বাইরে মিশমিশে অন্ধকার। চারদিক নিশ্চুপ। ঘড়ির কাঁটা প্রায় ১টা ছুঁইছুঁই। হঠাৎ করেই পেটের মধ্যে গুড়গুড়ানি। ঘুম ভেঙে উঠে বসলেন আপনি। এমন খিদে পেয়েছে যে মনে হচ্ছে ডিনারে শুধুই জল খেয়েছিলেন! ওমনি খাট থেকে নেমে সোজা হানা দিলেন রান্নাঘরে। ফ্রিজ খুলেই চোখের সামনে দেখলেন সকালের আনা ব্রাউনিটা আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে। আর কী! অপেক্ষা না করে, সোজা ঢুকিয়ে দিলেন মুখের ভিতরে। স্বর্গীয় স্বাদে মন একেবারে খুশ আর খিদেও ততক্ষণে পালিয়ে গেছে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। আবার গুটিগুটি পায়ে, কেউ ঘুম থেকে ওঠার আগেই চুপচাপ শুয়ে পড়লেন নিজের জায়গায়। পর দিন সকাল বেলা রাতের কাণ্ড কারখানা মনে পড়তেই, একেবারে লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন। শরীরের কথা এক বার মনে পড়েনি আপনার। ভালই জানেন মাঝ রাতে এত হাই ক্যালরি খাবার খেলে শরীর মোটেও তা সইবে না। ওজনও যে বাড়বে বলাই বাহুল্য। কিন্তু খিদে পেলে তখন করবেনটা কী! বলতেই পারেন, অত রাতে যা পাবেন তাই তো খাবেন। কিন্তু তাই বলে দিনের পর দিন যদি মাঝ রাতে পেস্ট্রি, কুকিজ, আইসক্রিম খান, তা হলে কিন্তু পরে আমাদের দোষ দিতে পারবেন না। তার চেয়ে বলি ডিনারটা মন দিয়ে করুন, যাতে ঘুমের মধ্যে খিদে না পায়। আর যদি একান্তই পায়, তা হলে স্বাস্থ্যকর খাবার হাতের কাছে রাখুন। তখন যা পাব, তাই খাব নিয়মটা খাটালেও কোনও সমস্যা হবে না। কী খাবেন জানতে চাইছেন? তাই তো বানিয়ে দিলাম ফর্দ। তালিকা মিলিয়ে রেখে দিন বাড়িতে। মাঝ রাতে খিদে পেলেও কোনও অসুবিধে হবে না।

● ফলের স্যালাড

সকলের বাড়িতেই অল্প আধটু ফল থাকে। খিদে পেলে যা যা ফল আছে, তা দিয়ে একটা ফ্রুট স্যালাড বানিয়ে ফেলুন। মাঝ রাতে খিদে পেলেও স্বাস্থ্যের সঙ্গে তো আর আপস করা যায় না!

● কলা

বিশ্বাস করুন, এর থেকে ভাল বিকল্প আর নেই। রাতের খিদে তাড়ানোর জন্য দু’টো কলাই কিন্তু যথেষ্ট। চাইলে চিনি ছাড়া আমন্ড বাটারে ডুবিয়েও কলা খেতে পারেন। ক্যালরি নেহাতই কম। আর এ ভাবে কলা খেলে শরীরে মেলাটনিনের (এক ধরনের হরমোন)পরিমাণ বেড়ে যার ফলে ভাল ঘুমও হয়।

● ফল আর দই

আঙুর, স্ট্রবেরি, লিচু মানে যে কোনও পছন্দের ফল আর এক কাপ স্লিম দই খেতে পারেন অনায়াসে। ওজন বাড়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকবে না।

● কিউয়ি

কিউয়িতে খুব কম পরিমাণ ক্যালরি থাকে আর ভিটামিন সি থাকে প্রচুর। ফলে খাওয়ার পরও হালকা লাগে। দু’টো কিউয়ি খেলেই দেখবেন পেট ভরে গেছে।

● ফলের স্মুদি

আপেল আর আনারস, কলা আর সফেদা বা পিচ, জল আর অল্প দুধ দিয়ে একসঙ্গে মিক্সিতে ঘেঁটে নিন। তৈরি স্মুদি। পেট ভরাতে আর কী চাই!

● মশলা দুধ

এক কাপ স্লিম মিল্ক গরম করে অল্প এলাচ গুঁড়ো, পেস্তা আর কাঠবাদাম ছড়িয়ে দিন। কিশমিশ আর চিনি দেবেন না কিন্তু। অল্প কেশরও দিতে পারেন। এই মশলা দুধ খেতেও দারুণ আর শরীরের জন্য উপকারী।

● ছোলা

বাড়িতে শুকনো খোলায় ভাজা ছোলা রেখে দিন। মধ্য রাতে খিদে জানান দিলে, এক মুঠো ছোলা খেয়ে নিন। কোনও বাড়তি আয়োজনের প্রশ্নই নেই।

● বাদাম

এক মুঠো বাদামের সঙ্গে পেঁয়াজ কুচি, টোম্যাটো কুচি, লেবুর রস আর চাট মশলা মিশিয়ে নিন। মাঝ রাতের স্ন্যাকস হিসেবে দারুণ! আর এতটা খাটতে না চাইলে ১০টা কাঠবাদাম খেয়ে নিতে পারেন। খিদে পালাবেই পালাবে। পেস্তাও খেতে পারেন। এ-ও শরীরের মেলাটনিন-এর পরিমাণ বাড়িয়ে ঘুমতে সাহায্য করে।

● মুড়ি

বাড়িতে মুড়ি তো নিশ্চয় থাকে। তার সঙ্গে কিছু কাঁচা পেয়াজ, টোম্যাটো, ধনেপাতা মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে সাবধান, আলু দেবেন না যেন!

● মাশরুম টোস্ট

মাঝ রাতেও যদি একটু সুস্বাদু কিছু খাওয়ার জন্য মন আনচান করে, তা হলে মাশরুম অন টোস্ট-এর কথা ভাবতে পারেন। মাশরুম ছোট করে কেটে একটু রসুন কুচি, নুন, গোলমরিচ দিয়ে নেড়ে, সেঁকা পাঁউরুটির উপর ঢেলে দিন। তৈরি আপনার সুস্বাদু স্ন্যাক্স।

● ডিম

ডিমের সাদা অংশের অমলেট বা সবজি সহ স্ক্র্যাম্বলড এগ, ডিম যে কোনও রূপেই খেতে ভাল আর স্বাস্থ্যকর। মাঝ রাতেও ডিম খেতে তাই কোনও অসুবিধে নেই।

● রুটি রোল

ডিনারের বেঁচে যাওয়া তরকারি রুটির মধ্যে ভরে রোলের মতো মুড়ে নিন। পেট ভরাতে কোনও সমস্যা হবে না।

তা হলে এ বার বাজার সেরে ফেলুন। মাঝ রাতে ব্রাউনি খাওয়ার অজুহাত কিন্তু আর মানব না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *