অন্ধ্রপ্রদেশের তরুণী ইঞ্জিনিয়ার তাঁর মাইনের ৭০% ব্যয় করেন দু’টি শহর পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে। শহর দু’টিকে পোস্টার মুক্ত করারও প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। ‘রাস্তা ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করার কাজকে সমাজ কী চোখে দেখবে তা নিয়ে আমার মা উদ্বিগ্ন থাকলেও বাবার দ্বিধাহীন পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি আমি’ জানিয়েছেন পঁচিশ বছরের তরুণী তেজস্বী পোদাপতি।
পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের বিবিধ স্তর থেকে এসেছে বাধা। কিন্তু তবু নিজের বিশ্বাসে আর কাজে অটল থেকেছেন তিনি। বি-টেক’এর শেষ বছরে সংবাদ পত্রে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে তিনি পড়েন, অন্ধ্রপ্রদেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া শহর প্রকাশম জেলার অঙ্গোল। এ জায়গা যে তাঁরই জন্মভূমি । এই খবরে স্বাভাবিকভাবেই ব্যথিত ও বিচলিত হন তাঁর মত সংবেদনশীল এক জন মানুষ।

‘শুধুমাত্র সরকারের ওপর সব দোষ না চাপিয়ে আমি নিজেও কিছু করার সিদ্ধান্ত নিলাম আমার শহরের উন্নয়নের জন্য। গবেষণা চলাকালীন আমি বেশ বুঝতে পারলাম, অপরিচ্ছন্নতা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আমার শহরের পিছিয়ে পড়ার একটি বড় কারণ। বেঙ্গালুরুর দ্য আগলি ইন্ডিয়ান ইনিশিয়েটিভ-এর ব্যাপারে আমি আগেই শুনেছিলাম। এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যারা রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ করে। এ রকম আমার অঙ্গোলেও যদি ভাবা যেত ! কিন্তু এ কাজের জন্য তো বিস্তর লোকবল চাই। কোথা থেকে পাব এত স্বেচ্ছাসেবক?’ এমন ভেবে ভেবে যখন সারা হচ্ছিলেন এই পরিবেশ-বান্ধব তরুণী, তখন বাবা তাঁকে সমর্থন করলেন, দিলেন আশ্বাস। বন্ধুদের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যেতে ৮০%-ই গররাজি হল। বাবা বললেন, ‘কেউ কেউ তো রাজি হয়েছে, এই-ই ঢের’।
২০১৫ সালের ১৫ই অক্টোবর ড. এ পি জে আবদুল কালামের জন্মদিনে ১০ জন সঙ্গী নিয়ে অঙ্গোলের একটি উদ্যান পরিষ্কার করার কাজে নেমে পড়লেন তেজস্বী। যাত্রা শুরু করল ‘ভূমি ফাউন্ডেশন’। প্রথম প্রথম লোকজন তাঁকে আর তাঁর এ হেন কর্মকাণ্ড নিয়ে হাসি ঠাট্টা, ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করত। কিন্তু তিনি তো ‘তেজস্বী’। কাজেই উত্তর দিলেন। কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন এক গভীর বিশ্বাসে ! শহরের দেয়ালে দেয়ালে, গাছে গাছে টাঙানো সমস্ত পোস্টার, ফ্লায়ার খুলে নেওয়া হল, জঞ্জালের স্তূপ সরানো হল, রাস্তাঘাটের চেহারা বদলে গেল কিছু মানুষের পরিশ্রমে আর উদ্যমে। তেজস্বীর নেতৃত্বে। শুরু হল ‘ওয়ান গোল, ক্লিন অঙ্গোল’ প্রকল্প ।
একটাই লক্ষ্য, প্রিয় অঙ্গোলকে পরিচ্ছন্ন, সুন্দর করে তোলা। অনেক বছর ধরে যে উদ্যানগুলি নোংরা পুতিগন্ধময় হয়ে পড়েছিল, একে একে সব পরিষ্কার হল। যারা ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করত, তারাই এখন প্রশংসা করে শহর পরিচ্ছন্ন করার এই প্রয়াসকে। ‘প্রতি সপ্তাহান্তে আমি শহরের একটা করে জায়গা ঠিক করি, এবং সেটাকে পরিষ্কার করা শুরু করি। এ ভাবেই অঙ্গোল ও তার আশেপাশের অঞ্চলে প্রায় ১২৫ টি জায়গা আমরা পরিচ্ছন্ন করে তুলেছি। প্রথমে ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে শুরু করেছিলাম, এখন আমাদের সঙ্গে প্রায় ৩৫০০ জন’ জানান তেজস্বী।

কিন্তু সহজ ছিল না এই যাত্রা। এক বার কোনও জায়গা পরিষ্কার করে এলে সেখানে আবারও জমে আবর্জনার স্তূপ। কিন্তু তা দমিয়ে দেয় না তেজস্বী আর তাঁর বাকি সঙ্গীদের। বার বার তারা পরিষ্কার করে আসে একই জায়গা, যত ক্ষণ না অবধি মানুষের নোংরা করা থামে। তাঁর ফাউন্ডেশনের রেজিস্ট্রেশন নিয়েও অনেক অসুবিধা প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। হয়েছে অযথা বিলম্ব। অসহযোগিতা করেছেন সরকারি আমলারা। এক সপ্তাহের কাজ হতে সময় লেগেছে তিন মাস। দু’বছর আগে পর্যন্ত প্রতি শুক্র বার সন্ধের বাস ধরে তিনি চলে যেতেন অঙ্গোল। ‘স্বেচ্ছাসেবীদের অফুরান প্রাণশক্তি আর উদ্যম আমাকে আরও উদ্দীপিত করেছে। সপ্তাহের মাঝামাঝি হলেই তাঁরা জিজ্ঞাসা করেম এর পরের কাজ কী হবে বা কোথায় হবে। কোনও সপ্তাহে খুব ক্লান্ত বোধ করলে যদি বা বিশ্রাম নেব বলে ভাবি, আমার সঙ্গীদের ইচ্ছেই আমাকে দিয়ে বিরামহীন কাজ করিয়ে নেয়’ বলেন তেজস্বী।
প্রথম দিকে এই কাজে তাঁর বাবা অর্থ সাহায্য করতেন তাঁকে। ‘কিন্তু চাকরি পাওয়ার পর থেকে আমি নিজেই নিজের মাইনে থেকে টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনি। আমার আয়ের ৭০% অর্থ এই কাজেই ব্যয় করি আমি’ জানিয়েছেন এই অনন্যা। গত দু’ বছরে ‘ভূমি ফাউন্ডেশন’ হায়দরাবাদ আর অঙ্গোলে কাজ করেছে। হায়দরাবাদের ৮০ টি জায়গা পরিষ্কার করেছে এই সংস্থা। সম্প্রতি হাফিজপেট ফ্লাইওভারের নীচে পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছে। ব্যক্তিগত অর্থ সাহায্য চান না তেজস্বী। ভাবছেন গ্রেটার হায়দরাবাদ পুরসভার কাছ থেকে কিছু সাহায্য চাইবেন। তিনি নিজে খরচ করছেন এখন, কিন্তু যখন আর পারবেন না, তখন কি থেমে যাবে তাঁর কাজ? তাঁদের এই উদ্যোগ? তাই পৌরসভার কাছে অর্থের জন্য আবেদন জানাবেন তেজস্বী। আবেদনে সাড়া মিলবে কি? জানেন না যদিও।
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।