আগেকার দিনে প্রচলিত ধারণা ছিল যে সন্তানের লিঙ্গ নির্ভর করে মায়ের উপর। সেই যে ৭০ দশকের সিনেমায় দেখাত না, ছেলে সন্তান না হলে কেমন অত্যাচারিত হতেন মায়েরা। ভাবলে অবাক লাগে, না জেনে কত কিছুই না আমরা প্রচার করে ফেলি। দীর্ঘ দিন পর্যন্ত এই ধারণাই আমাদের সকলকে চালিত করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য এই ধারণা বদলেছে। এখন আমরা সবাই জানি যে সন্তানের লিঙ্গ নির্ভর করে বাবার উপর।

একজন মহিলা শুধুই এক্স (x) ক্রোমোজোম বহন করেন। পুরুষের সেখানে এক্স এবং ওয়াই (X and Y) দুই ক্রোমোজোমই থাকে। এবার শুক্রাণু কোন ক্রোমোজোম বহন করছে, তা ঠিক করে দেয় সন্তান মেয়ে হবে না ছেলে। যদি এক্স ক্রোমোজোম শুক্রাণুর মাধ্যমে মহিলার ডিম্বাণুর এক্স ক্রোমোজোমের সঙ্গে মিলিত হয়, তা হলে কন্যা সন্তান হয় এবং ওয়াই ক্রোমোজোম মিলিত হলে পুত্র সন্তান হয়। রিসার্চ দ্বারা এই সত্য বহুদিন আগেই প্রমাণিত হয়ে গেছে। তবে এখনও অনেকেই আছেন যাঁরা মহিলাদেরই এর জন্য দায়ী করেন। দুঃখের বিষয় এখনও সমাজকে পুরোপুরি সংস্কার মুক্ত করতে পারেনি বিজ্ঞান।

সম্প্রতি আর একটি গবেষণায় এই প্রসঙ্গে আরও তথ্য জানা গেছে। ‘নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটি’-র গবেষকরা উত্তর আমেরিকা আর ইউরোপের হাজার হাজার পরিবারের উপর পরীক্ষা করেছেন। ৯২৭টি ফ্যামিলি ট্রির ৫৫৬, ৩৮৭ মানুষ এই গবেষণায় সামিল হয়েছিলেন। প্রধান গবেষক কোরি গেলাটলি জানিয়েছেন, ‘ সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে তা অবশ্যই পুরুষের ক্রোমোজোমের উপর নির্ভর করে। এবার সেই পুরুষের যদি বেশি সংখ্যায় ভাই থাকে, তা হলে তার ছেলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্য দিকে তাঁর যদি বোন থাকে, তা হলে তাঁর কন্যা সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।‘

গেলাটলি আরও বলেছেন যে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই কথাটা খাটলেও মহিলাদের ক্ষেত্রে এরকম কোনও প্রমাণ পাননি তাঁরা। জানা গেছে এমন একটি জিন আছে পুরুষদের শরীরে যা ঠিক করে দেয় তাঁর শুক্রাণু বেশি সংখ্যক এক্স ক্রোমোজোম বহন করবে না ওয়াই ক্রোমোজোম। আর এর উপরই স্বাভাবিকভাবে নির্ভর করবে তাঁর সন্তানের লিঙ্গ।

যাঁরা জানেন না, তাঁদের বলি, একটি জিনের দু’টি ভাগ থাকে। বাবা ও মা দুজনের থেকেই এই অংশ উত্তরাধিকারসূত্রে পায় ছেলে-মেয়েরা। ডাক্তারি পরিভাষায় এই অংশগুলোকে বলা হয় অ্যালিলেস। গেলেটলির মতে পুরুষরা দু’ধরনের অ্যালিলেস বহন করেন যার ফলে জিনে এক্স ও ওয়াই ক্রোমোজোমের অনুপাত তিন রকম ভাবে থাকতে পারে।

যদি কোনও পুরুষ বেশি সংখ্যক ওয়াই ক্রোমোজোম বহন করেন, তা হলে তাঁর ছেলে হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যাঁদের এক্স ও ওয়াই ক্রোমোজোমের সংখ্যা সমান সমান, তাঁদের ক্ষেত্রে ছেলেও হতে পারে আবার মেয়েও। গেলেটলি আরও বলেছেন, ‘এই জিনের কারণেও কোনও কোনও পুরুষের বেশি সংখ্যায় মেয়ে সন্তান হয় আরও কারও ক্ষেত্রে আবার ছেলে সন্তানের সংখ্যা বেশি। মোটামুটি সারা পৃথিবীতে ছেলে ও মেয়ের সংখ্যা কিন্তু সমান সমান। এবার যদি ছেলের সংখ্যা বেড়ে যায়, তা হলে মহিলাদের পক্ষে আদর্শ সঙ্গী খুঁজে পাওয়াটা বেশি সহজ হয়ে যাবে। এবার যদি দেখা যায় বেশিরভাগ পুরুষদের মধ্যে এক্স ক্রোমোজোমের অনুপাত বেশি, তা হলে পরবর্তী প্রজন্মে মেয়ের সংখ্যা বেশি হবে।’ এ ভাবেই জনসংখ্যার ব্যালেন্স বজায় থাকে বলে দাবী করেছেন গেলেটলি।   


One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *