ব্রেন…ফিজিওলজিকালি দেখতে গেলে শরীরের একটা অংশ মাত্র। কিন্তু কার্যকলাপের দিক থেকে দেখলে রীতিমতো শরীরের বস। মস্তিষ্কের হাজার হাজার কোষ শরীরের সমস্ত প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের খাওয়া, ঘুম থেকে শুরু করে আবেগ প্রকাশ, কোনও কিছুই ব্রেনের অঙ্গুলিহেলন ছাড়া হয় না। তাই ব্রেনকে সুস্থ রাখা, ভাল রাখা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু জানেন কি, কিছু অভ্যাসের কারণে ব্রেনের ক্ষতি হতে পারে। আমরা না জেনেবুঝেই এমন অনেক কিছু করে ফেলি, যা মস্তিষ্কের জন্য ভাল নয়। আর এই অভ্যাসগুলোর কারণে ব্রেনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারেন। কী কী সেই অভ্যেস, আসুন জেনে নিই:

১। ঘুমের অভাব

এক আধ দিন ঘুমতে দেরি করলেন চলতে পারে। কিন্তু প্রতি দিন যদি শুতে দেরি করেন এবং তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠাটা বাধ্যতামূলক হয়, তা হলে তা ব্রেনের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। মোদ্দা কথা রাতে যেভাবেই হোক সাত ঘণ্টা ঘুমনো প্রয়োজন। এর চেয়ে কম সময় ঘুমলে নার্ভের সমস্য়া হতে পারে। অ্যালজইমার্স ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। স্মরণশক্তির উপরও এর প্রভাব পড়ে। আসলে ঘুমনোর সময় শরীরের অনেকগুলি প্রক্রিয়া এক সঙ্গে চলতে থাকে। সারা দিন মস্তিষ্কে টক্সিন ও বাই-প্রডাক্ট যা জমে, তা পরিষ্কার হয় ঘুমনোর সময়েই। ঘুম পুরো না হলে, ব্রেন থেকে সমস্ত বিষাক্ত পদার্থ দূর করার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না। এভাবে চলতে থাকলে এগুলো জমতে থাকে এবং পরবর্তীকালে ব্রেনের ভয়াবহ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

২। মাথা ঢেকে ঘুমনো

অনেকেই আছেন যাঁরা চাদর দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে ঘুমান। গবেষণা করে দেখা গেছে, এই অভ্যেস মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত খারাপ। এর ফলে ডিমেনশিয়া এমনকী অ্যালজাইমার্স হতে পারে। আসলে মাথা ঢেকে ঘুমল ব্রেনে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, যা একেবারেই ভাল নয়। পাশাপাশি মাথা ঢেকে ঘুমনো মানে আপনি যে শ্বাসটা বাইরে ছাড়ছেন, সেই হাওয়াটাই আবার নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে। এতেও যথেষ্ট পরমাণ অক্সিজেন থাকে না। সুতরাং এই অভ্যেস থাকলে অবিলম্বে ত্যাগ করুন।

৩। স্ট্রেস

আধুনিক গতিময় জীবনে স্ট্রেস অস্বীকার করার উপায় নেই। সব স্ট্রেস যে খারাপ তাও নয়। অ্যকিউট স্ট্রেস যেমন পরীক্ষার স্ট্রেস বা ইন্টারভিউ বা পারফর্মেন্সের স্ট্রেস খারাপ নয়। কিন্তু ক্রনিক স্ট্রেস অর্থাৎ দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস শরীর এবং মস্তিষ্কের জন্য ভাল নয়। ক্রনিক স্ট্রেসের কারণে শরীরে এক ধরনের স্টেরয়েড হরমোন করটিসল নিঃসৃত হয়। শরীরের করটিসলের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে ওজন বাড়া, হজমের সমস্যা হতে পারে। হরমোনের ভারসাম্যও বিগড়ে যায়। এ ছাড়া ক্যানসার, হার্টের অসুখ বা ডায়াবিটিস হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকাংশে বেড়ে যায়। অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের উপরও প্রভাব পড়ে, যার ফলে সব সময়ই ক্লান্ত লাগে।

এই অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে স্মরণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়, মস্তিষ্কের প্রক্রিয়ার গতি কমে যায়। খামোখা সব বিষয়ে টেনশন হয়, উদ্বেগ হয়। এমনকী ব্রেনের গঠনগত পরিবর্তনও হতে পারে। ডিএনএ-র গঠনেও আসতে পারে পরিবর্তন। তাই চেষ্টা করুন স্ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করতে। গান শুনুন, মেডিটেশন করুন। যে কাজ করলে আপনি রিল্যাক্স বোধ করেন, সেগুলো বেশি করে করার চেষ্টা করুন।

৪। জল কম খাওয়া

আমাদের শরীরের ২/৩ অংশই জল। ফলে শরীর যাতে ঠিক মতো কাজ করতে পারে, তার জন্য জলের প্রয়োজন খুব বেশি মাত্রায়। সেই জন্য ডিহাইড্রেশন হওয়া মোটে ভাল নয়। এর থেকে মাইগ্রেন, কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিডনিতে পাথরও জমতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি অবশ্য মস্তিষ্কেরই হয়। ব্রেনের ২/৩ অংশ জলীয়। ফলে ডিহাইড্রেশন হলে, ব্রেনের আয়তন কমে যায়। এর ফলে মাথায় সাংঘাতিক ব্যথা হয়। মস্তিষ্কের কাজেও বাধা পড়ে। এ ছাড়া বিরক্ত লাগে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সুতরাং নিয়মিত ভাল করে জল খাওয়া খুব জরুরি।

 ৫। এক্সারসাইজের অভাব

মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে তাকে অ্যাক্টিভ রাখা জরুরি। যাঁরা মাথা খাটান, তাঁদের ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম। স্মরণশক্তিও ভাল থাকে। মস্তিষ্ক যাতে অ্যাক্টিভ থাকে তার জন্য বেশি করে বই পড়ুন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশা করুন, অনলাইন কোর্স করুন, শব্দছক বা ধাঁধার সমাধান করুন। নতুন কিছু শিখতে থাকলে মস্তিষ্ক ঝিমিয়ে পড়ার সুযোগ পায় না। একই ভাবে শরীরকেও সচল রাখুন। এক্সারসাইজ করুন। শরীর অ্য়াক্টিভ না থাকলে পরোক্ষভাবে তার প্রভাবও ব্রেনের উপর পড়ে।

আরও কিছু কুঅভ্যাস যা ব্রেনের ক্ষতি করতে পারে—

● একা একা থাকা

● অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়া

● হেডফোনে জোরে জোরে গান শোনা

● ধূমপান করা

● অতিরিক্ত মদ্যপান করা

● অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া

● দীর্ঘ সময় অন্ধকারে থাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *