বয়স মাত্র ১৬। কিন্তু কাজের দিক থেকে দেখলে অনেককেই ছাপিয়ে যাবেন গ্রেটা থানবার্গ। সুইডিশ নাগরিক গ্রেটা মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনাতে বাড়াতে আগ্রহী। নিরন্তর পরিবেশ রক্ষার জন্য কাজ করেন। আর তার সমস্ত প্রচেষ্টাকে সম্মান জানাল ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্য়াশনাল’। গ্রেটা ও তাঁর ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার ইয়ুথ মুভমেন্ট’, ‘অ্যাম্বাসাডর অব কনসায়েন্স’ পুরস্কার পেল। পরিবেশকে রক্ষা করতে এবং বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়াতে এখন থেকেই কী করা উচিত তাই নিয়ে লড়াই করছেন গ্রেটা।

আর পাঁচটা টিনএজারের চেয়ে একেবারেই আলাদা গ্রেটার চিন্তা ভাবনা। পরিবেশ বাঁচানোর তাগিদেই তিনি স্কুল থেকে এক বছরের বিরতি নিয়েছেন, শুধু নিজের কাজে মনোনিবেশ করার জন্য। ওয়াশিংটনের ‘দ্য জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি’-তে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছিল। গ্রেটার এই অবদান দেখে উদ্বুদ্ধ হন সকলেই।

মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে গ্রেটা নিজের ভাবনা সকলের সামনে মেলে ধরেন। উনি বলেন, ‘আমরা সাংঘাতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এখন আমাদের উচিত সেইদিকেই মন দেওয়া। এই বিপর্যয় নিয়ে কোনও রাজনীতি করার সময় এখন নয়। তাই সকলেকেই এগিয়ে আসতে। নিজেদের তরফ থেকে যেভাবে হোক দায়িত্ব নিতে হবে। সকলে মিলে যদি পরিবেশের যত্ন নিতে পারি, তা হলে এই বিপর্যয় আমরা ঠিকই কাটিয়ে উঠব। সাধারণ মানুষের শক্তিতে আমি বিশ্বাস করি।’

গ্রেটা আরও বলেন যে এই বিশেষ পুরস্কার তাঁর একার নয়। সকল যুবা-যুবতীর যাঁরা তাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে কাজ করেছেন, যাঁরা গত বছর ধরে প্রতি শুক্রবার স্কুলগুলোতে স্ট্রাইক ডেকেছেন, এই পুরস্কার তাঁদের উৎসর্গ করেন তিনি। গ্রেটা ২০১৮ সালে অগস্ট মাসে সুইডেনের পার্লামেন্টের বাইরে ধর্নায় বসেছিলেন। তাই দেখেই বাকি ছেলেমেয়েরা এগিয়ে আসেন এবং গ্রেটার পাশে এসে দাঁড়ান।

গ্রেটার পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে এখন তাকিয়ে আছে সকলেই। ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেটা আর নিউ ইয়র্কের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী রাস্তায় নামবেন গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকের অংশীদার হিসেবে। সারা বিশ্ব জুড়েই সেদিন প্রতিবাদ চলবে বলে জানিয়েছেন গ্রেটা। আগামী শনিবার ইউনাইটেড নেশনে আয়োজন করা হয়েছে প্রথম ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিট-এর। সোমবার আয়োজন করা হয়েছে ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিট-এর, যার আহ্বায়ক খোদ ইউএন-এর মুখ্য কর্তা।  এই সামিটে গ্রিনহাউস গ্যাস এমিশনের কার্যকারিতা নিয়েও আলোচনা করা হবে।

গ্রেটা অবশ্য জানিয়েছেন যে মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ছে। লোকে এখন এই নিয়ে শুধু আলোচনা করছে না, কাজ করার চেষ্টাও করছে। গ্রেটার সহযোদ্ধারাও জানান যে তাঁদের আর কোনওভাবেই উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।

অবশ্য গ্রেটার এই পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য সচীব কুমি নাইডু জানিয়েছেন, ‘আমরা প্রথমে ঠিক করেছিলাম এ বছর কোনও পুরস্কার দেব না। গত বছর  আং সান সু কি যা করেছেন, তার জন্য আমরা অত্যন্ত লজ্জিত। ওঁর পুরস্কার আমরা ফিরিয়ে নিয়েছি। কিন্তু পরে মনে হল গ্রেটা যা করে দেখিয়েছে, তাতে ওঁকে পুরস্কার না দিলে অন্য়ায় হয়ে যাবে। ও বয়সে অনেক ছোট কিন্তু অনেক বেশি মানুষকে অল্প সময়ের মধ্যেই অনুপ্রাণিত করতে পেরেছে। ভবিষ্যতে গ্রেটা যে আরও ভাল কাজ করবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত কুমি নাউডু। প্রসঙ্গতে বলা উচিত, আং সান সু কি-র রোহিঙ্গা নিয়ে ঔদাসীন্য অ্যামনেস্টি ভাল চোখে দেখেনি। তাঁদের মনে হয়েছে যে সু কি মানুষদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ওঁর নীতিবোধ নিয়ে সংশয় উঠেছে। তবে গ্রেটা ও বাকিদের প্রতি আস্থা রাখছেন নাইডু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *