বিপর্যযের মুখে পড়লে বেশিরভাগ মানুষই সেখান থেকে পালিয়ে যায়| কিন্তু রামদাস উমাজি মদানে সেই বিভাগে পড়েন না| আট দিন ধরে ক্রমাগত বৃষ্টির পর পশ্চিম মহারাষ্ট্রের বেশ কয়েকটা গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে| প্রায় দু’লক্ষ মানুষকে উঁচু জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়| অনেকের মৃত্যুও হয়েছে| কিন্তু এই বিশৃঙ্খলার মাঝে পঞ্চান্ন বছরের রামদাস নিজের কথা না ভেবে কয়েকশো মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন|

সাঙ্গলি তালুকার দুধহোন্ডি গ্রামের বাসিন্দা রামদাস| জীবিকার জন্য মাছ ধরেন| এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উনি বলেন ‘প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি পড়ছিল| আগেই আমাদের সতর্ক করা হয়েছিল| গ্রামের মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ| কয়েক জন সেই সতর্কবাণী শুনেছিলেন| কিন্তু বেশির ভাগ গ্রামবাসী তাঁদের বাড়িতেই ছিলেন| আমরা আশা করেছিলাম বৃষ্টি কমে যাবে| কিন্তু তার বদলে আরও জোরে বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করল| ‘
পরিস্থিতি নিয়ত্রণের বাইরে চলে যায় যখন কাছাকাছি কোয়না ও উজনি বাঁধ থেকে জল ছাড়া হয়| বাঁধ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বিগত পঞ্চাশ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে| এর ফলে বেশ কয়েকটা গ্রাম জলের তলায় ডুবে যায়| দুধহোন্ডি তাদের মধ্যে একটা| রামদাসের বাড়ি নদীর ধারে| তার বাড়িও জলের তলায় ডুবে যায়| ‘আমাদের দোতলা বাড়ি| নীচের তলাটা সম্পূর্ণ জলের তলায় ডুবে গেছিল| আমরা বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলাম|’ জানিয়েছেন রামদাস|
এর মাঝেই রামদাস তাঁর ছোট্ট নৌকা নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন দুধহোন্ডি ও তার আশেপাশের গ্রামে থেকে বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধার করতে| রামদাস জানিয়েছেন ওঁর নৌকাটা বেশ ছোট| নৌকার ভারসাম্য বজায় রাখাটা সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল| কিন্তু তা-ও উনি ৩০০ বারের কাছাকাছি যাওয়া আসা করে কাছের উচ্চ বিদ্যালয়ে মানুষদের পৌঁছে দেন| এই ভাবে উনি ৫০০-র ও বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন|
রামদাসের ভাইপো বিজয় ও উদ্ধার কাজে তাঁর কাকাকে সাহায্য করেন| উনি জানিয়েছেন ‘আমরা চাইলে নিরাপদ জায়গায় চেলে যেতে পারতাম| কিন্তু যদি কারও দরকার লাগে, এই ভেবে গেলাম না| আমি খাওয়ার জল‚ খাবার ও জামাকাপড় পৌঁছে দিতাম স্কুলে| সেখানেই রান্না হত| আমি খানিকটা খাবার আমার কাকার জন্যেও নিয়ে আসতাম|’
ইতি মধ্যেই সেনাবাহিনী‚ নৌবাহিনী‚ বায়ু সেনার ও এনডিআরএফ-এর বেশ কয়েকটা দল উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসে| কিন্তু যত দিন না তারা উপস্থিত হয়েছিল তত দিন রামদাস ও বিজয় অক্লান্ত পরিশ্রম করে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যান|
অনেকেই রামদাসকে প্রশ্ন করেন ‘কেন উনি নিজের জীবন বিপন্ন করে উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন?’ উত্তরে রামদাস জানিয়েছেন ‘এটাই তো স্বাভাবিক| কিন্তু তাই বলে আমাকে হিরো ভাববেন না| এই পরিস্থিতি আমার যেটুকু করার ছিল তাই করেছি| ভবিষ্যতেও করবো|’