মার্কিন কংগ্রেসের দুই নির্বাচিত মুসলিম মহিলা সদস্যকে ইজরায়েলে প্রবেশ করতে না দেওয়ার আর্জি জানিয়ে টুইট করেছিলেন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প! তার পরই ওই দুই ডেমোক্র্যাট সদস্যের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করল বেঞ্জামিন নেতানইয়াহুর সরকার। নজিরবিহীন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে। ট্রাম্প ও ইজরায়েল সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মার্কিন নাগরিক, রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মীদের বড় অংশ।

সোমালি বংশোদ্ভূত ইলহান ওমর এবং প্যালেস্তাইনি বংশোদ্ভূত রশিদা তালিব গত বছর নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে জিতে মার্কিন কংগ্রেসে পা রাখেন। দু’জনেই রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক হিসাবে পরিচিত। বিশেষত মার্কিন রাষ্ট্রপতির অভিবাসন বিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদে একাধিকবার সরব হয়েছেন এই দুই কংগ্রেস সদস্য। আগামী রবিবার তাঁদের ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইন সফরে যাওয়ার কথা ছিল। প্রাথমিকভাবে আমেরিকায় নিযুক্ত ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত রন ভেরমার ওমর ও তালিবের আসন্ন সফর সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্যই করেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে ট্রাম্প একটি টুইট করার কয়েক ঘন্টা পরেই ওই দুই মহিলার ইজরায়েলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

ট্রাম্প টুইটারে লিখেছিলেন- ‘ওমর এবং তালিব ইজরায়েল রাষ্ট্র তথা সার্বিকভাবে ইহুদিদের ঘৃণা করেন। তাঁদের এই মানসিকতা পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা নেই। ওঁদের যদি (ইজরায়েলে) প্রবেশ করতে দেওয়া হয়, তা হলে তা হবে দুর্বলতার পরিচায়ক।’

মার্কিন রাষ্ট্রপতি তাঁরই কংগ্রেসের দুই বিরোধী সদস্যের প্রতি এমন মন্তব্য করায় শুরু হয় বিতর্ক। মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি জানান, ইজরায়েলের সিদ্ধান্তে তিনি গভীরভাবে ‘ব্যথিত’। ট্রাম্পের মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কংগ্রেসের দুই নির্বাচিত মহিলা সদস্যের প্রতি রাষ্ট্রপতির মন্তব্য অজ্ঞতা ও অশ্রদ্ধার পরিচায়ক। রাষ্ট্রপতির পক্ষেও এমন মন্তব্য অমর্যাদাকর।”

ইজরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তাঁদের সেদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির পর ওমর জানান, ট্রাম্পের চাপেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, “ট্রাম্প মুসলিমদের নিষিদ্ধ করতে চান। তাঁর সেই মনোবাঞ্ছার ফলিত প্রয়োগ ঘটাচ্ছে ইজরায়েল। নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরেই শান্তিপ্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে আসছেন, প্যালেস্তাইনের স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের কণ্ঠরোধ করছেন। দখলকৃত ভূখণ্ডে তিনি যে সীমাহীন নির্যাতন চালাচ্ছেন, সে সম্পর্কে কোনও খবর তিনি বাইরে আসতে দেন না। তাই তাঁর কাছ থেকে এমন পদক্ষেপই প্রত্যাশিত।”

নেতানিয়াহু এই প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ওমর এবং তালিবের সফরের উদ্দেশ্য বিশ্বের দরকারে ইজরায়েলের ক্ষতি করা। তাই বাধ্য হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তাঁর দাবি, বিশ্বে এমন কোনও দেশ নেই, যারা ইজরায়েলের মতো করে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। 

মার্কিন রাষ্ট্রপতির ভূমিকা এবং ইজরায়েলের পদক্ষেপের সমালোচনায় সরব হয়েছে মার্কিন দেশে ইজরায়েলপন্থী হিসাবে পরিচিতরাও। সেনেটের সদস্য এবং ইজরায়েলের সমর্থক হিসাবে পরিচিত চাক স্কুমের বলেছেেন, “মার্কিন কংগ্রেসের দুই নির্বাচিত প্রতিনিধির প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ইজরায়েলের শক্তি নয়, দুর্বলতার পরিচায়ক। আমেরিকার অসংখ্য ইজরায়েল সমর্থক এই সিদ্ধান্তে আহত। গণতন্ত্র কখনই বিতর্কে ভয় পেতে পারে না।” মার্কিন মুলুকে ইজরায়েলপন্থী লবির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিনিধি আমেরিকান-ইজরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটিও নিষেধাজ্ঞার সমালোচনায় সরব হয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার অন্যতম দাবিদার বার্নি স্যান্ডার্স জানিয়েছেন, কংগ্রেসের দুই সদস্যকে ইজরায়েলে ঢুকতেে না দেওয়া মার্কিন কংগ্রেস এবং গণতন্ত্রের প্রতি চরম অসম্মান।

শত প্রতিবাদ সত্ত্বেও ট্রাম্প অবশ্য নিজের অবস্থানে অবিচল। ইজরায়েল নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরই তিনি ফের টুইট করেছেন- ‘ওমর এবং তালিব ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মুখ। ওঁরা ইজরায়েলকে ঘৃণা করেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *