শাশুড়ির সঙ্গে বউমার সম্পর্ক অম্লমধুর। আজ আড়ি তো কাল ভাব। মানে ঠিক গলায় গলায় ভাব তাও নয়, তবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। সব সংসারেই শাশুড়ির সঙ্গে খুঁটিনাটি সমস্যা লেগেই থাকে। আর যাঁদের থাকে না, তাঁরা যে বেজায় ভাগ্যবান তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না। মনস্তত্ববিদরা বলেন শাশুড়ি-বউমার দ্বন্দ্ব আসলে আধিপত্য ও অধিকারবোধের লড়াই। কেউই তাঁর স্থান অন্যকে ছেড়ে দিতে রাজি নন। শাশুড়ি মনে করে সংসার তাঁর। তিলে তিলে যাকে গড়ে তুলেছেন, হঠাৎ নতুন কেউ এসে তার রাশ নিজের হাতে নিয়ে নেবে, তা কি করে হতে পারে! আবার বউমা ভাবে যে তিনি বিয়ের আগে যেভাবে নিজের বাড়িতে প্রাধান্য পেতেন, তা এই নতুন বাড়িতে পাবেন না কেন! ফলে তাঁদের বিরোধ হওয়াটা আটকায় কে! সমস্যা হয় ছেলের। মা আর বউয়ের মধ্যে স্যান্ডউয়িচ হয়ে বসে থাকে। বউয়ের পক্ষ নিলে মায়ের মুখ ভার আর মার দিকে ঝোল টেনে কথা বললে, বউয়ের তিরিক্ষে মেজাজ। সে বেচারা যায় কোথায়! আমি অবশ্য বলি শাশুড়ি-বউয়ের মনোমালিন্য দু’জনের মধ্যেই থাকা ভাল। শুধু শুধু অন্যদের জড়াবেন না। দেখুন একটু আধটু ‘তু তু ম্যায় ম্যায়’ হতেই পারে, কিন্তু প্রবল অশান্তি হলে সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে ভাবতে হব বই কী! তবে আজ সে সব কথা থাক। আজ আমরা ঝগড়া নয়, ভাবের কথা বলব। বউমা বয়সে অভিজ্ঞতায় শাশুড়ির চেয়ে কম। মা নাই হলেন, কিন্তু মার বয়সী একজন মহিলা ভেবে তাকে সম্মান করতে অসুবিধে কোথায়! আবার শাশুড়িদেরও বলি, বউমাকে মেয়ে নাই বা ভাবলেন, তাই বলে অতটা অপছন্দ করার কোনও কারণ সত্যিই আছে কি না, একবার ভেবে দেখতে পারেন।

দেখুন বিয়ে মানে তো আর শুধু একজনের সঙ্গে সম্পর্ক নয়, তাঁর গোটা পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা। প্রথম থেকেই শাশুড়ির প্রতি মারমার-কাটকাট মনোভাব নাই বা পোষণ করলেন। তার চেয়ে রিভার্স সাইকোলজি প্রয়োগ করুন। ইম্প্রেস করে ফেলুন আপনার শাশুড়িকে। আর এক বার যদি সেটা করতে পারেন, তা হলে দেখবেন আপনার প্রশংসায় উনি সর্বদাই পঞ্চমুখ। পাড়া-পড়শি থেকে আত্মীয়স্বজন, সবাইকে তখন উনি বলে বেড়াবেন যে কেমন হিরের টুকরো বউমা উনি বাড়িতে এনেছেন। আর আজ সেই কৌশলই আপনাদের শেখাবো। রাতারাতি ফল আশা করবেন না, কিন্তু আখেরে যে আপনি লাভবান হবে, সে গ্যারিন্টি দিতে পারি।

১। হোমওর্য়ক করে রাখুন–বিয়ের আগেই স্বামীকে জিজ্ঞেস করে নিন, ঠিক কোন কোন বিষয়ে আপনার হবু শাশুড়ি স্পর্ষকাতর। সেই সব বিষয় তা হলে এড়িয়ে যাওয়াই যে ভাল মনে মনে স্থির করে নিন। পরিবারে কোনও বিবাদ, ঝামেলা থাকলে, সেই ব্যাপারে পুরো না জেনে কোনওরকম মন্তব্য করবেন না। পাশাপাশি শাশুড়ি কী পছন্দ করেন, তাও জেনে নিন। বেশিরভাগ শাশুড়ি কিন্তু সিরিয়ালের বেজায় ভক্ত হন। আপনার প্যানপ্যানানি মেলোড্রামা ভাল নাই লাগতে পারে, কিন্তু ওই বিষয়ে একটু কথা বলেই দেখুন না। চমৎকার আইস ব্রেকারের কাজ করবে। সম্পর্কের শুরুটা যে ভাল হবে নিশ্চিত থাকতে পারেন।

২। মাঝে মধ্যে উপহার দিন–উপহার পেতে সকলেই ভালবাসেন। বাচ্চা-বুড়ো সকলেই। আপনার শাশুড়িও কিন্তু ব্যতিক্রম নন। মুখে না বললেও উপহার পেলে যে উনি খুশি হবেন জানা কথা। জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী তো আছেই, এ ছাড়াও বিনা কারণে টুকটাক উপহার দিতে থাকুন। চিঁড়ে তাতে কিন্তু ঠিকই ভিজবে, যতই আশপাশে কান ভাঙানোর লোক থাকুক না কেন।

৩। প্রতিযোগিতা করবেন না–এই কথাটা কিন্তু একেবারে মনে গেঁথে নিন। দেখুন ছোটবেলা থেকে নিজের সন্তানকে উনি মানুষ করেছেন, ফলে তাঁর সম্পর্কে একটু পসেসিভ তো হবেনই। একদম আশা করবেন না যে ছেলের সমস্ত অধিকার উনি বিয়ের পর রাতারাতি ছেড়ে দেবেন। যেমন কথায় কথায় জানান দেওয়ার দরকার নেই যে আপনার স্বামী কী খেতে ভালবাসেন বা কেমন পোশাক পরতে পছন্দ করেন। হতেই পারে আপনার স্বামী ওঁর চেয়ে আপনার হাতের রান্না খেতে ভালবাসেন, কিন্তু সেই কথাটা তো ওঁর জানার প্রয়োজন নেই। উল্টে ওঁর রান্নার প্রশংসা করুন। তিন-চারটে রেসিপি ওঁর থেকে শিখে নিন। অল্পবিস্তর স্তুতি কিন্তু কোনও ক্ষতি করে না!

৪। নম্র আচরণ করুন–মিষ্টি মধুর কথা না বলতে ইচ্ছে করতেই পারে, কিন্তু অভদ্র ব্যবহার কখনওই করবেন না। ওঁর সব কথার অবাধ্য হবেন না। সব কথা কাটবেন না। কথার পিঠে কথা ওঠে আর এতে ঝগড়া বাড়া। যদি ওঁর কোনও কথা পছন্দ নাও হয়, মাথা গরম না করে, ঠাণ্ডা মাথায় বুঝিয়ে দেবেন কেন আপনি ওঁর সেই কথাটা মানতে পারছেন না। চিৎকার করে কথা বললে কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না বরং সম্পর্কের জটিলতা আরও বাড়বে।

৫। নিয়মিত ফোন করুন–হতে পারে আপনি ও আপনার শাশুড়ি আলাদা আলাদা শহরে থাকেন। এই ক্ষেত্রে নিয়মিত শাশুড়িকে ফোন করে খোঁজখবর নিন। ওঁর ফোনের অপেক্ষা করবেন না। একইরকমভাবে আপনি যদি কাজের সূত্রে বাইরে যান, শাশুড়িকে দিনের শেষে একটা ফোন করে ওঁরা খেয়েছেন কি না, শরীর কেমন আছে, ওষুধ খেয়েছেন কি না বা কিছু নিয়ে আসবেন কি না জেনে নিন। আপনি ওঁর ব্যাপারে এতটা সচেতন জেনে ওঁর কিন্তু ভালই লাগবে আর আপনার শাশুড়ির স্কোরিং কার্ডে ভাল রেটিং পাবেন।

৬। পরামর্শ চাইতে ভুলবেন না--ছোটখাটো বিষয়ে শাশুড়ির পরামর্শ চেয়ে নিন। মানতে হবেই বলছি না, কিন্তু আপনার জীবনে যে শাশুড়ির একটা আলাদা স্থান, গুরুত্ব আছে, তা জেনে উনি বেজায় খুশি হবেন। আপনাদের জীবনে যে এখনও ওঁদের প্রয়োজনীয়তা আছে তা বুঝতে পারলে আপনার প্রতি ওঁর ভালবাসা বাড়বে।

৭। সবার সমানে শাশুড়িকে ছোট করবেন না–শাশুড়ির সঙ্গে মতের অমিল থাকতেই পারে, কিন্তু তা নিয়ে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আলোচনা করবেন না। বিশেষ করে কোনও পারিবারিক অনুষ্ঠান থাকলে একসঙ্গে যাওয়া আসা করুন। সেখানে গিয়ে শাশুড়ির নামে কোনও রকমে উল্টোপাল্টা কথা বলবেন না। বাড়ির বাইরে আপনারা কতটা ঐক্যবদ্ধ, তা বোঝানোই ভাল।

থিওরির পালা কিন্তু এবার শেষ। প্র্যাক্টিকালটা শুরু করে ফেলুন তো দেখি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *