মিশ্র।

গত বছর থেকে উনি আর চাকরি করছেন না। কিন্তু ওঁর দাবী এখনও পর্যন্ত একটা টাকা পেনসনও উনি পাননি। ডা. কৃষ্ণ কুমারও মনে করেন ওঁকে শুধু শুধু অপরাধীর তকমা দেওয়া হচ্ছে। ওঁর মতে পেশেন্টের কী অপারেশন হবে তা সার্জনদের দেখা উচিত ছিল। ওঁর কাজ অ্যানাসথিশেয়া দেওয়া যা উনি নির্ভুলভাবেই করেছিলেন। সুতরাং তাঁকে দোষ দেওয়াটা একেবারেই অন্য়ায়। উনি আইনের সাহায্য নেবেন বলে জানিয়েছেন।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার যিনি সার্জারিটি করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধ কিন্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ইনকোয়ারি কমিটির সামনে তিনি সাফ বলেছেন যে তিনি সার্জারিটি করেননি। কমিটি তাঁর কথা মেনেও নিয়েছে। অথচ নার্স কমলা কুমারী, যিনি পেশেন্টকে ওটি তে নিয়ে এসেছিলেন, তাঁর আগামী চার বছর মাইনে বাড়ানো হবে না বলে কমিটি জানিয়েছে। কমলা কুমারী অবশ্য সমস্ত দোষ সুশীলা দেবীর উপরই চাপিয়েছেন। ওঁর ভুলের জন্যেই যে সবাইকে ভুগতে হচ্ছে, তা বলতে ভোলেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *